শাহ আবদুল করিম

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০: ১৯
Thumbnail image

ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি শাহ আবদুল করিমের গান কথা বলে সব অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। মানবপ্রেমের মধ্য দিয়ে জগৎ সংসার আলোকিত করা এবং সমাজের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির বার্তা দেয় তাঁর গান। তাঁর গানে ফুটে উঠেছে সাম্যবাদী ধারার সুর।

শাহ আবদুল করিমের জন্ম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের হতদরিদ্র এক গৃহস্থ পরিবারে। সংসারের অভাব-অনটন, নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থার মধ্যে বেড়ে ওঠেন তিনি। এ কারণে পড়ালেখার সুযোগও হয়নি তাঁর। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত।

শাহ আবদুল করিম গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহের দর্শন থেকে। আধ্যাত্মিক ও বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেছেন কামাল উদ্দীন, সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশের কাছ থেকে। শরিয়তি, মারেফতি, নবুয়ত, বেলায়াতসহ সব ধরনের বাউলগান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও তিনি করেছেন।

১৯৫৭ সালে টাঙ্গাইলের সন্তোষে ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে গান গাইতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সম্মেলনে তাঁর গান শুনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তাঁকে বলেছিলেন, ‘একদিন গণমানুষের শিল্পী হবে তুমি।’ তিনি গণমানুষের শিল্পীই হয়েছিলেন। রাজনীতিসচেতন শাহ আবদুল করিমের গানে উঠে এসেছে মেহনতি মানুষের কথা, তাঁদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র এবং গণমানুষের জীবনসংগ্রামের কথা।

বাউলজীবনের শুরুতেই তাঁকে রোষানলে পড়তে হয় স্থানীয় ধর্মান্ধদের। ঈদের দিন জামাতে তাঁকে গান গাওয়ার অপরাধে গ্রামছাড়া করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো কিছুই তাঁকে গানের জগৎ থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

সুদীর্ঘ ৯৩ বছরের সাধনা ও গণমানুষের ভালোবাসায় শাহ আবদুল করিম হয়ে উঠেছিলেন ‘বাউলসম্রাট’। গাড়ি চলে না, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, বসন্ত বাতাসে, কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু, মায়া লাগাইসে ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত গান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত