পথে নামলেই মারধরের শিকার যৌনকর্মীরা

অর্চি হক, ঢাকা
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ৫৫
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯: ৩৩

গত জানুয়ারিতে পায়েলের (ছদ্মনাম) বাবা মারা যান। মাসছয়েক পরই মারা যান তাঁর ভাই। বাবা আর ভাইয়ের মৃত্যুর পর পুরো পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে পায়েলের ওপর। মৃত ভাইয়ের সন্তানসহ পরিবারের সবার ভরণপোষণের খরচ মেটাতে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে নামতে হয়েছে যৌনকর্ম পেশায়। এ দোষে সম্প্রতি তাঁকে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় পিটিয়ে দুই হাতের কবজি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। 

আজকের পত্রিকাকে পায়েল বলেন, ‘উইঠা বসতেও পারি না ঠিকভাবে। পোলাপানগুলা আছে, ওগো তো খাওয়াইতে হবে। ধারদেনা করা লাগতেছে।’ 

শুধু পায়েল নন, দেশের অনেক ভাসমান যৌনকর্মীই উপার্জন হারিয়ে চরম অর্থকষ্টে পড়েছেন। পরিচিতজনদের কাছে চেয়েচিন্তে বা ধারদেনা করে দিন চালাতে হচ্ছে তাঁদের। গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাঁদের ওপর যে হামলা ও হয়রানি শুরু হয়, তা এখনো থামেনি। 

নিবন্ধিত যৌনকর্মীদের পতিতালয় উচ্ছেদসহ নানা কারণে অনেক নারী যৌনপেশায় কাজ করতে পথে নেমেছেন। তাদের মানবাধিকার তথা স্বার্থরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংগঠন সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ভাসমান যৌনকর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার। 

সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের সম্পাদক  নিলুফা বলেন, ‘৫ সেপ্টেম্বর যৌনকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আমরা সংবাদ সম্মেলন করি। এখনো আমাদের মেয়েদের মারধর করা থামে নাই।’ 

সংগঠনের সভাপতি আলেয়া আক্তার লিলি বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের এখন ধারদেনা করে চলা লাগতেছে। মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা।’ 

সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক বলছে, গত ২০ দিনে শুধু ঢাকাতেই ৩৫০ জনের বেশি যৌনকর্মীকে রাস্তায় লাঠি ও রড দিয়ে মারধর করা হয়েছে। 

মামলার পথেও নানা সমস্যা
সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক নিলুফা জানান, প্রায় দুই মাস ধরে যৌনকর্মীদের ওপর যে হামলা চলছে, তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। কয়েকজন হামলাকারীর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরও তাদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। ভুক্তভোগীদের কারও কারও মামলা করায় অনীহার পাশাপাশি থানায় মামলা না নেওয়ার ঘটনাও আছে। 

অধিকারকর্মী নিলুফা জানান, হামলার শিকার হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পরও অনেকে মামলা করতে চান না। মারধরের শিকার দুজন নারীর সন্তান ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাঁরা পুলিশের কাছে যেতে আগ্রহী নন। 

কল্যাণময়ী নারী সংঘের সভানেত্রী রিনা বেগম বলেন, তাঁরা রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় ১১-১২ সেপ্টেম্বরের দিকে মামলা করতে গিয়েছিলেন। পুলিশ মামলা নেয়নি। 

মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান বলেন, ‘থানায় এসে মামলা করতে পারেনি, এমন কিছু আমার জানা নেই। আমি থানায় উপস্থিত না থাকলেও মামলা নিতে না চাইলে যেন আমাকে তৎক্ষণাৎ ফোন করা হয়।’ 

সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘যৌনকর্মীদের ওপর হামলা অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমরা এটাকে সিরিয়াসলি দেখছি। পুলিশকেও বলেছি, এগুলো বন্ধে ব্যবস্থা নিতে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত