৪ বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি জনভোগান্তি চরমে

শেখ আবু হাসান, খুলনা
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫: ১৪

মহানগরী খুলনায় প্রায় চার বছর ধরেই থেমে থেমে চলছে পানি, বিদ্যুৎ, সড়ক, ড্রেন ও ফুটপাতসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার উন্নয়নকাজ। আর কাজ করতে গিয়ে খোঁড়াখুঁড়িতে নগরীর প্রায় সব সড়কের এখন বেহাল দশা। সেই সঙ্গে নগরবাসীর ভোগান্তি আর বিড়ম্বনাও হচ্ছে দীর্ঘতর।

নগর উন্নয়নে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে উন্নয়নকাজে দীর্ঘসূত্রতা এমন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগরীর ছোট-বড় বেশির ভাগ সড়কে তিন-চার বছর ধরে সংস্কার, নির্মাণ, প্রশস্তকরণ, উঁচুকরণ, ফুটপাত নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধন, ড্রেন-কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে অনেক সড়কের সংস্কারকাজ শেষ পর্যায় রয়েছে। এগুলোর বাকি শুধু কার্পেটিং, আরসিসি বা সিসির কাজ।

এ অবস্থায় ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন (স্যুয়ারেজ) প্রকল্পের মাধ্যমে সড়কে পাইপ বসানোর কাজ শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নগরবাসী। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সড়কে স্যুয়ারেজের পাইপ বসানোর কাজ শেষ না করতে পারলে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সড়কগুলোতে পিচ ঢালাই দিতে পারছে না। সে জন্য কেসিসি এসব সড়কের কাজ বন্ধ রেখেছে।

এ বিষয়ে কেসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মসিউজ্জামানের সঙ্গে আলাপ করে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, নগরীর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নির্মাণকাজ শেষের পথে। কিন্তু এসব সড়কে ওয়াসার স্যুয়ারেজের পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ না হলে সড়কে কার্পেটিং, আরসিসি ও সিসির কাজ করা যাচ্ছে না। এ জন্য কেসিসি সড়ক সংস্কারের কাজ আপাতত বন্ধ রেখেছে। তবে ড্রেন নির্মাণ ও ফুটপাত ঢালাইয়ের কাজ অব্যাহত রেখেছে। একসঙ্গে বেশ কটি সড়ক সংস্কার, ড্রেন নির্মাণের কাজ চলায় নগরবাসীর কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। তবে কেসিসি কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে, যাতে দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করা যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে মসিউজ্জামান বলেন, বর্তমানে নগরীর ৫৫টি সড়ক ও ৫২টি ড্রেনের (নালা) সংস্কারের কাজ চলমান। ইতিমধ্যে সড়কগুলোর সংস্কারের কাজ ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। আর ড্রেনগুলোর সংস্কারের কাজ প্রায় ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ওয়াসার স্যুয়ারেজের পাইপলাইন বসবে বলে অনেক সড়কের কাজ এখনো শুরু করা যায়নি। ড্রেন প্রশস্তকরণ, ফুটপাত নির্মাণ, ময়ূর নদ, খুদের খাল, মতিয়াখালী খালসহ চার-পাঁচটি খাল খনন করা হবে। এর কাজ শিগগিরই শুরু করা হবে। ইতিমধ্যে এসব কাজের কার্যাদেশ (ওয়ার্ক অর্ডার) ঠিকাদারদের দেওয়া হয়েছে। বর্ষার কারণে সংস্কার ও নির্মাণের কাজ একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে এসব অবকাঠামোর উন্নয়নকাজ শেষ হলে খুলনা নগরী একটি আধুনিক ও জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে। তিনি বলেন, কেসিসি ও ওয়াসার মধ্যে যথেষ্ট সমন্বয় রয়েছে। যেকোনো বড় উন্নয়নকাজে সবারই একটু কষ্ট হবে।

এ প্রসঙ্গে খুলনা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খান সেলিম আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, একটি পরিবেশবান্ধব ও উন্নত নগর গড়তে আধুনিক পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা একান্ত দরকার। সে হিসেবে খুলনা নগরীতে পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। ২৬০ থেকে ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন পয়োনিষ্কাশন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া এই প্রকল্পে ৮টি পাম্পিং স্টেশন ও ২টি পয়োনিষ্কাশন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের ২০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, যে ধরনের প্রকল্প, তাতে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এ জন্য নগরবাসীর কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুততার সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যাতে নগরবাসীর ভোগান্তি কম হয়। এ কাজে কেসিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ওয়াসার সমন্বয় রয়েছে।

এ ব্যাপারে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খুলনা শহরে জনসংখ্যা ও যানবাহন বাড়ছে। সে তুলনায় নগরীতে সড়কসংখ্যা বাড়ছে না। এমনকি ভবন নির্মাণের কারণে পাশে জায়গা না থাকায় সড়কগুলো প্রশস্ত করাও সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান নগর উন্নয়নে যে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে, তাতে সমন্বয়হীনতার ছাপ রয়েছে। সমন্বয়ের অভাবে উন্নয়নকাজে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিচ্ছে। ফলে যথাসময়ে নির্মাণ বা সংস্কারের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। এর ফলে নগরবাসীর দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এই দুর্ভোগ থেকে আমরা মুক্তি চাই।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত