জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
উনিশ শতকের শেষে এবং বিশ শতকের শুরুতে বাঙালি মুসলমান এক অদ্ভুত ভাষা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। ধর্মের ভাষা আরবি, সংস্কৃতির ভাষা ফারসি, ভারতের অন্যান্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের ভাষা উর্দু, রাজভাষা ইংরেজি এবং মাতৃভাষা বাংলা। কোনটা রেখে কোনটাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে সে প্রশ্নে খানিকটা বিহ্বল হয়েছিল বাঙালি।
কিন্তু যে বিষয়টির দিকে নজর দিতে হবে, সেটি হলো—রাষ্ট্রভাষা নিয়ে ১৯৪৭-৪৮ সালে যে বিতর্ক উঠেছিল, তাতে রাষ্ট্রভাষা অর্থটি সবাই একইভাবে বুঝেছেন তা নয়। কেউ কেউ বাংলাকে ভেবেছেন সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে, কেউ ভেবেছেন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। মনীষীদের ভাবনার সঙ্গে পরিচিত হতে গেলে দেখা যাবে, সে সময় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও কাজী মোতাহার হোসেন বাংলাকে পাকিস্তানের একমাত্র না হলেও অন্তত একটি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চেয়েছেন। অন্যদিকে মওলানা আকরম খাঁ ও মুহম্মদ এনামুল হক বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করতে চেয়েছেন।
তবে খুবই তাৎপর্য পূর্ণ বিষয় হলো সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের অফিস-আদালতের ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম বাংলা হবে, এ ব্যাপারে কোনো মতানৈক্য ছিল না।
পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা-সমস্যা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান পরিষদের উদ্যোগে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে যে আলোচনা সভা হয়েছিল, তাতে সভাপতিত্ব করেছিলেন মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ। সভাটি হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ৭ ডিসেম্বর। আকরম খাঁ তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘শতকরা ৯৯ জন যে ভাষায় কথা বলে, সেই ভাষা ব্যতিরেকে অন্য কোনো ভাষা তাহাদের উপর চাপাইয়া দিবার কোন প্রশ্ন উঠে না।...বাংলাদেশে উর্দু ও বাংলা লইয়া যে বিতর্ক চলিতেছে, তাহার কোনই অর্থ হয় না। বস্তুত বাংলাদেশের শিক্ষার বাহন বা অফিস-আদালতের ভাষা বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষা হইতেই পারে না।’ দেখা যাচ্ছে, ‘বস্তুত বাংলাদেশের শিক্ষার বাহন’ বলতে তিনি মূলত পূর্ব বাংলার কথাই বলছেন, সমগ্র পাকিস্তানের কথা নয়।
১৯৪৭ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলা ও উর্দু নিয়ে ঢাকায় দুই দল মানুষের মধ্যে সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছিল। একটি বাসে করে কিছু মুসলমান যুবক উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে স্লোগান দিয়ে হ্যান্ডবিল প্রচার করতে করতে পলাশী ব্যারাকের কাছে পৌঁছানোর পর বাংলা ভাষার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে বড় একদল বাঙালি মুসলমান রমনা ও সেক্রেটারিয়েট অঞ্চলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং অবিলম্বে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করার দাবি জানায়।
একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে যে রাষ্ট্রভাষা পাকিস্তানের নাকি পূর্ব পাকিস্তানের হবে সে বিষয়ে তখনো পরিষ্কারভাবে কিছু বলা হয়নি।
সে বছরের ১৪ ডিসেম্বর ‘ঢাকা প্রকাশ’-এ প্রকাশিত এক সংবাদে আরেকটু বিস্তারিত জানা যায়। তাতে বলা হয়, ‘মুকুল’ নামের একটি বাসে মাইক্রোফোন লাগিয়ে ইটপাটকেল, লাঠিসোঁটা ও ছুরি-তলোয়ার নিয়ে একদল লোক উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য স্লোগান দিতে থাকে। ছড়িয়ে দেওয়া হ্যান্ডবিলে লেখা ছিল, ‘উর্দু মুসলমানের ধর্মীয় ভাষা। যে এই ভাষার বিরুদ্ধে কথা বলিবে, সে কাফের। এই ধরনের কাফের বা বিধর্মীদিগকে শায়েস্তা করিতে হইবে ও উদ্যোগে রাষ্ট্রভাষা করিতে হইবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে থাকা ছাত্রদের কেউ কেউ এই হ্যান্ডবিলের ভাষা সম্বন্ধে আপত্তি প্রকাশ করলে বাসের উর্দু সমর্থকেরা লাঠি ও তলোয়ার নিয়ে আক্রমণ করে এবং মারধর করে। ব্যারাকের ছাত্ররা বেরিয়ে এলে তাদেরও এরা মারধর করে। ইঞ্জিনিয়ারিং হোস্টেলের ছাত্ররা বেরিয়ে এলে আক্রমণকারীরা বাসে করে চকের দিকে চলে যায়।
উনিশ শতকের শেষে এবং বিশ শতকের শুরুতে বাঙালি মুসলমান এক অদ্ভুত ভাষা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। ধর্মের ভাষা আরবি, সংস্কৃতির ভাষা ফারসি, ভারতের অন্যান্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের ভাষা উর্দু, রাজভাষা ইংরেজি এবং মাতৃভাষা বাংলা। কোনটা রেখে কোনটাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে সে প্রশ্নে খানিকটা বিহ্বল হয়েছিল বাঙালি।
কিন্তু যে বিষয়টির দিকে নজর দিতে হবে, সেটি হলো—রাষ্ট্রভাষা নিয়ে ১৯৪৭-৪৮ সালে যে বিতর্ক উঠেছিল, তাতে রাষ্ট্রভাষা অর্থটি সবাই একইভাবে বুঝেছেন তা নয়। কেউ কেউ বাংলাকে ভেবেছেন সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে, কেউ ভেবেছেন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। মনীষীদের ভাবনার সঙ্গে পরিচিত হতে গেলে দেখা যাবে, সে সময় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও কাজী মোতাহার হোসেন বাংলাকে পাকিস্তানের একমাত্র না হলেও অন্তত একটি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চেয়েছেন। অন্যদিকে মওলানা আকরম খাঁ ও মুহম্মদ এনামুল হক বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করতে চেয়েছেন।
তবে খুবই তাৎপর্য পূর্ণ বিষয় হলো সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের অফিস-আদালতের ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম বাংলা হবে, এ ব্যাপারে কোনো মতানৈক্য ছিল না।
পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা-সমস্যা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান পরিষদের উদ্যোগে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে যে আলোচনা সভা হয়েছিল, তাতে সভাপতিত্ব করেছিলেন মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ। সভাটি হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ৭ ডিসেম্বর। আকরম খাঁ তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘শতকরা ৯৯ জন যে ভাষায় কথা বলে, সেই ভাষা ব্যতিরেকে অন্য কোনো ভাষা তাহাদের উপর চাপাইয়া দিবার কোন প্রশ্ন উঠে না।...বাংলাদেশে উর্দু ও বাংলা লইয়া যে বিতর্ক চলিতেছে, তাহার কোনই অর্থ হয় না। বস্তুত বাংলাদেশের শিক্ষার বাহন বা অফিস-আদালতের ভাষা বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষা হইতেই পারে না।’ দেখা যাচ্ছে, ‘বস্তুত বাংলাদেশের শিক্ষার বাহন’ বলতে তিনি মূলত পূর্ব বাংলার কথাই বলছেন, সমগ্র পাকিস্তানের কথা নয়।
১৯৪৭ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলা ও উর্দু নিয়ে ঢাকায় দুই দল মানুষের মধ্যে সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছিল। একটি বাসে করে কিছু মুসলমান যুবক উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে স্লোগান দিয়ে হ্যান্ডবিল প্রচার করতে করতে পলাশী ব্যারাকের কাছে পৌঁছানোর পর বাংলা ভাষার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে বড় একদল বাঙালি মুসলমান রমনা ও সেক্রেটারিয়েট অঞ্চলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং অবিলম্বে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করার দাবি জানায়।
একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে যে রাষ্ট্রভাষা পাকিস্তানের নাকি পূর্ব পাকিস্তানের হবে সে বিষয়ে তখনো পরিষ্কারভাবে কিছু বলা হয়নি।
সে বছরের ১৪ ডিসেম্বর ‘ঢাকা প্রকাশ’-এ প্রকাশিত এক সংবাদে আরেকটু বিস্তারিত জানা যায়। তাতে বলা হয়, ‘মুকুল’ নামের একটি বাসে মাইক্রোফোন লাগিয়ে ইটপাটকেল, লাঠিসোঁটা ও ছুরি-তলোয়ার নিয়ে একদল লোক উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য স্লোগান দিতে থাকে। ছড়িয়ে দেওয়া হ্যান্ডবিলে লেখা ছিল, ‘উর্দু মুসলমানের ধর্মীয় ভাষা। যে এই ভাষার বিরুদ্ধে কথা বলিবে, সে কাফের। এই ধরনের কাফের বা বিধর্মীদিগকে শায়েস্তা করিতে হইবে ও উদ্যোগে রাষ্ট্রভাষা করিতে হইবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে থাকা ছাত্রদের কেউ কেউ এই হ্যান্ডবিলের ভাষা সম্বন্ধে আপত্তি প্রকাশ করলে বাসের উর্দু সমর্থকেরা লাঠি ও তলোয়ার নিয়ে আক্রমণ করে এবং মারধর করে। ব্যারাকের ছাত্ররা বেরিয়ে এলে তাদেরও এরা মারধর করে। ইঞ্জিনিয়ারিং হোস্টেলের ছাত্ররা বেরিয়ে এলে আক্রমণকারীরা বাসে করে চকের দিকে চলে যায়।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে