নিয়ামুলের সর দইয়ের কদর জেলায় জেলায়

শামিম রেজা, রাজবাড়ী
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২২, ১৫: ২২

তিন কেজি দুধ দিয়ে সর দই তৈরি শুরু করেন রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের নিয়ামুল ইসলাম। বাজারের অন্য দই থেকে স্বাদ আলাদা হওয়ায় এরই মধ্যে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে সর দই। প্রতিদিন ৪০০ কেজির বেশি দই বিক্রি করেন তিনি। তাঁর দইয়ের দোকানে দুধের জোগান দিতে অনেকেই গাভি পালন শুরু করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নিয়ামুল ইসলামের বাড়ির আঙিনায় দুইটা দুই চালা ঘরে চলছে দই তৈরির কাজ। জ্বলন্ত চুলার ওপর বড় কড়াইয়ে দুধ জ্বাল দিচ্ছেন এক শ্রমিক। কারখানার বাইরে আরেকজন শ্রমিক খামারিদের নিয়ে আসা দুধ সংগ্রহ করছেন। অন্যদিকে কারখানার অফিস কক্ষে ক্রেতারা বসে আছেন। কেউ চেয়ারে বসে কাপ দই খাচ্ছেন, কেউ দই কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। প্রতি কেজি সর দই ১৭০ টাকায় বিক্রি করছেন।

মো. নিয়ামুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক আগে থেকে বাড়িতে গাভি লালনপালন করি। সেই গাভির দুধ সময়মতো বিক্রি করতে পারতাম না। তখন ভাবলাম, এই দুধ দিয়ে অন্য কিছু করা যায় কি না। প্রথমে ছানা তৈরি করতাম। ছানায় তেমন একটা লাভ হতো না। ২০১৮ সালের শেষের দিকে একটি দোকানে বসে আছি। সে সময় ওই দোকানদার ২০ টাকা দামের কাপ আইসক্রিম বিক্রি করছে। তখন আমি ওই দোকানদারকে বললাম, মামা, আমি যদি ২০ টাকা দামে কাপ দই তৈরি করি, তাহলে সেটা চলবে কি? ওই দোকানদার বলল, চলবে। তখন থেকে দইয়ের ব্যবসা শুরু করি। প্রথমে সাড়ে তিন কেজি দই তৈরি করি। মাঝে মাঝে তৈরি করি আবার বন্ধ রাখি। শুধু দুধ দিয়ে তৈরি হওয়ায় বাজারের দইয়ের থেকে আলাদা স্বাদ। যে খেয়েছে সে আবারও খেতে চেয়েছে। এভাবেই আমার তৈরি দইয়ের প্রচার হয়েছে। বর্তমানে সাড়ে ৭০০ কেজি দুধ থেকে ৪০০ কেজি দই তৈরি করি।’

নিয়ামুল আরও বলেন, শুধু দুধ আর চিনি দিয়ে তৈরি হওয়ায় এই দইয়ের নাম দেওয়া হয়েছে হালাল সর দই। তাঁর কারখানায় বর্তমানে শ্রমিক রয়েছেন সাতজন। তাঁরা দই তৈরি ও বাজারজাত করেন। দই তৈরির দুধ তিনি এলাকা থেকেই সংগ্রহ করেন। তাঁর এলাকার ৩০ জন খামারি প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৭৫০ কেজি দুধ দিয়ে থাকেন। তাঁর কারখানায় দুধের চাহিদা মেটানোর জন্য এলাকার অনেকেই গাভি পালন শুরু করেছেন। অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। তৈরি করা দই জেলার চাহিদা মিটিয়ে কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করি।’

ক্রেতা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, নিয়ামুলের সর দই খুবই সুস্বাদু। বাড়িতে কোনো আত্মীয় এলে এই দই দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। মো. বিল্লাল শেখ বলেন, ‘শ্রীরামপুর গ্রামে এখন ছয়টি দইয়ের কারখানা গড়ে উঠেছে। এতে করে খামারিদের অনেক সুবিধা হয়েছে। দইয়ের কারখানার আগে বাজারে গিয়ে দুধ বিক্রি করা লাগত। এখন কারখানায় দুধ বিক্রি করতে পারছি। টাকাও সময়মতো পাচ্ছি।’

রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খায়ের উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, হালাল সর দই কারখানা তৈরি গড়ে ওঠায় শ্রীরামপুর গ্রামের খামারিরা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। বাজারজাতকরণসহ এমন উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত