মঞ্চ করা ট্রাকের চালকের শরীরে এখনো স্প্লিন্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩, ১২: ২২

‘ওই সময় পরিস্থিতি ছিল কেয়ামতের মতো। যেইভাবে বোম (গ্রেনেড) পড়ছে, আল্লাহ পাক শেখ হাসিনারে বাঁচাইছেন। ওই অবস্থার কথা ভাষায় বুঝাইতে পারুম না, বলতেও পারুম না। তহন ওইখানে যে ছিল, সেই শুধু জানে কী হইছিল।’–কথাগুলো বলছিলেন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলায় আহত রফিকুল ইসলাম। শরীরে বিদ্ধ গ্রেনেডের ১১টি স্প্লিন্টারের মধ্যে ১টি এখনো রয়ে গেছে।

সেদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশের জন্য যে ট্রাকে মঞ্চ বানানো হয়েছিল, সেই ট্রাকের চালক ছিলেন রফিকুল ইসলাম। সমাবেশের সময় তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের কথামতো চালকের আসনেই বসে ছিলেন। সেই দুঃস্মৃতি এখনো তাড়া করে ফেরে তাঁকে। আজকের পত্রিকাকে সেদিনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা বর্ণনায় তিনি বলেন, সেদিন বেলা ১১টার দিকে তালতলা থেকে ট্রাক নিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যান। ট্রাকটির খুঁটিনাটি দেখেন ও পরীক্ষা করেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতারা। এরপর ট্রাকে তৈরি করা হয় অস্থায়ী মঞ্চ। আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁকে চালকের আসন ছেড়ে কোথাও যেতে নিষেধ করেন। চালকের আসনে বসেই তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্য শোনেন।

রফিকুল বলেন, সবশেষে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা (তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী)। তাঁর বক্তৃতার শেষ দিকে শুরু হয় গ্রেনেড (তাঁর ভাষায় বোম) হামলা। প্রথমটি পড়ে ট্রাকের পেছনের ডালায়। তবে সেটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় শেখ হাসিনাসহ ট্রাকে থাকা নেতারা বেঁচে গেছেন। দ্বিতীয় গ্রেনেডটি ট্রাকের পেছনের ডালায় লেগে ছিটকে পড়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এতে অনেকে আহত হন। তৃতীয় গ্রেনেডটি ট্রাকের ডান পাশের দরজার নিচে বিস্ফোরিত হয়।

এতে আইভি রহমানসহ সামনে থাকা কয়েকজন নারীনেত্রীর শরীর ছিন্নভিন্ন হয় এবং ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রেনেডের স্প্লিন্টার তাঁর (রফিকুল) হাতে, মুখে, কোমরে লেগেছে। তিনটি আঙুল ছিঁড়ে গেছে। জীবন বাঁচাতে যে যেদিকে পারছে ছুটছে। শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে তিনিও কোনোরকমে পাশের মার্কেটে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু গেট বন্ধ। রাস্তার ওপর পড়ে আছে ছিন্নবিচ্ছিন্ন মানুষ। তাঁদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অটোরিকশায় তোলা হচ্ছে। শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে তিনিও কোনোরকমে হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানেও দেখেন বিভীষিকাময় দৃশ্য।

৫৪ বছরের রফিকুলের গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি ট্রাকশ্রমিকের কাজ করতেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ বাঁচিয়েছে।’ তাঁর শরীরে মোট ১১টি স্প্লিন্টার ঢুকেছিল। অস্ত্রোপচার করে ১০টি বের করা হলেও কোমরে একটি স্প্লিন্টার এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তিনি সাক্ষ্যও দিয়েছেন।

রফিকুল আক্ষেপ করে বলেন, ঘটনার পর কেউ তাঁর খোঁজ নেননি, কোনো সহায়তাও পাননি। চিকিৎসাসহ সবকিছু নিজেকে করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কেউ খোঁজ নিল না, এটিই আমার সবচেয়ে বড় কষ্ট। এখনো অমাবস্যা-পূর্ণিমায় কোমরে খুব ব্যথা হয়।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত