তবুও ভাঙা ঘরে পাঠদান

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫: ০৩

মাঠের এক পাশে একতলা পাকা ভবন। তার পাশে ভাঙা বেড়ার একচালা ঘর। শুধু টিনের চালাটি কয়েকটি খুঁটির ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। তার নিচে ২০-৩০টি বেঞ্চ পাতা রয়েছে। সেখানেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।

এর উত্তর পাশে নতুন দোতলা একটি ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়ে পড়ে রয়েছে। শুধু হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় ভবনটি ব্যবহার করতে পারছেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফলে ওই ভাঙা চালার নিচে ক্লাস-পাঠদান কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হতে হচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এটি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা নতুন ভবনে দ্রুত পাঠদানের দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, শ্রেণিকক্ষের সংকট নিরসনের জন্য চার তলা ফাউন্ডেশনসহ দোতলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২০ সালে ৮৩ লাখ ৪২ হাজার ৫৪৩ টাকা ব্যয়ে ভবনটির নির্মাণকাজ পায় মেসার্স প্রেমা অ্যান্ড আল-আমিন (জেবি) নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। নতুন ভবনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস পরিচালনার জন্য মাঠের দক্ষিণ পাশে ২৫ হাত লম্বা ও ১২ হাত প্রশস্ত একটি একচালা টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। এদিকে গত ২৫ এপ্রিল নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়; কিন্তু ভবন পরিদর্শনে এসে প্রকৌশলীরা কাজের কিছু ত্রুটি পান। পরে সেই ত্রুটি দ্রুত সংস্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ভবন বুঝে পায়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বিদ্যালয়ের মাঠের একপাশে টিনের চালাসহ ভাঙা ঘরে চলছে পাঠদান ও পরীক্ষার কার্যক্রম।

বিদ্যালয়টির চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুবর্ণা আক্তার বলে, ‘ভাঙা বেড়া দিয়ে শরীরে রোদ লাগে। ঝড়-বৃষ্টির দিনে তো ক্লাসই করতে পারি নাই। বৃষ্টি হলেই এই ঘরে পানি জমে যায়। আমরা নতুন বছরে নতুন বিল্ডিংয়েই ক্লাস করতে চাই।’

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আলেয়া পারভীন আক্ষেপ করে বলেন, ‘নতুন ভবন নির্মাণের প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখন ভবনে উঠতে পারছি না। ভাঙা চালার নিচে কষ্ট করে ক্লাস নিতে হচ্ছে। এখন নতুন বছরের আগেই যদি আমাদের কাছে ভবনটি হস্তান্তর কর হয় তবে শিক্ষার্থীসহ অন্য সবার কষ্ট লাঘব হবে।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রপ্রাইটর শহিদুল ইসলাম জানান, গত ২৫ এপ্রিল নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে; কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী আরও কিছু কাজ করতে বলেছেন। অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজ করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। যেকোনো দিন ভবনটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ভবন নির্মাণের কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম জানান, কাজে কিছু ত্রুটি থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করাতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ইতিমধ্যে ভবন হস্তান্তরের জন্য তাঁদের পক্ষ থেকে বিভাগীয় অফিসে প্রত্যয়ন দিয়ে  কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌফিক আহমেদ বলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলীকে ভবন হস্তান্তরের জন্য বলা হয়েছে। শুনেছি বিদ্যালয়ে আসবাবপত্র পাঠানো হচ্ছে।

তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ভবন বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত