Ajker Patrika

প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত ৩

আসাদুজ্জামান রিপন ও হারুনুর রসিদ, নরসিংদী সদর ও রায়পুরা
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২১, ১৯: ৪৮
প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত ৩

নরসিংদীতে দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ গেল তিনজনের। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউপিতে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তবে সংঘর্ষের পর আইন শৃঙ্খলাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ায় সকাল ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। দ্বিতীয় ধাপে রায়পুরা উপজেলার ১০টি ও সদর উপজেলার ২টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

সংঘর্ষে নিহতরা হলেন, বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দী গ্রামের সালাউদ্দিন মিয়া (৩০), সোবহানপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর মিয়া (২৫) ও বটতলীকান্দি গ্রামের ছেলে দুলাল মিয়া (২২)। এর মধ্যে নিহত সালাউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) চেয়ারম্যান প্রার্থী (টেলিফোন প্রতীক) রাতুল হাসান জাকিরের সমর্থক ও দুলাল নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল হকের সমর্থক। এ নিয়ে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনকে ঘিরে নরসিংদীতে মোট ৯ জনের প্রাণহানি ঘটল।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, জেলার ১২টি ইউপি মধ্যে রায়পুরার বাঁশগাড়ি ছাড়া ১১ ইউপিতে ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া অনেকটা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। রায়পুরার বাঁশগাড়িতে ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আশরাফুল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) টেলিফোন প্রতীকে রাতুল হাসান জাকির ও আনারস প্রতীকে জাহাঙ্গীর সরকার। নির্বাচনী মাঠে আশরাফুল ও রাতুল হাসানের সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েক দিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বুধবার রাত সাড়ে ৩টায় বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল হক ও তাঁর সমর্থক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুলসহ লতিফ আলী, ডা. হবি, সেলিম মেম্বারের নেতৃত্বে ১৫০ থেকে ২০০ জনের একটি দল ইউনিয়নের বালুয়াকান্দী, বটতলীকান্দি ও সোবহানপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় একযোগে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি ছোড়েন। এ সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান আলী সারজার ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাতুল হাসান জাকিরের সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। পরে তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে দুপক্ষই দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ তিনজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। খবর পেয়ে ভোরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

রায়পুরার চর সুবুদ্ধির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিশবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলছিল। দুপুর ১২টার দিকে দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকেরা ওই কেন্দ্র দখল করতে আসেন। এ নিয়ে দুই পক্ষই টেঁটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এ সময় ২টি ব্যালট বাক্স ভাঙচুর ও ২টি ভোট ভর্তি বাক্স ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বাধা দিতে গিয়ে পুলিশ সদস্য এএসআই নিয়ামত তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন।

নিহত সালাউদ্দিনের স্ত্রী আঁখি বেগম বলেন, সারা রাত ধরে এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ হচ্ছিল। সকাল ছয়টার দিকে আমাদের ঘরের সামনে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। শব্দে ঘর থেকে বাইরে বের হন সালাউদ্দিন। এরপরই তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল হক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রাতুল হাসান জাকিরের ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে নরসিংদীর সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুরা সার্কেল) সত্যজিৎ কুমার ঘোষ বলেন, নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মামলা হয়নি। এ ছাড়া নেয়ামত নামে একজন এএসআইয়ের পা ভেঙে গেছে। তাঁকে রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত