দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার চোখে পড়ছে বিভিন্ন স্থানে। বিপরীতে প্রকাশ্যে কার্যক্রম নেই বিএনপির। কিন্তু দলটির একাধিক নেতা প্রার্থী হতে আগ্রহী। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সমর্থন আদায়ে তাঁদের কাছে এখন মাধ্যম হয়ে উঠেছে মামলা ও কারাগার। যাঁরা ‘হয়রানিমূলক’ মামলার শিকার হয়েছেন কিংবা কারাগারে ছিলেন, সেসব নেতা-কর্মীর পাশে থেকে সমর্থন আদায় করছেন। তাঁদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন।

১ পৌরসভা ও ১৭ ইউনিয়নের এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) বা প্রবীণ রাজনীতিবিদেরা নিজেদের শক্তি হিসেবে উল্লেখ করছেন তাঁদের সময়ে হওয়া উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে। কেউ আবার সমর্থনের মাপকাঠি হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক ইতিহাস ও আঞ্চলিকতাকে। সেই তুলনায় ভোটের মাঠে নিষ্ক্রিয় জাতীয় পার্টি (জাপা) ও জামায়াতে ইসলামী। এ দুই দলের জেলা পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে কেউ মাঠেও নেই।

বিএনপি থেকে এই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন সাবেক এমপি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল মান্নান তালুকদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সহগ্রাম সরকারবিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শিশির, রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আইনুল হক, তাড়াশ উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা কামাল হোসেন ও রায়গঞ্জ উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন খান।

তাঁদের মধ্যে আবদুল মান্নান তালুকদার, কামাল হোসেন ও দুলাল হোসেন খান বলেছেন, তাঁরা আপাতত স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করা এবং সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন সময় হয়রানিমূলক মামলার আসামি হওয়া নেতাদের পাশে থেকেছেন। মান্নান তালুকদার বলেন, ধানের শীষ প্রতীকে একাধিকবার এমপি হয়েছেন। খালেদা জিয়ার নির্দেশে উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীসহ এলাকার সাধারণ মানুষ পাশে থাকবেন।

সাবেক ছাত্রদল নেতা ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা কামাল হোসেন বলেন, রায়গঞ্জ ও তাড়াশ বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আপাতত সুষ্ঠু নির্বাচন, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে নেতা-কর্মীদের পাশে আছেন। তাঁদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন। কারাগারে আটক নেতা-কর্মীদের জামিন পেতে সহযোগিতা করছেন।

রায়গঞ্জ উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন খান বলেন, তাঁর নিজের নামেই একাধিক মামলা আছে। তাই হয়রানিমূলক মামলার আসামি নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর নেওয়াসহ কারারুদ্ধদের জামিন পেতে পাশে থাকছেন।

বিএনপির মতো এই আসনে সরকারদলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগেও একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন। তাঁরা সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রচার চালাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন বর্তমান এমপি আব্দুল আজিজ, রায়গঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার রায়, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক এ টি এম লুৎফর রহমান, সাবেক এমপি ইসহাক হোসেন তালুকদারের ছেলে ইমরুল হোসেন তালুকদার, পল্লী বিদ্যুতের সাবেক পরিচালক নজরুল হাসান মানিক, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আব্দুল হালিম খান দুলাল, তাড়াশ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কর্মকার ও সহসভাপতি হোসনে আরা পারভীন।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বর্তমান এমপি আব্দুল আজিজ দলীয় কর্মসূচি, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠ গোছাতে ব্যস্ত। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, এমপি আজিজ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।

রায়গঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যোগ্যতা, দক্ষতা ও মেধা দিয়ে এই আসন আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলেছি। এখানে দল আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। আগে বিএনপির চেয়ে ভোট কম পেত। এখন আওয়ামী লীগ বেশি ভোট পায়।’

তাড়াশ উপজেলা শাখার সহসভাপতি হোসনে আরা পারভীন বলেন, তাঁর বাবা সাবেক এমপি। তাই নিজে এমপি হয়ে বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে চান; বিশেষ করে নারীদের স্বাবলম্বী করতে পাশে আছেন।