মামুনুর রশীদ
ঘূর্ণিঝড়ের আগমনী আতঙ্ক বেশ কদিন রইল। নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে ঘূর্ণিঝড়টি দুই দিন রয়েছে বটে, কিন্তু উপকূলে যা সর্বনাশ হওয়ার তা হয়ে গেছে। এবারের বড় আলোচনার বিষয় ছিল বাঁধ, যে বাঁধগুলো নিয়ে গতবারও কথা হয়েছে। সেই বাঁধগুলোর তেমন কোনো সংস্কার হয়নি। ফলে আবার বাঁধ ভেঙে লবণাক্ত পানি ফসলের জমিতে ঢুকে পড়েছে। ভবিষ্যতে এই ফসলি জমিগুলো লবণাক্ততার দোষে দুষ্ট হয়ে উর্বরতা হারাবে। অবকাঠামো উন্নয়নের কালে এই বাঁধগুলোর কেন উন্নতি হয় না, তা বোঝা খুব কঠিন নয়। বহু বছর ধরেই এমন চলছে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ বাংলাদেশ কখনোই এড়াতে পারবে না। কয়েক বছর ধরে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস পশ্চিমবঙ্গেও সম্প্রসারিত হয়েছে। সাগরদ্বীপ থেকে কলকাতায় তার ডানা বিস্তার করেছে।
ঐতিহ্যগতভাবে বাংলার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ—এসবের একটা মর্মান্তিক ইতিহাস আছে। এসব বিপর্যয়ে মানুষ ছিন্নমূল হয়, মৃত্যুবরণ করে, বাঁচার আশায় দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ে বটে, কিন্তু একধরনের মানুষ এর মধ্য দিয়েই বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়। বিভূতিভূষণের উপন্যাসে সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র ‘অশনিসংকেত’-এ মন্বন্তরের ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছি। বিজন ভট্টাচার্যের ‘নবান্ন’ নাটকে, জয়নুল আবেদিনের আঁকা ছবিতেও বুঝতে পেরেছি এসব ঘটনার উৎসস্থল কোথায়। কিছু লোক হয়তো এই দুর্যোগের অপেক্ষাতেই থাকে।
দুর্যোগের পরবর্তী সময়ে প্রচুর কাজ হবে এবং তা প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থে। এ সময় শকুনের প্রত্যাশা নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং কেউ কেউ এই সুযোগে আঙুল ফুলে কলাগাছ হবে।
নানা ধরনের দুর্বৃত্তায়নের ফলে সামাজিক প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের কণ্ঠ দুর্বল শুধু নয়, কোনো কোনো জায়গায় পেশিশক্তির কাছে পরাজিত হয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। দীর্ঘস্থায়ী এই প্রক্রিয়ার ফলে চোখের সামনে ব্যাপক দুর্নীতি ও অন্যায় হলেও কেউ মুখ খোলে না।
এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতৃত্বের সামনে সবাই নতজানু হয়ে মেরুদণ্ডহীন একটা সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাঁধগুলো দ্রুত নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। এটা ওই সব সুবিধাভোগীর জন্য বড় সুযোগই এনে দেবে। উদ্দেশ্য মহৎ হলেও চাটার দল সেই মহত্ত্বকে সর্বনাশ করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।
এই ঝড়ের আগেই আরেকটি ঝড় তৈরি হয়েছে জনমনে। নানা প্রশ্নে জর্জরিত ঝড়টিও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে। তিনবারের এমপি আজীমের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যতটা জনশ্রুতি থেকে জানা যাচ্ছে, তাতে চোরাচালান, হুন্ডির অর্থ, পাচার করা টাকার ভাগাভাগিই নাকি এর মূল কারণ। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে কীভাবে তিনবার তিনি সংসদ সদস্য হলেন? মনোনয়ন পেলেন এবং নির্বাচিত হয়ে গেলেন? তাহলে এতগুলো বছর ধরে অনায়াসে বিনা বাধায় এসব কর্মকাণ্ড করে গেলেন, কেউ বুঝতে পারল না? সরকারের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা কি ঘুমিয়ে থাকে?
তাঁদের একটা সুবিধা হচ্ছে, তাঁদের কেউ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত নন। তাঁদের কোনো রাজনৈতিক ইতিহাস নেই। ছাত্ররাজনীতি, মূলধারার রাজনীতি, সে বাম হোক বা ডান হোক, কোথাও তাঁদের শিকড় খুঁজে পাওয়া যায় না। এমন অনেক এমপি আছেন, যাঁরা মন্ত্রী হলেও তাঁদের শিকড় খুঁজে পাওয়া যায় না বা চেনা যায় না। এ ধরনের ইতিহাসবিচ্ছিন্ন রাজনীতিবিদদের বড় সুবিধা হচ্ছে, তাঁদের কোনো সামাজিক অঙ্গীকার নেই, তাই চক্ষুলজ্জার বিষয়টির কোনো ধার তাঁরা ধারেন না। যে শিক্ষাব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে তাঁদের উত্থান হয়েছে, তাতে কোনো মূল্যবোধও তৈরি হয়নি। এত কিছুর মধ্য দিয়ে এসে জীবনের পরম ব্রতও হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘টাকা’। এই টাকার দ্বারা যত সুখ-সমৃদ্ধি কেনা যায়, তাতেই তাঁদের ভবিষ্যৎ।
এমপি আজীমের মেয়ের একটি আর্তি খুবই বেদনাদায়ক যে, তাঁর বাবার খণ্ডিত দেহের কোনো একটি অংশকে তিনি স্পর্শ করতে চান। সেখান থেকেও তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। কী নিদারুণ বঞ্চনা! কিন্তু এমপি আজীমরা যখন এসব কাজে নিয়োজিত থাকেন, তখন তাঁদের স্বজনেরাও এসব বুঝতে পারেন না? নির্ধারিত আয় বা সৎ আয়ে যাঁরা সংসার চালান, তাঁদের জীবনযাপন কি তারা দেখেন না? এসব দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা সাধারণত ভোগী জীবনের দিকেই ঝুঁকে পড়েন। প্রাইভেট স্কুলে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল অর্থ ব্যয়ে একটি সনদ জোগাড় করে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন। সেখানে সফলও হয়ে থাকেন। কোনো ধরনের মানবিক সম্পর্কের তাঁরা ধার ধারেন না। ঢাকায় অভিজাত এলাকার ফ্ল্যাটে বসে বড় পর্দায় ছায়াছবি দেখে, কম্পিউটারে টোকাটুকি করে ইউটিউব দেখে, বড় রেস্তোরাঁয় জাঙ্ক ফুড খেয়েই দিনরাত কেটে যায়। তাঁদের বন্ধুবান্ধবও জুটে যায় সেই রকমই। কিন্তু বিপদে পড়লে কেউ আর এগিয়ে আসে না।
বাংলাদেশ কিছু কিছু দুর্বৃত্তের জন্য একেবারেই অভয়ারণ্য। তেমনি সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। যখন তাঁরা কর্মরত থাকেন, সরকারের সরাসরি নজরদারিতে তখন তাঁদের কিছু হয় না। বিত্ত বাড়তেই থাকে, কোথাও যেন বাধা দেওয়ার কেউ নেই। ক্ষমতাধর রাজনীতিকদের ব্যাপারও তা–ই। সাবেক হয়ে যাওয়ার পর বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ তখন বিচারের ব্যবস্থা করে। দূর বিদেশে নয়, প্রতিবেশী রাষ্ট্রেও ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রীরা জেলে থাকছেন। সরকারি কর্মকর্তারাও জেলে আছেন, বিচারের অপেক্ষায়।
হত্যাকাণ্ড কোনো সমাধান নয়। দেশেই দুর্বৃত্তদের বিচারের ব্যবস্থা হওয়া উচিত। লুটপাট, অসাধু ব্যবস্থা ছাড়া এত বড় বিত্তের অধিকারী হওয়া সম্ভব নয়। এই সত্য জেনেও যাঁরা সর্বনাশা পথে পা বাড়ান, তাঁদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বিচারের গতি এত শম্বুক যে, মানুষের স্মৃতি থেকে তত দিনে বিষয়টি হারিয়ে যায়। বিচার নিরপেক্ষ। সাক্ষী-প্রমাণাদি ছাড়া বিচারক এগোতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতাই তাঁদের প্রয়োজন হয়। কিন্তু যদি আমরা রাষ্ট্রকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চাই, তাহলে এমন ব্যবস্থা নিশ্চয়ই করা অসম্ভব নয় যে মানুষের স্মৃতি সজাগ থাকার মধ্যেই বিচারকাজটি সম্পন্ন করা যায়।
যে প্রবল শক্তিশালী প্রাকৃতিক শক্তি নিয়ে বলতে শুরু করেছিলাম, তার বিষয়েই ভাবা প্রয়োজন। এখনই সব জায়গায় সংস্কারকাজ শুরু করতে হবে। এই কাজে যদি দুর্নীতি, অবহেলা এবং মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউ বা অনেকে যোগসাজশে কোনো অপরাধ করেন, তার জন্যও কঠোর আইন প্রণয়ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা প্রয়োজন। ঢাকঢোল বাজিয়ে এসব নানা কথা ফের প্রচারিত হয় বটে, কিন্তু পরে তা বাতাসের মধ্যেই মিলিয়ে যায়। একই সঙ্গে যেকোনো সরকারি স্থাপনায় জনগণের অংশগ্রহণের বিষয়টি জরুরিভাবে দেখা প্রয়োজন। বাঁধভাঙা এলাকার কৃষকেরা কী বলেন, কেন বলেন, তা-ও ব্যাখ্যা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতা সরকারকে অর্জন করতে হবে।
জনগণের অর্থকে এভাবে লোপাট হতে দেওয়া যাবে না। এই ভয় নিশ্চয়ই ঠিকাদার, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে। এ সবই অবশ্য নির্ভর করে দেশপ্রেম ও সদিচ্ছার ওপর।
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
ঘূর্ণিঝড়ের আগমনী আতঙ্ক বেশ কদিন রইল। নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে ঘূর্ণিঝড়টি দুই দিন রয়েছে বটে, কিন্তু উপকূলে যা সর্বনাশ হওয়ার তা হয়ে গেছে। এবারের বড় আলোচনার বিষয় ছিল বাঁধ, যে বাঁধগুলো নিয়ে গতবারও কথা হয়েছে। সেই বাঁধগুলোর তেমন কোনো সংস্কার হয়নি। ফলে আবার বাঁধ ভেঙে লবণাক্ত পানি ফসলের জমিতে ঢুকে পড়েছে। ভবিষ্যতে এই ফসলি জমিগুলো লবণাক্ততার দোষে দুষ্ট হয়ে উর্বরতা হারাবে। অবকাঠামো উন্নয়নের কালে এই বাঁধগুলোর কেন উন্নতি হয় না, তা বোঝা খুব কঠিন নয়। বহু বছর ধরেই এমন চলছে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ বাংলাদেশ কখনোই এড়াতে পারবে না। কয়েক বছর ধরে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস পশ্চিমবঙ্গেও সম্প্রসারিত হয়েছে। সাগরদ্বীপ থেকে কলকাতায় তার ডানা বিস্তার করেছে।
ঐতিহ্যগতভাবে বাংলার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ—এসবের একটা মর্মান্তিক ইতিহাস আছে। এসব বিপর্যয়ে মানুষ ছিন্নমূল হয়, মৃত্যুবরণ করে, বাঁচার আশায় দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ে বটে, কিন্তু একধরনের মানুষ এর মধ্য দিয়েই বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়। বিভূতিভূষণের উপন্যাসে সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র ‘অশনিসংকেত’-এ মন্বন্তরের ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছি। বিজন ভট্টাচার্যের ‘নবান্ন’ নাটকে, জয়নুল আবেদিনের আঁকা ছবিতেও বুঝতে পেরেছি এসব ঘটনার উৎসস্থল কোথায়। কিছু লোক হয়তো এই দুর্যোগের অপেক্ষাতেই থাকে।
দুর্যোগের পরবর্তী সময়ে প্রচুর কাজ হবে এবং তা প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থে। এ সময় শকুনের প্রত্যাশা নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং কেউ কেউ এই সুযোগে আঙুল ফুলে কলাগাছ হবে।
নানা ধরনের দুর্বৃত্তায়নের ফলে সামাজিক প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের কণ্ঠ দুর্বল শুধু নয়, কোনো কোনো জায়গায় পেশিশক্তির কাছে পরাজিত হয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। দীর্ঘস্থায়ী এই প্রক্রিয়ার ফলে চোখের সামনে ব্যাপক দুর্নীতি ও অন্যায় হলেও কেউ মুখ খোলে না।
এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতৃত্বের সামনে সবাই নতজানু হয়ে মেরুদণ্ডহীন একটা সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাঁধগুলো দ্রুত নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। এটা ওই সব সুবিধাভোগীর জন্য বড় সুযোগই এনে দেবে। উদ্দেশ্য মহৎ হলেও চাটার দল সেই মহত্ত্বকে সর্বনাশ করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।
এই ঝড়ের আগেই আরেকটি ঝড় তৈরি হয়েছে জনমনে। নানা প্রশ্নে জর্জরিত ঝড়টিও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে। তিনবারের এমপি আজীমের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যতটা জনশ্রুতি থেকে জানা যাচ্ছে, তাতে চোরাচালান, হুন্ডির অর্থ, পাচার করা টাকার ভাগাভাগিই নাকি এর মূল কারণ। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে কীভাবে তিনবার তিনি সংসদ সদস্য হলেন? মনোনয়ন পেলেন এবং নির্বাচিত হয়ে গেলেন? তাহলে এতগুলো বছর ধরে অনায়াসে বিনা বাধায় এসব কর্মকাণ্ড করে গেলেন, কেউ বুঝতে পারল না? সরকারের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা কি ঘুমিয়ে থাকে?
তাঁদের একটা সুবিধা হচ্ছে, তাঁদের কেউ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত নন। তাঁদের কোনো রাজনৈতিক ইতিহাস নেই। ছাত্ররাজনীতি, মূলধারার রাজনীতি, সে বাম হোক বা ডান হোক, কোথাও তাঁদের শিকড় খুঁজে পাওয়া যায় না। এমন অনেক এমপি আছেন, যাঁরা মন্ত্রী হলেও তাঁদের শিকড় খুঁজে পাওয়া যায় না বা চেনা যায় না। এ ধরনের ইতিহাসবিচ্ছিন্ন রাজনীতিবিদদের বড় সুবিধা হচ্ছে, তাঁদের কোনো সামাজিক অঙ্গীকার নেই, তাই চক্ষুলজ্জার বিষয়টির কোনো ধার তাঁরা ধারেন না। যে শিক্ষাব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে তাঁদের উত্থান হয়েছে, তাতে কোনো মূল্যবোধও তৈরি হয়নি। এত কিছুর মধ্য দিয়ে এসে জীবনের পরম ব্রতও হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘টাকা’। এই টাকার দ্বারা যত সুখ-সমৃদ্ধি কেনা যায়, তাতেই তাঁদের ভবিষ্যৎ।
এমপি আজীমের মেয়ের একটি আর্তি খুবই বেদনাদায়ক যে, তাঁর বাবার খণ্ডিত দেহের কোনো একটি অংশকে তিনি স্পর্শ করতে চান। সেখান থেকেও তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। কী নিদারুণ বঞ্চনা! কিন্তু এমপি আজীমরা যখন এসব কাজে নিয়োজিত থাকেন, তখন তাঁদের স্বজনেরাও এসব বুঝতে পারেন না? নির্ধারিত আয় বা সৎ আয়ে যাঁরা সংসার চালান, তাঁদের জীবনযাপন কি তারা দেখেন না? এসব দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা সাধারণত ভোগী জীবনের দিকেই ঝুঁকে পড়েন। প্রাইভেট স্কুলে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল অর্থ ব্যয়ে একটি সনদ জোগাড় করে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন। সেখানে সফলও হয়ে থাকেন। কোনো ধরনের মানবিক সম্পর্কের তাঁরা ধার ধারেন না। ঢাকায় অভিজাত এলাকার ফ্ল্যাটে বসে বড় পর্দায় ছায়াছবি দেখে, কম্পিউটারে টোকাটুকি করে ইউটিউব দেখে, বড় রেস্তোরাঁয় জাঙ্ক ফুড খেয়েই দিনরাত কেটে যায়। তাঁদের বন্ধুবান্ধবও জুটে যায় সেই রকমই। কিন্তু বিপদে পড়লে কেউ আর এগিয়ে আসে না।
বাংলাদেশ কিছু কিছু দুর্বৃত্তের জন্য একেবারেই অভয়ারণ্য। তেমনি সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। যখন তাঁরা কর্মরত থাকেন, সরকারের সরাসরি নজরদারিতে তখন তাঁদের কিছু হয় না। বিত্ত বাড়তেই থাকে, কোথাও যেন বাধা দেওয়ার কেউ নেই। ক্ষমতাধর রাজনীতিকদের ব্যাপারও তা–ই। সাবেক হয়ে যাওয়ার পর বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ তখন বিচারের ব্যবস্থা করে। দূর বিদেশে নয়, প্রতিবেশী রাষ্ট্রেও ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রীরা জেলে থাকছেন। সরকারি কর্মকর্তারাও জেলে আছেন, বিচারের অপেক্ষায়।
হত্যাকাণ্ড কোনো সমাধান নয়। দেশেই দুর্বৃত্তদের বিচারের ব্যবস্থা হওয়া উচিত। লুটপাট, অসাধু ব্যবস্থা ছাড়া এত বড় বিত্তের অধিকারী হওয়া সম্ভব নয়। এই সত্য জেনেও যাঁরা সর্বনাশা পথে পা বাড়ান, তাঁদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বিচারের গতি এত শম্বুক যে, মানুষের স্মৃতি থেকে তত দিনে বিষয়টি হারিয়ে যায়। বিচার নিরপেক্ষ। সাক্ষী-প্রমাণাদি ছাড়া বিচারক এগোতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতাই তাঁদের প্রয়োজন হয়। কিন্তু যদি আমরা রাষ্ট্রকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চাই, তাহলে এমন ব্যবস্থা নিশ্চয়ই করা অসম্ভব নয় যে মানুষের স্মৃতি সজাগ থাকার মধ্যেই বিচারকাজটি সম্পন্ন করা যায়।
যে প্রবল শক্তিশালী প্রাকৃতিক শক্তি নিয়ে বলতে শুরু করেছিলাম, তার বিষয়েই ভাবা প্রয়োজন। এখনই সব জায়গায় সংস্কারকাজ শুরু করতে হবে। এই কাজে যদি দুর্নীতি, অবহেলা এবং মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউ বা অনেকে যোগসাজশে কোনো অপরাধ করেন, তার জন্যও কঠোর আইন প্রণয়ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা প্রয়োজন। ঢাকঢোল বাজিয়ে এসব নানা কথা ফের প্রচারিত হয় বটে, কিন্তু পরে তা বাতাসের মধ্যেই মিলিয়ে যায়। একই সঙ্গে যেকোনো সরকারি স্থাপনায় জনগণের অংশগ্রহণের বিষয়টি জরুরিভাবে দেখা প্রয়োজন। বাঁধভাঙা এলাকার কৃষকেরা কী বলেন, কেন বলেন, তা-ও ব্যাখ্যা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতা সরকারকে অর্জন করতে হবে।
জনগণের অর্থকে এভাবে লোপাট হতে দেওয়া যাবে না। এই ভয় নিশ্চয়ই ঠিকাদার, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে। এ সবই অবশ্য নির্ভর করে দেশপ্রেম ও সদিচ্ছার ওপর।
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে