শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
শৈশবে পুকুরে সাঁতার কাটতে ছিল যাঁর ভয়, চড়ুইছানার উড়তে গিয়ে পড়ে যাওয়া দেখে কৈশোরে যাঁর প্রাণ কেঁদে উঠত হু হু করে; দুখু মিয়া নামের সেই কোমলমতি ছেলেকে অল্পদিনের মধ্যেই কী করে বন্দুক দিয়ে পাখি শিকারের নেশায় পেয়েছিল, তার ব্যাখ্যা পাওয়া সত্যিই কঠিন। পাখি শিকারের নেশাও আবার দ্রুততম সময়ে রূপ নিয়ে নিল ইংরেজ তাড়ানোর নেশায়! ব্রিটিশ তথা ইংরেজ শাসন থেকে দেশকে স্বাধীন করার ব্রত নিয়ে অস্ত্র চালানো শেখা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হয়ে পুরুলিয়া থেকে করাচি চলে যাওয়া—এসবের পেছনে কি কোনো প্রভাব ছিল জন্মস্থানের বিদ্রোহী ঐতিহ্যের?
এ প্রশ্ন যাঁকে ঘিরে, তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার গণ্ডগ্রাম চুরুলিয়ায় এক দরিদ্র চাষি পরিবারে তাঁর জন্ম ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দে। বিশিষ্ট গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসানের বয়ান থেকে জানা যায়, নজরুলের জন্মের ১০ বছর আগেই এই অঞ্চলে ঘটে মুন্ডা বিদ্রোহ। এসব বিদ্রোহের গল্প ও গান চুরুলিয়া ও এর আশপাশের অঞ্চলের, বিশেষ করে একটু বেশি বয়সী মানুষের মুখে মুখে ফিরত। বিদ্রোহী কবি নজরুল তাঁর ছোটবেলায় এসব লড়াই-সংগ্রামের গল্প শুনেছেন বলে মনে হয়। তাঁর মনের গঠনে নিশ্চয়ই তা কমবেশি প্রভাব ফেলেছিল।
কিশোর নজরুলের বন্ধুদের একজন ছিলেন পঞ্চু। নজরুলের আবদারে তিনি একদিন নিয়ে আসেন চকচকে একটি এয়ারগান। কিন্তু চালাতে জানেন না কেউ। নজরুলের আরেক বন্ধু শৈলজার একটি ছোট এয়ারগান ছিল। তিনি দায়িত্ব নিলেন শেখানোর। এবার তিন বন্ধু মিলে পাখি শিকারের চেষ্টা করেও তেমন কিছু করতে পারেন না। তিন বন্ধুরই এ নিয়ে মন খারাপ। এর চেয়ে বায়োস্কোপ কিনে আনলেও অন্তত ছবি দেখা যেত। কিন্তু এই আলোচনার মাঝে হঠাৎ একদিন নজরুল বলে বসলেন, ইংরেজ তাড়াতে হবে। এ কথা শুনে হেসেই খুন শৈলজা! নজরুল অনড়। বললেন, ‘ওই এয়ারগান দিয়ে হাতের নিশানটা ঠিক করে নেব ভাবছিলাম।’
শুরু হলো ইংরেজ তাড়ানোর মিশন। শৈলজা ও নজরুল—দুজন খুঁজে বের করলেন খ্রিষ্টানদের নির্জন এক কবরখানা। লোকজনের তেমন আনাগোনা ছিল না ওখানে। গোরস্তানের একদিকে সারি সারি ইট-বাঁধানো বেদি। সেগুলোই হলো লক্ষ্য। একটি বেদি হলো বড় লাট, একটি ছোট লাট, একটি ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, আরেকটি এসডিও। নজরুলের হাতে গোল গোল সিসার গুলি এয়ারগানের নলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে ফটাশ ফটাশ করে লাগে দেশের শত্রু ইংরেজদের গায়ে। একটা গুলি লাগে, আর নজরুলের সেকি উল্লাস!
কৈশোরে ইংরেজ তাড়ানোটা খেলার মতো হলেও তারুণ্যে নজরুল সেই কাজে সত্যি উঠেপড়ে লেগে গেলেন। তবে এবার বন্দুক হাতে নয়, বন্দুকের চেয়েও তীব্র সেই অস্ত্র। কবিতা হয়ে উঠল নজরুলের নতুন এয়ারগান। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখে ইংরেজ শাসকদের নজরে চলে আসেন নজরুল। তবে বাজেয়াপ্ত করতে পারেনি তাঁর কবিতা। কিন্তু ‘যুগবাণী’ নামের প্রবন্ধ সংকলন বাজেয়াপ্ত করা হয়। বসে থাকেননি নজরুল; লিখে ফেলেন ‘বিষের বাঁশি’ ও ‘ভাঙার গান’। বাজেয়াপ্ত হয় বই দুটি। যত বাজেয়াপ্ত করা হয়, ততই যেন সবাই নেশায় পড়ে যান নজরুলের কবিতার। নজরুল হয়ে ওঠেন স্বাধীনতার প্রতীক।
নজরুলের সেই বিদ্রোহী চেতনা আজও পরাধীনতার শিকল ভাঙার প্রতীক হয়ে আছে। ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতেও নজরুল ধরা দেন বাঙালির চেতনায় বিদ্রোহ হিসেবে।
জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করছে নানা প্রতিষ্ঠান। ২৩ মে স্মারক বক্তৃতা, পুরস্কার, আলোচনা সভা করেছে বাংলা একাডেমি। গতকাল শুক্রবার ছায়ানটে বসেছিল নজরুলজয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধনী আয়োজন। আজ শনিবার শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় জাদুঘরে আছে নজরুলকে নিয়ে নানা আয়োজন।
ছায়ানটের তিন দিনব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধনী দিনে গতকাল বিশেষ বক্তৃতায় অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল বলেন, তাঁর পুরো জীবনটাই ছিল সাময়িক জগতের পাপ-তাপ-গ্লানি এবং ব্রিটিশ প্রভুদের অত্যাচারের বিপরীতে গর্জে ওঠা।
অনুষ্ঠান সাজানো হয় পাঠ, নৃত্য, গান ও কথন দিয়ে। নজরুলকে নিয়ে আরও কথা বলেন ছায়ানট সহসভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল এবং সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন ছায়ানটের শিল্পী ছাড়াও আমন্ত্রিত শিল্পীরা।
শৈশবে পুকুরে সাঁতার কাটতে ছিল যাঁর ভয়, চড়ুইছানার উড়তে গিয়ে পড়ে যাওয়া দেখে কৈশোরে যাঁর প্রাণ কেঁদে উঠত হু হু করে; দুখু মিয়া নামের সেই কোমলমতি ছেলেকে অল্পদিনের মধ্যেই কী করে বন্দুক দিয়ে পাখি শিকারের নেশায় পেয়েছিল, তার ব্যাখ্যা পাওয়া সত্যিই কঠিন। পাখি শিকারের নেশাও আবার দ্রুততম সময়ে রূপ নিয়ে নিল ইংরেজ তাড়ানোর নেশায়! ব্রিটিশ তথা ইংরেজ শাসন থেকে দেশকে স্বাধীন করার ব্রত নিয়ে অস্ত্র চালানো শেখা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হয়ে পুরুলিয়া থেকে করাচি চলে যাওয়া—এসবের পেছনে কি কোনো প্রভাব ছিল জন্মস্থানের বিদ্রোহী ঐতিহ্যের?
এ প্রশ্ন যাঁকে ঘিরে, তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার গণ্ডগ্রাম চুরুলিয়ায় এক দরিদ্র চাষি পরিবারে তাঁর জন্ম ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দে। বিশিষ্ট গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসানের বয়ান থেকে জানা যায়, নজরুলের জন্মের ১০ বছর আগেই এই অঞ্চলে ঘটে মুন্ডা বিদ্রোহ। এসব বিদ্রোহের গল্প ও গান চুরুলিয়া ও এর আশপাশের অঞ্চলের, বিশেষ করে একটু বেশি বয়সী মানুষের মুখে মুখে ফিরত। বিদ্রোহী কবি নজরুল তাঁর ছোটবেলায় এসব লড়াই-সংগ্রামের গল্প শুনেছেন বলে মনে হয়। তাঁর মনের গঠনে নিশ্চয়ই তা কমবেশি প্রভাব ফেলেছিল।
কিশোর নজরুলের বন্ধুদের একজন ছিলেন পঞ্চু। নজরুলের আবদারে তিনি একদিন নিয়ে আসেন চকচকে একটি এয়ারগান। কিন্তু চালাতে জানেন না কেউ। নজরুলের আরেক বন্ধু শৈলজার একটি ছোট এয়ারগান ছিল। তিনি দায়িত্ব নিলেন শেখানোর। এবার তিন বন্ধু মিলে পাখি শিকারের চেষ্টা করেও তেমন কিছু করতে পারেন না। তিন বন্ধুরই এ নিয়ে মন খারাপ। এর চেয়ে বায়োস্কোপ কিনে আনলেও অন্তত ছবি দেখা যেত। কিন্তু এই আলোচনার মাঝে হঠাৎ একদিন নজরুল বলে বসলেন, ইংরেজ তাড়াতে হবে। এ কথা শুনে হেসেই খুন শৈলজা! নজরুল অনড়। বললেন, ‘ওই এয়ারগান দিয়ে হাতের নিশানটা ঠিক করে নেব ভাবছিলাম।’
শুরু হলো ইংরেজ তাড়ানোর মিশন। শৈলজা ও নজরুল—দুজন খুঁজে বের করলেন খ্রিষ্টানদের নির্জন এক কবরখানা। লোকজনের তেমন আনাগোনা ছিল না ওখানে। গোরস্তানের একদিকে সারি সারি ইট-বাঁধানো বেদি। সেগুলোই হলো লক্ষ্য। একটি বেদি হলো বড় লাট, একটি ছোট লাট, একটি ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, আরেকটি এসডিও। নজরুলের হাতে গোল গোল সিসার গুলি এয়ারগানের নলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে ফটাশ ফটাশ করে লাগে দেশের শত্রু ইংরেজদের গায়ে। একটা গুলি লাগে, আর নজরুলের সেকি উল্লাস!
কৈশোরে ইংরেজ তাড়ানোটা খেলার মতো হলেও তারুণ্যে নজরুল সেই কাজে সত্যি উঠেপড়ে লেগে গেলেন। তবে এবার বন্দুক হাতে নয়, বন্দুকের চেয়েও তীব্র সেই অস্ত্র। কবিতা হয়ে উঠল নজরুলের নতুন এয়ারগান। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখে ইংরেজ শাসকদের নজরে চলে আসেন নজরুল। তবে বাজেয়াপ্ত করতে পারেনি তাঁর কবিতা। কিন্তু ‘যুগবাণী’ নামের প্রবন্ধ সংকলন বাজেয়াপ্ত করা হয়। বসে থাকেননি নজরুল; লিখে ফেলেন ‘বিষের বাঁশি’ ও ‘ভাঙার গান’। বাজেয়াপ্ত হয় বই দুটি। যত বাজেয়াপ্ত করা হয়, ততই যেন সবাই নেশায় পড়ে যান নজরুলের কবিতার। নজরুল হয়ে ওঠেন স্বাধীনতার প্রতীক।
নজরুলের সেই বিদ্রোহী চেতনা আজও পরাধীনতার শিকল ভাঙার প্রতীক হয়ে আছে। ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতেও নজরুল ধরা দেন বাঙালির চেতনায় বিদ্রোহ হিসেবে।
জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করছে নানা প্রতিষ্ঠান। ২৩ মে স্মারক বক্তৃতা, পুরস্কার, আলোচনা সভা করেছে বাংলা একাডেমি। গতকাল শুক্রবার ছায়ানটে বসেছিল নজরুলজয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধনী আয়োজন। আজ শনিবার শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় জাদুঘরে আছে নজরুলকে নিয়ে নানা আয়োজন।
ছায়ানটের তিন দিনব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধনী দিনে গতকাল বিশেষ বক্তৃতায় অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল বলেন, তাঁর পুরো জীবনটাই ছিল সাময়িক জগতের পাপ-তাপ-গ্লানি এবং ব্রিটিশ প্রভুদের অত্যাচারের বিপরীতে গর্জে ওঠা।
অনুষ্ঠান সাজানো হয় পাঠ, নৃত্য, গান ও কথন দিয়ে। নজরুলকে নিয়ে আরও কথা বলেন ছায়ানট সহসভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল এবং সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন ছায়ানটের শিল্পী ছাড়াও আমন্ত্রিত শিল্পীরা।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে