Ajker Patrika

সবচেয়ে বেশি অর্থ আসে নির্বাচনের বছরে

তাসনিম মহসিন, ঢাকা
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৩২
সবচেয়ে বেশি অর্থ আসে নির্বাচনের বছরে

যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক খাতে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা এসেছিল ২০১৪ সালে। ওই বছরই বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন ফরেন অ্যাসিস্ট্যান্ট বা বৈদেশিক সহায়তাবিষয়ক ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, সে বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে যত সহায়তা এসেছিল, তার ২৪ শতাংশই ছিল সামরিক খাতে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর বাংলাদেশকে সামরিক খাতে যেসব অনুদান দিয়েছে, তা কীভাবে ব্যয় হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে। এ জন্য ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে খরচের হিসাব যুক্তরাষ্ট্রকে জানাতে হবে। আর এখন থেকে এসব সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিও সই করতে হবে বাংলাদেশকে।

মার্কিন ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, ২০১৪ সালে ৩৪ কোটি ৩৯ লাখ ৬৮ হাজার ৩৮২ ডলার সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে সামরিক খাতের সহায়তা ছিল ৮ কোটি ২৫ লাখ ৫২ হাজার ৪১২ ডলার। যার টাকার অঙ্কে দাঁড়ায় ৬৫০ কোটি টাকার বেশি। তবে এই অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যায়নি। পাঁচ ভাগে আসা অর্থের মধ্যে তিন ভাগ দিয়েছে ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স (ডিওডি)

এরপর পৃষ্ঠা ২ কলাম ৫

এবং দুই ভাগ দেয় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এসব অর্থ মাদক প্রতিরোধ, সামরিক অর্থায়ন, আন্তর্জাতিক সামরিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা নিবন্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল।

বাংলাদেশের দশম জাতীয় নির্বাচন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বর্জন করে এবং প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিল। তবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার যুক্তি তুলে ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। এ নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় আওয়ামী লীগ ও এর শরিকেরা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি তাদের কিছু আইন সংশোধন করেছে, যাতে ব্যয় বিবরণী দাখিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখন থেকে সামরিক খাতে সহযোগিতা পেতে হলে ব্যয়ের হিসাব দিতেই হবে। তবে বিষয়টি নিয়মিত বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘যে হিসাব তারা চেয়েছে, তার সবই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে। তবে তারা যেহেতু চেয়েছে, আমরা তাদের হিসাব দেব। যে সব দেশে যুক্তরাষ্ট্র অনুদান দেয়, তাদের সবার কাছ থেকে হিসাব নেয় তারা। আর এ হিসাব চাওয়া দেশটির জনগণের চাহিদা। জনগণের করের টাকা খরচ করে, ফলে তার হিসাব দিতে হয়।’

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, দাতারা এখন প্রতি ৩ থেকে ৬ মাস পরপর তাঁদের দেওয়া অর্থের নিরীক্ষা করে থাকে। পশ্চিমা দাতারা একবারে পুরো অর্থ ছাড় করে না। প্রথম ছাড়ের পর নিরীক্ষা করেই পরবর্তী ভাগ ছাড় করে। তিনি বলেন, দাতারা যেহেতু তহবিল দেয়, কাজেই তাঁরা তহবিলের হিসাবও চাইতে পারে।

মার্কিন ফরেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ওয়েবসাইটে বাংলাদেশকে ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সহযোগিতার তথ্য দেওয়া রয়েছে। এ সময় বাংলাদেশকে সামরিক খাতে মোট ১৯ কোটি ১৬ লাখ ৯৫ হাজার ২০২ ডলার সহযোগিতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন ফরেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মোট ১৭ কোটি ৮৯ লাখ ৩৭ হাজার ৭০৯ ডলার সহযোগিতা দিয়েছে মার্কিনিরা।

মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি তথ্যানুযায়ী, ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৩ কোটি ৫৯ লাখ ৯৬ হাজার ২৩ ডলার অর্থ বাংলাদেশের সামরিক খাতে সহযোগিতা দিয়েছে দেশটি।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোন খাতে কত টাকা দেয় তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব রয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র যে অর্থ বাংলাদেশকে দেয় তা কোন খাতে বা কোন সংস্থাকে দিচ্ছে তা সুনির্দিষ্ট করে দেয়। আর প্রতিনিয়ত তারা তাদের দেওয়া তহবিলে চলা প্রকল্পগুলো ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এতে হিসাবের বাইরে কিছু নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত