Ajker Patrika

ওমিক্রন বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২১, ১০: ২৬
ওমিক্রন বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, যার পরিণতি কোথাও কোথাও ভয়াবহ হতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার রোগতত্ত্ববিদেরা সতর্ক করেছেন, করোনার নতুন ধরন এই ভাইরাস ডেল্টা ধরনের চেয়েও বেশি সংক্রামক। এরই মধ্যে বিশ্বের কয়েকটি দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত অন্তত ৪৪টি দেশ হয় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পথে হেঁটেছে, নতুবা আফ্রিকায় ভ্রমণের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত শুক্রবার করোনার নতুন এই ধরনের নাম ‘ওমিক্রন’ দিয়ে তাকে উদ্বেগজনক ধরনের তালিকাভুক্ত করে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ৯ নভেম্বর ধরনটি শনাক্ত হয়। এর আগে করোনাভাইরাসের চারটি ধরন উদ্বেগজনকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল সংস্থাটি। এই চার ধরনের মধ্যে ২০২০ সালের অক্টোবরে ভারতে শনাক্ত ডেলটা ধরন সবচেয়ে সংক্রামক। ভারতে এই ধরনের আবির্ভাবের পর সেখানে ব্যাপক হারে সংক্রমণ বেড়ে যায়। বিশ্বজুড়েও তা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গতকাল সোমবার বলেছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন অনেকবার পরিবর্তিত হওয়ার পর বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে। এটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ফলে আবারও এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে, কোনো কোনো এলাকায় যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংস্থাটি টিকা কর্মসূচি জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘এই ধরনের কারণে সার্বিকভাবে বৈশ্বিক ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।’

এদিকে ডেল্টার মতো ওমিক্রনও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। এ পর্যন্ত অন্তত ১৪টি দেশে পাওয়া গেছে এই ধরন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৯ জন, নেদারল্যান্ডস ও পর্তুগালে ১৩ জন করে, জার্মানিতে ৩ জন, ইতালি, চেক প্রজাতন্ত্র ও বেলজিয়ামে কমপক্ষে ১ জন করে রোগী শনাক্ত হয়েছেন। অস্ট্রিয়াও গতকাল জানিয়েছে, দেশটিতে ওমিক্রন সংক্রমিত ১ জন রোগী পাওয়া গেছে। এ ছাড়া হংকং, ইসরায়েলসহ আরও কয়েকটি দেশে এই ধরনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্তত ৪৪টি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। সর্বশেষ জাপান গতকাল ঘোষণা দিয়েছে, আজ মঙ্গলবার থেকে দেশটির সীমান্ত সব বিদেশি ভ্রমণকারীর জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। জাপান টাইমসের খবরে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, এই বিধিনিষেধ ১ মাস স্থায়ী হবে।

ওমিক্রন কতটা সংক্রামক, উপসর্গ কী
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে রোববার পর্যন্ত সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়েছে, ওমিক্রন কতটা সংক্রামক এবং এর সংক্রমণে রোগী কতটা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, তা এখনো স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে গবেষণা চলছে।

সিএনএন জানায়, দক্ষিণ আফ্রিকার রোগতত্ত্ববিদ ও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় দেশটির মন্ত্রিসভাকে পরামর্শদাতা কমিটির সাবেক প্রধান সেলিম আবদুল করিম বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনের বিষয়ে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ বলছে, এ ধরনটি ডেল্টার চেয়েও সংক্রামক।

আর দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক চিকিৎসক অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজি বলেছেন, করোনার এই ধরনের সংক্রমিত রোগীদের মধ্যে অবসাদ, মাথা ও শরীর ব্যথা দেখা যাচ্ছে। রোগীরা খুব ক্লান্তিবোধ করেন। কারও কারও ক্ষেত্রে গলাব্যথা ও কাশিও থাকছে। গলা খচখচও করছে কারও কারও। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনের সংক্রমণের বিষয়ে দেশটির সরকারকে সতর্ক করা চিকিৎসকদের অন্যতম অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজি। তিনি সাউথ আফ্রিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। তিনি আরও বলেছেন, ডেল্টার সংক্রমণে যেমনটা দেখা যায়, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় এবং স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি লোপ পায়। কিন্তু ওমিক্রনে এমনটা দেখা যায়নি এখনো।

এদিকে করোনার টিকা উৎপাদনকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান মডার্নার প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা পল বার্টন গতকাল বলেছেন, যদি প্রয়োজন হয়, মডার্না ওমিক্রন মোকাবিলার জন্য বিশেষ টিকা উৎপাদন ও বাজারজাত করবে। এই টিকা বাজারে ছাড়তে তাঁর প্রতিষ্ঠানের খুব বেশি হলে ২-৩ মাস সময় লাগতে পারে।

এর আগে করোনার টিকা উৎপাদন ও বাজারজাতকারী আরেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফাইজার বলেছে, তাদের বর্তমান টিকার সুরক্ষা যদি ওমিক্রন ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়, তাহলে তারা ১০০ দিনের মধ্যে হালনাগাদকৃত টিকা উৎপাদন ও বাজারজাত করবে।

আফ্রিকার দেশগুলোর ক্ষোভ
ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় শুক্রবার থেকেই বিভিন্ন দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া শুরু করে। বিবিসি জানায়, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এ পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য’ আখ্যায়িত করে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি সব দেশের প্রতি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে মালাওয়ির প্রেসিডেন্ট লাজারুস চাকউইরা বিভিন্ন দেশের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাকে ‘আফ্রিকাতঙ্ক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর ভাষ্য, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত