মহিউদ্দিন খান মোহন
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর অপসারণ নিয়ে গরম হয়ে ওঠা রাজনৈতিক মাঠ আপাতত কিছুটা ঠান্ডা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মনোনীত এই রাষ্ট্রপতিকে ঘিরে দেশে যে নতুন রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, তা দূর হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নবগঠিত নাগরিক কমিটির এ-সংক্রান্ত দাবিকে কেন্দ্র করে দেশে দ্বিধাবিভক্তির যে ঢেউ উঠেছিল, তা-ও স্তিমিত হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে শিগগির পদচ্যুত করার কোনো সম্ভাবনা নেই।
যে প্রশ্নটি গুরুতর হয়ে দেখা গিয়েছিল, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পদত্যাগ করলে বা তাঁকে পদচ্যুত করা হলে দেশে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে কি না। কেউ কেউ বলছেন তাতে তেমন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে না। জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হলে এটা অসম্ভব কোনো বিষয় নয়। যাঁরা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণ চান তাঁদের কথা হলো, জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ও তৎপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় মো. সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণ বিপ্লবের অংশ হিসেবে সিদ্ধ। অন্যদিকে সচেতন ব্যক্তিদের বক্তব্য হলো, যেহেতু আগস্ট বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্সের ভিত্তিতে বিদ্যমান সংবিধানের আওতায় ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে এবং শপথ নেওয়ার সময় প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টারা ‘সংবিধান সমুন্নত’ রাখার অঙ্গীকার করেছেন, তাই সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটে এমন কোনো পদক্ষেপ তাঁরা নিতে পারেন না, নিলে শপথ ভঙ্গ হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হলে তা পূরণের যে সাংবিধানিক বিধান রয়েছে, তা অনুসরণ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে দেখা দেবে সাংবিধানিক সংকট, যা দেশকে অসাংবিধানিক পথে ঠেলে দিতে পারে। যার ফলে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে সৃষ্টি হতে পারে অন্তরায়।
আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, অপসারণ বা অন্য কোনোভাবে শূন্যতা সৃষ্টি হলে তা পূরণের বিষয়ে রীতি-পদ্ধতি সুস্পষ্টভাবেই বর্ণনা করা আছে। সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ থেকে ৫৪ অনুচ্ছেদ ও উপ-অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধানাবলি এবং তাঁকে অপসারণ বা তাঁর পদত্যাগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট করেই উল্লেখ আছে। ৫৩ অনুচ্ছেদের (১) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে তাঁহার পদ হইতে অপসারিত করা যাইতে পারিবে; ইহার জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে কথিত অসামর্থ্যের বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের নিকট প্রদান করিতে হইবে।’ ৫৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ক্ষেত্রমত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করিবেন।’
আমাদের দেশে রাষ্ট্রপতির পদটি আলংকারিক হলেও এ পদে নির্বাচন ও নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের প্রক্রিয়াটি সহজ নয়, বরং জটিল। কেননা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও অপসারণ কোনো একজন বালককে স্কুলে ভর্তি কিংবা স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেওয়ার মতো নয়। যাঁরা এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ জরুরি মনে করে কথা বলছেন, তাঁরা হয়তো খেয়াল করছেন না, স্বপদে ইস্তফা দেওয়া বা অপসারিত হওয়ার মতো কোনো কাজ সাহাবুদ্দিন এখন পর্যন্ত করেননি। তা ছাড়া যেহেতু দেশে এখন সংসদ নেই, স্পিকারও স্বপদে বহাল নেই, তাই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়টি যেমন সহজ নয়, তেমনি তিনি কার কাছে পদত্যাগপত্র পাঠাবেন, তা-ও সংবিধানে বলা নেই।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার আড়াই মাসের মাথায় রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের জোরালো আওয়াজ ওঠে মূলত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের একটি মন্তব্যের কারণে। দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী তাঁর সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন নাকি তাঁকে বলেছেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ তাঁর কাছে নেই।’ এখানে লক্ষণীয়, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন শেখ হাসিনা পদত্যাগের দালিলিক কোনো প্রমাণ তাঁর কাছে নেই বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি’ বলেননি। এই মৃত ইস্যুটিকে পুনরুজ্জীবিত করে দেশে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক বিতর্ক তৈরি করা কোনোমতেই সুবিবেচনাপ্রসূত নয়। তবে অভিজ্ঞ সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর একান্ত আলাপচারিতাকে নিবন্ধে উল্লেখ করা সমীচীন হয়েছে কি না,
এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। কেননা, কোনো ব্যক্তি একান্ত আলাপচারিতা বা কথোপকথনের নানা বিষয়ে কথা বলতেই পারেন। তবে সেই ব্যক্তির পূর্বানুমতি না নিয়ে তা প্রকাশ করা সাংবাদিকতার রীতিবিরুদ্ধ। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন মতিউর রহমান চৌধুরীকে ওই কথোপকথনের বিষয়বস্তু প্রকাশের অনুমতি দিয়েছিলেন কি না আমার জানা নেই।
মূলত মতিউর রহমান চৌধুরীর ওই তথ্য প্রকাশের পরই রাষ্ট্রপতির অপসারণের বিষয়টি জোরেশোরে আলোচিত হতে থাকে। তারই সূত্র ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি দাবি তোলে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের। এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের দুইজন উপদেষ্টা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। প্রচারিত, তাঁরা প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেছিলেন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করতে। কিন্তু তিনি বিনয়ের সঙ্গে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। জানা যায়, তিনি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো বিষয়ে নিজেকে জড়াতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। সেখান থেকে অনেকটা হতোদ্যম হয়ে ফিরে আসার পর উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না।’
এদিকে বর্তমানে দেশের একক বৃহৎ দল বিএনপি রাষ্ট্রপতির অপসারণ প্রশ্নে তাদের অভিমত জানিয়েছে এই বলে যে দেশে নতুন করে কোনো সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হোক, তারা সেটা চায় না। বিএনপির এই অবস্থানকে সচেতন দেশবাসী ‘দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত’ বলে সাধুবাদ জানিয়েছেন। কেননা, বিএনপি একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। এ দলের লক্ষ্য সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করা। ফলে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্তে যদি নতুন সাংবিধানিক সংকটের উদ্ভব ঘটে, তাহলে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ যেমন কণ্টাকাকীর্ণ হবে, তেমনি বিএনপির রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার পথেও বাধার সৃষ্টি করবে। বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জোট ও মোর্চার সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বৈঠক করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। দু-একটি ছাড়া তেমন কোনো পক্ষ থেকেই তাঁরা এ বিষয়ে উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পাননি। তারপরও জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী গত ২৯ অক্টোবর বাম দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর বলেছেন, রাষ্ট্রপতির অপসারণের প্রশ্নে কোনো ছাড় নেই। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তা করা হবে, তা নিয়ে আরও আলোচনা করা হবে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর অবস্থান থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে অন্তর্ঘাত সৃষ্টি করতে পারবে বা জুলাই বিপ্লবের অর্জনকে নস্যাৎ করে দিতে পারবে—এ ধারণা নিতান্তই অমূলক। সুতরাং এ সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা বাদ দিয়ে বাংলাদেশকে একটি জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন ও একটি অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর অপসারণ নিয়ে গরম হয়ে ওঠা রাজনৈতিক মাঠ আপাতত কিছুটা ঠান্ডা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মনোনীত এই রাষ্ট্রপতিকে ঘিরে দেশে যে নতুন রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, তা দূর হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নবগঠিত নাগরিক কমিটির এ-সংক্রান্ত দাবিকে কেন্দ্র করে দেশে দ্বিধাবিভক্তির যে ঢেউ উঠেছিল, তা-ও স্তিমিত হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে শিগগির পদচ্যুত করার কোনো সম্ভাবনা নেই।
যে প্রশ্নটি গুরুতর হয়ে দেখা গিয়েছিল, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পদত্যাগ করলে বা তাঁকে পদচ্যুত করা হলে দেশে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে কি না। কেউ কেউ বলছেন তাতে তেমন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে না। জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হলে এটা অসম্ভব কোনো বিষয় নয়। যাঁরা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণ চান তাঁদের কথা হলো, জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ও তৎপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় মো. সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণ বিপ্লবের অংশ হিসেবে সিদ্ধ। অন্যদিকে সচেতন ব্যক্তিদের বক্তব্য হলো, যেহেতু আগস্ট বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্সের ভিত্তিতে বিদ্যমান সংবিধানের আওতায় ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে এবং শপথ নেওয়ার সময় প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টারা ‘সংবিধান সমুন্নত’ রাখার অঙ্গীকার করেছেন, তাই সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটে এমন কোনো পদক্ষেপ তাঁরা নিতে পারেন না, নিলে শপথ ভঙ্গ হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হলে তা পূরণের যে সাংবিধানিক বিধান রয়েছে, তা অনুসরণ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে দেখা দেবে সাংবিধানিক সংকট, যা দেশকে অসাংবিধানিক পথে ঠেলে দিতে পারে। যার ফলে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে সৃষ্টি হতে পারে অন্তরায়।
আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, অপসারণ বা অন্য কোনোভাবে শূন্যতা সৃষ্টি হলে তা পূরণের বিষয়ে রীতি-পদ্ধতি সুস্পষ্টভাবেই বর্ণনা করা আছে। সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ থেকে ৫৪ অনুচ্ছেদ ও উপ-অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধানাবলি এবং তাঁকে অপসারণ বা তাঁর পদত্যাগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট করেই উল্লেখ আছে। ৫৩ অনুচ্ছেদের (১) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে তাঁহার পদ হইতে অপসারিত করা যাইতে পারিবে; ইহার জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে কথিত অসামর্থ্যের বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের নিকট প্রদান করিতে হইবে।’ ৫৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ক্ষেত্রমত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করিবেন।’
আমাদের দেশে রাষ্ট্রপতির পদটি আলংকারিক হলেও এ পদে নির্বাচন ও নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের প্রক্রিয়াটি সহজ নয়, বরং জটিল। কেননা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও অপসারণ কোনো একজন বালককে স্কুলে ভর্তি কিংবা স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেওয়ার মতো নয়। যাঁরা এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ জরুরি মনে করে কথা বলছেন, তাঁরা হয়তো খেয়াল করছেন না, স্বপদে ইস্তফা দেওয়া বা অপসারিত হওয়ার মতো কোনো কাজ সাহাবুদ্দিন এখন পর্যন্ত করেননি। তা ছাড়া যেহেতু দেশে এখন সংসদ নেই, স্পিকারও স্বপদে বহাল নেই, তাই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়টি যেমন সহজ নয়, তেমনি তিনি কার কাছে পদত্যাগপত্র পাঠাবেন, তা-ও সংবিধানে বলা নেই।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার আড়াই মাসের মাথায় রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের জোরালো আওয়াজ ওঠে মূলত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের একটি মন্তব্যের কারণে। দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী তাঁর সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন নাকি তাঁকে বলেছেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ তাঁর কাছে নেই।’ এখানে লক্ষণীয়, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন শেখ হাসিনা পদত্যাগের দালিলিক কোনো প্রমাণ তাঁর কাছে নেই বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি’ বলেননি। এই মৃত ইস্যুটিকে পুনরুজ্জীবিত করে দেশে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক বিতর্ক তৈরি করা কোনোমতেই সুবিবেচনাপ্রসূত নয়। তবে অভিজ্ঞ সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর একান্ত আলাপচারিতাকে নিবন্ধে উল্লেখ করা সমীচীন হয়েছে কি না,
এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। কেননা, কোনো ব্যক্তি একান্ত আলাপচারিতা বা কথোপকথনের নানা বিষয়ে কথা বলতেই পারেন। তবে সেই ব্যক্তির পূর্বানুমতি না নিয়ে তা প্রকাশ করা সাংবাদিকতার রীতিবিরুদ্ধ। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন মতিউর রহমান চৌধুরীকে ওই কথোপকথনের বিষয়বস্তু প্রকাশের অনুমতি দিয়েছিলেন কি না আমার জানা নেই।
মূলত মতিউর রহমান চৌধুরীর ওই তথ্য প্রকাশের পরই রাষ্ট্রপতির অপসারণের বিষয়টি জোরেশোরে আলোচিত হতে থাকে। তারই সূত্র ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি দাবি তোলে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের। এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের দুইজন উপদেষ্টা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। প্রচারিত, তাঁরা প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেছিলেন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করতে। কিন্তু তিনি বিনয়ের সঙ্গে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। জানা যায়, তিনি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো বিষয়ে নিজেকে জড়াতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। সেখান থেকে অনেকটা হতোদ্যম হয়ে ফিরে আসার পর উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না।’
এদিকে বর্তমানে দেশের একক বৃহৎ দল বিএনপি রাষ্ট্রপতির অপসারণ প্রশ্নে তাদের অভিমত জানিয়েছে এই বলে যে দেশে নতুন করে কোনো সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হোক, তারা সেটা চায় না। বিএনপির এই অবস্থানকে সচেতন দেশবাসী ‘দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত’ বলে সাধুবাদ জানিয়েছেন। কেননা, বিএনপি একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। এ দলের লক্ষ্য সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করা। ফলে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্তে যদি নতুন সাংবিধানিক সংকটের উদ্ভব ঘটে, তাহলে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ যেমন কণ্টাকাকীর্ণ হবে, তেমনি বিএনপির রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার পথেও বাধার সৃষ্টি করবে। বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জোট ও মোর্চার সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বৈঠক করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। দু-একটি ছাড়া তেমন কোনো পক্ষ থেকেই তাঁরা এ বিষয়ে উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পাননি। তারপরও জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী গত ২৯ অক্টোবর বাম দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর বলেছেন, রাষ্ট্রপতির অপসারণের প্রশ্নে কোনো ছাড় নেই। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তা করা হবে, তা নিয়ে আরও আলোচনা করা হবে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর অবস্থান থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে অন্তর্ঘাত সৃষ্টি করতে পারবে বা জুলাই বিপ্লবের অর্জনকে নস্যাৎ করে দিতে পারবে—এ ধারণা নিতান্তই অমূলক। সুতরাং এ সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা বাদ দিয়ে বাংলাদেশকে একটি জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন ও একটি অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
আনু মুহাম্মদ অর্থনীতিবিদ ও অ্যাকটিভিস্ট। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক। দীর্ঘ সময় তিনি জাতীয় স্বার্থে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির অন্যতম সংগঠক।
৩ ঘণ্টা আগেনির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য দেড় শ সুপারিশ করেছে এ-সম্পর্কিত কমিশন—যেগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় সত্যিই একটা গুণগত পরিবর্তন আনা সম্ভব। যদিও কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হওয়া কঠিন।
৪ ঘণ্টা আগেরাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরেও ফরিদপুরের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী খায়রুজ্জামান খাজার কর্মকাণ্ডের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে সাবেক মন্ত্রী আবদুর রহমানের কাছের লোক ছিলেন। এখন হয়েছেন যুবদল নেতা। ফলে তাঁর দাপট সমানতালে চলছে। এ নিয়ে ১৫ জানুয়ারি আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগে‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে!’ এটি একটি প্রবাদ বাক্য। আমরা অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ কিছু বোঝাতে গিয়ে প্রবাদ বাক্য ব্যবহার করে থাকি। যে বাক্য বা উক্তি সংক্ষিপ্ত আকারে এবং রূপক আকারে বিশেষ অর্থ বহন করে, যার মাঝে কোনো বাস্তব সত্য নিহিত রয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে লোকের মুখে মুখে চলে আসছে, তাকেই আমরা প্রবাদ...
১ দিন আগে