মারুফ ইসলাম
মোহাম্মদপুরের পশ্চিমে এদিকটায় এখনো আকাশ দেখা যায়। ভোর-সকালে পাখির ডাক শোনা যায়। পর্দা সরিয়ে জানালা খুলে দিলে একঝলক ঠান্ডা হাওয়া ঘরময় ছড়িয়ে পড়ে। এমন সকালে আলস্য জড়িয়ে শুয়ে থাকতে ভালো লাগে।
শুয়ে আছি। জানালা খোলা। ভোরের ঘোলাটে স্নিগ্ধ আলোয় আমার ঘর ভেসে যাচ্ছে। বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল, হয়নি। বুকভর্তি মেঘ নিয়ে আকাশটা ঝুঁকে আছে। কী শান্ত এক প্রকৃতি! এমন স্নিগ্ধ সকালে আমার একবারের জন্যও প্রিয় মানুষটার কথা মনে পড়ল না। প্রিয় বন্ধুর কথা মনে পড়ল না। বিপদে-আপদে যে পাশে দাঁড়ায়, তার কথা মনে পড়ল না। অনাদি অনন্ত সৃষ্টিকর্তার কথা মনে পড়ল না। হিজল ফুল মনে পড়ল না। বৃষ্টির দিন মনে পড়ল না (অথচ এই সবকিছুই আমার কত প্রিয়)... মনে পড়ল একটা বাড়িকে। মাটির দোতলা একটা বাড়ি।
আম-মেহগনি-বাঁশঝাড়ের ছায়ায় ঘুমিয়ে থাকা সেই দোতলা বাড়িটায় অদ্ভুত সুন্দর ভোর হয়। ছোট বোনদের ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙে। সকাল ৮টায় ঈদের জামাত। সেটাই তারা মনে করিয়ে দেয় বারবার। ঘুম জড়ানো চোখ ডলতে ডলতে উঠে দেখতাম, আমাদের মাটির চুলোর হেঁশেলপাড় ফুলের মতো হেসে উঠেছে। সেমাই, চিনি, মসলা, ভেজানো পোলাওয়ের চাল, মাংস ইত্যাদির সম্মিলিত ঘ্রাণে বাতাস ম-ম করছে। হেঁশেলে খড়ি ঠেলছেন মা। রক্তিম আঁচে তাঁর মুখজুড়ে রাজ্যের আভা। বোনেরা সবাই শশব্যস্ত। বাদামের খোসা ছাড়াও রে, মসলা বাটো রে…।
তারপর দেখতাম, সূর্য উঁকি দেওয়ার আগে, ফজরের নামাজ পড়েই আব্বা বাজারে গিয়ে বড়সড় একটা মাছ এনে ফেলে রেখেছেন উঠানে—তড়পায় পানিতে ফেলে আসা জীবনের জন্য। কে ভাবে তার কথা! আমরা খুশি, মাছের পোলাও রান্না হবে। বড় মোরগটা গত রাতে খোয়ারে ওঠার পরেই আলাদা করে ধরে রেখেছেন মা। আজ জবাই হবে।
দূরে কোথাও, গ্রামের শেষ মাথার ঈদগাহের মাইক থেকে ভেসে আসছে আওয়াজ। খানিক বাদে শুরু হবে ঈদের নামাজ। মা তাড়া দেন গোসল সেরে নামাজে যেতে।
গ্রামের দিকে গোসলখানা আলাদা হয়। মূল বসতঘর থেকে একটু দূরে। সেখানে দেখতাম লম্বা লাইন। আব্বা হয়তো মাত্রই গোসল সেরে বের হলেন। বড় ভাই ঢুকলেন। তারপর আমি। ততক্ষণে হেঁশেলপাড়ে বসে দুটো বাদামের খোসা ছাড়ানো যেতে পারে। সেই সময়টুকু বোনদের পাশে বসে বাদামের খোসা ছাড়াতাম। সেমাইয়ে পর্যাপ্ত মিষ্টি হলো কি না, চেখে দেখতাম।
সে এক জীবন ছিল বটে! ঢেউয়ের মতো উচ্ছল, ঝরনার মতো প্রাণবন্ত। আজকের ফেসবুক-টুইটার-ইউটিউবে বন্দী শিশুদের কাছে সেই জীবন ভিডিও গেমের মতো অলৌকিক মনে হতে পারে। তাদের হয়তো বিশ্বাসই হবে না, আমরা ঈদগাহের মাঠ থেকে ফিরেই পাড়া বেড়াতে বেরোতাম। পাড়ার সব ঘরে ঘুরে সেমাই, ফিরনি, জর্দা, মাছের পোলাও খেতে খেতে দুপুর পার করে ফেলতাম, তবু মা-বাবা একবারের জন্যও আমাদের খোঁজ নিতেন না। আমরা কোথায় আছি, কী করছি—একবারও খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করতেন না। ওই আছে কোথাও, মাগরিবের আগে ফিরলেই হলো—এই ছিল তাঁদের মনোভাব।
এই পাড়া বেড়ানোর একটা সামাজিক মূল্য ছিল। সারা বছর যাদের বাড়িতে পা পড়ত না, খুব একটা আলাপ-সালাপ হতো না, তাদের সঙ্গে সম্পর্কটা ‘ঝালাই’ হতো। সামাজিকতা পুনর্নবায়ন হতো। অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল পরিবারের শিশুটি অবলীলায় ঢুকে পড়ছে মধ্যবিত্তের ঘরে, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ঢুকে যাচ্ছে দরিদ্রের ঘরে, দরিদ্র ঢুকে পড়ছে উচ্চমধ্যবিত্তের ঘরে, যা পাচ্ছে তাই মুখে তুলে নিয়ে খাচ্ছে। এর যে সামাজিক মূল্য, ভেদাভেদহীনতার মূল্য, সাম্যের বার্তা, তা বোঝার মতো বয়স তখন না থাকলেও এখন বুঝি।
এখন বুঝি আর আফসোস করি। কারণ ‘সেই রাম নেই, সেই অযোধ্যাও নেই’-এর মতো সেই গ্রামও নেই, সেই শিশুরাও নেই। গ্রামের শিশুরা এখন দল বেঁধে এর-ওর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঈদের সেমাই খায় না। তার বদলে পথের ধারে, গাছের আড়ালে সেলফি তোলে, শর্টস বানায়, রিল বানায়, টিকটক ভিডিও বানায়। ঈদের দিন ফেসবুক গ্রুপে আড্ডা দেয়, মেসেঞ্জারে আড্ডা দেয়, হোয়াটসঅ্যাপে আড্ডা দেয়। সারা দিন ঘাড় গুঁজে ইউটিউব, টিকটকে ভিডিও দেখে।
আমাদের সেই বাড়িটার মাটির দেয়ালগুলো কথা বলতে জানলে নিশ্চয় হড়বড় করে অনেক ইতিহাস বলত। কত ঈদের সাক্ষী হয়ে আছে সে!
ঘুম ভাঙার আগেই শুনতে পেতাম বাড়ির পাশের পুকুরপাড়ে ঝুপঝাপ আওয়াজ। পাড়ার ছেলে-বুড়ো দল বেঁধে পুকুরে নেমেছে গোসল করতে। ঈদের নামাজে যাওয়ার আগের গোসল। সাবানের ফেনায় পুকুরের টলটলে পানি ঘোলা হয়ে উঠেছে। গোসলের মতো একটি কাজও যে উৎসব করে করা যায়, সেই বোধ এখনকার শিশুদের মধ্যে নেই। তারা জানেই না, এভাবে দল বেঁধে পুকুরে গোসল করা যায়!
আমরা দল বেঁধে আরও একটা কাজ করতাম। ঈদের নামাজ শেষে কবর জিয়ারত করতে যেতাম। পূর্বপুরুষদের স্মরণ করতাম। বাবা-চাচারা একেকটি কবর দেখিয়ে দিতেন আর বলতেন, এটা তোর দাদুর কবর, এটা দাদির, এটা অমুক চাচার, এটা তমুকের…।
ঘাসগুলো ঘন হয়ে ছেয়ে রয়েছে কবর। শুকনো ফুল, পাতা ঝরে পড়েছে ওপর থেকে। ছায়া ছায়া শান্ত একটা প্রকৃতি মনকে বিষণ্ন করে তুলত। এই মৃত আত্মীয়রাও একদিন আমাদের মতো ঈদ উদ্যাপন করেছেন, আজ তাদের অস্তিত্ব নেই এ ব্রহ্মাণ্ডে, এই বোধ আমাদের হঠাৎ করে যেন দার্শনিক ভাবালুতায় আচ্ছন্ন করে ফেলত। আমরা উদাস হয়ে মৃত আত্মার জন্য দোয়া করতাম।
বিকেলের দিকে টেলিভিশন দেখতে বসতাম আমরা। একমাত্র চ্যানেল বিটিভি। বাংলা সিনেমাই প্রধান আকর্ষণ ছিল। এ ছাড়া ইত্যাদি, আনন্দমেলা—এসবও ছিল। কিন্তু এই অনুষ্ঠানগুলো রাতে হতো বলে আমাদের ভীষণ মন খারাপ থাকত। কারণ আমদের বাড়িতে টেলিভিশন ছিল না।
নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকের কথা বলছি। তখনো গ্রামের প্রত্যেক ঘরে টেলিভিশন ঢোকেনি। প্রায় ধনী দু-একজনের বাড়িতে টেলিভিশন ছিল। তাদের বাড়ির মাথার ওপরে টেলিভিশনের অ্যানটেনা বহু দূর থেকে দেখা যেত। এত উঁচুতে অ্যানটেনা রাখার পরেও কখনো কখনো পরিষ্কার ছবি দেখা যেত না।
আমরা তখন বাইরে এসে অ্যানটেনার বাঁশ ঘুরাতাম আর বলতাম, ঠিক হইছে…? ঘরের ভেতর থেকে কেউ একজন চিৎকার করে উত্তর দিত, ‘না হয়নি…হইছে হইছে…আহা, আগেই তো ভালো ছিল… হ্যাঁ হ্যাঁ হইছে এবার…থাক থাক।’
সেই জীবনটা হঠাৎ যেন শেষ রাতের ট্রেনের হুইসেলের মতো দূরের বাতাসে মিলিয়ে গেছে। রমজানের শেষ দিনে ইফতার মুখে দিয়েই সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশে বাঁশঝাড়ের ওপর আর কেউ কাস্তের মতো ঈদের চাঁদ খোঁজে না। আজকের ছেলেমেয়েরা ফেসবুকেই ঈদের চাঁদ দেখে। কে জানে, এই প্রজন্মের আনন্দ প্রকাশের ঢংটা বড্ড অচেনা!
মোহাম্মদপুরের পশ্চিমে এদিকটায় এখনো আকাশ দেখা যায়। ভোর-সকালে পাখির ডাক শোনা যায়। পর্দা সরিয়ে জানালা খুলে দিলে একঝলক ঠান্ডা হাওয়া ঘরময় ছড়িয়ে পড়ে। এমন সকালে আলস্য জড়িয়ে শুয়ে থাকতে ভালো লাগে।
শুয়ে আছি। জানালা খোলা। ভোরের ঘোলাটে স্নিগ্ধ আলোয় আমার ঘর ভেসে যাচ্ছে। বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল, হয়নি। বুকভর্তি মেঘ নিয়ে আকাশটা ঝুঁকে আছে। কী শান্ত এক প্রকৃতি! এমন স্নিগ্ধ সকালে আমার একবারের জন্যও প্রিয় মানুষটার কথা মনে পড়ল না। প্রিয় বন্ধুর কথা মনে পড়ল না। বিপদে-আপদে যে পাশে দাঁড়ায়, তার কথা মনে পড়ল না। অনাদি অনন্ত সৃষ্টিকর্তার কথা মনে পড়ল না। হিজল ফুল মনে পড়ল না। বৃষ্টির দিন মনে পড়ল না (অথচ এই সবকিছুই আমার কত প্রিয়)... মনে পড়ল একটা বাড়িকে। মাটির দোতলা একটা বাড়ি।
আম-মেহগনি-বাঁশঝাড়ের ছায়ায় ঘুমিয়ে থাকা সেই দোতলা বাড়িটায় অদ্ভুত সুন্দর ভোর হয়। ছোট বোনদের ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙে। সকাল ৮টায় ঈদের জামাত। সেটাই তারা মনে করিয়ে দেয় বারবার। ঘুম জড়ানো চোখ ডলতে ডলতে উঠে দেখতাম, আমাদের মাটির চুলোর হেঁশেলপাড় ফুলের মতো হেসে উঠেছে। সেমাই, চিনি, মসলা, ভেজানো পোলাওয়ের চাল, মাংস ইত্যাদির সম্মিলিত ঘ্রাণে বাতাস ম-ম করছে। হেঁশেলে খড়ি ঠেলছেন মা। রক্তিম আঁচে তাঁর মুখজুড়ে রাজ্যের আভা। বোনেরা সবাই শশব্যস্ত। বাদামের খোসা ছাড়াও রে, মসলা বাটো রে…।
তারপর দেখতাম, সূর্য উঁকি দেওয়ার আগে, ফজরের নামাজ পড়েই আব্বা বাজারে গিয়ে বড়সড় একটা মাছ এনে ফেলে রেখেছেন উঠানে—তড়পায় পানিতে ফেলে আসা জীবনের জন্য। কে ভাবে তার কথা! আমরা খুশি, মাছের পোলাও রান্না হবে। বড় মোরগটা গত রাতে খোয়ারে ওঠার পরেই আলাদা করে ধরে রেখেছেন মা। আজ জবাই হবে।
দূরে কোথাও, গ্রামের শেষ মাথার ঈদগাহের মাইক থেকে ভেসে আসছে আওয়াজ। খানিক বাদে শুরু হবে ঈদের নামাজ। মা তাড়া দেন গোসল সেরে নামাজে যেতে।
গ্রামের দিকে গোসলখানা আলাদা হয়। মূল বসতঘর থেকে একটু দূরে। সেখানে দেখতাম লম্বা লাইন। আব্বা হয়তো মাত্রই গোসল সেরে বের হলেন। বড় ভাই ঢুকলেন। তারপর আমি। ততক্ষণে হেঁশেলপাড়ে বসে দুটো বাদামের খোসা ছাড়ানো যেতে পারে। সেই সময়টুকু বোনদের পাশে বসে বাদামের খোসা ছাড়াতাম। সেমাইয়ে পর্যাপ্ত মিষ্টি হলো কি না, চেখে দেখতাম।
সে এক জীবন ছিল বটে! ঢেউয়ের মতো উচ্ছল, ঝরনার মতো প্রাণবন্ত। আজকের ফেসবুক-টুইটার-ইউটিউবে বন্দী শিশুদের কাছে সেই জীবন ভিডিও গেমের মতো অলৌকিক মনে হতে পারে। তাদের হয়তো বিশ্বাসই হবে না, আমরা ঈদগাহের মাঠ থেকে ফিরেই পাড়া বেড়াতে বেরোতাম। পাড়ার সব ঘরে ঘুরে সেমাই, ফিরনি, জর্দা, মাছের পোলাও খেতে খেতে দুপুর পার করে ফেলতাম, তবু মা-বাবা একবারের জন্যও আমাদের খোঁজ নিতেন না। আমরা কোথায় আছি, কী করছি—একবারও খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করতেন না। ওই আছে কোথাও, মাগরিবের আগে ফিরলেই হলো—এই ছিল তাঁদের মনোভাব।
এই পাড়া বেড়ানোর একটা সামাজিক মূল্য ছিল। সারা বছর যাদের বাড়িতে পা পড়ত না, খুব একটা আলাপ-সালাপ হতো না, তাদের সঙ্গে সম্পর্কটা ‘ঝালাই’ হতো। সামাজিকতা পুনর্নবায়ন হতো। অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল পরিবারের শিশুটি অবলীলায় ঢুকে পড়ছে মধ্যবিত্তের ঘরে, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ঢুকে যাচ্ছে দরিদ্রের ঘরে, দরিদ্র ঢুকে পড়ছে উচ্চমধ্যবিত্তের ঘরে, যা পাচ্ছে তাই মুখে তুলে নিয়ে খাচ্ছে। এর যে সামাজিক মূল্য, ভেদাভেদহীনতার মূল্য, সাম্যের বার্তা, তা বোঝার মতো বয়স তখন না থাকলেও এখন বুঝি।
এখন বুঝি আর আফসোস করি। কারণ ‘সেই রাম নেই, সেই অযোধ্যাও নেই’-এর মতো সেই গ্রামও নেই, সেই শিশুরাও নেই। গ্রামের শিশুরা এখন দল বেঁধে এর-ওর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঈদের সেমাই খায় না। তার বদলে পথের ধারে, গাছের আড়ালে সেলফি তোলে, শর্টস বানায়, রিল বানায়, টিকটক ভিডিও বানায়। ঈদের দিন ফেসবুক গ্রুপে আড্ডা দেয়, মেসেঞ্জারে আড্ডা দেয়, হোয়াটসঅ্যাপে আড্ডা দেয়। সারা দিন ঘাড় গুঁজে ইউটিউব, টিকটকে ভিডিও দেখে।
আমাদের সেই বাড়িটার মাটির দেয়ালগুলো কথা বলতে জানলে নিশ্চয় হড়বড় করে অনেক ইতিহাস বলত। কত ঈদের সাক্ষী হয়ে আছে সে!
ঘুম ভাঙার আগেই শুনতে পেতাম বাড়ির পাশের পুকুরপাড়ে ঝুপঝাপ আওয়াজ। পাড়ার ছেলে-বুড়ো দল বেঁধে পুকুরে নেমেছে গোসল করতে। ঈদের নামাজে যাওয়ার আগের গোসল। সাবানের ফেনায় পুকুরের টলটলে পানি ঘোলা হয়ে উঠেছে। গোসলের মতো একটি কাজও যে উৎসব করে করা যায়, সেই বোধ এখনকার শিশুদের মধ্যে নেই। তারা জানেই না, এভাবে দল বেঁধে পুকুরে গোসল করা যায়!
আমরা দল বেঁধে আরও একটা কাজ করতাম। ঈদের নামাজ শেষে কবর জিয়ারত করতে যেতাম। পূর্বপুরুষদের স্মরণ করতাম। বাবা-চাচারা একেকটি কবর দেখিয়ে দিতেন আর বলতেন, এটা তোর দাদুর কবর, এটা দাদির, এটা অমুক চাচার, এটা তমুকের…।
ঘাসগুলো ঘন হয়ে ছেয়ে রয়েছে কবর। শুকনো ফুল, পাতা ঝরে পড়েছে ওপর থেকে। ছায়া ছায়া শান্ত একটা প্রকৃতি মনকে বিষণ্ন করে তুলত। এই মৃত আত্মীয়রাও একদিন আমাদের মতো ঈদ উদ্যাপন করেছেন, আজ তাদের অস্তিত্ব নেই এ ব্রহ্মাণ্ডে, এই বোধ আমাদের হঠাৎ করে যেন দার্শনিক ভাবালুতায় আচ্ছন্ন করে ফেলত। আমরা উদাস হয়ে মৃত আত্মার জন্য দোয়া করতাম।
বিকেলের দিকে টেলিভিশন দেখতে বসতাম আমরা। একমাত্র চ্যানেল বিটিভি। বাংলা সিনেমাই প্রধান আকর্ষণ ছিল। এ ছাড়া ইত্যাদি, আনন্দমেলা—এসবও ছিল। কিন্তু এই অনুষ্ঠানগুলো রাতে হতো বলে আমাদের ভীষণ মন খারাপ থাকত। কারণ আমদের বাড়িতে টেলিভিশন ছিল না।
নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকের কথা বলছি। তখনো গ্রামের প্রত্যেক ঘরে টেলিভিশন ঢোকেনি। প্রায় ধনী দু-একজনের বাড়িতে টেলিভিশন ছিল। তাদের বাড়ির মাথার ওপরে টেলিভিশনের অ্যানটেনা বহু দূর থেকে দেখা যেত। এত উঁচুতে অ্যানটেনা রাখার পরেও কখনো কখনো পরিষ্কার ছবি দেখা যেত না।
আমরা তখন বাইরে এসে অ্যানটেনার বাঁশ ঘুরাতাম আর বলতাম, ঠিক হইছে…? ঘরের ভেতর থেকে কেউ একজন চিৎকার করে উত্তর দিত, ‘না হয়নি…হইছে হইছে…আহা, আগেই তো ভালো ছিল… হ্যাঁ হ্যাঁ হইছে এবার…থাক থাক।’
সেই জীবনটা হঠাৎ যেন শেষ রাতের ট্রেনের হুইসেলের মতো দূরের বাতাসে মিলিয়ে গেছে। রমজানের শেষ দিনে ইফতার মুখে দিয়েই সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশে বাঁশঝাড়ের ওপর আর কেউ কাস্তের মতো ঈদের চাঁদ খোঁজে না। আজকের ছেলেমেয়েরা ফেসবুকেই ঈদের চাঁদ দেখে। কে জানে, এই প্রজন্মের আনন্দ প্রকাশের ঢংটা বড্ড অচেনা!
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
৩ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
৩ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
৩ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
৩ দিন আগে