জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির পটভূমি তৈরি হয়েছিল আরও অনেক আগেই। ভাষা-বিতর্ক চলছিল। সে সময় যাঁরা ভাষা-বিতর্কে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন, আবদুল হক তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ভাষা প্রসঙ্গে তাঁর সেই লড়াই নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার।
আবদুল হক তখন ভাষাসংক্রান্ত যেসব প্রবন্ধ লিখেছিলেন, সেগুলো ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রবন্ধগুলোতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার ঔচিত্য নিয়ে তিনি একের পর এক যুক্তি দেখিয়েছিলেন।
আবদুল হকের লেখা ‘বাংলা ভাষাবিষয়ক প্রস্তাব’ শীর্ষক প্রবন্ধটি ছাপা হয়েছিল দৈনিক ইত্তেহাদে। ওই প্রবন্ধে ভাষা নিয়ে বাঙালির অদ্ভুত যে প্রবণতার কথা তিনি তুলে ধরেছিলেন, আজও তা প্রাসঙ্গিক। তিনি দেখিয়েছেন, ইংরেজি, উর্দু বা হিন্দিভাষী মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় একজন বাঙালি বাংলার আশ্রয় না নিয়ে সেই ব্যক্তির ভাষায়ই কথা বলে থাকেন। অর্থাৎ, অন্য জাতির লোকজনের বাংলা না জানলেও চলবে; অথচ বাঙালি যদি ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু জানে, তাহলেই ষোলোকলা পূর্ণ হবে। বাঙালির এই প্রবণতার তিনি সমালোচনা করেছেন। এই প্রবণতার কারণ হিসেবে তিনি আমাদের অপক্বতাকেই দায়ী করেছেন। আবদুল হক লিখেছেন, ‘ইংরেজি আমাদের রাষ্ট্রভাষা এবং ব্যবহারিক জীবনে ইংরেজির মর্যাদা বেশি। এর কারণ আমাদের অর্ধস্ফুরিত জাতীয়তাবোধ, অর্ধস্ফুরিত জাতীয় মর্যাদাবোধ। তা’নইলে কোনো বাঙালি নিজেদের মধ্যেও ইংরেজি বলতেন না এবং বলতে পেরে আত্মপ্রসাদ অনুভব করতেন না। বাংলা ভালো বলতে পারিনে, বাংলায় কিছু লিখতে পারিনে, বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে পারিনে বলে লজ্জার পরিবর্তে আত্মপ্রসাদ লাভ করতেন না। জাতীয় মর্যাদাবোধ অতি ক্ষীণ বলেই উর্দু-হিন্দিভাষীর সঙ্গে বাঙালিরা বাংলার পরিবর্তে উর্দু-হিন্দি বলার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে থাকেন।’
আবদুল হক বাঙালিদের প্রতি এই হীনম্মন্যতা থেকে উঠে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তান রাষ্ট্রটি সৃষ্টি হওয়ার আগেই প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ৩০ জুন দৈনিক আজাদে ছাপা হয়েছিল আবদুল হকের আরেকটি প্রবন্ধ ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ শিরোনামে। সেটি আগের প্রবন্ধ থেকে দীর্ঘ এবং কেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার অধিকার অগ্রগণ্য, সে আলোচনা করেছেন তিনি তাতে। লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রচলিত ভাষা পাঁচটি। বেলুচি, পশতু, সিদ্ধি, পাঞ্জাবি ও বাংলা। পশ্চিম পাকিস্তানে উর্দু ভাষা নেই, তা নয়, বাংলাও আছে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের তো নয়ই, পশ্চিম পাকিস্তানেরও কোনো প্রদেশের মাতৃভাষা উর্দু নয়।’ এরপর তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যবহৃত ভাষাগুলোয় যতসংখ্যক মানুষ কথা বলে এবং সেসব ভাষার সাহিত্যের মান নিয়ে কথা বলেছেন। আর সেই ভাষাগুলোর তুলনায় বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ভারতের বা পাকিস্তানের যেকোনো সাহিত্যের সঙ্গে তুলনা করলে প্রমাণিত হয় ভারতের, তথা পাকিস্তানের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষা হচ্ছে বাংলা। অতএব, পাকিস্তানের, কেবল পূর্ব পাকিস্তানের নয়, পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানকে নিয়ে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবার যোগ্যতা সবচেয়ে বেশি বাংলা ভাষার।’
সে বছরের ২৭ জুলাই দৈনিক ইত্তেহাদে ছাপা হয় আবদুল হকের ‘উর্দু রাষ্ট্রভাষা হলে’ শিরোনামে লেখা প্রবন্ধটি। তাতে তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, ‘পাকিস্তানের আট কোটি লোকের পাঁচ কোটি লোকে কথা বলে বাংলা ভাষায়। পাকিস্তানের সর্বাপেক্ষা বর্ধিষ্ণু, প্রগতিশীল এবং উন্নত ভাষা হচ্ছে বাংলা। অতএব আমাদের রাষ্ট্রভাষা যে বাংলা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না।’
এভাবেই ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা উপলব্ধি করল—ভাষার লড়াইটি ছোট ও সহজ নয়, এ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির পটভূমি তৈরি হয়েছিল আরও অনেক আগেই। ভাষা-বিতর্ক চলছিল। সে সময় যাঁরা ভাষা-বিতর্কে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন, আবদুল হক তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ভাষা প্রসঙ্গে তাঁর সেই লড়াই নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার।
আবদুল হক তখন ভাষাসংক্রান্ত যেসব প্রবন্ধ লিখেছিলেন, সেগুলো ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রবন্ধগুলোতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার ঔচিত্য নিয়ে তিনি একের পর এক যুক্তি দেখিয়েছিলেন।
আবদুল হকের লেখা ‘বাংলা ভাষাবিষয়ক প্রস্তাব’ শীর্ষক প্রবন্ধটি ছাপা হয়েছিল দৈনিক ইত্তেহাদে। ওই প্রবন্ধে ভাষা নিয়ে বাঙালির অদ্ভুত যে প্রবণতার কথা তিনি তুলে ধরেছিলেন, আজও তা প্রাসঙ্গিক। তিনি দেখিয়েছেন, ইংরেজি, উর্দু বা হিন্দিভাষী মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় একজন বাঙালি বাংলার আশ্রয় না নিয়ে সেই ব্যক্তির ভাষায়ই কথা বলে থাকেন। অর্থাৎ, অন্য জাতির লোকজনের বাংলা না জানলেও চলবে; অথচ বাঙালি যদি ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু জানে, তাহলেই ষোলোকলা পূর্ণ হবে। বাঙালির এই প্রবণতার তিনি সমালোচনা করেছেন। এই প্রবণতার কারণ হিসেবে তিনি আমাদের অপক্বতাকেই দায়ী করেছেন। আবদুল হক লিখেছেন, ‘ইংরেজি আমাদের রাষ্ট্রভাষা এবং ব্যবহারিক জীবনে ইংরেজির মর্যাদা বেশি। এর কারণ আমাদের অর্ধস্ফুরিত জাতীয়তাবোধ, অর্ধস্ফুরিত জাতীয় মর্যাদাবোধ। তা’নইলে কোনো বাঙালি নিজেদের মধ্যেও ইংরেজি বলতেন না এবং বলতে পেরে আত্মপ্রসাদ অনুভব করতেন না। বাংলা ভালো বলতে পারিনে, বাংলায় কিছু লিখতে পারিনে, বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে পারিনে বলে লজ্জার পরিবর্তে আত্মপ্রসাদ লাভ করতেন না। জাতীয় মর্যাদাবোধ অতি ক্ষীণ বলেই উর্দু-হিন্দিভাষীর সঙ্গে বাঙালিরা বাংলার পরিবর্তে উর্দু-হিন্দি বলার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে থাকেন।’
আবদুল হক বাঙালিদের প্রতি এই হীনম্মন্যতা থেকে উঠে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তান রাষ্ট্রটি সৃষ্টি হওয়ার আগেই প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ৩০ জুন দৈনিক আজাদে ছাপা হয়েছিল আবদুল হকের আরেকটি প্রবন্ধ ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ শিরোনামে। সেটি আগের প্রবন্ধ থেকে দীর্ঘ এবং কেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার অধিকার অগ্রগণ্য, সে আলোচনা করেছেন তিনি তাতে। লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রচলিত ভাষা পাঁচটি। বেলুচি, পশতু, সিদ্ধি, পাঞ্জাবি ও বাংলা। পশ্চিম পাকিস্তানে উর্দু ভাষা নেই, তা নয়, বাংলাও আছে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের তো নয়ই, পশ্চিম পাকিস্তানেরও কোনো প্রদেশের মাতৃভাষা উর্দু নয়।’ এরপর তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যবহৃত ভাষাগুলোয় যতসংখ্যক মানুষ কথা বলে এবং সেসব ভাষার সাহিত্যের মান নিয়ে কথা বলেছেন। আর সেই ভাষাগুলোর তুলনায় বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ভারতের বা পাকিস্তানের যেকোনো সাহিত্যের সঙ্গে তুলনা করলে প্রমাণিত হয় ভারতের, তথা পাকিস্তানের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষা হচ্ছে বাংলা। অতএব, পাকিস্তানের, কেবল পূর্ব পাকিস্তানের নয়, পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানকে নিয়ে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবার যোগ্যতা সবচেয়ে বেশি বাংলা ভাষার।’
সে বছরের ২৭ জুলাই দৈনিক ইত্তেহাদে ছাপা হয় আবদুল হকের ‘উর্দু রাষ্ট্রভাষা হলে’ শিরোনামে লেখা প্রবন্ধটি। তাতে তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, ‘পাকিস্তানের আট কোটি লোকের পাঁচ কোটি লোকে কথা বলে বাংলা ভাষায়। পাকিস্তানের সর্বাপেক্ষা বর্ধিষ্ণু, প্রগতিশীল এবং উন্নত ভাষা হচ্ছে বাংলা। অতএব আমাদের রাষ্ট্রভাষা যে বাংলা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না।’
এভাবেই ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা উপলব্ধি করল—ভাষার লড়াইটি ছোট ও সহজ নয়, এ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
৩ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪