বিধান রিবেরু
প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাবনিকাশ করলেই অগ্রগতি আর অবনতির খতিয়ান পাওয়া যায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ২০২৪ সালের শেষপাদে এসে কী পেল, আর নতুন বছরে কী-ইবা পেতে যাচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করছে এ দেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের এগিয়ে যাওয়া। এ বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে দেড় দশকের পুরোনো ও স্বৈরাচারী শাসন বিদায় নিয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল সংস্কার হবে সর্বত্র। চলচ্চিত্র অঙ্গনের সংশ্লিষ্ট সবারই আশা ছিল, এবার পরিবর্তনের হাওয়া লাগবে চলচ্চিত্রের পালে। হাওয়া লেগেছিল ঠিকই, তবে সেই হাওয়া কি আমাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে?
এমনিতে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের ছবি একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, বিশেষ করে স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্র ও কিছু মিডল সিনেমা (সিনেমা মধ্যমা)। কিন্তু ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন বা এফডিসিকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র আসলে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে এক শাকিব খানের হিট ছবি ছাড়া আর কিছু প্রসব করতে পারেনি। তা-ও প্রতিবছরও সেটা হচ্ছিল না। কাজেই এফডিসিকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র যেমন ম্লান হয়ে গেছে এরই ভেতর, সে রকম সিঙ্গেল স্ক্রিনও ধীরে ধীরে হয়ে পড়ছে জৌলুশহীন। বিদেশি, বিশেষ করে হলিউডের ছবি আমদানির পাশাপাশি স্বাধীন নির্মাতাদের চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ মাল্টি স্ক্রিনের ব্যবসাকে চাঙা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে আরেকটা ব্যাপার গোপনে গোপনে ঘটে গেছে।
ব্যাপারটা হলো, এফডিসিকেন্দ্রিক সিনেমার শিল্পীরা কাজ করতে শুরু করেছেন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ছবিতে। বাংলাদেশে আপনি এফডিসি থেকে সহায়তা নিয়ে ছবি না বানালেও সেখানকার অনাপত্তিপত্র জোগাড় এবং সে জন্য পয়সা খরচ করতে হয়। বর্তমান সময়ে যাঁরা প্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র নির্মাতা, তাঁদের অনেকেই এফডিসির সহায়তা ছাড়া চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দিয়েছিলেন এবং অনাপত্তিপত্রের জন্য এফডিসির দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তখন কম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হননি তাঁরা। যেমন প্রায়ই বলা হতো, এরা বড় পর্দায় নাটক বানায়, এরা সিনেমা বানাতে পারে না ইত্যাদি। কিন্তু সময় পরিবর্তনের পর দেখা যাচ্ছে সেই তথাকথিত এফডিসিকেন্দ্রিক বাণিজ্যিক ছবির বড় বড় অভিনেতাই এখন সেদিনের স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ছবিতে কাজ করছেন। শাকিব খান, ডিপজল, রুবেল, জায়েদ খান প্রমুখদের দেখা যাচ্ছে এফডিসির বাইরে নির্মিত ছবিগুলোতে কাজ করতে।
ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে, বোঝা যাচ্ছে, বিগত এক যুগে একটা বড় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ছবি বিদেশের বিভিন্ন মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবেও আদৃত হচ্ছে। এমন একটি অবস্থার ভেতর ২০২৪ সালের আগস্টে ঘটে গেল ক্ষমতার পটপরিবর্তন। এই পরিবর্তনের পর যেহেতু সবাই সংস্কারের দাবি তুলল, চলচ্চিত্রের মানুষেরাও চাইলেন কিছু পরিবর্তন আসুক। তাঁরা ফিল্ম কমিশন চাইলেন, চলচ্চিত্র কেন্দ্র চাইলেন, চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কমিটিতে নতুন লোক চাইলেন। কমিটিতে নতুন লোক এল বটে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল কি পাওয়া গেল?
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই দাবিদাওয়া নিয়ে যাঁরা সোচ্চার ছিলেন, তাঁদের উৎসাহে ভাটা পড়তে শুরু করে। প্রথম দুই মাসে যত বৈঠক ও সমাবেশ হয়েছে, তা যেন ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে। সবাই যেন বুঝে যায়, সংস্কার চাইলেও সেটা রাতারাতি সম্ভব নয়। তা ছাড়া, চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া যেটা ছিল, সেন্সর সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করা, সেটা আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে অনেকেই এখন সন্দিহান। অর্থাৎ কোনো সিনেমা আটকে যাবে না, বয়স ও পরিপক্বতার ভিত্তিতে শুধু সীমানা নির্ধারণ হবে। কোনো ছবিকে যদি গ্রহণ বা বর্জন করতে হয়, সেটি করবে দর্শক। কোনো সরকারি সংস্থা নয়। তবে বাস্তবতা আমাদের অজানা নয়। বিগত সরকারের আমলে অন্য আদর্শের কোনো সিনেমা যেমন মুক্তি পায়নি, তেমনি এই সরকারের আমলে বিগত সরকারের আদর্শের ছবিও মুক্তি পাবে না। কাজেই চলচ্চিত্রের আসলে মুক্তি ঘটেনি। বাংলাদেশে আমরা সবকিছুর ঊর্ধ্বে আদর্শের কাঁচিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই, শিল্প বা চলচ্চিত্রকে নয়। অন্যান্য দেশে চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমা দেখানোর ক্ষেত্রে কোনো সেন্সর সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু আমাদের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও এই বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমা সাধারণত তৈরি করেন শিক্ষার্থীরা। নিজেদের টাকায় খুব কষ্ট করে তাঁরা সিনেমা বানান। তাঁদের সরকারি এই সনদ নেওয়ার নামে অর্থ ব্যয় করানো এবং লালফিতার দৌরাত্ম্য না দেখালে হয় না কি?
যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের রাজনৈতিক আদর্শের দ্বারা পরিচালিত হয় আমাদের আমলাতন্ত্র। তা ছাড়া, তারা শিল্পসাহিত্যের ব্যাপারে অতটা আগ্রহী নয়। কাজেই চলচ্চিত্র সব সময়ই রয়ে যায় গুরুত্বের সবচেয়ে তলানিতে। চলচ্চিত্র যেহেতু ব্যয়বহুল মাধ্যম, এর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বড় আকারে, তাই যতক্ষণ না পর্যন্ত নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে চলচ্চিত্রকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আসলে প্রকৃত সংস্কার হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। আমাদের অবকাঠামো আছে হয়তো কিছু। কিন্তু সেসব দিয়ে কি হবে, যদি ভেতরে কাজের কাজ কিছু না হয়? তা ছাড়া, সমাজে যদি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির উত্থান ঘটে, তাহলে তা চলচ্চিত্রের জন্য অশনিসংকেত। শুধু রাজধানী দিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করলে চলবে না, ঢাকার বাইরে চলচ্চিত্রের অবস্থা কেমন, সেটাও দেখতে হবে।
আমাদের দেশের পরিচালকেরা কি সব ধরনের ছবি দেশের সব প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিতে পারেন? আমি বুকিং পাওয়ার কথা বলছি না। বলছি, সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে সব প্রেক্ষাগৃহ কি সব ধরনের সিনেমা দেখাতে প্রস্তুত? এই প্রশ্নের বাইরে আরও প্রশ্ন রয়েছে। তাঁরা দেশের যেকোনো স্থানে চাইলেই কি স্বাধীনভাবে, সবার সহযোগিতা নিয়ে শুটিং করতে পারছেন? যাঁরা বিগত সরকারের আমলে শিল্পী হিসেবে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে অংশ নিয়েছেন, তাঁরা কি বিনোদনজগতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন না? যাঁরা বিগত সরকারের আমলে বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কি ওই আচরণ ঠিক ছিল? এমন নানাবিধ প্রশ্নের ভেতর দিয়েই আসলে আমাদের সংস্কারের পথে হাঁটতে হবে। এফডিসি বলি, আর তার বাইরে, সব ক্ষেত্রেই দখলদারত্বের মানসিকতা হটিয়ে দিয়ে শিল্পচর্চায় মনোযোগী হতে হবে। একজন শিল্পীর রাজনৈতিক আদর্শ থাকতেই পারে, সেটা যেন তাঁদের জীবন ও জীবিকায় বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। শিল্পের প্রশ্নে সবাই যেন এককাট্টা থাকে এবং শিল্পসৃজনে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না আসে। এই পরিবেশ নিশ্চিত করাই হবে প্রকৃত সংস্কার।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে যে চলচ্চিত্র কেন্দ্র নির্মাণের দাবি তোলা হচ্ছে, সেটার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া মানেই সংস্কারের পথে পা বাড়ানো। আমাদের যে চলচ্চিত্র বিদ্যালয়গুলো রয়েছে, সেগুলোতে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও যুগোপযোগী সিলেবাস ঠিক করার মধ্য দিয়েই আসলে সংস্কার সাধিত হবে। অভ্যুত্থানের পর চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক আদর্শকে গুরুত্ব না দিয়ে যোগ্যতার মাপকাঠিতে সদস্য নিয়োগ করা হলেই সংস্কারের উদ্যোগটি সফল হবে।
সংস্কার সবাই চায়। আমাদের চলচ্চিত্র বর্তমানে একটু একটু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়তে শুরু করেছে। এখনই সময় একটি কার্যকরী ফিল্ম কমিশন গঠন করে একে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। এসব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলীয় সরকারের জন্য ফেলে রাখার কোনো মানে হয় না।
প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাবনিকাশ করলেই অগ্রগতি আর অবনতির খতিয়ান পাওয়া যায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ২০২৪ সালের শেষপাদে এসে কী পেল, আর নতুন বছরে কী-ইবা পেতে যাচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করছে এ দেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের এগিয়ে যাওয়া। এ বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে দেড় দশকের পুরোনো ও স্বৈরাচারী শাসন বিদায় নিয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল সংস্কার হবে সর্বত্র। চলচ্চিত্র অঙ্গনের সংশ্লিষ্ট সবারই আশা ছিল, এবার পরিবর্তনের হাওয়া লাগবে চলচ্চিত্রের পালে। হাওয়া লেগেছিল ঠিকই, তবে সেই হাওয়া কি আমাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে?
এমনিতে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের ছবি একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, বিশেষ করে স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্র ও কিছু মিডল সিনেমা (সিনেমা মধ্যমা)। কিন্তু ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন বা এফডিসিকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র আসলে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে এক শাকিব খানের হিট ছবি ছাড়া আর কিছু প্রসব করতে পারেনি। তা-ও প্রতিবছরও সেটা হচ্ছিল না। কাজেই এফডিসিকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র যেমন ম্লান হয়ে গেছে এরই ভেতর, সে রকম সিঙ্গেল স্ক্রিনও ধীরে ধীরে হয়ে পড়ছে জৌলুশহীন। বিদেশি, বিশেষ করে হলিউডের ছবি আমদানির পাশাপাশি স্বাধীন নির্মাতাদের চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ মাল্টি স্ক্রিনের ব্যবসাকে চাঙা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে আরেকটা ব্যাপার গোপনে গোপনে ঘটে গেছে।
ব্যাপারটা হলো, এফডিসিকেন্দ্রিক সিনেমার শিল্পীরা কাজ করতে শুরু করেছেন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ছবিতে। বাংলাদেশে আপনি এফডিসি থেকে সহায়তা নিয়ে ছবি না বানালেও সেখানকার অনাপত্তিপত্র জোগাড় এবং সে জন্য পয়সা খরচ করতে হয়। বর্তমান সময়ে যাঁরা প্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র নির্মাতা, তাঁদের অনেকেই এফডিসির সহায়তা ছাড়া চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দিয়েছিলেন এবং অনাপত্তিপত্রের জন্য এফডিসির দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তখন কম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হননি তাঁরা। যেমন প্রায়ই বলা হতো, এরা বড় পর্দায় নাটক বানায়, এরা সিনেমা বানাতে পারে না ইত্যাদি। কিন্তু সময় পরিবর্তনের পর দেখা যাচ্ছে সেই তথাকথিত এফডিসিকেন্দ্রিক বাণিজ্যিক ছবির বড় বড় অভিনেতাই এখন সেদিনের স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ছবিতে কাজ করছেন। শাকিব খান, ডিপজল, রুবেল, জায়েদ খান প্রমুখদের দেখা যাচ্ছে এফডিসির বাইরে নির্মিত ছবিগুলোতে কাজ করতে।
ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে, বোঝা যাচ্ছে, বিগত এক যুগে একটা বড় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ছবি বিদেশের বিভিন্ন মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবেও আদৃত হচ্ছে। এমন একটি অবস্থার ভেতর ২০২৪ সালের আগস্টে ঘটে গেল ক্ষমতার পটপরিবর্তন। এই পরিবর্তনের পর যেহেতু সবাই সংস্কারের দাবি তুলল, চলচ্চিত্রের মানুষেরাও চাইলেন কিছু পরিবর্তন আসুক। তাঁরা ফিল্ম কমিশন চাইলেন, চলচ্চিত্র কেন্দ্র চাইলেন, চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কমিটিতে নতুন লোক চাইলেন। কমিটিতে নতুন লোক এল বটে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল কি পাওয়া গেল?
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই দাবিদাওয়া নিয়ে যাঁরা সোচ্চার ছিলেন, তাঁদের উৎসাহে ভাটা পড়তে শুরু করে। প্রথম দুই মাসে যত বৈঠক ও সমাবেশ হয়েছে, তা যেন ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে। সবাই যেন বুঝে যায়, সংস্কার চাইলেও সেটা রাতারাতি সম্ভব নয়। তা ছাড়া, চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া যেটা ছিল, সেন্সর সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করা, সেটা আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে অনেকেই এখন সন্দিহান। অর্থাৎ কোনো সিনেমা আটকে যাবে না, বয়স ও পরিপক্বতার ভিত্তিতে শুধু সীমানা নির্ধারণ হবে। কোনো ছবিকে যদি গ্রহণ বা বর্জন করতে হয়, সেটি করবে দর্শক। কোনো সরকারি সংস্থা নয়। তবে বাস্তবতা আমাদের অজানা নয়। বিগত সরকারের আমলে অন্য আদর্শের কোনো সিনেমা যেমন মুক্তি পায়নি, তেমনি এই সরকারের আমলে বিগত সরকারের আদর্শের ছবিও মুক্তি পাবে না। কাজেই চলচ্চিত্রের আসলে মুক্তি ঘটেনি। বাংলাদেশে আমরা সবকিছুর ঊর্ধ্বে আদর্শের কাঁচিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই, শিল্প বা চলচ্চিত্রকে নয়। অন্যান্য দেশে চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমা দেখানোর ক্ষেত্রে কোনো সেন্সর সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু আমাদের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও এই বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমা সাধারণত তৈরি করেন শিক্ষার্থীরা। নিজেদের টাকায় খুব কষ্ট করে তাঁরা সিনেমা বানান। তাঁদের সরকারি এই সনদ নেওয়ার নামে অর্থ ব্যয় করানো এবং লালফিতার দৌরাত্ম্য না দেখালে হয় না কি?
যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের রাজনৈতিক আদর্শের দ্বারা পরিচালিত হয় আমাদের আমলাতন্ত্র। তা ছাড়া, তারা শিল্পসাহিত্যের ব্যাপারে অতটা আগ্রহী নয়। কাজেই চলচ্চিত্র সব সময়ই রয়ে যায় গুরুত্বের সবচেয়ে তলানিতে। চলচ্চিত্র যেহেতু ব্যয়বহুল মাধ্যম, এর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বড় আকারে, তাই যতক্ষণ না পর্যন্ত নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে চলচ্চিত্রকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আসলে প্রকৃত সংস্কার হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। আমাদের অবকাঠামো আছে হয়তো কিছু। কিন্তু সেসব দিয়ে কি হবে, যদি ভেতরে কাজের কাজ কিছু না হয়? তা ছাড়া, সমাজে যদি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির উত্থান ঘটে, তাহলে তা চলচ্চিত্রের জন্য অশনিসংকেত। শুধু রাজধানী দিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করলে চলবে না, ঢাকার বাইরে চলচ্চিত্রের অবস্থা কেমন, সেটাও দেখতে হবে।
আমাদের দেশের পরিচালকেরা কি সব ধরনের ছবি দেশের সব প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিতে পারেন? আমি বুকিং পাওয়ার কথা বলছি না। বলছি, সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে সব প্রেক্ষাগৃহ কি সব ধরনের সিনেমা দেখাতে প্রস্তুত? এই প্রশ্নের বাইরে আরও প্রশ্ন রয়েছে। তাঁরা দেশের যেকোনো স্থানে চাইলেই কি স্বাধীনভাবে, সবার সহযোগিতা নিয়ে শুটিং করতে পারছেন? যাঁরা বিগত সরকারের আমলে শিল্পী হিসেবে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে অংশ নিয়েছেন, তাঁরা কি বিনোদনজগতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন না? যাঁরা বিগত সরকারের আমলে বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কি ওই আচরণ ঠিক ছিল? এমন নানাবিধ প্রশ্নের ভেতর দিয়েই আসলে আমাদের সংস্কারের পথে হাঁটতে হবে। এফডিসি বলি, আর তার বাইরে, সব ক্ষেত্রেই দখলদারত্বের মানসিকতা হটিয়ে দিয়ে শিল্পচর্চায় মনোযোগী হতে হবে। একজন শিল্পীর রাজনৈতিক আদর্শ থাকতেই পারে, সেটা যেন তাঁদের জীবন ও জীবিকায় বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। শিল্পের প্রশ্নে সবাই যেন এককাট্টা থাকে এবং শিল্পসৃজনে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না আসে। এই পরিবেশ নিশ্চিত করাই হবে প্রকৃত সংস্কার।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে যে চলচ্চিত্র কেন্দ্র নির্মাণের দাবি তোলা হচ্ছে, সেটার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া মানেই সংস্কারের পথে পা বাড়ানো। আমাদের যে চলচ্চিত্র বিদ্যালয়গুলো রয়েছে, সেগুলোতে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও যুগোপযোগী সিলেবাস ঠিক করার মধ্য দিয়েই আসলে সংস্কার সাধিত হবে। অভ্যুত্থানের পর চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক আদর্শকে গুরুত্ব না দিয়ে যোগ্যতার মাপকাঠিতে সদস্য নিয়োগ করা হলেই সংস্কারের উদ্যোগটি সফল হবে।
সংস্কার সবাই চায়। আমাদের চলচ্চিত্র বর্তমানে একটু একটু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়তে শুরু করেছে। এখনই সময় একটি কার্যকরী ফিল্ম কমিশন গঠন করে একে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। এসব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলীয় সরকারের জন্য ফেলে রাখার কোনো মানে হয় না।
দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো—আমাদের দেশে একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ। এর ভাবার্থ সহজবোধ্য। গোয়ালে বহুসংখ্যক গরুর মধ্যে দু-একটি দুষ্ট গরু থাকলে গোয়ালে নানা ঝামেলা হতে পারে। যে জন্য গোয়ালের পরিবেশ ভালো রাখতে গোয়ালকে দুষ্ট গরুশূন্য করতে চায় সবাই। দুষ্ট গরুর লক্ষণ কী? এ ধরনের গরু মনিবের শাসন মানতে চায়
১৮ ঘণ্টা আগেবিশ্বের মানচিত্রে ছোট্ট একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইতিমধ্যে বাংলাদেশের পরিচিতি বিশ্ববাসীর কাছে নানান কারণে গুরুত্বপূর্ণ। ভৌগোলিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কোনো দিক থেকেই এই দেশকে এখন অবহেলা করার অবকাশ নেই। এর অন্যতম যৌক্তিক কারণ হচ্ছে, এ দেশের বিপুলসংখ্যক কর্মক্ষম জনসংখ্যা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যেখানে চ
১৯ ঘণ্টা আগে‘বাংলাদেশের বাজারে ভেজাল পণ্যের প্রভাব এবং জনস্বাস্থ্যে এর ক্ষতিকর দিক’ নিয়ে সম্প্রতি ঢাকায় একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হলো। কিছু জানা তথ্য, কিছু অজানা তথ্য প্রকাশিত হলো এই সেমিনারে। ভেজাল পণ্য রোধ করার জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় যে সচেতনতা, সে কথাও ব্যক্ত করা হলো বারবার। এখানেই সবচেয়ে বড় গেরোটা রয়েছে। এই সচে
১৯ ঘণ্টা আগেবড়দিনের সপ্তাহ চলছে। গতকাল সারা বিশ্বেই পালিত হয়েছে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব। আমাদের দেশেও শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আনন্দের বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল বড়দিন। আমারও বেশ কয়েকবার সৌভাগ্য হয়েছে একবারে গ্রামে হাজার হাজার খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীর মাঝে বড়দিনের উৎসবে অংশ নেওয়ার। এর মধ্যে রয়েছে বরি
২ দিন আগে