১৫ বছরে আঙুল ফুলে কলা গাছ ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১৪: ২১
Thumbnail image

ঝিনাইদহ পৌরসভায় স্টোরকিপার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন আসাদুজ্জামান চাঁদ। এরপর প্রধান সহকারী ও পরে পদোন্নতি পেয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হন তিনি। এই পদে নিয়োগ পেয়ে পৌরসভার হিসাব শাখায় ছড়ি ঘোরাতে থাকেন আসাদুজ্জামান। গত ১৫ বছরে নামে-বেনামে তিনি গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদ। তবে এই সম্পদ তিনি কীভাবে অর্জন করলেন, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই আয়কর অফিসেও। অভিযোগ, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগসাজশ করে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে পৌরসভার ফান্ড থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে একের পর এক টাকা উত্তোলন করে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন আসাদুজ্জামান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্টোরকিপার থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা বনে যাওয়া আসাদুজ্জামান ১৫ বছর ধরে অপকর্ম করলেও বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার জন্য অর্থ জোগান দেওয়ার অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু একচুলও দাপট কমেনি তাঁর। নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ গড়ে ঝিনাইদহবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ায় পৈতৃক সূত্রে পাওয়া তিনতলা বাড়ির পাশাপাশি বাজারপাড়ায় জমি কিনে করেছেন সাততলা বাড়ি। শহরের ট-বাজারের পাশে নির্মাণকাজ চলছে একটি পাঁচতলা ভবনের। এ ছাড়া পাগলাকানাই মন্দিরের পাশে জমিসহ একটি বাড়ি ও পাগলাকানাই মোড়ে একটি পুকুর কিনেছেন। কাঞ্চনপুর মসজিদের পাশে রয়েছে জমি। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে তাঁর একাধিক জমি ও বাড়ির সন্ধান মিলেছে। রয়েছে বেশ কয়েকটি বাস ও ট্রাক।

জানা যায়, পৌরসভার চেক জালিয়াতির মাধ্যমে পৌরসভার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান চাঁদসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি দুদকের ঝিনাইদহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. বজলুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলায় বলা হয়, ঝিনাইদহ পৌরসভার বিভিন্ন কাজে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন বিল-ভাউচারের বিপরীতে চেকে অতিরিক্ত অঙ্ক বসিয়ে ও অঙ্ক কথায় লিখে আসল চেকের টাকাসহ অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। আসামিরা বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে ঝিনাইদহ পৌরসভার নামে পরিচালিত সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ঝিনাইদহ শাখার হিসাব নম্বর থেকে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৯ টাকার বিপরীতে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৯ টাকা উত্তোলন করে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলা করা হয়েছে, যা এখনো চলমান। এ ছাড়া মিন্টু ও চাঁদ মিলে পৌরসভায় নিয়োগ-বাণিজ্যের সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কর্মচারী জানান, পৌরসভায় চাকরির জন্য তাঁরা আসাদুজ্জামান চাঁদের কাছে ১০ লাখ টাকা করে দিয়েছিলেন। এভাবে প্রায় ৫০ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এদিকে আসাদুজ্জামান চাঁদ গত ইউপি নির্বাচনে পাগলাকানাই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। অবশ্য দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় পরে চাঁদকে বাদ দিয়ে অন্যজনকে প্রার্থী করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান চাঁদ বলেন, ‘আমার পরিবার অনেক আগে থেকেই সম্পদশালী। সব সম্পত্তি পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা করছে। পৌরসভার চেক জালিয়াতির বিষয়ে কিছুই জানি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত