ফারহা তানজীম তিতিল
অনেক দিন আগে রবিন্স বার্লিং নামের একজন আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী ‘স্ট্রং উইমেন অব মধুপুর’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। যেসব অজানা কারণে মান্দি বা গারোদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল তার একটা কারণ হলো, মান্দি নারীদের জীবনযাপন অনেক বলিষ্ঠ। এই বলিষ্ঠতা আমার ভালো লাগে।
প্রথম যেদিন টাঙ্গাইলের মধুপুরের চুনিয়া গ্রামে যাই, সেদিন আমাকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল নারীদের সঙ্গে। অনেকের কথাই বলতে পারি। কয়ন মৃর কথাই বলি আগে। তিনি গান করেন, যে গান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মান্দি সমাজে প্রচলিত আছে। ধর্মান্তরে ঐতিহ্যগত যে বিদ্যা হারাতে চলেছে, তা কয়ন মৃর মতো কিছু মানুষ এখনো সংরক্ষণে রেখেছেন। মান্দিদের আদি ধর্ম সাংসারেক অনুসারীদের শেষ কয়েকজনের অন্যতম জনিক নকরেকের বাড়িতে কয়ন মৃর সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তা এখনো অটুট আছে।
আচ্চু জনিক নেই, কয়ন মৃ আছেন জ্ঞানকাণ্ড হয়ে। প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে। একবার মধুপুরের বনে একটা পূজার আয়োজন হয়েছিল। সেদিন কয়ন মৃ বন রক্ষার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, তা কোনো দিনই ভুলতে পারব না।
জঙ্গল বিনাশী উন্নয়ন-দর্শনের বিপরীতে জঙ্গলে বসবাসকারী মানুষের প্রতিবাদ জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র যতই স্বীকৃতি দিক না কেন, মধুপুর উপজেলার পেগামারি গ্রামের কয়ন মৃর তা জানার কথা নয়। তিনি কথা বলেন তাঁর প্রাকৃত জ্ঞান দিয়ে। তাঁর আছে কাণ্ডজ্ঞান, যে জ্ঞান দিয়ে নিজের অধিকার বুঝতে পারেন এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার অপরিসীম সাহসও তাঁর সহজাত। তাই অবলীলায় বলতে পারেন, ‘আমা, আম্বির জমির জন্য আমরা জান দেব, তবু জমি দেব না।’
‘আমা’ শব্দের অর্থ মা। ‘আম্বি’ দাদি ও নানি দুই অর্থেই ব্যবহৃত হয়। কয়ন মৃর এ বাক্যে আম্বি শুধু নানি অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। নানির জমি মা পান।
মান্দি সমাজে মায়ের পরিচয়ে সন্তান পরিচিত হয়। কয়ন তাঁর মৃ পদবি পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে। মায়ের সম্পত্তিও পেয়েছেন তিনি। মায়ের পদবি ব্যবহার করে সন্তান। তাতে সুবিধা হলো যে বংশগতির হিসাবটা মোটামুটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। খুব সহজেই চেনা যায় কে কোন মাহারির। আচিক ভাষার ‘মাহারি’ শব্দটির বাংলা অর্থ গোত্র। সন্তান যেহেতু মায়ের শরীর থেকে বের হয়, সে মায়ের পদবি নিলে আর বংশগতির হিসাব সহজে গুলিয়ে যাবে না। কারণ বিপরীত মাহারি ছাড়া বিয়ে করার নিয়ম নেই। দুটি প্রধান গোত্র বা মাহারি আছে মান্দি সমাজে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সন্তানের প্রথম পরিচয় মায়ের পরিচয়ে হওয়াই ভালো। তাই মান্দি সমাজের নিয়ম আমার পছন্দ।
মায়ের সম্পত্তি মেয়েরা পায়, সেটা তো আগেই বলেছি। পুরুষেরা বিয়ে করে স্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সম্পত্তির দেখাশোনা করেন। বাঙালি সমাজে পুত্রবধূ যেমন খুব গুরুত্বপূর্ণ পদের অধিকারী হন, সংসারে সবার দেখভাল করার দায়িত্ব তাঁদের ওপর বর্তায়। মান্দি সমাজেও বিয়ে করে ঘরে আসা জামাই পরিবারের সবার দেখভাল করেন। জামাইকে ঘরে আনা এবং সম্পত্তির মালিক হওয়ার কারণে সে সমাজে নারীরা বেশ খানিকটা ক্ষমতাধর হয়ে থাকেন। অনেক বেশি সাবলীল তাঁদের চলাফেরা। বৃদ্ধ বয়সী মান্দি নারীকেও চমৎকারভাবে ক্যাটওয়াকে অংশ নিতে দেখেছি আমি। খুব দৃঢ় পদক্ষেপে হাঁটেন, বাজার করেন এবং বনের কাঠ সংগ্রহ করেন এই নারীরা। এখন অবশ্য আধুনিকায়নের বিবেচনা থেকে এবং পুরুষের বিপন্নতা কমাতে মান্দি পুরুষদেরও সম্পত্তির অধিকারী করা হচ্ছে।
যে সমাজের নারীরা নিত্য আড্ডায় অংশ নেন, পরিবারের প্রধান হন, সেখানেও নারী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নন কিন্তু। নারীরা কখনো খামাল বা পুরোহিত হতে পারেন না। গ্রামপ্রধান বা নকমাও হতে পারেন না। তবুও সেখানে নারী পরিবারপ্রধান তো বটে। সে সমাজেও নারী কখনো কখনো স্বামীর হাতে মার খান। কখনো আবার তরুণী মেয়েরা সমাজের প্রবল প্রতাপে ঘর, পরিবার, সমাজ, সম্পত্তির অধিকার ছেড়ে পালিয়ে আসেন নাগরিক ভিড়ে। কখনো জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসেন তাঁরা।
শহরের বিউটি পারলারগুলোতে মান্দি মেয়েদের একাধিপত্য রয়েছে। এর প্রথম কারণ হলো, মান্দি মেয়েরা বুঝে নেন, পরিবার প্রতিপালনের দায়িত্ব তাঁরই। বন যদি না থাকে, খাবার সংগ্রহ হবে কেমন করে? পড়াশোনা তো সচরাচর অষ্টম শ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিকের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তখন বাকি থাকে মান্দি জীবনের গভীর জ্ঞান, মনোযোগ আর পরিশ্রমের হাত দুটো। আর থাকে পরিবার পালনের দায়িত্ববোধ এবং আত্মবিশ্বাসী নারীহৃদয়। যে আত্মবিশ্বাস অধিকাংশ বাঙালি মেয়েদের ছোটবেলাতেই ভেঙে দেওয়া হয়। মগ্ন হাতগুলো খুব ভালোভাবে জানে, কোন মাত্রার প্রেষণ তার গ্রাহককে নিবিড় প্রশান্তি দেয়। বাংলাদেশে ম্যাসাজের জগতে মান্দি হাতের চেয়ে ভালো কিছু বোধ হয় নেই। মঙ্গোলীয় এই হাত ধ্যানের গভীরতা নিয়ে মানব শরীর স্পর্শ করে।
খাসি সমাজেও মান্দিদের মতো পুরুষেরা বিয়ে করে মেয়ের ঘরে আসেন। তবে সেখানে গৃহিণীর মামা আর ভাইয়েরা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখেন। খাসি নারীরা কিন্তু শহরে কাজ করতে এসেছেন কেবল অফিসে। সংখ্যায় তাঁরা বেশি নন। তাঁদের পড়াশোনা প্রীতি, আভিজাত্য এবং সচ্ছলতা কিছুটা বেশি ছিল এত দিন। কিন্তু পান চাষ ক্ষুদ্রঋণের হাতে বন্দী হয়েছে। চা-বাগানমালিকেরাও এখন পানপুঞ্জির জমি দখলে নেমেছেন। নুডলি লামিনরা তাই নীরব দারিদ্র্যে ভেতরে-ভেতরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। অগ্রসর চাকমা, ত্রিপুরা, লুসাই সমাজের নারীরা অনেকেই পৌঁছেছেন বহুদূরে। তবু ম্রো নারীর কান ঝুলে আছে দুশ্চিন্তা আর ভারী মাকড়তে। ম্রো সমাজে অল্প বয়সী ছেলেকে যুবতী নারীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় ঘরের কাজ সামলানোর জন্য।
বাংলাদেশে অবস্থানকারী কড়া জাতির লোক আছে শখানেক। সোনিয়া কড়া তাঁর যোগ্যতা বলে সে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সাঁওতাল সমাজ পুরুষপ্রধান হলেও একজন বাসন্তী মুর্মু তাঁর সংসারে এবং সমাজে সমান গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে।
কিন্তু তবুও মোটের ওপর দারিদ্র্যের চাপ যখন আসে, তা নারীকেই সবচেয়ে বেশি পিষ্ট করে। অভাবের দিনে কত নারীই তো বনের লতা কুড়ান, তিনি তো সন্তানদের অভুক্ত দেখতে পারেন না। চাষাবাদে সবখানেই নারীর ভূমিকা রয়েছে; বরং যেকোনো সমাজ যত বেশি সুশীল হয়ে ওঠে, সেই সমাজের নারীরা তত বেশি পরাধীন হতে থাকেন। অনেকে মনে করে, পাহাড়ের অধিবাসী পুরুষেরা তো সহজেই নেংটি ছেড়েছেন, তবে নারীকে কেন ঐতিহ্যবাহী পোশাক ধরে রাখতে হবে? সব সমাজেই ধরে রাখার দায় যেন নারীরই বেশি।
চাকমা, মারমা, ম্রো ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর নারীদের বিষয়ে ক্ষমতাধর স্থানীয় পুরুষদের আগ্রহ বেশি থাকে। তাই তাঁরা নিয়মিতই শারীরিক নিপীড়নের শিকার হন। অন্যদিকে, প্রেমে জড়ালে সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পড়েন। সব সমাজেই পুরুষ নিজেকে রাখেন মুক্ত আর নারীকে দেখতে চান শিকড় ছড়ানো শিকল পরারূপে। নারীর শরীর, তাঁর মমতা, আগলে রাখার গুণ তাঁর শক্তি না হয়ে শিকল হয়ে দাঁড়ায়। দারিদ্র্য এবং সমাজে ‘আদার’ হওয়ার বিড়ম্বনার সঙ্গে রয়েছে নারী হওয়ার বিড়ম্বনা। তাই সাঁওতাল, কড়া, গারোসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের অল্প কিছু নারীকে যেমন শক্তি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে দেখি, বেশির ভাগকে দেখি সংসার এবং সমাজের দায় বহন করতে। সব মিলিয়ে তাদের দেখি ক্ষমতা এবং সুবিধা থেকে বহু বহু দূরে কোথাও!
লেখক: গবেষক ও শিক্ষক
অনেক দিন আগে রবিন্স বার্লিং নামের একজন আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী ‘স্ট্রং উইমেন অব মধুপুর’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। যেসব অজানা কারণে মান্দি বা গারোদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল তার একটা কারণ হলো, মান্দি নারীদের জীবনযাপন অনেক বলিষ্ঠ। এই বলিষ্ঠতা আমার ভালো লাগে।
প্রথম যেদিন টাঙ্গাইলের মধুপুরের চুনিয়া গ্রামে যাই, সেদিন আমাকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল নারীদের সঙ্গে। অনেকের কথাই বলতে পারি। কয়ন মৃর কথাই বলি আগে। তিনি গান করেন, যে গান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মান্দি সমাজে প্রচলিত আছে। ধর্মান্তরে ঐতিহ্যগত যে বিদ্যা হারাতে চলেছে, তা কয়ন মৃর মতো কিছু মানুষ এখনো সংরক্ষণে রেখেছেন। মান্দিদের আদি ধর্ম সাংসারেক অনুসারীদের শেষ কয়েকজনের অন্যতম জনিক নকরেকের বাড়িতে কয়ন মৃর সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তা এখনো অটুট আছে।
আচ্চু জনিক নেই, কয়ন মৃ আছেন জ্ঞানকাণ্ড হয়ে। প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে। একবার মধুপুরের বনে একটা পূজার আয়োজন হয়েছিল। সেদিন কয়ন মৃ বন রক্ষার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, তা কোনো দিনই ভুলতে পারব না।
জঙ্গল বিনাশী উন্নয়ন-দর্শনের বিপরীতে জঙ্গলে বসবাসকারী মানুষের প্রতিবাদ জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র যতই স্বীকৃতি দিক না কেন, মধুপুর উপজেলার পেগামারি গ্রামের কয়ন মৃর তা জানার কথা নয়। তিনি কথা বলেন তাঁর প্রাকৃত জ্ঞান দিয়ে। তাঁর আছে কাণ্ডজ্ঞান, যে জ্ঞান দিয়ে নিজের অধিকার বুঝতে পারেন এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার অপরিসীম সাহসও তাঁর সহজাত। তাই অবলীলায় বলতে পারেন, ‘আমা, আম্বির জমির জন্য আমরা জান দেব, তবু জমি দেব না।’
‘আমা’ শব্দের অর্থ মা। ‘আম্বি’ দাদি ও নানি দুই অর্থেই ব্যবহৃত হয়। কয়ন মৃর এ বাক্যে আম্বি শুধু নানি অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। নানির জমি মা পান।
মান্দি সমাজে মায়ের পরিচয়ে সন্তান পরিচিত হয়। কয়ন তাঁর মৃ পদবি পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে। মায়ের সম্পত্তিও পেয়েছেন তিনি। মায়ের পদবি ব্যবহার করে সন্তান। তাতে সুবিধা হলো যে বংশগতির হিসাবটা মোটামুটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। খুব সহজেই চেনা যায় কে কোন মাহারির। আচিক ভাষার ‘মাহারি’ শব্দটির বাংলা অর্থ গোত্র। সন্তান যেহেতু মায়ের শরীর থেকে বের হয়, সে মায়ের পদবি নিলে আর বংশগতির হিসাব সহজে গুলিয়ে যাবে না। কারণ বিপরীত মাহারি ছাড়া বিয়ে করার নিয়ম নেই। দুটি প্রধান গোত্র বা মাহারি আছে মান্দি সমাজে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সন্তানের প্রথম পরিচয় মায়ের পরিচয়ে হওয়াই ভালো। তাই মান্দি সমাজের নিয়ম আমার পছন্দ।
মায়ের সম্পত্তি মেয়েরা পায়, সেটা তো আগেই বলেছি। পুরুষেরা বিয়ে করে স্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সম্পত্তির দেখাশোনা করেন। বাঙালি সমাজে পুত্রবধূ যেমন খুব গুরুত্বপূর্ণ পদের অধিকারী হন, সংসারে সবার দেখভাল করার দায়িত্ব তাঁদের ওপর বর্তায়। মান্দি সমাজেও বিয়ে করে ঘরে আসা জামাই পরিবারের সবার দেখভাল করেন। জামাইকে ঘরে আনা এবং সম্পত্তির মালিক হওয়ার কারণে সে সমাজে নারীরা বেশ খানিকটা ক্ষমতাধর হয়ে থাকেন। অনেক বেশি সাবলীল তাঁদের চলাফেরা। বৃদ্ধ বয়সী মান্দি নারীকেও চমৎকারভাবে ক্যাটওয়াকে অংশ নিতে দেখেছি আমি। খুব দৃঢ় পদক্ষেপে হাঁটেন, বাজার করেন এবং বনের কাঠ সংগ্রহ করেন এই নারীরা। এখন অবশ্য আধুনিকায়নের বিবেচনা থেকে এবং পুরুষের বিপন্নতা কমাতে মান্দি পুরুষদেরও সম্পত্তির অধিকারী করা হচ্ছে।
যে সমাজের নারীরা নিত্য আড্ডায় অংশ নেন, পরিবারের প্রধান হন, সেখানেও নারী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নন কিন্তু। নারীরা কখনো খামাল বা পুরোহিত হতে পারেন না। গ্রামপ্রধান বা নকমাও হতে পারেন না। তবুও সেখানে নারী পরিবারপ্রধান তো বটে। সে সমাজেও নারী কখনো কখনো স্বামীর হাতে মার খান। কখনো আবার তরুণী মেয়েরা সমাজের প্রবল প্রতাপে ঘর, পরিবার, সমাজ, সম্পত্তির অধিকার ছেড়ে পালিয়ে আসেন নাগরিক ভিড়ে। কখনো জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসেন তাঁরা।
শহরের বিউটি পারলারগুলোতে মান্দি মেয়েদের একাধিপত্য রয়েছে। এর প্রথম কারণ হলো, মান্দি মেয়েরা বুঝে নেন, পরিবার প্রতিপালনের দায়িত্ব তাঁরই। বন যদি না থাকে, খাবার সংগ্রহ হবে কেমন করে? পড়াশোনা তো সচরাচর অষ্টম শ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিকের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তখন বাকি থাকে মান্দি জীবনের গভীর জ্ঞান, মনোযোগ আর পরিশ্রমের হাত দুটো। আর থাকে পরিবার পালনের দায়িত্ববোধ এবং আত্মবিশ্বাসী নারীহৃদয়। যে আত্মবিশ্বাস অধিকাংশ বাঙালি মেয়েদের ছোটবেলাতেই ভেঙে দেওয়া হয়। মগ্ন হাতগুলো খুব ভালোভাবে জানে, কোন মাত্রার প্রেষণ তার গ্রাহককে নিবিড় প্রশান্তি দেয়। বাংলাদেশে ম্যাসাজের জগতে মান্দি হাতের চেয়ে ভালো কিছু বোধ হয় নেই। মঙ্গোলীয় এই হাত ধ্যানের গভীরতা নিয়ে মানব শরীর স্পর্শ করে।
খাসি সমাজেও মান্দিদের মতো পুরুষেরা বিয়ে করে মেয়ের ঘরে আসেন। তবে সেখানে গৃহিণীর মামা আর ভাইয়েরা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখেন। খাসি নারীরা কিন্তু শহরে কাজ করতে এসেছেন কেবল অফিসে। সংখ্যায় তাঁরা বেশি নন। তাঁদের পড়াশোনা প্রীতি, আভিজাত্য এবং সচ্ছলতা কিছুটা বেশি ছিল এত দিন। কিন্তু পান চাষ ক্ষুদ্রঋণের হাতে বন্দী হয়েছে। চা-বাগানমালিকেরাও এখন পানপুঞ্জির জমি দখলে নেমেছেন। নুডলি লামিনরা তাই নীরব দারিদ্র্যে ভেতরে-ভেতরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। অগ্রসর চাকমা, ত্রিপুরা, লুসাই সমাজের নারীরা অনেকেই পৌঁছেছেন বহুদূরে। তবু ম্রো নারীর কান ঝুলে আছে দুশ্চিন্তা আর ভারী মাকড়তে। ম্রো সমাজে অল্প বয়সী ছেলেকে যুবতী নারীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় ঘরের কাজ সামলানোর জন্য।
বাংলাদেশে অবস্থানকারী কড়া জাতির লোক আছে শখানেক। সোনিয়া কড়া তাঁর যোগ্যতা বলে সে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সাঁওতাল সমাজ পুরুষপ্রধান হলেও একজন বাসন্তী মুর্মু তাঁর সংসারে এবং সমাজে সমান গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে।
কিন্তু তবুও মোটের ওপর দারিদ্র্যের চাপ যখন আসে, তা নারীকেই সবচেয়ে বেশি পিষ্ট করে। অভাবের দিনে কত নারীই তো বনের লতা কুড়ান, তিনি তো সন্তানদের অভুক্ত দেখতে পারেন না। চাষাবাদে সবখানেই নারীর ভূমিকা রয়েছে; বরং যেকোনো সমাজ যত বেশি সুশীল হয়ে ওঠে, সেই সমাজের নারীরা তত বেশি পরাধীন হতে থাকেন। অনেকে মনে করে, পাহাড়ের অধিবাসী পুরুষেরা তো সহজেই নেংটি ছেড়েছেন, তবে নারীকে কেন ঐতিহ্যবাহী পোশাক ধরে রাখতে হবে? সব সমাজেই ধরে রাখার দায় যেন নারীরই বেশি।
চাকমা, মারমা, ম্রো ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর নারীদের বিষয়ে ক্ষমতাধর স্থানীয় পুরুষদের আগ্রহ বেশি থাকে। তাই তাঁরা নিয়মিতই শারীরিক নিপীড়নের শিকার হন। অন্যদিকে, প্রেমে জড়ালে সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পড়েন। সব সমাজেই পুরুষ নিজেকে রাখেন মুক্ত আর নারীকে দেখতে চান শিকড় ছড়ানো শিকল পরারূপে। নারীর শরীর, তাঁর মমতা, আগলে রাখার গুণ তাঁর শক্তি না হয়ে শিকল হয়ে দাঁড়ায়। দারিদ্র্য এবং সমাজে ‘আদার’ হওয়ার বিড়ম্বনার সঙ্গে রয়েছে নারী হওয়ার বিড়ম্বনা। তাই সাঁওতাল, কড়া, গারোসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের অল্প কিছু নারীকে যেমন শক্তি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে দেখি, বেশির ভাগকে দেখি সংসার এবং সমাজের দায় বহন করতে। সব মিলিয়ে তাদের দেখি ক্ষমতা এবং সুবিধা থেকে বহু বহু দূরে কোথাও!
লেখক: গবেষক ও শিক্ষক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২০ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে