স্বপ্না রেজা
প্রতিটি সমাজে গরিব শ্রেণি হলো সেই সমাজের বিদ্যমান বৈষম্যের দৃশ্যমান এক কঠিন বাস্তবতা। কোনোভাবেই অস্বীকার করবার উপায় নেই, সুযোগ নেই যে, এই শ্রেণি সৃষ্টির পেছনে যতটা না প্রাকৃতিক দুর্যোগ দায়ী, তার চেয়ে অধিক দায়ী সামাজিক বৈষম্য। সামাজিক বৈষম্য প্রচলিত রীতি-নীতি, সম্পদ বণ্টনের প্রক্রিয়া, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সংবিধানবহির্ভূত চেতনা ইত্যাদি কারণে সৃষ্ট এক সামাজিক অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা। একটা শ্রেণির মানুষ এই অবস্থার ভেতর আজীবন থেকে যায়।
তাদের থাকতে বাধ্য করা হয়। রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থাটা এমনভাবে গড়া হয়, এমন সব নীতিনির্ধারণী দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয় যে, দিনে দিনে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কোনো না কোনোভাবে বাড়ে, বাড়তেই থাকে। এই রীতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আবার সমাজের আরেকটা শ্রেণি হলো সুবিধাবাদী শ্রেণি। মানবতার দোহাই দিয়ে ও উন্নয়নের স্বার্থে এই দরিদ্র শ্রেণিকে কেন্দ্র করে তারা নানান কর্মসূচি, উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং তা বাস্তবায়ন করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তুলনায় তারাই পক্ষান্তরে সুবিধাপ্রাপ্ত হয় বেশি। অথচ, মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, ন্যায়সংগত সমাজ গড়ে তোলা। দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সেও সংবিধানসম্মতভাবে সবার অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন যে গতি ও প্রয়োজনীয়তায় হয়েছে, মানবজীবনের মানবিক উন্নয়ন, অধিকার প্রতিষ্ঠা সেই গতি ও প্রয়োজনীয়তায় হয়নি। আর অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রচার ও প্রসারে বেশি জায়গা পাওয়ায় মানবিক উন্নয়নের বিষয়টা আড়ালে পড়ে গেছে সব সময়। কালেভদ্রে মানবিক উন্নয়নের বিষয়টি সামনে এলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় থাকে অত্যন্ত অপ্রতুল।
বাজেট মানেই হলো সার্বিকভাবে কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্য খরচ নির্ধারণ করা। পরিকল্পনা ও বাজেট—দুইয়ের যৌক্তিকতা থাকতে হয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বাৎসরিক বাজেট থাকে, করা হয়। সেটা হয় অর্থবছরের শুরুতে এবং সেই প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য। যে পরিকল্পনায় প্রতিষ্ঠানের ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সবার সুরক্ষা ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টিই প্রাধান্য পায়। তদ্রূপ একটি দেশের জাতীয় বাজেট হয় দেশের জনগণের কল্যাণ, সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে এবং উন্নয়নে এগিয়ে নিতে এবং দেশের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যে এবং সেটা হয় সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণের মধ্য দিয়ে। মূলত বাজেট প্রণেতারা এভাবেই বাজেট সম্পর্কে বলে থাকেন। তাঁরা সব সময় এমনটা বলতে অভ্যস্ত যে, দেশ ও জনগণের জন্য তাদের প্রস্তাবিত বাজেট উত্তম। অতঃপর করতালির মধ্য দিয়ে সেই বাজেট একপর্যায়ে প্রাণ পায়, পাস হয়। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট এর ব্যতিক্রম কিছু বলে অনেকেই মনে করে না। অথচ সাংঘর্ষিক, বৈপরীত্য ও স্ববিরোধিতা কতই-না থেকে যায়। সেটা দেখার জন্য বাজেট প্রণেতাদের মধ্যে কেউ থাকেন না। দেখতে পায় কেবল ভুক্তভোগীরা, যারা নতুন করে আবার করুণ অবস্থার মধ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ভাবতে বাধ্য হয়।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটেও দরিদ্র মানুষকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়নি বরাবরের মতো। অথচ বলা হয়েছে, এটা ‘গণমুখী ও গরিববান্ধব’ বাজেট। কেউ বলছেন, ‘সবার জন্য বাজেট’, কেউ বলছেন ‘জনবান্ধব’। বিশেষণের অভাব নেই। যে যার মতো যা-তা বলেছেন, ভেতরে যা-ই থাকুক। কিন্তু যে অভাবটা রয়েছে, সেটা হলো যুক্তিসংগতভাবে এই বিশেষণের ব্যাখ্যা না করা। কেউ সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ দেয় না, কেন এই বাজেটকে গরিববান্ধব বলা হচ্ছে। বইয়ের প্রচ্ছদের মতো কথা বলে সবাই। মূলত গরিব জনগোষ্ঠী অনেক কিছু খতিয়ে দেখে না। প্রভাব নেই, ক্ষমতা নেই, নেই অর্থ ওদের। দুর্বল শ্রেণি হয়েই সমাজটা ওদের বাঁচিয়ে রাখছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজব একটা বিষয় এই বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হলো। সেটা হলো, করযোগ্য আয় না করলেও বিত্তহীন মানুষের কর দেওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ২০২৩-২০২৪ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে। কী সাংঘাতিক কথা! নির্মম প্রহসন, শোষণ! করযোগ্য আয় না করেও কেন একজন মানুষকে ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে? অথচ কর দেওয়ার আয়সীমা নির্ধারণ করা আছে। এমন সিদ্ধান্তকে কী বলা যায়? তা ছাড়া করযোগ্য আয় যাঁর থাকে না, তাঁর অবস্থানই বা কোথায় সমাজে? করযোগ্য আয় না করেও কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি করা, একধরনের কঠিন শোষণ হয়ে যায় কি না, তা ভাবতে হবে। এমন মনোভাবে শোষণের সীমা অতিক্রম করে বলে অনেকেই মনে করেন। একদিকে কর প্রদানের আয়সীমা নির্ধারণ করা, অন্যদিকে করযোগ্য আয় না করেও ২ হাজার টাকা কর প্রদানের প্রস্তাব যে সাংঘর্ষিক হয়, সেটা কেউ বুঝল না। আয়বিহীন মানুষের ওপর এই বোঝা চাপানো কতটা যুক্তিসংগত হবে, সেটা ভাবা জরুরি। এ প্রসঙ্গে একজনকে বলতে শুনলাম, ২ হাজার টাকা কী এমন টাকা! বুঝলাম, তেমন পরিমাণের টাকা নয় এটা তাঁদের কাছে। সম্ভবত এটা যিনি আদায় করবেন, তাঁর কাছে তেমন কিছু নয়। কিন্তু যিনি দেবেন, তাঁর কাছে অনেক কিছু।
সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে ভাতার ব্যবস্থা, তা অত্যন্ত অপ্রতুল। যেমন—বয়স্ক ভাতা মাসিক ৫০০ টাকা, বিধবা বা স্বামী কর্তৃক নিগৃহীত ভাতা মাসিক ৫০০ টাকা, প্রতিবন্ধী ভাতা ৮০০ টাকা। সাত বছর পর এই ভাতা বাড়ানো হয়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। যত দূর জানা যায়, এই ভাতা বৃদ্ধির জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব ছিল।
উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। উপকারভোগীর সংখ্যা এবং সব ধরনের ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর মতে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। এর সমর্থনে তিনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের কথা উল্লেখ করেন।
করোনা, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ-পরবর্তী অবস্থায় যে বৈশ্বিক সংকট, তার মারাত্মক প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছে। অনেক বেকারত্ব সৃষ্টি হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যদৌড়। এমন এক অবস্থায় সরকারের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাতার যে চেহারা, তাকে কঠিন প্রহসন বলা সমীচীন কি না, সেটা অর্থ মন্ত্রণালয় বলুক। কী হয় মাসে ৫৫০, ৬০০ বা ৮০০ টাকার ভাতা দিয়ে? এই পরিমাণ টাকা নির্ধারণ করা হলে ব্যক্তির মানব মর্যাদা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, ভেবে দেখেছি কি না কেউ? এভাবে মানুষকে ছোট অবস্থায় না ঠেলে দিয়ে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা যায়। কোনো মানুষকে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব প্রধানত রাষ্ট্রের।
পরিশেষে বলব, বাজেট প্রণয়নের আগে একটা সুষ্ঠু ও সঠিক পরিসংখ্যান হওয়া দরকার। পরিসংখ্যান ছাড়া পরিকল্পনা ও বাজেট নেহাতই প্রহসন ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। বিত্তবানদের কথা ভেবে নয়, সবার কথা ভেবেই বাজেট প্রণয়ন করতে হবে এবং তার যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ থাকতে হবে। এমন কোনো তথ্য উপস্থাপন না করাই ভালো, যার গ্রহণযোগ্যতা নেই এবং যা সাংঘর্ষিক।
প্রতিটি সমাজে গরিব শ্রেণি হলো সেই সমাজের বিদ্যমান বৈষম্যের দৃশ্যমান এক কঠিন বাস্তবতা। কোনোভাবেই অস্বীকার করবার উপায় নেই, সুযোগ নেই যে, এই শ্রেণি সৃষ্টির পেছনে যতটা না প্রাকৃতিক দুর্যোগ দায়ী, তার চেয়ে অধিক দায়ী সামাজিক বৈষম্য। সামাজিক বৈষম্য প্রচলিত রীতি-নীতি, সম্পদ বণ্টনের প্রক্রিয়া, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সংবিধানবহির্ভূত চেতনা ইত্যাদি কারণে সৃষ্ট এক সামাজিক অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা। একটা শ্রেণির মানুষ এই অবস্থার ভেতর আজীবন থেকে যায়।
তাদের থাকতে বাধ্য করা হয়। রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থাটা এমনভাবে গড়া হয়, এমন সব নীতিনির্ধারণী দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয় যে, দিনে দিনে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কোনো না কোনোভাবে বাড়ে, বাড়তেই থাকে। এই রীতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আবার সমাজের আরেকটা শ্রেণি হলো সুবিধাবাদী শ্রেণি। মানবতার দোহাই দিয়ে ও উন্নয়নের স্বার্থে এই দরিদ্র শ্রেণিকে কেন্দ্র করে তারা নানান কর্মসূচি, উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং তা বাস্তবায়ন করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তুলনায় তারাই পক্ষান্তরে সুবিধাপ্রাপ্ত হয় বেশি। অথচ, মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, ন্যায়সংগত সমাজ গড়ে তোলা। দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সেও সংবিধানসম্মতভাবে সবার অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন যে গতি ও প্রয়োজনীয়তায় হয়েছে, মানবজীবনের মানবিক উন্নয়ন, অধিকার প্রতিষ্ঠা সেই গতি ও প্রয়োজনীয়তায় হয়নি। আর অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রচার ও প্রসারে বেশি জায়গা পাওয়ায় মানবিক উন্নয়নের বিষয়টা আড়ালে পড়ে গেছে সব সময়। কালেভদ্রে মানবিক উন্নয়নের বিষয়টি সামনে এলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় থাকে অত্যন্ত অপ্রতুল।
বাজেট মানেই হলো সার্বিকভাবে কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্য খরচ নির্ধারণ করা। পরিকল্পনা ও বাজেট—দুইয়ের যৌক্তিকতা থাকতে হয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বাৎসরিক বাজেট থাকে, করা হয়। সেটা হয় অর্থবছরের শুরুতে এবং সেই প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য। যে পরিকল্পনায় প্রতিষ্ঠানের ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সবার সুরক্ষা ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টিই প্রাধান্য পায়। তদ্রূপ একটি দেশের জাতীয় বাজেট হয় দেশের জনগণের কল্যাণ, সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে এবং উন্নয়নে এগিয়ে নিতে এবং দেশের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যে এবং সেটা হয় সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণের মধ্য দিয়ে। মূলত বাজেট প্রণেতারা এভাবেই বাজেট সম্পর্কে বলে থাকেন। তাঁরা সব সময় এমনটা বলতে অভ্যস্ত যে, দেশ ও জনগণের জন্য তাদের প্রস্তাবিত বাজেট উত্তম। অতঃপর করতালির মধ্য দিয়ে সেই বাজেট একপর্যায়ে প্রাণ পায়, পাস হয়। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট এর ব্যতিক্রম কিছু বলে অনেকেই মনে করে না। অথচ সাংঘর্ষিক, বৈপরীত্য ও স্ববিরোধিতা কতই-না থেকে যায়। সেটা দেখার জন্য বাজেট প্রণেতাদের মধ্যে কেউ থাকেন না। দেখতে পায় কেবল ভুক্তভোগীরা, যারা নতুন করে আবার করুণ অবস্থার মধ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ভাবতে বাধ্য হয়।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটেও দরিদ্র মানুষকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়নি বরাবরের মতো। অথচ বলা হয়েছে, এটা ‘গণমুখী ও গরিববান্ধব’ বাজেট। কেউ বলছেন, ‘সবার জন্য বাজেট’, কেউ বলছেন ‘জনবান্ধব’। বিশেষণের অভাব নেই। যে যার মতো যা-তা বলেছেন, ভেতরে যা-ই থাকুক। কিন্তু যে অভাবটা রয়েছে, সেটা হলো যুক্তিসংগতভাবে এই বিশেষণের ব্যাখ্যা না করা। কেউ সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ দেয় না, কেন এই বাজেটকে গরিববান্ধব বলা হচ্ছে। বইয়ের প্রচ্ছদের মতো কথা বলে সবাই। মূলত গরিব জনগোষ্ঠী অনেক কিছু খতিয়ে দেখে না। প্রভাব নেই, ক্ষমতা নেই, নেই অর্থ ওদের। দুর্বল শ্রেণি হয়েই সমাজটা ওদের বাঁচিয়ে রাখছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজব একটা বিষয় এই বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হলো। সেটা হলো, করযোগ্য আয় না করলেও বিত্তহীন মানুষের কর দেওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ২০২৩-২০২৪ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে। কী সাংঘাতিক কথা! নির্মম প্রহসন, শোষণ! করযোগ্য আয় না করেও কেন একজন মানুষকে ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে? অথচ কর দেওয়ার আয়সীমা নির্ধারণ করা আছে। এমন সিদ্ধান্তকে কী বলা যায়? তা ছাড়া করযোগ্য আয় যাঁর থাকে না, তাঁর অবস্থানই বা কোথায় সমাজে? করযোগ্য আয় না করেও কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি করা, একধরনের কঠিন শোষণ হয়ে যায় কি না, তা ভাবতে হবে। এমন মনোভাবে শোষণের সীমা অতিক্রম করে বলে অনেকেই মনে করেন। একদিকে কর প্রদানের আয়সীমা নির্ধারণ করা, অন্যদিকে করযোগ্য আয় না করেও ২ হাজার টাকা কর প্রদানের প্রস্তাব যে সাংঘর্ষিক হয়, সেটা কেউ বুঝল না। আয়বিহীন মানুষের ওপর এই বোঝা চাপানো কতটা যুক্তিসংগত হবে, সেটা ভাবা জরুরি। এ প্রসঙ্গে একজনকে বলতে শুনলাম, ২ হাজার টাকা কী এমন টাকা! বুঝলাম, তেমন পরিমাণের টাকা নয় এটা তাঁদের কাছে। সম্ভবত এটা যিনি আদায় করবেন, তাঁর কাছে তেমন কিছু নয়। কিন্তু যিনি দেবেন, তাঁর কাছে অনেক কিছু।
সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে ভাতার ব্যবস্থা, তা অত্যন্ত অপ্রতুল। যেমন—বয়স্ক ভাতা মাসিক ৫০০ টাকা, বিধবা বা স্বামী কর্তৃক নিগৃহীত ভাতা মাসিক ৫০০ টাকা, প্রতিবন্ধী ভাতা ৮০০ টাকা। সাত বছর পর এই ভাতা বাড়ানো হয়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। যত দূর জানা যায়, এই ভাতা বৃদ্ধির জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব ছিল।
উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। উপকারভোগীর সংখ্যা এবং সব ধরনের ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর মতে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। এর সমর্থনে তিনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের কথা উল্লেখ করেন।
করোনা, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ-পরবর্তী অবস্থায় যে বৈশ্বিক সংকট, তার মারাত্মক প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছে। অনেক বেকারত্ব সৃষ্টি হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যদৌড়। এমন এক অবস্থায় সরকারের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাতার যে চেহারা, তাকে কঠিন প্রহসন বলা সমীচীন কি না, সেটা অর্থ মন্ত্রণালয় বলুক। কী হয় মাসে ৫৫০, ৬০০ বা ৮০০ টাকার ভাতা দিয়ে? এই পরিমাণ টাকা নির্ধারণ করা হলে ব্যক্তির মানব মর্যাদা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, ভেবে দেখেছি কি না কেউ? এভাবে মানুষকে ছোট অবস্থায় না ঠেলে দিয়ে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা যায়। কোনো মানুষকে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব প্রধানত রাষ্ট্রের।
পরিশেষে বলব, বাজেট প্রণয়নের আগে একটা সুষ্ঠু ও সঠিক পরিসংখ্যান হওয়া দরকার। পরিসংখ্যান ছাড়া পরিকল্পনা ও বাজেট নেহাতই প্রহসন ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। বিত্তবানদের কথা ভেবে নয়, সবার কথা ভেবেই বাজেট প্রণয়ন করতে হবে এবং তার যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ থাকতে হবে। এমন কোনো তথ্য উপস্থাপন না করাই ভালো, যার গ্রহণযোগ্যতা নেই এবং যা সাংঘর্ষিক।
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
৩ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪