সংবিধান সংস্কার

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের লক্ষ্য নিয়ে যে কমিশনগুলো গঠিত হয়েছিল, তার চারটি কমিশন গত বুধবার তাদের খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সংবিধান সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধানেরা এই দিন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তাঁদের প্রতিবেদনগুলো তুলে দেন। এই খসড়া প্রতিবেদনগুলোর মাধ্যমে এক অর্থে বৃহত্তর সংস্কারের পথে আলাপ-আলোচনার পথ খুলে গেল। আলোচনা-সমালোচনার পর গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের মাধ্যমে দেশ একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে এগোবে।

সংবিধান সংস্কার নিয়ে সবচেয়ে বেশি কৌতূহল ছিল সাধারণ মানুষের। যেটুকু জানা গেছে, কমিশনের সুপারিশে রয়েছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনি একই সঙ্গে সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না, অর্থবিল ছাড়া আর যেকোনো বিষয়ে দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন নিম্নকক্ষের সংসদ সদস্যরা, ২১ বছরেই সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার সুযোগ থাকবে।

সংবিধান সংস্কার কমিটির সুপারিশ মোটা দাগে এ রকম। তবে রাষ্ট্রের নাম ও মূলনীতিতে যে পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ বদলে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। নিশ্চয়ই এই পরিবর্তনের ব্যাপারে কমিশন কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে, কিন্তু ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ সাংবিধানিক নামটি পরিবর্তন করা কি খুব প্রয়োজন—এ রকম ভাবছেন কেউ কেউ। আর রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থেকে জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা আর সমাজতন্ত্রকে বাদ দেওয়া সুবিবেচনাপ্রসূত কি না, তা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। জাতীয়তাবাদ আর ধর্মনিরপেক্ষতাকে কেন ও কারা বিতর্কিত করে তুলেছে, সে বিশ্লেষণেও যাওয়া উচিত বলে মনে হয়।

আর এই তিনটি মূলনীতির জায়গায় যে নতুন মূলনীতির সুপারিশ হয়েছে, সেটাও বিভ্রান্তিকর। সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদের মধ্যে প্রথম তিনটি কেন আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হবে, সে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। যে সমাজে সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, সে সমাজে আলাদাভাবে মানবিক মর্যাদা আর সাম্যের কথা কেন থাকতে হবে? সামাজিক সুবিচার কি অন্য দুটি বিষয়কে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে না?

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাবটি সাধুবাদ পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে নিম্নকক্ষের পাশাপাশি উচ্চকক্ষের ক্ষমতা কতটুকু থাকবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া দরকার। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স আনার কথা ভাবা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দেখতে হবে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার পরিধি যেন জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাকে ছাপিয়ে না যায়। সংবিধানে পরিবর্তনের জন্য গণভোটের সুপারিশকে সাধুবাদ জানাতে হয়।

কমিশন তাদের খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে। এবার নিশ্চয়ই রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে খসড়া নিয়ে আলোচনা হবে। ভালো-মন্দ বিবেচনা করে সংবিধান সংস্কারের কাজটি এগিয়ে নিতে হবে। গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্রকে স্বৈরতন্ত্রে রূপান্তরিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া যাবে না, এটাই যদি সংস্কারের মূল কারণ হয়ে থাকে, তাহলে গণতান্ত্রিকভাবেই সংস্কার করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

টিউলিপ সিদ্দিকের পতন ঘটাতে বাংলাদেশি ও ব্রিটিশ রাজনীতির আঁতাত

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

প্রকাশ্যে এল সাইফকে ছুরিকাঘাত করা যুবকের ছবি, যা বলছে পুলিশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত