আকস্মিক বন্যায় দিশেহারা সিলেটের সাড়ে ৬ লাখ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৪, ০২: ০১

‘জীবনে আরও অনেক বন্যা দেখছি। এ রকম হঠাৎ সবকিছু কখনো পানিতে ভেসে যায়নি।’ এভাবেই ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার বর্ণনা দিচ্ছিলেন সিলেটের গোয়াইনঘাটের আলীরগাঁওয়ের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব জালাল উদ্দিন। তিনি অভিযোগ করলেন, বন্যায় তিন দিন ধরে কষ্ট পেলেও সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা তাঁদের কাছে পৌঁছায়নি। 

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের পরপরই সিলেটের গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে আকস্মিকভাবে প্লাবিত হয়। গতকাল শুক্রবার এই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বিশ্বনাথ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জের নিম্নাঞ্চল। প্লাবিত হয়েছে সিলেট শহরেরও কিছু অংশ। সব মিলিয়ে সিলেট জেলার আটটি উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়নের সাড়ে ৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বন্যার কারণে গোয়াইনঘাটে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজন বিদ্যুতায়িত হয়ে, অন্যজন নৌদুর্ঘটনায় মারা গেছেন।

গোয়াইনঘাটের বারহাল গ্রামের রাবিয়া বেগম বলেন, ‘ঘরো আটুপানি আছিল। বুধবারে রাত ১০টায় উঠছে, নামছে বৃহস্পতিবার জোহরের পর। এখনো উঠানে পানি। ছকির উপরে ছকি (খাট) দিয়ে ছিলাম, ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসে ছিলাম। কই যাব, সবার ঘরেই পানি। আমরা কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি।’ 
জেলা প্রশাসন বলেছে, বন্যা মোকাবিলায় এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৪৭টি। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মানুষ এখন ঘরে ফিরছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা মানুষের সংখ্যা কমে ৩ হাজার ৭৩৯ জন হয়েছে। জেলা প্রশাসন গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ উপজেলায় ২০০ বস্তা করে ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ১৫ টন করে ৭৫ টন চাল, ৫০ হাজার টাকা করে আড়াই লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ করেছে।

সিলেট নগরেও পানি
গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট নগরের জামতলা, তালতলায় সিলেটের ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়, তোপখানা ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় পানি ঢুকেছে। নগরের অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত উপশহর সি-ব্লক, ডি-ব্লক ও ই-ব্লকের একাংশ, যতরপুর, মাছিমপুর, সোবহানীঘাট, তালতলা, শেখঘাট ও কাজিরবাজার এলাকায়ও পানি ঢুকেছে। প্রায় ৪ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ শাখা।

আবহাওয়া অফিস সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে সাড়ে ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আরও বৃষ্টি হতে পারে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ভারতে বৃষ্টি কমলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। 

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান গতকাল সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। ত্রাণ বিতরণ চলছে। ৪৮টি ইউনিয়নের ৬ লাখ ৩৪ হাজারের মতো মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। বৃষ্টি না হলে পানি কমবে। কিছু কিছু এলাকায় পানির স্রোতে ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। পানি কমলে আমরা এগুলো আইডেন্টিফাই করতে পারব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত