শুধু সাকিব বলেই সম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০৯: ৩৬
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ১৩: ০৬

ছোটবেলায় পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু হয়ে গেলেন বিশ্বসেরা একজন ক্রিকেটার। অবশ্য পাইলট না হলেও তাঁর জীবন অনেকটা কমার্শিয়াল ফ্লাইটের বৈমানিকের মতো। আজ এখানে তো কাল ওখানে। আজ এ দেশ তো কাল ও দেশ। যেভাবে ছুটছেন আর দুর্দান্ত খেলে যাচ্ছেন, তাতে সাকিবকে ‘সুপারম্যান’ তকমা তো দেওয়াই যায়।

আঙুলে চোট থাকায় নিজেদের মাঠে গত জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট খেলেননি তিনি। ফিরলেন ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে। ওয়ানডে সিরিজ হারলেও সাকিবের নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টিতে আফগানদের উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ব্যাটিং-বোলিংয়ে উজ্জ্বল ছিলেন দলনেতা। ১৬ জুলাই টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ করে ১৮ জুলাই রাতে কানাডায় গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগ খেলতে রওনা হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

গ্লোবালে মন্ট্রিয়ল টাইগার্সের হয়ে ৪ ম্যাচে ১৫৪.৫৪ স্ট্রাইকরেটে ১০২ রান এবং ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। ২৬ জুলাই ওই টুর্নামেন্টে নিজের শেষ ম্যাচ খেলে চলে গেলেন শ্রীলঙ্কায় এলপিএল খেলতে। ৩১ জুলাই থেকে গল টাইটানসের হয়ে ইতিমধ্যে ৯ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন তিনি। আজ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে বি-লাভ ক্যান্ডিকে হারাতে পারলে তাঁর দল খেলবে ফাইনাল। এলপিএলে ৯ উইকেটের পাশাপাশি ১২১ রান তাঁর।

২০ আগস্ট এলপিএলের ফাইনাল। সেখান থেকে দেশে ফিরে ২৭ আগস্ট দল নিয়ে এশিয়া কাপ খেলতে যাবেন শ্রীলঙ্কায়। পাকিস্তানেও ম্যাচ আছে তাঁদের। এশিয়া কাপের পর দেশে ফিরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ। টানা ম্যাচ খেললে চোট, ক্লান্তি কিংবা মানসিক অবসাদেরও আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সাকিব যেন এদিক থেকে একেবারেই ব্যতিক্রম। দিব্যি খেলছেন আর বছরের পর বছর ধারাবাহিক ভালো করে যাচ্ছেন। বিমানবন্দর থেকে নেমেই খেলার উদাহরণও আছে তাঁর।

গত ২১ মার্চ বিমান বাংলাদেশের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিজের ছোটাছুটি প্রসঙ্গে একবাক্যে বলেছিলেন সাকিব, ‘যে পারে, সে সবই পারে।’ তাঁর এই প্রাণশক্তির উৎস কোথায় সেটা হোক মানসিক কিংবা শারীরিক। গত পরশু শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফেরা সাকিবের ব্যক্তিগত ফিটনেস ট্রেনার দেবাশীষ ঘোষ এ নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাইলেন না। আজকের পত্রিকাকে শুধু এতটুকুই বললেন, ‘সাকিব ভাই বিশ্বে একজনই (অন্যদের চেয়ে আলাদা)। আমি কিছুদিন তাঁর ফিজিক্যাল ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি।’

 টানা ম্যাচ খেললেও তাঁর চোটে পড়া কিংবা মানসিক অবসাদে ভোগার ঝুঁকি কম মনে করেন বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি মনে করেন, সাকিব খেলাটাকে উপভোগ করেন এবং খুব সচেতন নিজের সব কাজেই। সাকিবদের এই গুরু বললেন, ‘ওর খেলাধুলা, পরিবার, সামাজিক জীবন সবকিছুই একেবারে ছকে বাঁধা। খুব হিসাব-নিকাশ করে চলে, যদিও বাইরে থেকে আমরা বুঝতে পারব না। তবে আমি যেটা বুঝি, খেলাধুলা ওর প্রথম অগ্রাধিকার। অনেকে আছে খারাপ খেললাম হতাশ হয়ে গেলাম, ভালো খেললাম খুশি হয়ে গেলাম। ওর এগুলো কিছুই হয় না, একরকম মাইন্ড সেট নিয়েই থাকে।’

খেলার ফাঁকে বিশ্রামের উপযুক্ত সময়ও বেছে নেন সাকিব। নাজমুল আবেদীন বললেন, ‘ও জানে তুমুল ব্যস্ততার ফাঁকে, কীভাবে বিশ্রাম নিতে হয়, যত্ন নিতে হয়। ওর যখন দরকার, রাতের বেলায় জিমটা নিজে করে আসবে। অনেক কিছুই করবে, সবার চোখের সামনে করবে না। কিন্তু ওর কাজটা সে ঠিকই করবে। ওর ফোকাস থাকে মাঠে পারফর্ম করার ব্যাপারে।’

বিশ্বকাপের আগে তুমুল ব্যস্ততায় সাকিবের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও বিশ্বাস নাজমুল আবেদীনের, ‘সে একটা ম্যাচ খেলবে তার পরের ম্যাচ পর্যন্ত বিশ্রামে থাকবে। সে এখন উপভোগ করার জায়গায় আছে। আমরা যে রকম সিনেমা বা আড্ডা দিই, ঠিক সে রকম খেলাটাকে উপভোগ করে। ফলে সাকিবের ক্লান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত