Ajker Patrika

শিক্ষায় দুর্নীতি ও সংস্কার

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

আমাদের দেশে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তদারকি প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যাঁদের স্কুল-কলেজের দুর্নীতি দেখভালের কথা, তাঁরাই এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকলে সমাধান আশা করার সুযোগ নেই। 

শিক্ষকদের একসময় বলা হতো ‘মানুষ গড়ার কারিগর’। জাতির ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে শিশু-কিশোর-তরুণদের আদর্শ মানুষ তৈরি করার দায়িত্ব পালন করতেন বলে তাঁদের এই বিশেষণে বিশেষায়িত করা হতো। কিন্তু কতিপয় শিক্ষকের কারণে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধার সেই জায়গাটি কি আর অবশিষ্ট আছে? 

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ঘনিরামপুর বড়গোলা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিজের স্ত্রী, ভাই, ভাতিজা ও ভাতিজার বউকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর জন্য তিনি কোনো নিয়মবিধিও মানেননি। শুধু শিক্ষক নয়, পিয়ন ও মালি পদে আরেক ভাতিজা ও ভাতিজার বউকে চাকরি দিয়েছেন। আর এসব অপকর্মকে আইনি রূপ দেওয়ার জন্য নিজের বড় ভাইকে স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ—বিভিন্ন খাতের কথা বলে রসিদ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। অন্য শিক্ষকেরা তাঁর অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাঁদের চাকরিচ্যুত করার ভয় দেখানো হয়। এসব অপকর্ম করে তিনি বিপুল সম্পদের মালিকও হয়েছেন। 

এর আগেও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিজের মেয়ে, জামাইসহ নিকট আত্মীয়দের অবৈধভাবে শিক্ষকসহ নানা পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এসব ঘটনার পরম্পরা দেখে বলা যায়, শিক্ষায় দুর্নীতি শুধু নিম্ন স্তরে নয়, উচ্চ স্তরেও হয়েছে। অনেক আগে থেকে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি-অনিয়ম ব্যাপকভাবে জেঁকে বসেছে। মূলত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং তাঁর সহযোগী মিলে তৈরি করেন সিন্ডিকেট। আর এর মাধ্যমে চলে নানা অপকর্ম। 

বিগত সরকারের আমলে গঠন করা হয়েছিল পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। এ প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিল স্কুল-কলেজের আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি, শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগে অনিয়ম এবং জাল সনদ শনাক্ত করার দায়িত্ব পালন করা। ডিআইএ কাজ করার জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। যদিও সে লক্ষ্যমাত্রা সেভাবে অর্জিত হয়নি। 

এর মধ্যে ঘটে গেছে সরকারের পতন। নতুন অর্ন্তবর্তী সরকারের অধীনে রাষ্ট্রের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি বাতিল করা হয়েছে। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার পুরোনো আবর্জনা পরিষ্কার করে শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করবে। সেই সংস্কারের কাজটি সর্বোচ্চ স্তর থেকে শুরু করতে হবে। সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়েই শুরু করা দরকার। শুধু উচ্চ শিক্ষিত নয়—সৎ, নীতিনিষ্ঠ ও যোগ্যদের নিয়োগ দিতে হবে। এর প্রভাবে শিক্ষার সকল স্তরে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। একই সঙ্গে শিক্ষকদের মান-মর্যাদা, প্রশিক্ষণ ও বেতন কাঠামোতেও আমূল পরিবর্তন আনা দরকার। সরকারকে এ বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী সহকর্মীর সঙ্গে রাতযাপন: হাইটেক পার্কের ডিডি আতিক বরখাস্ত

বাংলাদেশসহ ৩ দেশে উন্নয়ন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত সুইজারল্যান্ডের

বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগ

পদ্মা সেতু ও ড. ইউনূসকে নিয়ে ভারত থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ! ভাইরাল ভিডিওর পেছনের ঘটনা জানুন

২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন কর্মসূচি শুরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত