উত্তরে তীব্র শীত, প্রাণ-প্রকৃতিতে স্থবিরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী এবং চুয়াডাঙ্গা ও পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১: ০২
তীব্র শীত। তাই বলে তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না। জমিতে না গেলে ক্ষতি হয়ে যাবে ফসলের। তাই তো শীত-কুয়াশা উপেক্ষা করে কাজে নেমে পড়েছেন এই কৃষক। গতকাল সকালে পঞ্চগড় সদরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ অগ্রহায়ণের শেষ দিন। হেমন্তকে বিদায় জানিয়ে কাল সোমবার আনুষ্ঠানিক আগমন ঘটবে শীতকালের। তবে শীতকালের প্রথম মাস পৌষ আসার বেশ আগেই এবার শীত চলে এসেছে। যদিও সূর্যের কিছুটা তেজ বাড়ায় রাজধানীতে দুদিন ধরে ঠান্ডার অনুভূতি একটু কম। তবে উল্টো চিত্র দেশের উত্তরাঞ্চলে। সেখানে শৈত্যপ্রবাহ আরও বিস্তার লাভ করেছে। ফলে তীব্র ঠান্ডায় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় প্রাণ-প্রকৃতিতে যেন স্থবিরতা নেমে এসেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত শুক্রবার থেকে দেশে এবারের শীত মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। আর তাতেই পঞ্চগড়সহ উত্তরের কিছু জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। শুক্রবার পঞ্চগড়, চুয়াডাঙ্গা ও রাজশাহীর ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলেও গতকাল শনিবার এটি যশোর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

শৈত্যপ্রবাহের প্রথম দিনে শুক্রবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গতকাল এখানে তাপমাত্রা একটু বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি। এ ছাড়া রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি এবং যশোরে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, চলমান শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী তিন দিনে সারা দেশে ঠান্ডার অনুভূতি সামান্য কমতে পারে।

উত্তরে প্রাণ-প্রকৃতিতে স্থবিরতা

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র বলেছে, ডিসেম্বরের শুরু থেকেই চুয়াডাঙ্গায় শীতের দাপট বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার মিলিয়ে তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৫ ডিগ্রি। হিমেল হাওয়া আর তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। গতকাল সকালে চুয়াডাঙ্গা শহর ও শহরতলির আশপাশে ঘুরে দেখা যায়, ঠান্ডায় সাধারণ মানুষের জবুথবু অবস্থা। বিভিন্ন স্থানে শীত নিবারণে আগুন জ্বেলে উষ্ণতা পাওয়ার চেষ্টা চলছে।

চুয়াডাঙ্গা সদরের কূলচারা গ্রামের কৃষক রজব আলী বলেন, ‘দুই বিঘা ভুট্টা আছে। সকালে মাঠে যাই প্রতিদিন, কিন্তু এই শীতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তারপরও ফসল বাঁচাতে হলে মাঠে যেতে তো হবেই।’ দিগড়ী গ্রামের কৃষক আতাহার মিয়া বলেন, ‘আমাদের চুয়াডাঙ্গায় তো শীত বেশি। আবার গরমের সময় গরমও বেশি।’

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, চুয়াডাঙ্গায় রোববার তাপমাত্রা আরও কমবে। ১৬ ডিসেম্বর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকবে।

দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ও তীব্র শীতে কাঁপছে। দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নমূল, খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষের। তীব্র ঠান্ডা থাকলেও গতকাল সকালে ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। পঞ্চগড় শহরের তুলাডাঙ্গা এলাকার কৃষক নাজমুল বলেন, ‘সকালে আর রাতে অতিরিক্ত ঠান্ডা। ঠান্ডায় হালচাষ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সকালে রোদ উঠলেও তাপ নেই।’ শহরের কায়েতপাড়া এলাকার পান দোকানদার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শীতের কারণে চলাফেরা মুশকিল হয়ে পড়েছে। দোকানে বসে থাকা যায় না। অতিরিক্ত কাপড়েও ঠান্ডা যাচ্ছে না।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক জিতেন্দ্র নাথ রায় বলেন, চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কমে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে।

জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলেন, পঞ্চগড়ে শীতার্ত মানুষের মধ্যে সরকারিভাবে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ শুরু হয়েছে।

এদিকে প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে রাজশাহীও। ভোগান্তিতে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে অনেকে। মানুষের ভিড় বেড়েছে ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকানগুলোয়। শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত নানা অসুখে। টানা শীত ও কুয়াশার কারণে রবিশস্যেরও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের উচ্চ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, রাজশাহীর আবহাওয়া আরও এক-দুদিন এমন থাকতে পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত