বাজেট আওয়ামী লীগের ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়েছে: সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৪, ১৯: ১৬
Thumbnail image

দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং মানুষের জীবনযাত্রা সহজীকরণের উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে ইশতেহার ঘোষণা করেছিল, সেটি এই বাজেটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান।

আজ শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ–সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার, আমার ভুল না হলে-অধ্যায় ৩–এ স্পষ্টভাবে দুর্বৃত্তায়ন, করখেলাপি, ঋণখেলাপি ইত্যাদির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার (জিরো টলারেন্স) কথা বলা হয়েছে। এখন যেটা (বাজেট) দেওয়া হচ্ছে, এটা অবশ্যই সাংঘর্ষিক। আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল, যে ধরনের দর্শন নিয়ে চলে, তার সঙ্গে আমরা মনে করি, এটা একেবারেই বিপরীত।’ 

তিনি বলেন, ‘করখেলাপি, ঋণখেলাপি থেকে শুরু করে দেশ থেকে টাকা পাচার—এই যে বড় ধরনের দুষ্টচক্র বাংলাদেশের তৈরি হয়েছে, তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে প্রতিবছর কিছু সুবিধা দিয়ে অর্থনীতিতে এই টাকাটা নিয়ে আসার রাস্তায় যাব, না কি আমরা আওয়ামী লীগের ইশতেহারের ঘোষিত দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে জিহাদের দিকে যাব, এখানে একটা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার রয়েছে। আমরা দেখলাম, বাজেটে এটা কোন দিকে গেল, এটা খুবই দুঃখজনক।’

১৫ শতাংশ কর দিয়ে টাকা বৈধ করার সুযোগের সমালোচনা করে মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগে যেখানে একটু অস্পষ্টতা ছিল, যেমন ট্যাক্সের টাকা দিয়ে কালোটাকা সাদা করলেও দুদক তাদেরকে ধরতে পারত। এ রকম একটা আশঙ্কা ছিল। এবারে কিন্তু সেটাই একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্য কেউই এটা নিয়ে আর প্রশ্ন করতে পারবে না। এই লাইন যোগ করা হয়েছে বাজেটে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

নৈতিকভাবে এটা অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে সিপিডির এই ফেলো বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবেও এটা খুব ফলপ্রসূ নয়। বছরের পর বছর এই সুবিধা দিয়েও খুব বড় অঙ্কের টাকা আসছে, এমন নয়।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বাজেট বিশ্লেষণে বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রচণ্ড ধরনের চাপের মুখে রয়েছে। যার কারণে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল, সেখান থেকে আমরা অনেকখানি সরে আসায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নড়বড়ে হয়ে গেছে। অর্থনীতির প্রায় সবগুলো সূচকে ক্ষত দেখা দিয়েছে।’

বাজেটের দুটি বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যে তলানিতে যাচ্ছে, সেটা ঠেকানো। এই দুটি বিষয়ে নজর দিয়ে আস্তে আস্তে অন্য অর্থনৈতিক সূচকগুলো ঠিক করা যেত।’ 

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাজেটে এমন প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, যেগুলো বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। জিডিপি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা উচ্চাকাঙ্ক্ষা। এটা কোথায় থেকে আসবে?’ 

 ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের সমালোচনা করে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমাদের কাছে এই বাজেটকে একটি নতুন সরকারের নতুন বাজেট বলে মনে হয়নি। নতুন সরকারের একটা পুরোনো বাজেট মনে হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আরও সুস্পষ্ট করে যদি বলি, নতুন অর্থমন্ত্রী এবং একজন নতুন অর্থ প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে বাজেট প্রণয়নে আমরা যে ধরনের মুনশিয়ানা প্রত্যাশা করেছিলাম, সেটা দেখাতে নতুন চিফ এক্সিকিউটিভস, যাঁরা দায়িত্ব নিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের, তাঁরা দেখাতে পারেননি। এটা এক দিক থেকে জনগণের জন্য দুর্ভাগ্যের কারণ।’

সিপিডি বলছে, স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য ব্যয় সংকোচন প্রয়োজন। তবে এটা সাধারণ মানুষের ওপর যতটা চাপানো হচ্ছে, সরকারি ব্যয়ের পর এর প্রভাব পড়ছে না।

এ প্রসঙ্গে ড. মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সরকারের ব্যয় সংকোচনটা কবে হবে? একদিকে সাধারণ মানুষের ওপরে সংকোচনের চাপ, অন্যদিকে সরকারের সম্প্রসারিত বলছি না, কিছুটা সীমিত আকারের ব্যয়, এটি কখনোই অর্থনীতিকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট হবে না।’

এবারের বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্য–বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘এটা আপনারা দেখতে পাবেন, তাঁরা (সাধারণ মানুষ) যে সমস্ত পণ্য কেনেন, সেগুলোর অনেকগুলোর ওপরে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। নতুন পণ্য উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট আরোপ হয়েছে। অনেক সেবা, যেগুলো সাধারণ মানুষ নেন, সেগুলোর ওপর ভ্যাট হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি। এগুলো যোগ করলে পুরোটাই হচ্ছে খাদ্য–বহির্ভূত মূল্যস্ফীতির অংশ।’

তিনি বলেন, ‘এগুলো বিশ্লেষণ করে আমাদের কাছে মনে হয়, মূল্যস্ফীতি কমানো তো দূরে থাক, চরম মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে এই বাজেট।’

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, মুনতাসির কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত