জীবনধারা ডেস্ক
প্রাইজ মানি হিসেবে পাওয়া আক্ষরিক অর্থেই কোটি কোটি টাকা কী করেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সেরাদের সেরা মানুষগুলো? প্রশ্নটি নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরপাক খায় অনেকের। স্বাভাবিক বিষয়। নোবেল লরিয়েটদের তো আর নুন আনতে পান্তা ফুরায় না। অর্থ, সম্মান, খ্যাতি সবই আছে তাঁদের। তার ওপর পুরস্কারের কাড়ি কাড়ি টাকা! প্রশ্নটা মাথায় আসা অসম্ভব নয়।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল মৃত্যুর আগে ১৮৯৫ সালে একটি উইল করেছিলেন। সেই উইলে তিনি তাঁর মোট সম্পদের ৯৪ শতাংশ পুরস্কারের জন্য দিয়ে যান। সেই অর্থেই নোবেল পুরস্কারের প্রাইজমানি দেওয়া হয়। সে অর্থ আক্ষরিক অর্থেই কোটি কোটি! তার সঙ্গে দেওয়া হয় সোনার মেডেল। তো, প্রথমেই যা বলেছিলাম, নোবেল লরিয়েটরা কী করেন সে টাকায়? একটুখানি চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
নোবেল পুরস্কারের টাকা কে কী করলেন
নোবেল বিজয়ীদের আর্থিক পুরস্কারের পরিমাণটা একেক সময় ছিল একেক রকম। তবে গড় হিসাবে সেটি বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮ কোটি টাকার সমপরিমাণ। এবার সে অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১ কোটি টাকা! এত টাকা দিয়ে আসলে কে কী করেন, সেই কৌতূহল হয়তো সবারই আছে কমবেশি। আবার নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে অনেকেই পুরস্কারের টাকায় করেছেন অদ্ভুত সব কাজও।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: ঠিক করেছিলেন শান্তি নিকেতনের নর্দমা!
রবীন্দ্রনাথ যখন নোবেল পুরস্কার পান তখন শান্তি নিকেতনে অর্থনৈতিক টানাটানি চলছিল। টাকার অভাবে বেশ কিছু কাজ আটকে ছিল। এমনকি একটি লম্বা নর্দমার কিছুটা খনন করার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল খনন। ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯৬ টাকা নোবেল পুরস্কারের অর্থ হিসেবে পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর ‘রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন’ বইটি থেকে জানা যায়, নোবেল প্রাপ্তির খবর যখন আসে, কবি তখন কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে পারুল বনে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন। সঙ্গীদের মধ্যে একজন ছিলেন নেপাল চন্দ্র রায়। তিনি ছিলেন ব্রাহ্মবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাব্রতী। বিশ্বভারতীর পরিকল্পনাতেও রবীন্দ্রনাথের প্রধান একজন সহযোগী ছিলেন তিনি। অসম্পূর্ণ নর্দমা নিয়ে সে সময় নেপাল চন্দ্র রায় ও কবি দুজনেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। টেলিগ্রাম হাতে পেয়েই তাই রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলেন, ‘নিন নেপালবাবু, আপনার ড্রেন তৈরি করবার টাকা।’
তবে এই মন্তব্য রবীন্দ্রনাথ নিছক মজার ছলেই করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ড্রেনের কাজে নোবেলের টাকা লাগেনি অবশ্য। টাকাটা রবীন্দ্রনাথ জমা করেছিলেন তাঁর তৈরি পতিসর সমবায় ব্যাংকে। ১ লাখ ১৬ হাজার ২৬৯ টাকা তিনি ৭ শতাংশ সুদে সেখানে রেখেছিলেন। স্থির হয়েছিল, বার্ষিক সুদের ৮ হাজার ১৩৮ টাকা বরাদ্দ হবে বিদ্যালয়ের কাজে।
মেরি কুরি: নোবেলের টাকায় গবেষণা
নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত প্রথম নারী মেরি কুরি। ১৯০৩ সালে স্বামী পিয়েরে কুরির সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার জেতেন তিনি। পদার্থ বিজ্ঞানে অবদানের জন্য পাওয়া পুরস্কারের এই অর্থ তাঁরা ব্যয় করেন পরবর্তী গবেষণার জন্য। তার সুফলও পান হাতেনাতে। ১৯১১ সালে মেরি কুরি তেজস্ক্রিয় রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম আবিষ্কারসহ এই শাখায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এককভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান। সে টাকাও পুনরায় গবেষণায় বিনিয়োগ করেন।
গুন্টার ব্লোবেল: ধর্মশালায় ঢেলে দেন নোবেল মানি
১৯৯৯ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী গুন্টার ব্লোবেল প্রোটিন গবেষণায় এককভাবে পুরস্কার পান। তাঁর প্রাপ্ত অর্থ পুরস্কারের পুরোটাই তিনি দান করেছিলেন ধর্মশালা নির্মাণের কাজে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় গুন্টার ব্লোবেল শরণার্থী ক্যাম্প থেকে দেখেছিলেন তাঁর প্রিয় শহর ড্রেসডেন মিত্রবাহিনীর বোমাবর্ষণে তছনছ হচ্ছে। গির্জা, সিনাগগ কোনো কিছুই আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সেই যুদ্ধাবস্থায় বোমার আঘাতে নিহত হয়েছিল তাঁর উনিশ বছর বয়সী বোন রুথ ব্লোবেল। ১৯৪৫ সালে শহরের বাইরের একটি শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। পুরো এক মিলিয়ন ডলার ব্লোবেল পেয়েছিলেন নোবেল পুরস্কার থেকে। সেই পুরো টাকাই তিনি ড্রেসডেন সিটি কাউন্সিলকে দিয়ে দেন একটি নতুন সিনাগগ (ইহুদি প্রার্থনালয়) নির্মাণ এবং ক্যাথিড্রাল মেরামতের জন্য।
বারাক ওবামা, মুহাম্মদ ইউনুস ও আল গোর
২০০৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি তাঁর পুরস্কারের পুরো টাকা সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের উচ্চ শিক্ষার জন্য দান করেছিলেন।
২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারের নির্ধারিত অর্থের অর্ধেক গ্রামীণ ব্যাংক আর বাকি অর্ধেক ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনুসের জন্য বরাদ্দ হয়। অধ্যাপক ইউনুস তাঁর ভাগের অর্থ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সক্ষম কর্মীতে পরিণত করার কাজে ব্যয় করেছেন।
২০০৭ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার ভাগাভাগি হয়েছে ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পরিবেশ আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী আল গোরের মধ্যে। আল গোর তাঁর ভাগের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ ডলার অ্যালায়েন্স ফর ক্লাইমেট প্রটেকশনকে দান করেন।
ভোল্কগাং কেটের্ল, মো ইয়ান, ফিলিপ শার্প, রিচার্ড রবার্টস
২০০৯ সালে আরও দুজনের সঙ্গে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন এমআইটির প্রফেসর ভোল্কগাং কেটের্ল। তাঁর নিজের বাড়ি ছিল না। নোবেলের প্রাইজ মানি দিয়ে তিনি কী করতে পারেন? যা ভাবছেন তাই। তিনি পুরস্কারের কিছু টাকা দিয়ে নিজের জন্য একটি বাড়ি কিনেছিলেন। বাকি অর্থ সন্তানদের পড়াশোনায় ব্যয় করেন।
২০১২ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পান চীনের কথাশিল্পী মো ইয়ান। সেই টাকায় তিনি নিজের শহরে একটি বাড়ি কিনেছিলেন। আর বাকি টাকা জমা করেছিলেন ব্যাংকে।
১৯৯৩ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী দুজনের একজন ছিলেন আমেরিকান ফিলিপ শার্প। পুরস্কারের টাকায় তিনি পুরোনো আমলের একটি বাড়ি কিনেছিলেন। আর ব্রিটিশ বিজ্ঞানী নোবেল বিজয়ী জৈব রসায়নবিদ রিচার্ড রবার্টস পুরস্কারের টাকা দিয়ে নিজের বাড়ির সামনের ৮ হাজার বর্গফুট জায়গাকে ফুটবল খেলার উপযোগী করে তুলেছিলেন।
আলবার্ট আইনস্টাইন: নোবেলের টাকায় স্ত্রীকে তালাক?
১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯। প্রথম স্ত্রী মিলেভার সঙ্গে তালাক চূড়ান্ত হয়েছিল বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের। তবে তার আগে পাঁচ বছর আলাদা ছিলেন তাঁরা। তাঁদের তালাক চুক্তির শর্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল, আইনস্টাইন নোবেল পেলে পুরস্কারের পুরো অর্থ তাঁর সন্তানদের জন্য একটি ট্রাস্টে জমা দেবেন। মিলেভা সেই অ্যাকাউন্ট থেকে কেবল সুদের টাকা তুলতে পারবেন। আর মূল অর্থে হাত দিতে হলে আইনস্টাইনের অনুমোদন লাগবে।
১৯২১ সালের নভেম্বরে আইনস্টাইন নোবেল পুরস্কার পান ফটো ইলেকট্রিক এফেক্ট তত্ত্বের জন্য। তালাকের শর্ত মতো আইনস্টাইন পুরস্কারের প্রাইজ মানি তাঁর প্রথম স্ত্রীকে দিয়ে দিয়েছিলেন।
স্যার পার্ল গ্রিনগার্ড: পুরস্কারের টাকায় পুরস্কার
২০০০ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন তিনজন—স্যার পার্ল গ্রিনগার্ড, আরভিড কার্লসন এবং এরিখ ক্যান্ডেল। সে কারণে পুরস্কারের টাকাও তিন ভাগে ভাগ হয়েছিল। গ্রিনগার্ড তাঁর ভাগের ৪ লাখ ডলারের পুরো টাকা দিয়ে পার্ল মিস্টার গ্রিনগার্ড প্রাইজ প্রবর্তন করেছিলেন। পার্ল মিস্টার ছিলেন এই বিজ্ঞানীর মা। তাঁকে জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু হয়। যে মাকে তিনি কখনো দেখেননি তাঁর সম্মানে নারী বিজ্ঞানীদের জন্য ৫০ হাজার ডলারের পুরস্কার প্রবর্তন করেছিলেন স্যার পার্ল গ্রিনগার্ড। বিজ্ঞানে নারীদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব প্রতিরোধের ইচ্ছায় নারীদের জন্য এই পুরস্কার প্রবর্তন করেছিলেন তিনি।
সূত্র: এডিটেজ ইনসাইড ডট কম, দা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, লাইভ সায়েন্স ডট কম
প্রাইজ মানি হিসেবে পাওয়া আক্ষরিক অর্থেই কোটি কোটি টাকা কী করেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সেরাদের সেরা মানুষগুলো? প্রশ্নটি নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরপাক খায় অনেকের। স্বাভাবিক বিষয়। নোবেল লরিয়েটদের তো আর নুন আনতে পান্তা ফুরায় না। অর্থ, সম্মান, খ্যাতি সবই আছে তাঁদের। তার ওপর পুরস্কারের কাড়ি কাড়ি টাকা! প্রশ্নটা মাথায় আসা অসম্ভব নয়।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল মৃত্যুর আগে ১৮৯৫ সালে একটি উইল করেছিলেন। সেই উইলে তিনি তাঁর মোট সম্পদের ৯৪ শতাংশ পুরস্কারের জন্য দিয়ে যান। সেই অর্থেই নোবেল পুরস্কারের প্রাইজমানি দেওয়া হয়। সে অর্থ আক্ষরিক অর্থেই কোটি কোটি! তার সঙ্গে দেওয়া হয় সোনার মেডেল। তো, প্রথমেই যা বলেছিলাম, নোবেল লরিয়েটরা কী করেন সে টাকায়? একটুখানি চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
নোবেল পুরস্কারের টাকা কে কী করলেন
নোবেল বিজয়ীদের আর্থিক পুরস্কারের পরিমাণটা একেক সময় ছিল একেক রকম। তবে গড় হিসাবে সেটি বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮ কোটি টাকার সমপরিমাণ। এবার সে অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১ কোটি টাকা! এত টাকা দিয়ে আসলে কে কী করেন, সেই কৌতূহল হয়তো সবারই আছে কমবেশি। আবার নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে অনেকেই পুরস্কারের টাকায় করেছেন অদ্ভুত সব কাজও।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: ঠিক করেছিলেন শান্তি নিকেতনের নর্দমা!
রবীন্দ্রনাথ যখন নোবেল পুরস্কার পান তখন শান্তি নিকেতনে অর্থনৈতিক টানাটানি চলছিল। টাকার অভাবে বেশ কিছু কাজ আটকে ছিল। এমনকি একটি লম্বা নর্দমার কিছুটা খনন করার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল খনন। ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯৬ টাকা নোবেল পুরস্কারের অর্থ হিসেবে পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর ‘রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন’ বইটি থেকে জানা যায়, নোবেল প্রাপ্তির খবর যখন আসে, কবি তখন কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে পারুল বনে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন। সঙ্গীদের মধ্যে একজন ছিলেন নেপাল চন্দ্র রায়। তিনি ছিলেন ব্রাহ্মবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাব্রতী। বিশ্বভারতীর পরিকল্পনাতেও রবীন্দ্রনাথের প্রধান একজন সহযোগী ছিলেন তিনি। অসম্পূর্ণ নর্দমা নিয়ে সে সময় নেপাল চন্দ্র রায় ও কবি দুজনেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। টেলিগ্রাম হাতে পেয়েই তাই রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলেন, ‘নিন নেপালবাবু, আপনার ড্রেন তৈরি করবার টাকা।’
তবে এই মন্তব্য রবীন্দ্রনাথ নিছক মজার ছলেই করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ড্রেনের কাজে নোবেলের টাকা লাগেনি অবশ্য। টাকাটা রবীন্দ্রনাথ জমা করেছিলেন তাঁর তৈরি পতিসর সমবায় ব্যাংকে। ১ লাখ ১৬ হাজার ২৬৯ টাকা তিনি ৭ শতাংশ সুদে সেখানে রেখেছিলেন। স্থির হয়েছিল, বার্ষিক সুদের ৮ হাজার ১৩৮ টাকা বরাদ্দ হবে বিদ্যালয়ের কাজে।
মেরি কুরি: নোবেলের টাকায় গবেষণা
নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত প্রথম নারী মেরি কুরি। ১৯০৩ সালে স্বামী পিয়েরে কুরির সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার জেতেন তিনি। পদার্থ বিজ্ঞানে অবদানের জন্য পাওয়া পুরস্কারের এই অর্থ তাঁরা ব্যয় করেন পরবর্তী গবেষণার জন্য। তার সুফলও পান হাতেনাতে। ১৯১১ সালে মেরি কুরি তেজস্ক্রিয় রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম আবিষ্কারসহ এই শাখায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এককভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান। সে টাকাও পুনরায় গবেষণায় বিনিয়োগ করেন।
গুন্টার ব্লোবেল: ধর্মশালায় ঢেলে দেন নোবেল মানি
১৯৯৯ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী গুন্টার ব্লোবেল প্রোটিন গবেষণায় এককভাবে পুরস্কার পান। তাঁর প্রাপ্ত অর্থ পুরস্কারের পুরোটাই তিনি দান করেছিলেন ধর্মশালা নির্মাণের কাজে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় গুন্টার ব্লোবেল শরণার্থী ক্যাম্প থেকে দেখেছিলেন তাঁর প্রিয় শহর ড্রেসডেন মিত্রবাহিনীর বোমাবর্ষণে তছনছ হচ্ছে। গির্জা, সিনাগগ কোনো কিছুই আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সেই যুদ্ধাবস্থায় বোমার আঘাতে নিহত হয়েছিল তাঁর উনিশ বছর বয়সী বোন রুথ ব্লোবেল। ১৯৪৫ সালে শহরের বাইরের একটি শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। পুরো এক মিলিয়ন ডলার ব্লোবেল পেয়েছিলেন নোবেল পুরস্কার থেকে। সেই পুরো টাকাই তিনি ড্রেসডেন সিটি কাউন্সিলকে দিয়ে দেন একটি নতুন সিনাগগ (ইহুদি প্রার্থনালয়) নির্মাণ এবং ক্যাথিড্রাল মেরামতের জন্য।
বারাক ওবামা, মুহাম্মদ ইউনুস ও আল গোর
২০০৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি তাঁর পুরস্কারের পুরো টাকা সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের উচ্চ শিক্ষার জন্য দান করেছিলেন।
২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারের নির্ধারিত অর্থের অর্ধেক গ্রামীণ ব্যাংক আর বাকি অর্ধেক ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনুসের জন্য বরাদ্দ হয়। অধ্যাপক ইউনুস তাঁর ভাগের অর্থ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সক্ষম কর্মীতে পরিণত করার কাজে ব্যয় করেছেন।
২০০৭ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার ভাগাভাগি হয়েছে ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পরিবেশ আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী আল গোরের মধ্যে। আল গোর তাঁর ভাগের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ ডলার অ্যালায়েন্স ফর ক্লাইমেট প্রটেকশনকে দান করেন।
ভোল্কগাং কেটের্ল, মো ইয়ান, ফিলিপ শার্প, রিচার্ড রবার্টস
২০০৯ সালে আরও দুজনের সঙ্গে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন এমআইটির প্রফেসর ভোল্কগাং কেটের্ল। তাঁর নিজের বাড়ি ছিল না। নোবেলের প্রাইজ মানি দিয়ে তিনি কী করতে পারেন? যা ভাবছেন তাই। তিনি পুরস্কারের কিছু টাকা দিয়ে নিজের জন্য একটি বাড়ি কিনেছিলেন। বাকি অর্থ সন্তানদের পড়াশোনায় ব্যয় করেন।
২০১২ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পান চীনের কথাশিল্পী মো ইয়ান। সেই টাকায় তিনি নিজের শহরে একটি বাড়ি কিনেছিলেন। আর বাকি টাকা জমা করেছিলেন ব্যাংকে।
১৯৯৩ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী দুজনের একজন ছিলেন আমেরিকান ফিলিপ শার্প। পুরস্কারের টাকায় তিনি পুরোনো আমলের একটি বাড়ি কিনেছিলেন। আর ব্রিটিশ বিজ্ঞানী নোবেল বিজয়ী জৈব রসায়নবিদ রিচার্ড রবার্টস পুরস্কারের টাকা দিয়ে নিজের বাড়ির সামনের ৮ হাজার বর্গফুট জায়গাকে ফুটবল খেলার উপযোগী করে তুলেছিলেন।
আলবার্ট আইনস্টাইন: নোবেলের টাকায় স্ত্রীকে তালাক?
১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯। প্রথম স্ত্রী মিলেভার সঙ্গে তালাক চূড়ান্ত হয়েছিল বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের। তবে তার আগে পাঁচ বছর আলাদা ছিলেন তাঁরা। তাঁদের তালাক চুক্তির শর্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল, আইনস্টাইন নোবেল পেলে পুরস্কারের পুরো অর্থ তাঁর সন্তানদের জন্য একটি ট্রাস্টে জমা দেবেন। মিলেভা সেই অ্যাকাউন্ট থেকে কেবল সুদের টাকা তুলতে পারবেন। আর মূল অর্থে হাত দিতে হলে আইনস্টাইনের অনুমোদন লাগবে।
১৯২১ সালের নভেম্বরে আইনস্টাইন নোবেল পুরস্কার পান ফটো ইলেকট্রিক এফেক্ট তত্ত্বের জন্য। তালাকের শর্ত মতো আইনস্টাইন পুরস্কারের প্রাইজ মানি তাঁর প্রথম স্ত্রীকে দিয়ে দিয়েছিলেন।
স্যার পার্ল গ্রিনগার্ড: পুরস্কারের টাকায় পুরস্কার
২০০০ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন তিনজন—স্যার পার্ল গ্রিনগার্ড, আরভিড কার্লসন এবং এরিখ ক্যান্ডেল। সে কারণে পুরস্কারের টাকাও তিন ভাগে ভাগ হয়েছিল। গ্রিনগার্ড তাঁর ভাগের ৪ লাখ ডলারের পুরো টাকা দিয়ে পার্ল মিস্টার গ্রিনগার্ড প্রাইজ প্রবর্তন করেছিলেন। পার্ল মিস্টার ছিলেন এই বিজ্ঞানীর মা। তাঁকে জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু হয়। যে মাকে তিনি কখনো দেখেননি তাঁর সম্মানে নারী বিজ্ঞানীদের জন্য ৫০ হাজার ডলারের পুরস্কার প্রবর্তন করেছিলেন স্যার পার্ল গ্রিনগার্ড। বিজ্ঞানে নারীদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব প্রতিরোধের ইচ্ছায় নারীদের জন্য এই পুরস্কার প্রবর্তন করেছিলেন তিনি।
সূত্র: এডিটেজ ইনসাইড ডট কম, দা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, লাইভ সায়েন্স ডট কম
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
১ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
১ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
১ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
১ দিন আগে