ল্যাপটপ আছে, হারিয়ে গেছেন মিরাজ হোসেন

জহিরুল আলম পিলু, শ্যামপুর-কদমতলী (ঢাকা) 
Thumbnail image

শূন্য চেয়ার, টেবিলে রাখা ল্যাপটপ। এই ল্যাপটপ ছিল মিরাজ হোসেন পাপ্পুর (২৯) সংসার চালানোর মাধ্যম। ফ্রিল্যান্সিং করতেন তিনি। গত ৫ আগস্ট থেকে তাঁর হাতের ছোঁয়া পায়নি ল্যাপটপটি। কারণ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়া মিরাজ নিজেই চলে গেছেন সব ধরাছোঁয়ার বাইরে। ৫ আগস্ট বেলা ২টার পর বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি।

মিরাজদের বাসা রাজধানীর ডেমরা থানার পারডগাইরের মধুবাগে। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার সরস্বতীচর গ্রামে। বিবিএ পাস মিরাজ ছিলেন দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে মেজ। বোন বড়। মিরাজ ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। তাঁর মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন পরিবার এখন দিশেহারাও।

পরিবার সূত্র জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আগে থেকেই অংশ নিচ্ছিলেন মিরাজ। তবে পরিবার জানত না। ৫ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে নাশতা খেয়ে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। যোগ দেন যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে। বেলা ২টার পরপর যাত্রাবাড়ী থানার সামনে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে পুলিশের ছোড়া গুলি লাগে তাঁর বুকের বাঁ পাশে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। কয়েকজন তাঁকে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়।

 রাতে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয় স্থানীয় কবরস্থানে। এ ঘটনায় তাঁর বাবা আব্দুর রব মিয়া ২৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

আব্দুর রব আগে প্রাইভেট কারের চালক ছিলেন। বয়সের ভারে কাজ ছেড়েছেন। ছোট ছেলে পাভেলও বেকার। আব্দুর রব আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রায় দুই বছর আগে বিবিএ পাস করা মিরাজ পাঁচ সদস্যের সংসারের হাল ধরেছিল। তার ফ্রিল্যান্সিংয়ের আয় দিয়েই কোনোরকমে চলত সংসার। মিরাজ যে আন্দোলনে যায়, সেটা তাঁরা জানতে পারেন ৪ আগস্ট। ৫ আগস্ট সকালেও বাসা থেকে বের হয়। বেলা আড়াইটার দিকে ছোট ছেলে পাভেলের মোবাইল ফোনে কল করে জানানো হয়, মিরাজ গুলিবিদ্ধ হয়েছে, মিটফোর্ড হাসপাতালে আছে। তাঁরা হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই ফোন করে জানানো হয়, মিরাজ শহীদ হয়েছে। ছেলে তো কোনো রাজনীতি করত না। তাকে কেন গুলি করে মারা হলো?

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মিরাজের বাবা বলেন, ছেলে এমবিএতে ভর্তির অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু আর্থিক সংকটে হয়নি। তাঁর স্বপ্ন ছিল স্বাবলম্বী হয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাবেন। এরপর সংসারে আর অভাব থাকবে না। ছেলের সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। সংসারের কী হবে, সেই চিন্তায় এখন তিনি দিশেহারা। তিনি বলেন, মিরাজের মৃত্যুর পর আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও ছেলের কয়েকজন সঙ্গী কিছু সহযোগিতা করেছেন। প্রশাসনের কেউ তাঁদের দেখতে বা সহযোগিতা করতে আসেননি।

সন্তান হারিয়ে মিরাজের মা মমতাজ বেগম পাগলপ্রায়। ছেলের ঘরে ঢুকে টেবিল, ল্যাপটপ, শূন্য চেয়ার দেখেন। কাঁদতে কাঁদতে মমতাজ বেগম বলেন, ‘সব পড়ে আছে। মিরাজই নেই। আর কখনো এই চেয়ারে বসে ল্যাপটপে কাজ করবে না। এগুলো স্মৃতি হয়ে থাকবে।’

মামলার বিষয়ে জানতে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মো. মাইনুল ইসলামকে গতকাল বুধবার মোবাইলে কল করা হলে ধরেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত