মাসুদ উর রহমান
ধর্ম কী? নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর, তাৎপর্যপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা আছে। ছাত্রজীবনে সমাজবিজ্ঞানী টেইলরের ‘ধর্ম হচ্ছে আত্মিক জীবে বিশ্বাস’ সংজ্ঞাটি খুব মনে ধরেছিল। এরপর আরও কত শত সংজ্ঞা, বাণী পড়েছি। এখন ধর্মকে বুঝতে দুই শব্দের একটি সংজ্ঞাই আমার কাছে ভালো লাগছে। আর তা হলো, ধর্ম হচ্ছে উন্নত জীবনবিধান। অর্থাৎ যে বিধান আপনাকে মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখে এবং ভালো কাজে উৎসাহী করে। ধর্ম মানুষকে উদার করে, অন্তরকে করে কলুষমুক্ত। এটিই ধর্মের মূল চেতনা।
যে ধর্মেরই হই না কেন, করুণাময়ের কৃপা প্রার্থনা মোটামুটি আমরা সবাই করে থাকি। হয়তো সব সময় কৃপা লাভ হয় না, কিন্তু অস্থির চিত্তে সাময়িক প্রশান্তি তো আসে। এটিও তো ধর্মের বড় শক্তি।
কাজেই আমার কোনো ধর্ম নেই, আমি নাস্তিক—এই উচ্চারণেও কোনো কৃতিত্ব নেই, যেমন কৃতিত্ব নেই অনেক আস্তিকতায়।
ধরুন একজন মানুষ লেবাসে, নামাজ-রোজা পালনে একনিষ্ঠ, এক কথায় পরহেজগারি। পান থেকে চুন খসলেই ধর্ম গেল গেল বলে চিৎকার-চেঁচামেচি না করলেও মনে মনে ফিসফিস-বিসবিস করেন।
বিপরীতে এই তিনিই যখন অন্যের হক নষ্ট করেন, সুদ খান, ঘুষ খান—এবং এইসব করে বেশ সম্পদশালী হন, প্রতিবছর না হলেও কয়েক বছর পরপরই ওমরাহ পালন করতে যান সপরিবারে, তাঁর আস্তিকতাবাদের মূল্য কোথায়?
আপনার দৃষ্টিতে তাঁর এই ধার্মিক হওয়াটা কতটুকু সমাজের জন্য হিতকর, যৌক্তিক? তাঁর ধর্মীয় চেতনাটা এমন যে যা কিছুই করি না কেন, দিন শেষে তওবা করব, দানখয়রাত করব, হজব্রত পালন করতে গিয়ে আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে পুণ্যের বিনিময়ে পাপ কাটাকাটি করে ফেলব—এমন নয় কি? অবস্থাদৃষ্টে কিন্তু এমনই মনে হচ্ছে।
আমি মনে করি প্রত্যেক মানুষেরই একটা ধর্ম থাকা উচিত এই বিবেচনায় যে কোনো অন্যায় কাজ করতে গেলেই যেন তাঁর ধর্মীয় জ্ঞান তাঁকে সেই কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে এবং রাখছেও। বিপরীতে এটিও চাই—রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকা উচিত নয়। কেননা রাষ্ট্রে তো একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ বসবাস করে না। আমাদের বাংলাদেশের কথাই যদি বলি—এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কি কেবল মুসলমানদের ভূমিকা ছিল? বরং সব ধর্মের-শ্রেণি-পেশার মানুষের সমান ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই রাষ্ট্র। কাজেই কোন নৈতিকতার বলে রাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে রাষ্ট্রের ধর্ম ঘোষণা করে?
পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ, জাতি, সম্প্রদায় আছে যাদের কোনো ধর্ম নেই অথচ ন্যায়পরায়ণতায়, জীবনদর্শনে তারা অনেক উন্নত। অন্যায়কে তারা কখনোই প্রশ্রয় দেয় না। নিজের বিবেকই তাদের কাছে বড় ধর্ম। রাষ্ট্রও পরিচালিত হয় ন্যায্যতার ভিত্তিতে। নেই রাজনৈতিক হানাহানি। ফলে সেই দেশ সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত, সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষে।
তেমনই একটি দেশ নিউজিল্যান্ড। কয়েক দিন আগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমার ফেসবুক দেয়ালে একটা টেমপ্লেট সরবরাহ করে, যেখানে একদিকে নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছবি, অন্যদিকে একটি শূন্য ফটোগ্যালারি। আমি তার পাশের শূন্য ফ্রেমটিতে আমার ছবিটি বসিয়ে দিয়ে টেমপ্লেটটিকে পূর্ণতা দিতেই শেয়ার অপশন এল, শেয়ারও করলাম। আমরা সবাই জানি ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজ চলাকালে ক্রাইস্টচার্চে একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল, নিহত হয়েছিল প্রায় ৫০ জন। সেদিন হামলা থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা। সেই তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন টেমপ্লেটের জেসিন্ডা আর্ডেন।
সত্যিকার অর্থেই ক্রাইস্টচার্চে হামলার আগে আমি জেসিন্ডা আর্ডেনকে চিনতাম না। এই কয়েক দিন ধরে চিনছি-জানছি। ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান নিউজিল্যান্ডের এই সরকারপ্রধান ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত না হয়েও তাঁর জীবনসঙ্গী ও শিশুসন্তান আছে। এই রকম জীবনযাপন এবং দৃষ্টিভঙ্গির জন্য অনেক ইসলামি দেশে তাঁকে জেলে থাকতে হতো। তাঁর চরিত্রহনন হতো, ‘মুরতাদ’ ঘোষিতও হতে পারতেন! অথচ, সে সময়ে তিনি ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে আমাদের সবার চোখে ছিলেন এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক। কেন? তা কি আমাদের ভাবিত করে? তাঁর সহনশীলতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, ভিন্নমতের প্রতি অঙ্গীকার, মানবতাবাদী জীবনদর্শন এসবই তো—তাই না?
ক্রাইস্টচার্চ হামলায় নিউজিল্যান্ড কোণঠাসা হতে পারত, জাসিন্ডার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যেতে পারত। এক রোহিঙ্গা সংকট অং সান সু চির আকাশছোঁয়া ভাবমূর্তিকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। বিপরীতে ক্রাইস্টচার্চ সংকট জাসিন্ডাকে আকাশে তুলে দিয়েছে। সংকট থেকেই উঠে এসেছেন অনন্য জাসিন্ডা। আবার সেই তিনিই কিনা সময়ের প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে জাসিন্ডা বলেন, ‘এমন একটি বিশেষ পদের সঙ্গে অনেক রকম গুরুদায়িত্ব জড়িয়ে থাকে। নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আপনি কখন সঠিক ব্যক্তি আর কখন নন, তা বোঝার দায়িত্ব আপনারই।’ এই হচ্ছে জাসিন্ডা। কোনো কোনো নেতা আছেন যাঁরা ঐক্য খুঁজে বেড়ান। আর জাসিন্ডারা করেন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ।
একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় যে দেশগুলো সেসব দেশে ধর্ম নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি নেই। সবাই যার যার ধর্ম একাগ্রচিত্তে পালন করছে। ধর্মকে তারা নীতিনৈতিকতার সর্বোচ্চ মানদণ্ডে স্থান দিয়েছে। না ব্যবহার করছে রাজনীতিতে, না ব্যবহার করছে অন্যকে ঠকানোর হাতিয়ার হিসেবে। কেন বলছি? বলছি এই কারণে যে দৈনন্দিন জীবনে বাজারে হাটেঘাটে এমনকি কোনো কিছু কিনতে গেলেও ন্যায্যতা প্রাপ্তির আশায় আমরা টুপি-দাড়ি আছে এমন ব্যক্তির কাছেই যাই। কিন্তু সব সময় কি আমরা তৃপ্ত হতে পারি?
কাজেই যে যার ধর্মই পালন করি না কেন সেটি যেন সামাজিক অস্থিরতা তৈরিতে ভূমিকা না রাখে। সাম্প্রতিক রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার খুব বেড়েছে, বিশেষ করে এই ভারতীয় উপমহাদেশে। এর ফল শুভ হতে পারে না। এই যে শুরুতেই বললাম, ধর্ম মানুষকে উদার করে, অন্তরকে করে কলুষমুক্ত। অথচ এখন ধর্মের অধিক চর্চায় অন্তরাত্মা হচ্ছে কলুষযুক্ত! আমরা দুর্নীতিতে দিন দিন লাগামহীন হচ্ছি, একে অপরকে ঘায়েল করতে কিংবা উচ্চাভিলাষী হয়ে প্রতিপক্ষের প্রাণনাশ করছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ম-অধর্ম বিষয়ে একে অপরকে আক্রমণ করছি অত্যন্ত নোংরা ভাষায়। এসবের পরিণাম কী হতে পারে তা কি ভেবে দেখছি? আজ থেকে দুই শতাধিক বছর আগে কোনো ধরনের একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও ফকির লালন কোনো ধর্মীয় জ্ঞানে এমন মানবতাবাদী সাধক হতে পেরেছিলেন?
তিনি যথার্থই বলেছেন—ব্রাহ্মণ চণ্ডাল চামার মুচি/একি জলেই সব হয় গো শুচি/দেখে শুনে হয় না রুচি/যমে তো কাউকে ছাড়বে না...পানি যেমন ব্রাহ্মণ-চণ্ডাল, চামার-মুচি সবাইকেই পবিত্র করে, ঠিক তেমনি মানুষের মধ্যে সাধনার দ্বারা যখন প্রজ্ঞার সৃষ্টি হয়, তখনই তার মধ্যে শুভবোধ জাগ্রত হয়। সেই সাধনা হচ্ছে কর্মের সাধনা। সেই সাধনা আত্মজিজ্ঞাসার, আত্মশুদ্ধির। দিনশেষে যদি আমি আমার কর্মের জাস্টিফাই করতে না পারি, তাহলে সবই হয় শূন্য দিয়ে গুণ করার মতো। আর যাই হোক, এসব তথাকথিত লোকদেখানো ধার্মিকতা থেকে বা ধর্ম পালন থেকে আত্মশুদ্ধি হয় না।
লেখক: কলেজশিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
ধর্ম কী? নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর, তাৎপর্যপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা আছে। ছাত্রজীবনে সমাজবিজ্ঞানী টেইলরের ‘ধর্ম হচ্ছে আত্মিক জীবে বিশ্বাস’ সংজ্ঞাটি খুব মনে ধরেছিল। এরপর আরও কত শত সংজ্ঞা, বাণী পড়েছি। এখন ধর্মকে বুঝতে দুই শব্দের একটি সংজ্ঞাই আমার কাছে ভালো লাগছে। আর তা হলো, ধর্ম হচ্ছে উন্নত জীবনবিধান। অর্থাৎ যে বিধান আপনাকে মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখে এবং ভালো কাজে উৎসাহী করে। ধর্ম মানুষকে উদার করে, অন্তরকে করে কলুষমুক্ত। এটিই ধর্মের মূল চেতনা।
যে ধর্মেরই হই না কেন, করুণাময়ের কৃপা প্রার্থনা মোটামুটি আমরা সবাই করে থাকি। হয়তো সব সময় কৃপা লাভ হয় না, কিন্তু অস্থির চিত্তে সাময়িক প্রশান্তি তো আসে। এটিও তো ধর্মের বড় শক্তি।
কাজেই আমার কোনো ধর্ম নেই, আমি নাস্তিক—এই উচ্চারণেও কোনো কৃতিত্ব নেই, যেমন কৃতিত্ব নেই অনেক আস্তিকতায়।
ধরুন একজন মানুষ লেবাসে, নামাজ-রোজা পালনে একনিষ্ঠ, এক কথায় পরহেজগারি। পান থেকে চুন খসলেই ধর্ম গেল গেল বলে চিৎকার-চেঁচামেচি না করলেও মনে মনে ফিসফিস-বিসবিস করেন।
বিপরীতে এই তিনিই যখন অন্যের হক নষ্ট করেন, সুদ খান, ঘুষ খান—এবং এইসব করে বেশ সম্পদশালী হন, প্রতিবছর না হলেও কয়েক বছর পরপরই ওমরাহ পালন করতে যান সপরিবারে, তাঁর আস্তিকতাবাদের মূল্য কোথায়?
আপনার দৃষ্টিতে তাঁর এই ধার্মিক হওয়াটা কতটুকু সমাজের জন্য হিতকর, যৌক্তিক? তাঁর ধর্মীয় চেতনাটা এমন যে যা কিছুই করি না কেন, দিন শেষে তওবা করব, দানখয়রাত করব, হজব্রত পালন করতে গিয়ে আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে পুণ্যের বিনিময়ে পাপ কাটাকাটি করে ফেলব—এমন নয় কি? অবস্থাদৃষ্টে কিন্তু এমনই মনে হচ্ছে।
আমি মনে করি প্রত্যেক মানুষেরই একটা ধর্ম থাকা উচিত এই বিবেচনায় যে কোনো অন্যায় কাজ করতে গেলেই যেন তাঁর ধর্মীয় জ্ঞান তাঁকে সেই কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে এবং রাখছেও। বিপরীতে এটিও চাই—রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকা উচিত নয়। কেননা রাষ্ট্রে তো একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ বসবাস করে না। আমাদের বাংলাদেশের কথাই যদি বলি—এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কি কেবল মুসলমানদের ভূমিকা ছিল? বরং সব ধর্মের-শ্রেণি-পেশার মানুষের সমান ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই রাষ্ট্র। কাজেই কোন নৈতিকতার বলে রাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে রাষ্ট্রের ধর্ম ঘোষণা করে?
পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ, জাতি, সম্প্রদায় আছে যাদের কোনো ধর্ম নেই অথচ ন্যায়পরায়ণতায়, জীবনদর্শনে তারা অনেক উন্নত। অন্যায়কে তারা কখনোই প্রশ্রয় দেয় না। নিজের বিবেকই তাদের কাছে বড় ধর্ম। রাষ্ট্রও পরিচালিত হয় ন্যায্যতার ভিত্তিতে। নেই রাজনৈতিক হানাহানি। ফলে সেই দেশ সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত, সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষে।
তেমনই একটি দেশ নিউজিল্যান্ড। কয়েক দিন আগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমার ফেসবুক দেয়ালে একটা টেমপ্লেট সরবরাহ করে, যেখানে একদিকে নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছবি, অন্যদিকে একটি শূন্য ফটোগ্যালারি। আমি তার পাশের শূন্য ফ্রেমটিতে আমার ছবিটি বসিয়ে দিয়ে টেমপ্লেটটিকে পূর্ণতা দিতেই শেয়ার অপশন এল, শেয়ারও করলাম। আমরা সবাই জানি ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজ চলাকালে ক্রাইস্টচার্চে একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল, নিহত হয়েছিল প্রায় ৫০ জন। সেদিন হামলা থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা। সেই তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন টেমপ্লেটের জেসিন্ডা আর্ডেন।
সত্যিকার অর্থেই ক্রাইস্টচার্চে হামলার আগে আমি জেসিন্ডা আর্ডেনকে চিনতাম না। এই কয়েক দিন ধরে চিনছি-জানছি। ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান নিউজিল্যান্ডের এই সরকারপ্রধান ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত না হয়েও তাঁর জীবনসঙ্গী ও শিশুসন্তান আছে। এই রকম জীবনযাপন এবং দৃষ্টিভঙ্গির জন্য অনেক ইসলামি দেশে তাঁকে জেলে থাকতে হতো। তাঁর চরিত্রহনন হতো, ‘মুরতাদ’ ঘোষিতও হতে পারতেন! অথচ, সে সময়ে তিনি ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে আমাদের সবার চোখে ছিলেন এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক। কেন? তা কি আমাদের ভাবিত করে? তাঁর সহনশীলতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, ভিন্নমতের প্রতি অঙ্গীকার, মানবতাবাদী জীবনদর্শন এসবই তো—তাই না?
ক্রাইস্টচার্চ হামলায় নিউজিল্যান্ড কোণঠাসা হতে পারত, জাসিন্ডার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যেতে পারত। এক রোহিঙ্গা সংকট অং সান সু চির আকাশছোঁয়া ভাবমূর্তিকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। বিপরীতে ক্রাইস্টচার্চ সংকট জাসিন্ডাকে আকাশে তুলে দিয়েছে। সংকট থেকেই উঠে এসেছেন অনন্য জাসিন্ডা। আবার সেই তিনিই কিনা সময়ের প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে জাসিন্ডা বলেন, ‘এমন একটি বিশেষ পদের সঙ্গে অনেক রকম গুরুদায়িত্ব জড়িয়ে থাকে। নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আপনি কখন সঠিক ব্যক্তি আর কখন নন, তা বোঝার দায়িত্ব আপনারই।’ এই হচ্ছে জাসিন্ডা। কোনো কোনো নেতা আছেন যাঁরা ঐক্য খুঁজে বেড়ান। আর জাসিন্ডারা করেন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ।
একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় যে দেশগুলো সেসব দেশে ধর্ম নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি নেই। সবাই যার যার ধর্ম একাগ্রচিত্তে পালন করছে। ধর্মকে তারা নীতিনৈতিকতার সর্বোচ্চ মানদণ্ডে স্থান দিয়েছে। না ব্যবহার করছে রাজনীতিতে, না ব্যবহার করছে অন্যকে ঠকানোর হাতিয়ার হিসেবে। কেন বলছি? বলছি এই কারণে যে দৈনন্দিন জীবনে বাজারে হাটেঘাটে এমনকি কোনো কিছু কিনতে গেলেও ন্যায্যতা প্রাপ্তির আশায় আমরা টুপি-দাড়ি আছে এমন ব্যক্তির কাছেই যাই। কিন্তু সব সময় কি আমরা তৃপ্ত হতে পারি?
কাজেই যে যার ধর্মই পালন করি না কেন সেটি যেন সামাজিক অস্থিরতা তৈরিতে ভূমিকা না রাখে। সাম্প্রতিক রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার খুব বেড়েছে, বিশেষ করে এই ভারতীয় উপমহাদেশে। এর ফল শুভ হতে পারে না। এই যে শুরুতেই বললাম, ধর্ম মানুষকে উদার করে, অন্তরকে করে কলুষমুক্ত। অথচ এখন ধর্মের অধিক চর্চায় অন্তরাত্মা হচ্ছে কলুষযুক্ত! আমরা দুর্নীতিতে দিন দিন লাগামহীন হচ্ছি, একে অপরকে ঘায়েল করতে কিংবা উচ্চাভিলাষী হয়ে প্রতিপক্ষের প্রাণনাশ করছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ম-অধর্ম বিষয়ে একে অপরকে আক্রমণ করছি অত্যন্ত নোংরা ভাষায়। এসবের পরিণাম কী হতে পারে তা কি ভেবে দেখছি? আজ থেকে দুই শতাধিক বছর আগে কোনো ধরনের একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও ফকির লালন কোনো ধর্মীয় জ্ঞানে এমন মানবতাবাদী সাধক হতে পেরেছিলেন?
তিনি যথার্থই বলেছেন—ব্রাহ্মণ চণ্ডাল চামার মুচি/একি জলেই সব হয় গো শুচি/দেখে শুনে হয় না রুচি/যমে তো কাউকে ছাড়বে না...পানি যেমন ব্রাহ্মণ-চণ্ডাল, চামার-মুচি সবাইকেই পবিত্র করে, ঠিক তেমনি মানুষের মধ্যে সাধনার দ্বারা যখন প্রজ্ঞার সৃষ্টি হয়, তখনই তার মধ্যে শুভবোধ জাগ্রত হয়। সেই সাধনা হচ্ছে কর্মের সাধনা। সেই সাধনা আত্মজিজ্ঞাসার, আত্মশুদ্ধির। দিনশেষে যদি আমি আমার কর্মের জাস্টিফাই করতে না পারি, তাহলে সবই হয় শূন্য দিয়ে গুণ করার মতো। আর যাই হোক, এসব তথাকথিত লোকদেখানো ধার্মিকতা থেকে বা ধর্ম পালন থেকে আত্মশুদ্ধি হয় না।
লেখক: কলেজশিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
যাঁরা একটু পুরোনো আমলের মানুষ, তাঁদের মনে এখনো আমেরিকা-রাশিয়া নিয়ে অনেক আগ্রহ। পৃথিবী বদলে গেছে। এই রাশিয়া যে বিগত সোভিয়েত ইউনিয়নের আদর্শিক উত্তরসূরি নয়, সে কথাও সবাই জানে। তার পরও সত্তর ও আশির দশকের ঠান্ডা লড়াইকালের রাশিয়া-আমেরিকাকেই এখনো মনের মধ্যে স্থান দিয়ে রাখা হয়েছে।
১৯ ঘণ্টা আগেভেবেছিলাম, সমাজ বিনির্মাণে রাজনীতি নিয়ে লিখব। পরে আমার মনে হলো বিনির্মাণ কেন? নির্মাণের আগে যে ‘বি’ উপসর্গটি যুক্ত, তা ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয়। যে দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচকতা বলে আসলে কিছুই আর নেই, সেই সমাজে ‘সমাজ বিনির্মাণে রাজনীতি’ শিরোনাম কি যুক্তিযুক্ত?
১৯ ঘণ্টা আগেপ্রবীণ জীবনে স্ত্রীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেবাযত্ন, ওষুধপত্র, খাবারদাবার ইত্যাদি বিষয়ে স্ত্রীর নজরদারি থাকে। আমাদের সমাজব্যবস্থায় দাম্পত্যজীবনে স্বামীকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার রেওয়াজ চালু রয়েছে। কার্যত সংসারে স্ত্রীর অভিভাবক স্বামী।
১৯ ঘণ্টা আগেপ্রতিদিনের সংবাদপত্রে অসংখ্য খারাপ খবর পাঠ করে পাঠক যখন ক্লান্ত, ত্যক্তবিরক্ত, ঠিক তখন ২৯ নভেম্বর আজকের পত্রিকায় ‘এবার সবচেয়ে চিকন ধান উদ্ভাবন নূরের’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি পড়ে পাঠক খুশি হবেন, আনন্দিত হবেন।
২০ ঘণ্টা আগে