অনাবাদি ৪ হাজার একর জমি

কালুখালী (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৪৯
Thumbnail image

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার তিনটি বিল প্রায় ৩০ বছর ধরে জলাবদ্ধ থাকায় ব্যাহত হচ্ছে বোয়ালিয়া মাজবাড়ী, ও মৃগী ইউনিয়নের কৃষিকাজ। জলাবদ্ধতার কারণে ইউনিয়ন তিনটির চার হাজার একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে।

জলাবদ্ধতা দূর হলে বিল তিনটির আশপাশের ১৫টি গ্রামের ২০ হাজার কৃষক উপকৃত হবে বলে দাবি এলাকাবাসীর। শিগগিরই জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করে বিল দুটির জমিকে চাষযোগ্য করে তোলার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে উপজেলার পদ্মবিলা, কানাবিলা ও কাসমির বিলের তল ভাগে পানির গভীরতা থাকে আট–দশ হাত। চৈত্র মাসে পানি শুকিয়ে গেলে বৈশাখ–জ্যৈষ্ঠ মাসে ধান চাষ শুরু হয়। তবে আষাঢ় মাসেই শুরু হয় জলাবদ্ধতা। এ অবস্থায় এলাকার কৃষকেরা বিল তিনটিতে দীঘা জাতের ধান চাষ করে। এ জাতের ফলন খুবই কম। উন্নত জাতের ধানের তুলনায় এ ধানের উৎপাদন দশ ভাগের এক ভাগ। এ ধানের চাষ করে কৃষকদের চাষের খরচও ওঠে না।

কৃষকদের দাবি, পদ্মবিলা বিলের মধ্যভাগ থেকে খাল খনন করে কাসমির বিল ও কানাবিলা বিলের মধ্য দিয়ে মৃগী খালের সঙ্গে যুক্ত করে দিলে বিলের পানি গড়াই নদীতে চলে যাবে। এতে বর্ষা মৌসুমে বিলে প্রচুর মাছ আসবে। শুকনা মৌসুমে চাষ হবে পেঁয়াজ, রসুন, উফশী জাতের ধান ও পাট। নতুন স্বপ্ন নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে ২০ হাজার কৃষক পরিবার।

একাধিক স্থানীয় কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোয়ালিয়া মাজবাড়ী, ও মৃগী ইউনিয়নের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে বিস্তৃতি এ তিনটি বিলে রয়েছে কুষ্টিয়াডাঙ্গী, কুষ্টিয়াপাড়া, পঁচাকুলটিয়া, পাঁচটিকরী, কুলটিয়া, মহিমশাহীকালিকাপুর, রাইপুর, শ্রীপুর, শায়েস্তাপুর, বড়ইচাড়া, মসুরিয়া, শিকজান, কলকলিয়া, কাসাদহ ও বাগগারী নামের ১৫টি মৌজা। জলাবদ্ধতা দূর হলে এসব এলাকায় পেঁয়াজ, ধান ও পাটসহ নানান মূল্যবান ফসলের চাষ শুরু হবে।

রাইপুর গ্রামের আক্কাস আলী বলেন, ‘দুই বছর আগে আমরা তিনটি বিলের সমস্যার কথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাছিদুর রহমানের কাছে তুলে ধরেছিলাম। তিনি পদ্মবিল এলাকা ঘুরে এর অনাবাদি জমির পরিমাপ করেন। ওই পরিমাপ অনুযায়ী বিল তিনটির মধ্যে ১ হাজার একর জমি অনাবাদি জমি রয়েছে। অন্য বিলগুলো পরিমাপ করে খাল খননের আশ্বাস দিয়েছিলেন কৃষি কর্মকর্তা। উনি বদলি হয়ে যাওয়ায় সে পরিকল্পনার আর অগ্রগতি হয়নি।’

স্থানীয় শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বিলের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হলে মাজবাড়ী, মৃগী ও বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ২০ হাজারের অধিক কৃষক পরিবার উপকৃত হবে। এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের দুয়ার খুলে যাবে। নানা ধরনের ফসল ফলিয়ে সচ্ছলতা আনতে পারবেন এ এলাকার কৃষকেরা। আধুনিক চাষাবাদের এই যুগে পদ্মবিলা, কানাবিলা ও কাসমির বিলের পানি নিষ্কাশন এখন সময়ের দাবি।’

মাজবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাজী শরিফুল ইসলাম ইসলাম বলেন, ‘কৃষিবান্ধব এ সরকার কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় সারা দেশে খাল খনন কর্মসূচি চালু করেছে।’ জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য তিনি পদ্মবিলা, কানাবিলা ও কাসমির বিলকে এ কর্মসূচির আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পূর্ণিমা হালদার বলেন, ‘কাসমির বিল, পদ্মবিলা ও কানাবিলা বিলের জলাবদ্ধতার বিষয়টি কৃষি বিভাগের নজরে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহযোগিতা পেলে খাল খননের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূর করা হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত