যশোরের পিঠা গবেষণা ইনস্টিটিউট

জাহিদ হাসান, যশোর
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯: ২০

থরে থরে সাজানো বিভিন্ন স্বাদের পিঠা। একেকটির আকার ও উপাদান একেক রকম। শীত এসেছে বলেই নয়, এখানে পিঠা পাওয়া যায় সারা বছর। জেনে অবাক হবেন। এটি কেবল পিঠা বিক্রির জায়গা নয়, পিঠা নিয়ে গবেষণারও জায়গা। দোচালা সেমিপাকা টিনের ঘরে এখানে কয়েকজন তরুণ-তরুণীর হাত ধরে বছরের পর বছর চলছে দেশীয় ঐতিহ্যের পিঠার সম্ভার ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম। শুধু তা-ই নয়, পিঠা সম্পদ সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং নিত্যনতুন পিঠা উদ্ভাবনে কাজ করছেন তাঁরা। এক বছরের গবেষণার সফলতায় তাঁরা দেশীয় পিঠার সম্ভারে যোগ করেছেন নতুন ১৫টি বাহারি পিঠার নাম ও স্বাদ।

পিঠাশিল্প রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে যশোর শহরের খড়কিতে অবস্থিত আইডিয়া পিঠা পার্কের অঙ্গসংগঠন ‘বাংলাদেশ পিঠা গবেষণা ইনস্টিটিউট’। এর মাধ্যমে এ দেশে হারিয়ে যাওয়া এবং নিত্যনতুন পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন সব বয়সী মানুষ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পিঠা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পিঠা গবেষণা জোরদারকরণে চলছে নতুন নতুন গবেষণা। পিঠাশিল্প রক্ষায় সরকার একটু উদ্যোগ নিলে পিঠাই হতে পারে আমাদের অর্থনীতির আরেকটি প্রাণশক্তি।

কুলফি পিঠাপিঠার ঐতিহ্য পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং বিলুপ্তপ্রায় পিঠা ফিরিয়ে আনার জন্য ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর যশোর শহরের খড়কিতে আইডিয়া পিঠা পার্কের যাত্রা শুরু হয়। ১০১ রকম পিঠা দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০-এর বেশি। দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় পিঠা ফিরিয়ে আনার জন্য সংগঠনটি গত বছর থেকে উদ্যোগ নেয় পিঠা সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং নিত্যনতুন পিঠা উদ্ভাবনে ভূমিকা রাখা। সেই পরিকল্পনা থেকে আইডিয়া পিঠা পার্কে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ পিঠা গবেষণা ইনস্টিটিউট। এই ইনস্টিটিউট পিঠা সংরক্ষণ, নিত্যনতুন পিঠা উদ্ভাবন ইত্যাদির পরিচয় ঘটানোর সঙ্গে পিঠাকে যুগোপযোগী করতে কাজ করে যাচ্ছে।

এক বছরে বাংলাদেশ পিঠা গবেষণা ইনস্টিটিউট পিঠার তালিকায় যোগ করেছে নতুন ১৫টি পিঠার নাম ও স্বাদ। এগুলোর মধ্যে আছে তিন ধরনের ইমিউনিটি পিঠা, কুলফি পিঠা, দোলন, চিকেন পাটিসাপটা, আইডিয়া নাড়, আইডিয়া রোজ, চিকেন পুলি, সবজি লতিকা, স্পেশাল সবজি লতিকা, দোসা পিঠা, আইডিয়া বাঁশ কাবাব, ফুচকা পাকান, ঝাল ভাপার মতো বাহারি স্বাদের পিঠা।

ইনস্টিটিউটের রান্নাঘরে পিঠা বানানো হচ্ছেপিঠা গবেষণা ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ও যশোর সরকারি এম এম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, ‘দেশীয় পিঠা আমাদের হারিয়ে যাওয়া রত্নভান্ডার। এই রত্নভান্ডারকে পরিচর্যা করার মতো কোনো ইনস্টিটিউট নেই। আমরা সংরক্ষণ করতে পারিনি বলেই দিন দিন এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। যেসব পিঠা হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য আমাদের এই ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা।’ ইনস্টিটিউটটি পিঠা উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন ও বাজার সম্প্রসারণের জন্য আলাদা ভূমিকা রাখবে বলে জানান অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন।

পিঠা গবেষণা ইনস্টিটিউট তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন বিভাগে কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্যরা নিজ নিজ বিভাগের স্থানীয় পিঠার তথ্য সংগ্রহ করে নথিবদ্ধ করার কাজ করছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত