সালাদ খাওয়ার এই তো সময়

মো. ইকবাল হোসেন 
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯: ৫৩

খাবারের একটি অপরিহার্য অংশ যেন সালাদ। শীত হোক বা গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা, প্রতিটি ঋতুতেই আমাদের খাবারের টেবিলে দেখা যায় হরেক রকমের সালাদ। কাঁচা খাওয়া যায় এমন যেকোনো সবজি বা শাকই সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়।

ভিটামিন মিনারেলে ভরপুর এবং সহজপাচ্য খাবারের মধ্যে সালাদ অন্যতম। তবে অন্য যেকোনো ঋতুর চেয়ে শীতকালে বিভিন্ন রকমের রঙিন শাকসবজি বেশি পাওয়া যায়। তাই এ সময়ের সালাদের সৌন্দর্য এবং পুষ্টিগুণ দুটোই অনেক বেশি থাকে। শীতকালে বেশি করে সালাদ খেতে পারেন। তবে ঋতু যেটাই হোক না কেন, সালাদ প্রতিদিনই খাওয়া যায়।

শীতের সালাদের একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ সময়ে অনেক রকমের রঙিন সবজি পাওয়া যায়। তাই এ সময় রঙিন বা রংধনু সালাদ খাওয়া হয় বেশি। এই রঙিন সালাদের পুষ্টিগুণও বেশি।

এ সময়ে সালাদের উপকরণ হিসেবে গাজর, টমেটো, শসা, পাতাকপি বেছে নেওয়া যায়। সঙ্গে আপেল, আনারস, আনার, পাকা পেঁপে এবং কাজুবাদাম যোগ করলে সালাদের পুষ্টিগুণ আরও বেড়ে যায়। আপনি চাইলে একটু পুদিনাপাতা, লেটুসপাতা, গোলমরিচের গুঁড়ো, অল্প কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ এবং সামান্য পরিমাণে সরিষার তেল বা অলিভ অয়েল দিতে পারেন। তবে সালাদে মেয়োনিজ বা চিজ না দেওয়াই উত্তম।

এমন রঙিন সালাদের পুষ্টিগুণ অন্য যেকোনো সালাদ বা রান্না করা মিক্সড সবজির চেয়ে অনেক বেশি। কারণ এখানে ব্যবহৃত প্রতিটি 
সবজি আলাদা আলাদা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। সবজি উচ্চতাপে রান্না করলে অনেক পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু সালাদের প্রতিটি উপাদানের পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে। 

যে সবজি বা ফল ব্যবহার করবেন

  • গাজর: এর মূল উপাদান বিটা ক্যারোটিন, যা দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে। বিটা ক্যারোটিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। গাজর ত্বক ও চুলের সুরক্ষা দেয় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়। এটি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়। বড় আকারের গাজরের চেয়ে কচি গাজরের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি।
  • টমেটো: এর মূল উপাদান লাইকোপিন নামের ক্যারোটিনয়েড। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন ‘ই’র চেয়েও কার্যকর। এই লাইকোপিন ক্যানসার প্রতিরোধ করে, খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে খুব কার্যকরী এবং এটি তারুণ্য 
    ধরে রাখতে কার্যকরী।
  • শসা: এর প্রায় ৯০ শতাংশ পানি। শসায় থাকা ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর সালফার এবং সিলিকা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুব জরুরি।
  • পাতাকপি: এতে আছে আঁশসহ ফোলেট, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ এবং কে। পাতাকপি শরীরে বিটা ক্যারোটিন, লুটিনসহ অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদ্‌যন্ত্রের সুরক্ষায় পাতাকপির জুড়ি নেই। অ্যাসিডিটি কমাতে কাঁচা পাতাকপি ওষুধের চেয়ে ভালো কাজ করে।
  • আপেল: এতে আঁশ ও পানি থাকে বলে অনেকক্ষণ ক্ষুধার অনুভূতি কমিয়ে রাখতে পারে। ফলে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও কমায়। এটি পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে হজমের সমস্যা দূর করে।
  • আনারস: এটি হজমশক্তি বাড়াতে বেশ কার্যকরী। এর ব্রোমেলিন হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। রক্ত পরিষ্কার করে হৃৎপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে।

এ ছাড়া পুদিনা ও লেটুসপাতার অনেক ঔষধি গুণ আছে। তাই রঙিন সালাদ বা রংধনু সালাদকে পুষ্টির ডিনামাইট বলা হয়। এমন কোনো খাদ্য উপাদান নেই, যা রঙিন সালাদে পাওয়া যায় না। আবার খাবারের একঘেয়েমি দূর করতেও এর জুড়ি নেই।

তাই চেষ্টা করুন বেশি বেশি রঙিন সালাদ খেতে। এতে শরীরের সব ধরনের পুষ্টি উপাদানের চাহিদা মিটবে।

লেখক: পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত