মোনায়েম সরকার
এমন সময় এ নিবন্ধ লিখতে হচ্ছে, যখন নতুন বাজেট প্রস্তুত এবং তা প্রদানের জন্য সংসদ অধিবেশন বসেছে। তবে এ অবস্থায়ও বাজেট নিয়ে কিছু কথা লেখা যায়। কেননা, বাজেটে কী কী থাকবে, তার অনেকটাই সংবাদপত্রে এসে গেছে। আমি প্রতিদিন কিছু সংবাদপত্র পড়ি। সব খবর যে মনোযোগ দিয়ে পড়ি, তা নয়। তবে এ নিবন্ধ লিখতে বসার আগে আজকের পত্রিকাসহ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের বাজেট-বিষয়ক প্রতিবেদন পড়েছি। আর তাতে মনে হচ্ছে, সরকার একটা কঠিন অবস্থায় বাজেটটি দিতে যাচ্ছে। আমি অর্থনীতির ছাত্র নই; তবে রাজনীতিসহ সামাজিক কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিন জড়িয়ে থাকার সুবাদে প্রকাশিত খবরাখবর নিয়ে কিছু কথা এখানে বলতে চাই।
আমার মনে হচ্ছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে এ প্রক্রিয়ায় লাগাম টেনে ধরাই হবে বাজেটে সরকারের প্রধান কাজ। প্রতি বাজেটেই মূল্যস্ফীতি কত শতাংশে রাখা হবে, তার একটি ঘোষণা থাকে। সরকার চেষ্টা করে মূল্যস্ফীতিকে সে জায়গায় রাখতে। কেননা, এটা বেড়ে গেলে বিশেষত স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনে দুর্গতি বেড়ে যায়। তাতে সরকারও অজনপ্রিয় হয়। কোনো সরকারই জনপ্রিয়তা হারাতে চায় না। তা ছাড়া এটা হলো নির্বাচনের বছর। দেশে এখন কয়েকটি সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা, বছরের শেষ বা নতুন বছরের শুরুতেই হবে জাতীয় নির্বাচন। এ নিয়ে এরই মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম। প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মহলও তৎপর হয়ে উঠেছে। ভুলে গেলে চলবে না, তাদের রয়েছে নিজস্ব এজেন্ডা। সরকারও বলেছে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবার অনুষ্ঠিত হবে। এতে ক্ষমতাসীন দল কেমন করবে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার কেমন থাকে, তার ওপর। সাধারণ মানুষ খেয়ে-পরে ভালো থাকতে চায়। তারা চায় তাদের আয় ঠিক থাকুক। আর ব্যয় করে কিছু টাকা তারা সঞ্চয়ও করতে চায় বিপদ-আপদে কাজে লাগানোর জন্য। এ সুযোগ রাখতে যা যা করা প্রয়োজন, তা করতে সরকার ভুল করবে না বলেই আমার বিশ্বাস। কাজটি কঠিন, কিন্তু সেটা সম্ভব করে তুলতে হবে। বাজেটে এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা জনগণ স্বভাবতই দেখতে চাইবে।
সে ক্ষেত্রে কিছুটা দুশ্চিন্তা জাগে, যখন খবর পাওয়া যায় যে বাজেটে জনসাধারণের ওপর করের বোঝা আরও বাড়বে। বাজেট ক্রমে বড় হচ্ছে, সেটা অবশ্য স্বাভাবিক। বড় বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে বেশি কর-রাজস্বও আদায় করতে হবে। ‘আদায়’ শব্দটি আমার কাছে কঠোর মনে হয়। এর চেয়ে ‘আহরণ’ লিখতে ভালো লাগে। যা হোক, সরকারকে নতুন বছরে আরও বেশি কর আহরণ করতে হবে বেড়ে চলা ব্যয় মেটানোর জন্য। বাজেট তৈরির ক্ষেত্রে সব সময়ই সরকার আগে ব্যয়ের পরিমাণ ঠিক করে; তারপর কোন কোন খাত থেকে অর্থ আসবে, তার পরিকল্পনা করে। আমরা জানি, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে কিছুটা টানাটানি চলছে। জরুরি অনেক পণ্যসামগ্রী সহজে আমদানি করা যাচ্ছে না। সরকার সতর্ক বলেও আমদানি কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। আইএমএফের পরামর্শ মেনে চলতেও রিজার্ভকে একটা পর্যায়ে রাখতে হচ্ছে। সংস্থাটির শর্তের মধ্যে কর আহরণ বাড়ানোর বিষয়ও রয়েছে। চলতি অর্থবছরে কর আহরণে সরকার বেশি সফল হতে পারেনি। শেষ সময়ে সেই ঘাটতি বোধ হয় আর পূরণ হবে না। এমনটি অবশ্য প্রায় প্রতিবছর হতে দেখা যায়। কখনো ব্যয় কমিয়ে আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য আনা হয়। উন্নয়ন ব্যয় কমাতে দেখা যায় শেষ সময়ে। এবার উন্নয়ন ব্যয়ও বেশি করতে পারেনি সরকার। এ অবস্থায় শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে টাকা-পয়সা খরচ না করাই ভালো বলে মনে করেন অনেকে।
কর আহরণ বাড়াতে সরকার নতুন কী পদক্ষেপ নেবে, সে বিষয়েও অনেকে চিন্তিত। এর পাশাপাশি শ্রেণিনির্বিশেষে সব মানুষের ওপর বর্তায় যে কর, তার ওপর সরকার আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্গতি বাড়বে। এতে মানুষে মানুষে বৈষম্য না কমে আরও বাড়বে। আমরা এরই মধ্যে দীর্ঘ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি। তারপর ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের ওপরও চেপে বসেছে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চাপ। দেশের ভেতরেও বাজার ব্যবস্থাপনায় নানা সমস্যা থাকায় পণ্যসামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি এক খবরে জানা যায়, পরিবহন ব্যয়ের কারণেই অনেক জিনিসের দাম বিপুলভাবে বেড়ে যাচ্ছে। দেশে যোগাযোগব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে আর সেটা বেশি হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। তার সুফল পাওয়ার কথা মানুষের। এর বিপরীতটি হচ্ছে কেন, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহনে খরচ বেড়েছে সন্দেহ নেই। যাতায়াত দ্রুততর হওয়ার জন্য তো আবার খরচ কমার কথা। সেই ব্যালান্সটি হচ্ছে না কেন? এ অবস্থায় যেসব কর প্রস্তাব আসছে, সেগুলো নিয়ে সংসদে জনস্বার্থ বিবেচনায় রেখে যেন আলোচনা হয়। এ নিবন্ধ লেখার সময় পর্যন্ত কোনো কোনো সংবাদপত্রে খবর রয়েছে, যাদের করযোগ্য আয় নেই, তাদেরও নাকি রিটার্ন দাখিলের সময় ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা দিতে হবে। নইলে কিছু সার্ভিস নিতে গিয়ে তাদের আটকে যেতে হবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কর আহরণ বাড়াতে গিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না বলেই মনে করি। যাদের টিন নম্বর নেই, রিটার্ন দাখিল করে না, তাদেরও অনেক পণ্যসামগ্রী কিনতে গিয়ে নিজের অজান্তে কর দিতে হয়। এদিকে অনেক সম্পদশালী আয়কর ফাঁকি দিয়ে থাকে এবং তারা ধরাও পড়ে না; কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষকে অনিবার্যভাবে কর দিতে হয়। বিদ্যমান অবস্থায় এর চাপ তাদের ওপর যেন না বাড়ে, সেদিক অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোনো কর প্রস্তাবে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আশা করা যায়, বাজেট নিয়ে আলোচনার শেষে এটি পাসের সময় তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ব্যবস্থা তিনি করবেন।
সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা যায়। একাধিক বিরূপ পরিস্থিতির চাপে দেশে নতুন করে যেসব মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছে, তাদের দিকে তাকিয়ে সরকারকে এটা করতে হচ্ছে। আশা করব, এসব কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। দরিদ্র জনসাধারণের যাতে কাজের সুযোগ বাড়ে, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। কৃষিতে সব সময় কাজের সুযোগ থাকে না। মানুষ যাতে বছরব্যাপী আয় করতে পারে, এমন সব খাতের দিকে নজর বাড়াতে হবে। এসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো পদক্ষেপ ভুলেও নেওয়া যাবে না। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক খাত এখনো বড় নয়। বেশির ভাগ শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। এদের কল্যাণে সরকারের প্রচেষ্টা গ্রহণের সুযোগও কম। তবে কোনো খাতেই যাতে বিনিয়োগ না কমে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের একধরনের সংকট চলছে। উৎপাদনক্ষমতা অনেক বাড়ানো গেলেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তার নানা কারণ রয়েছে। এসব কারণ যথাসম্ভব দূর করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। প্রতিবছরই এ খাতে বড় বরাদ্দ থাকে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরও অনেক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। তার পরও লোডশেডিং চললে সর্বস্তরের মানুষ যেমন বিরক্ত হবে, তেমনি বিভিন্ন খাতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত গার্মেন্টসকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখা চাই। আমাদের শ্রমশক্তি রপ্তানির ধারাও যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাদের বিদেশে যাওয়ার খরচ কমানোর জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। আর তাদের উপার্জিত অর্থ যেন সরকারি চ্যানেলে দেশে এসে রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করে, সেই চেষ্টা জোরদার করতে হবে।
বাজেটে প্রশাসন পরিচালনা বাবদ ব্যয় ক্রমে বাড়ছে। এটা নিয়ে সমালোচনা আছে। কেননা, সাধারণ মানুষ, এমনকি উদ্যোক্তারা প্রশাসন থেকে সেবা পাচ্ছে না প্রত্যাশামতো। এ খাতে অপচয় যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেই চেষ্টা জারি থাকুক। এসব ব্যয় নির্বাহে সম্পদশালী ও বেশি আয়ের মানুষের কাছ থেকে অধিক কর আহরণের ব্যবস্থা হলে কেউ আপত্তি করবে না। বাজেট বাস্তবায়নে সরকার ব্যাংক থেকে টাকা-পয়সা ধার করা কমাতে পারলেই ভালো। সে ক্ষেত্রে কম সুদে বিদেশি ঋণ গ্রহণকে অনেকে ভালো বিকল্প মনে করেন। এসব বিষয়ে অর্থনীতিবিদেরাই ভালো বলতে পারবেন। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ যাঁরা আছেন, তাঁদের পরামর্শ শুনলে ক্ষতি নেই। তবে অনেকে কেবল সংকটের কথা প্রচার করেন, যা অপ্রত্যাশিত। নতুন অর্থবছরে কিছু নতুন অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই হবে। সরকারকেও তা মোকাবিলা করতে হবে দৃঢ়তা ও সৃজনশীলতার সঙ্গে।
লেখক: রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর
এমন সময় এ নিবন্ধ লিখতে হচ্ছে, যখন নতুন বাজেট প্রস্তুত এবং তা প্রদানের জন্য সংসদ অধিবেশন বসেছে। তবে এ অবস্থায়ও বাজেট নিয়ে কিছু কথা লেখা যায়। কেননা, বাজেটে কী কী থাকবে, তার অনেকটাই সংবাদপত্রে এসে গেছে। আমি প্রতিদিন কিছু সংবাদপত্র পড়ি। সব খবর যে মনোযোগ দিয়ে পড়ি, তা নয়। তবে এ নিবন্ধ লিখতে বসার আগে আজকের পত্রিকাসহ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের বাজেট-বিষয়ক প্রতিবেদন পড়েছি। আর তাতে মনে হচ্ছে, সরকার একটা কঠিন অবস্থায় বাজেটটি দিতে যাচ্ছে। আমি অর্থনীতির ছাত্র নই; তবে রাজনীতিসহ সামাজিক কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিন জড়িয়ে থাকার সুবাদে প্রকাশিত খবরাখবর নিয়ে কিছু কথা এখানে বলতে চাই।
আমার মনে হচ্ছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে এ প্রক্রিয়ায় লাগাম টেনে ধরাই হবে বাজেটে সরকারের প্রধান কাজ। প্রতি বাজেটেই মূল্যস্ফীতি কত শতাংশে রাখা হবে, তার একটি ঘোষণা থাকে। সরকার চেষ্টা করে মূল্যস্ফীতিকে সে জায়গায় রাখতে। কেননা, এটা বেড়ে গেলে বিশেষত স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনে দুর্গতি বেড়ে যায়। তাতে সরকারও অজনপ্রিয় হয়। কোনো সরকারই জনপ্রিয়তা হারাতে চায় না। তা ছাড়া এটা হলো নির্বাচনের বছর। দেশে এখন কয়েকটি সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা, বছরের শেষ বা নতুন বছরের শুরুতেই হবে জাতীয় নির্বাচন। এ নিয়ে এরই মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম। প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মহলও তৎপর হয়ে উঠেছে। ভুলে গেলে চলবে না, তাদের রয়েছে নিজস্ব এজেন্ডা। সরকারও বলেছে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবার অনুষ্ঠিত হবে। এতে ক্ষমতাসীন দল কেমন করবে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার কেমন থাকে, তার ওপর। সাধারণ মানুষ খেয়ে-পরে ভালো থাকতে চায়। তারা চায় তাদের আয় ঠিক থাকুক। আর ব্যয় করে কিছু টাকা তারা সঞ্চয়ও করতে চায় বিপদ-আপদে কাজে লাগানোর জন্য। এ সুযোগ রাখতে যা যা করা প্রয়োজন, তা করতে সরকার ভুল করবে না বলেই আমার বিশ্বাস। কাজটি কঠিন, কিন্তু সেটা সম্ভব করে তুলতে হবে। বাজেটে এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা জনগণ স্বভাবতই দেখতে চাইবে।
সে ক্ষেত্রে কিছুটা দুশ্চিন্তা জাগে, যখন খবর পাওয়া যায় যে বাজেটে জনসাধারণের ওপর করের বোঝা আরও বাড়বে। বাজেট ক্রমে বড় হচ্ছে, সেটা অবশ্য স্বাভাবিক। বড় বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে বেশি কর-রাজস্বও আদায় করতে হবে। ‘আদায়’ শব্দটি আমার কাছে কঠোর মনে হয়। এর চেয়ে ‘আহরণ’ লিখতে ভালো লাগে। যা হোক, সরকারকে নতুন বছরে আরও বেশি কর আহরণ করতে হবে বেড়ে চলা ব্যয় মেটানোর জন্য। বাজেট তৈরির ক্ষেত্রে সব সময়ই সরকার আগে ব্যয়ের পরিমাণ ঠিক করে; তারপর কোন কোন খাত থেকে অর্থ আসবে, তার পরিকল্পনা করে। আমরা জানি, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে কিছুটা টানাটানি চলছে। জরুরি অনেক পণ্যসামগ্রী সহজে আমদানি করা যাচ্ছে না। সরকার সতর্ক বলেও আমদানি কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। আইএমএফের পরামর্শ মেনে চলতেও রিজার্ভকে একটা পর্যায়ে রাখতে হচ্ছে। সংস্থাটির শর্তের মধ্যে কর আহরণ বাড়ানোর বিষয়ও রয়েছে। চলতি অর্থবছরে কর আহরণে সরকার বেশি সফল হতে পারেনি। শেষ সময়ে সেই ঘাটতি বোধ হয় আর পূরণ হবে না। এমনটি অবশ্য প্রায় প্রতিবছর হতে দেখা যায়। কখনো ব্যয় কমিয়ে আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য আনা হয়। উন্নয়ন ব্যয় কমাতে দেখা যায় শেষ সময়ে। এবার উন্নয়ন ব্যয়ও বেশি করতে পারেনি সরকার। এ অবস্থায় শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে টাকা-পয়সা খরচ না করাই ভালো বলে মনে করেন অনেকে।
কর আহরণ বাড়াতে সরকার নতুন কী পদক্ষেপ নেবে, সে বিষয়েও অনেকে চিন্তিত। এর পাশাপাশি শ্রেণিনির্বিশেষে সব মানুষের ওপর বর্তায় যে কর, তার ওপর সরকার আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্গতি বাড়বে। এতে মানুষে মানুষে বৈষম্য না কমে আরও বাড়বে। আমরা এরই মধ্যে দীর্ঘ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি। তারপর ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের ওপরও চেপে বসেছে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চাপ। দেশের ভেতরেও বাজার ব্যবস্থাপনায় নানা সমস্যা থাকায় পণ্যসামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি এক খবরে জানা যায়, পরিবহন ব্যয়ের কারণেই অনেক জিনিসের দাম বিপুলভাবে বেড়ে যাচ্ছে। দেশে যোগাযোগব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে আর সেটা বেশি হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। তার সুফল পাওয়ার কথা মানুষের। এর বিপরীতটি হচ্ছে কেন, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহনে খরচ বেড়েছে সন্দেহ নেই। যাতায়াত দ্রুততর হওয়ার জন্য তো আবার খরচ কমার কথা। সেই ব্যালান্সটি হচ্ছে না কেন? এ অবস্থায় যেসব কর প্রস্তাব আসছে, সেগুলো নিয়ে সংসদে জনস্বার্থ বিবেচনায় রেখে যেন আলোচনা হয়। এ নিবন্ধ লেখার সময় পর্যন্ত কোনো কোনো সংবাদপত্রে খবর রয়েছে, যাদের করযোগ্য আয় নেই, তাদেরও নাকি রিটার্ন দাখিলের সময় ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা দিতে হবে। নইলে কিছু সার্ভিস নিতে গিয়ে তাদের আটকে যেতে হবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কর আহরণ বাড়াতে গিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না বলেই মনে করি। যাদের টিন নম্বর নেই, রিটার্ন দাখিল করে না, তাদেরও অনেক পণ্যসামগ্রী কিনতে গিয়ে নিজের অজান্তে কর দিতে হয়। এদিকে অনেক সম্পদশালী আয়কর ফাঁকি দিয়ে থাকে এবং তারা ধরাও পড়ে না; কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষকে অনিবার্যভাবে কর দিতে হয়। বিদ্যমান অবস্থায় এর চাপ তাদের ওপর যেন না বাড়ে, সেদিক অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোনো কর প্রস্তাবে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আশা করা যায়, বাজেট নিয়ে আলোচনার শেষে এটি পাসের সময় তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ব্যবস্থা তিনি করবেন।
সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা যায়। একাধিক বিরূপ পরিস্থিতির চাপে দেশে নতুন করে যেসব মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছে, তাদের দিকে তাকিয়ে সরকারকে এটা করতে হচ্ছে। আশা করব, এসব কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। দরিদ্র জনসাধারণের যাতে কাজের সুযোগ বাড়ে, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। কৃষিতে সব সময় কাজের সুযোগ থাকে না। মানুষ যাতে বছরব্যাপী আয় করতে পারে, এমন সব খাতের দিকে নজর বাড়াতে হবে। এসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো পদক্ষেপ ভুলেও নেওয়া যাবে না। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক খাত এখনো বড় নয়। বেশির ভাগ শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। এদের কল্যাণে সরকারের প্রচেষ্টা গ্রহণের সুযোগও কম। তবে কোনো খাতেই যাতে বিনিয়োগ না কমে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের একধরনের সংকট চলছে। উৎপাদনক্ষমতা অনেক বাড়ানো গেলেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তার নানা কারণ রয়েছে। এসব কারণ যথাসম্ভব দূর করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। প্রতিবছরই এ খাতে বড় বরাদ্দ থাকে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরও অনেক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। তার পরও লোডশেডিং চললে সর্বস্তরের মানুষ যেমন বিরক্ত হবে, তেমনি বিভিন্ন খাতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত গার্মেন্টসকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখা চাই। আমাদের শ্রমশক্তি রপ্তানির ধারাও যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাদের বিদেশে যাওয়ার খরচ কমানোর জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। আর তাদের উপার্জিত অর্থ যেন সরকারি চ্যানেলে দেশে এসে রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করে, সেই চেষ্টা জোরদার করতে হবে।
বাজেটে প্রশাসন পরিচালনা বাবদ ব্যয় ক্রমে বাড়ছে। এটা নিয়ে সমালোচনা আছে। কেননা, সাধারণ মানুষ, এমনকি উদ্যোক্তারা প্রশাসন থেকে সেবা পাচ্ছে না প্রত্যাশামতো। এ খাতে অপচয় যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেই চেষ্টা জারি থাকুক। এসব ব্যয় নির্বাহে সম্পদশালী ও বেশি আয়ের মানুষের কাছ থেকে অধিক কর আহরণের ব্যবস্থা হলে কেউ আপত্তি করবে না। বাজেট বাস্তবায়নে সরকার ব্যাংক থেকে টাকা-পয়সা ধার করা কমাতে পারলেই ভালো। সে ক্ষেত্রে কম সুদে বিদেশি ঋণ গ্রহণকে অনেকে ভালো বিকল্প মনে করেন। এসব বিষয়ে অর্থনীতিবিদেরাই ভালো বলতে পারবেন। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ যাঁরা আছেন, তাঁদের পরামর্শ শুনলে ক্ষতি নেই। তবে অনেকে কেবল সংকটের কথা প্রচার করেন, যা অপ্রত্যাশিত। নতুন অর্থবছরে কিছু নতুন অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই হবে। সরকারকেও তা মোকাবিলা করতে হবে দৃঢ়তা ও সৃজনশীলতার সঙ্গে।
লেখক: রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১২ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে