২০ গ্রামের দুঃখ বিল ডাকাতিয়া

গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া (খুলনা) 
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২: ৩৮
Thumbnail image

খুলনার ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়া ও সংলগ্ন ২০টিরও বেশি গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। শোলমারী নদীর ১০ ভেন্ট স্লুইসগেটের সামনে পলি জমে পানি বের হতে না পারায় এই অবস্থা হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা সাত মাস ধরে চেষ্টা চালালেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি ঘটেনি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, জলাবদ্ধতা দূর করতে তাঁরা কাজ করছেন। পানি নামতে শুরু করেছে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য বড় পরিকল্পনা দরকার। 

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিল ডাকাতিয়া অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের লক্ষ্যে খুলনা-যশোর নিষ্কাশন পুনর্বাসন প্রকল্পের (কেজেডিআরপি) আওতায় ১৯৯৯ সালে কোটি টাকা ব্যয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার শোলমারী নদীর মুখে বাঁধ দিয়ে ১০ ভেন্টের স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। ফলে জলাবদ্ধতামুক্ত হয় বিল ডাকাতিয়া। আশপাশের মানুষ এরপর থেকে ব্যাপক হারে চিংড়িঘের ও ঘেরের আইলে সবজি চাষ করে আসছিলেন। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে স্লুইসগেটের সামনে পলি পড়তে পড়তে একপর্যায়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। আবারও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় বিলে। বর্ষায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। পরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ প্রশাসনিক ও আর্থিকভাবে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে পলি নিষ্কাশনের চেষ্টা করেন; কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। 

জানা গেছে, বিষয়টি সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে জানলে গত ২৮ আগস্ট তিনি ডুমুরিয়ার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে খুলনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ঠিকাদারের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে ওই গেটের সামনে ২২০ মিটার লম্বা, ৫০ মিটার প্রস্থ ৪ মিটার পলি কেটে তুলতে কার্যাদেশ দেন। ঠিকাদার প্রথম থেকেই লোকাল ড্রেজার দিয়ে পলি তোলার কাজ শুরু করেন; কিন্তু তাতেও আশানুরূপ ফল না দেখে প্রায় প্রতিদিনই জলাবদ্ধ এলাকা থেকে শত শত মানুষ এসে নিজেরাই পলি অপসারণ করছেন। পাশাপাশি ঠিকাদার এক্সকাভেটর দিয়ে পলি তোলার কাজ করছেন। 

পলি অপসারণ কাজে নিয়োজিত উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য রমেশ চন্দ্র বৈরাগী বলেন, ‘গেটের সামনে থেকে যে পলি তোলা হচ্ছে, পরে জোয়ারের পানিতে তা নেমে অনেকাংশে আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া গেটের ভেতরের পাশেও পলি পড়ে নদীর নাব্যতা হারিয়ে মাত্র ১ থেকে দেড় ফুট গভীরতা আছে। আমাদের বিল ডাকাতিয়ার মধ্যে পানি আছে ৫-৬ ফুট। তা হলে আমরা কীভাবে বাঁচব?’ উপজেলার মুজারঘুটা গ্রামের ব্রিঞ্চি মণ্ডল বলেন, ‘বিল ডাকাতিয়ার কোনো ঘেরের পাড় জেগে নেই। নেট দিয়ে কোনো রকমে মাছ রক্ষার চেষ্টা করছি, আর সবজি তো আগেই শেষ।’ 

রংপুর ইউপির চেয়ারম্যান (ভুক্তভোগী) অধ্যক্ষ সমরেশ মণ্ডল বলেন, ‘এত দিনের চেষ্টার পরও আমাদের ডাকাতিয়া বিলে পানির গভীরতা ও শোলমারী নদীর উচ্চতার যা অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে, ভবদহ গেটের মতো বড় ধরনের বেশ কয়েকটি ইলেকট্রনিক পাম্প মেশিন বসাতে পারলে এ জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচা যাবে।’ 

পলি অপসারণ কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারককারী সেকশন অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে পানি নামা শুরু হয়েছে। গেটের ভেতরের পাশ থেকে সামনে শোলমারী নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় আশানুরূপ পানি নামছে না। 

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ বলেন, ‘জলাবদ্ধতা দূর করতে আমাদের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নিয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। প্রতিদিন শত শত ভুক্তভোগী এসে পলি তুলতে নেমে পড়ছেন। ঠিকাদারও কিছু কাজ করেছেন। পানি কিছুটা নেমেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত