Ajker Patrika

বিটকয়েন কেলেঙ্কারির পর অভিযানে যাচ্ছে না ডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
বিটকয়েন কেলেঙ্কারির পর অভিযানে যাচ্ছে না ডিবি

বিটকয়েন কেলেঙ্কারির পর চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সব ধরনের অভিযান আপাতত বন্ধ রয়েছে। ডিবির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারির পর সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর ও দক্ষিণ জোনের বিভাগটি কোনো অভিযান পরিচালনা করছে না। ডিবির বন্দর ও পশ্চিম জোনেও কোনো অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না। যদি কোনো অভিযান পরিচালনা জরুরি হয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে পুলিশ কমিশনারের অনুমতি নিতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের বন্দর জোনের উপকমিশনার মো. আলী হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডিবি পুলিশের অভিযান একেবারে বন্ধ রাখা হয়নি। তবে সতর্কতামূলক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, যেহেতু একটা ঘটনা ঘটেছে, স্বাভাবিকভাবে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ওই ঘটনার পর এখন থেকে যেকোনো ধরনের অভিযান দেখেশুনে সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনার কথা বলা হয়েছে।

ডিবির ছয় সদস্য সাময়িক বরখাস্ত ফ্রিল্যান্সারকে আটক করে মোবাইল ফোন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকার বিটকয়েন সরিয়ে নেওয়ায় চট্টগ্রাম নগর ডিবির ছয় সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় এ আদেশ দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করারও নির্দেশ দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) স্পিনা রানী প্রামাণিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন ডিবির উত্তর-দক্ষিণ জোনের এসআই মো. আলমগীর হোসেন, এএসআই মো. বাবুল মিয়া, মো. শাহ পরান জান্নাত, মাইনুল হোসেন, জাহিদুর রহমান ও আব্দুর রহমান।

এ ছাড়া এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির উত্তর-দক্ষিণ জোনের পরিদর্শক রুহুল আমিনের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি গত মঙ্গলবার প্রতিবেদন দাখিলের পর সিএমপি কমিশনার এ নির্দেশ দেন।

নগর পুলিশের উপকমিশনার (সদর) মো. আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, ‘ডিবির ছয় সদস্যকে সাময়িক বরখাস্তের একটি আদেশ আমরা (বুধবার) পেয়েছি। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।’

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আবু বক্কর সিদ্দিক নামে সরকার অনুমোদিত এক ফ্রিল্যান্সারকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তাঁর মোবাইল ফোন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় সিএমপি কমিশনার ২ মার্চ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। মঙ্গলবার কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে আবু বক্কর সিদ্দিকের কাছ থেকে ডিবির অভিযুক্ত সদস্যদের একটি টিমের গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। 

বিটকয়েন কেলেঙ্কারি যেভাবে শুরু
পুলিশের তদন্ত কমিটির তথ্য, ভুক্তভোগী ফ্রিল্যান্সার, মামলার এজাহার ও ডিবি পুলিশের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দুই সোর্সের তথ্যে ডিবি পুলিশ আবু বক্কর ছিদ্দিক নামে এক ফ্রি ল্যান্সারকে বায়েজিদ থেকে তুলে নিয়ে নগরের মনছুরাবাদে পুলিশ কার্যালয়ে যায়। পরে তাঁকে জুয়া খেলার অভিযোগে একটি ননএফআইআর মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করেন। সেখান থেকে ১০০ টাকা জরিমানা দিয়ে ছাড়া পান তিনি।

আবু বক্কর বাড়িতে ফিরে গিয়ে দেখেন, ডিবির হেফাজতে থাকার সময় তাঁর মোবাইল ব্যবহার করে ক্রিপটোকারেন্সি অর্থ সরানো হয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বিষয়টি নানা জায়গায় আলোচনা করেন।

এ ঘটনার পর আবু বক্করকে ছেড়ে দেওয়ার ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় চলতি মাসের ২ মার্চ পুলিশ ওই ফিল্যান্সারসহ অভিযানে অংশ নেওয়া ডিবি পুলিশের ওই দুই সোর্সসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি দেখিয়ে ক্রিপটোকারেন্সি সংরক্ষণ, মজুদ ও লেনদেনের অপরাধে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় আইনে আরেকটি মামলা করেন। কাউসার আহম্মদ ও শাহাদাত হোসেন নামে দুই সোর্সকে গ্রেপ্তারও করে ডিবি। আর এই মামলায় আসামি হয়ে আবু বক্কর ছিদ্দিক বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, ডিবির দলটি নিজেদের বাঁচাতে ওই মামলাটি করে। যেখানে ওই ফ্রিল্যান্সারসহ তাঁদের অভিযানে অংশ নেয়া দুই সোর্সকেও আসামি বানানো হয়েছে। সেই দুই সোর্স ওই ফ্রিল্যান্সারের ক্রিপটোকারেন্সি অর্থ সরিয়েছে বলে ডিবির মামলায় বলা হয়েছে।

আবু বক্করের স্ত্রী হুসনুম মামুরাত লুবাবা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার পর আমার সঙ্গে তাঁর একবার ফোনে কথা হয়েছিল। এরপর তাঁকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। কারণ তারা ওনার ফোন রেখে দিয়েছিল। পাসওয়ার্ড ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে তারা আমার স্বামীর মোবাইল খোলে। তারা টাকা দাবি করেছিল। কথাবার্তা বলার পর আমার স্বামীকে ১০ লাখ টাকায় ছেড়ে দিতে আমরা রাজি হই। ওই রাতেই দুটি ব্যাংকে থাকা ১০ লাখ টাকা অনলাইনে ট্রান্সফার করা হয়। টাকা যে ট্রান্সফার হয়েছে সেটা আমি বুঝতে পারি বাসায় থাকা আমার স্বামীর ল্যাপটপে ইমেইল নোটিফিকেশনের মাধ্যমে। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোররাত ৩টা ৪১ মিনিটে ৫ লাখ ও ৩টা ৫০ মিনিটে ৫ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে ট্রান্সফার হওয়ার নোটিফিকেশন আমি মেইলে দেখতে পাই। এটার স্ক্রিনশট আমি নিয়ে রেখেছি। টাকা ট্রান্সফারটি আমার স্বামীর মোবাইল থেকে হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মিডিয়া ছুটায় দেব, চেনো আমাদের’—সাংবাদিককে হুমকি কুড়িগ্রামের এসপির

মেঘনা আলম ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’, কারণ জানাল পুলিশ

বান্দরবান, মণিপুর, মিজোরাম ও রাখাইন নিয়ে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র চলছে: বজলুর রশীদ

ইসলামপুর বিএনপির সহসভাপতি যোগ দিলেন জামায়াতে

যশোরে সেপটিক ট্যাংকে গৃহবধূর মরদেহ: ভিসেরা প্রতিবেদনে ধর্ষণের পর হত্যার আলামত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত