পূর্বাচলে রাজউকের প্লট: ১৬ বছর পর কিস্তি দিয়েই বরাদ্দ বহাল

তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, ঢাকা
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৪, ১১: ১২
আপডেট : ১১ মে ২০২৪, ১১: ৩২

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ২০০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল মোহাম্মদ মাসুম আব্দুল মজিদকে। ১০ নম্বর সেক্টরের ৩০১ নম্বর রাস্তার ৩৪ নম্বর প্লটটি দেওয়া হয়েছিল বৈদেশিক ক্যাটাগরিতে। আব্দুল মজিদ প্রথম কিস্তির পুরো টাকাও সময়মতো পরিশোধ করেননি। নির্ধারিত সময়ে (২০০৫ সালের ৩১ জুলাই) দ্বিতীয় কিস্তির অর্থও দেননি। ফলে বরাদ্দ তখনই বাতিল হওয়ার কথা। ২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারি আব্দুল মজিদ মারা যান। রাজউক সম্প্রতি মজিদের ওয়ারিশদের নামে সংশোধিত বরাদ্দপত্র দিয়েছে।

রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, কিস্তির টাকা সময়মতো পরিশোধ না করায় শত শত বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। বরাদ্দগ্রহীতা বা তাঁদের পরিবারকে তা মেনেও নিতে হয়েছে। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটল মাসুম আব্দুল মজিদের পরিবারের ক্ষেত্রে। ২০০৫ সালে বাতিল হয়ে যাওয়ার নিয়ম থাকলেও ১৯ বছর পর ২০২৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর ওয়ারিশদের নামে সংশোধিত বরাদ্দপত্র দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। 

ওই কর্মকর্তারা মনে করছেন, ওই সিদ্ধান্তের ফলে রাজউককে একটি দীর্ঘমেয়াদি আইনি জটিলতায় পড়তে হবে। কারণ, নির্ধারিত সময়ে কিস্তি পরিশোধ না করায় ইতিপূর্বে বাতিল হওয়া প্লটের বরাদ্দগ্রহীতা বা তাঁদের উত্তরসূরিদের যেসব আবেদন আমলে নেওয়া হয়নি, তাঁরা এখন আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ পাবেন। সংশোধিত বরাদ্দপত্র দেওয়ার নজির দেখিয়ে অন্যরাও আদালতে গিয়ে প্রতিকার চাইতে পারেন। 

জানা গেছে, পূর্বাচলের ওই প্লটটির বর্তমান বাজারমূল্য ১২-১৩ কোটি টাকা। আর রাজউক এই প্লট বাবদ বরাদ্দগ্রহীতার কাছ থেকে পেয়েছে কমবেশি ৩০ লাখ টাকা। 

নথি থেকে জানা যায়, সংশোধিত বরাদ্দপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্তটি হয়েছে রাজউকের এ বছরের চতুর্থ বোর্ড সভায়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এমন একটি বিষয় পাস হয়েছে। সেখানে মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ ছিল। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছি, কী করা যায়। এটি বাতিল করা হতে পারে।’ এক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয়ের যে সুপারিশের কথা বলা হচ্ছে, সেটি হলো—একটি আবেদনপত্রের ওপর পূর্তমন্ত্রীর লেখা ‘দয়া করে বিষয়টি বিধিমতে ব্যবস্থা নিন’।

রাজউকের একটি অংশ মন্ত্রীর একান্ত সচিব হুমায়ূন কবিরকে হাত করে কাজটি করিয়েছিল। পরে সমালোচনার মুখে রাজউকের বিদায়ী চেয়ারম্যান পূর্তমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বোর্ডের সপ্তম সভায় বরাদ্দ বাতিলের প্রস্তাব তোলেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে কার্যপত্র প্রকাশ্যে আসেনি। 

এ বিষয়ে মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ‘বাতিলের প্রস্তাব ছিল। তবে বাতিল হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’ নথি ঘেঁটে দেখা যায়, মাসুম আব্দুল মজিদকে ২০০৩ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে প্রথম কিস্তি বাবদ ১৫ হাজার ডলার পরিশোধ করতে বলা হয়েছিল। তিনি ২৩ মার্চ ১৪ হাজার ৯৮০ ডলার পরিশোধ করেন। ২০০৫ সালের ৩১ জুলাই দ্বিতীয় কিস্তি বাবদ ৭ হাজার ৬৬৭ ডলার পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু মজিদের উত্তরসূরিরা ১৬ বছর পর ২০২১ সালের নভেম্বরে ওই অর্থ পরিশোধ করেন। সংশোধিত বরাদ্দপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি। 

জানা গেছে, কিস্তির টাকা পরিশোধের সময় বাড়ানো প্রসঙ্গে রাজউকের বিধিমালায় বলা আছে, রাজউকের উপপরিচালক (এস্টেট) ৩ বছর এবং সদস্য (এস্টেট) ৭ বছর পর্যন্ত মঞ্জুর করতে পারেন। কিন্তু আলোচিত প্লটের ক্ষেত্রে কোনো বিধিই মানা হয়নি।

বোর্ডের চতুর্থ সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজউকের সদস্য (এস্টেট) মোহাম্মদ নূরুল ইসলামও। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু বরাদ্দগ্রহীতা মারা গেছে, তাই তার ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করে মানবিক দিক বিবেচনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের ডলার-সংকটের জন্য বকেয়া অর্থ ডলারে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। তারাও তা ডলারে পরিশোধ করেছে। এ ছাড়া বিষয়টি যেন নজির হিসেবে দাঁড় করাতে না পারে, সেটিও রেজল্যুশনে আনা হয়েছে। এমন বেশ কিছু দিক আমলে নিয়ে কাজটি করেছি।’

আরও পড়ুন: 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত