আবু তাহের খান
গত ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ কোটি ৫০ লাখ প্রবাসী কর্তৃক প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার দেশে পাঠানোর সুবাদে বাংলাদেশের পক্ষে এই অর্জন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। এটি তো এখন প্রায় সবারই জানা, প্রবাসী আয়ই হচ্ছে বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতের পর বাংলাদেশের বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী খাত।
আর তৈরি পোশাক খাতের বস্ত্র আমদানি ব্যয় বাদ দিয়ে নিট রপ্তানির পরিমাণ হিসাব করলে প্রকৃতপক্ষে প্রবাসী আয়ই হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের বৃহত্তম উৎস। সুতরাং এই খাতের বিস্তৃততর অবদান দেখে আনন্দিত হওয়ার যথেষ্টই কারণ রয়েছে। কিন্তু এ-সংক্রান্ত সামগ্রিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও তুলনামূলক তথ্য সামনে আনলে সেই আনন্দের অনেকটাই ফিকে হয়ে যায় বৈকি!
সে তথ্যই তাহলে এখানে সামনে আনা যাক। বছরে ৪ হাজার কোটি ডলার দেশে পাঠিয়ে প্রবাসী আয়ে ফিলিপাইনের অবস্থান চতুর্থ এবং এই পরিমাণ আয় দেশে পাঠাচ্ছেন মাত্র ২০ লাখ ফিলিপাইনি মিলে। এর পাশাপাশি ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার আয় করে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে সপ্তম, যা মোট ১ কোটি ৫০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির আয়ের ফসল। এখানে লক্ষণীয় হচ্ছে, দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি মিলে বছরে যে পরিমাণ আয় করছেন, মাত্র ২০ লাখ ফিলিপাইনি (বাংলাদেশের এক-অষ্টমাংশ) মিলে আয় করছেন তার প্রায় দ্বিগুণ।
প্রশ্ন হচ্ছে, একই সময়ে এবং মোটামুটি একই দেশগুলোতে কাজ করে একজন ফিলিপাইনি কর্মী যখন একজন বাংলাদেশি কর্মীর তুলনায় ১৩ গুণ বেশি আয় করেন, তখন এর বিপরীতে একজন প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীর বার্ষিক উপার্জনের পরিমাণটি কেমন জবুথবু দেখায় নাকি? কিন্তু কেন এই বিশাল তফাত? জবাবটি খুবই স্পষ্ট—যিনি যাঁর দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করছেন এবং বেতন-ভাতাদিও সে অনুযায়ীই পাচ্ছেন।
আর এরই নিট ফলাফল হচ্ছে এটি এবং এই অবস্থা প্রায় ৫০ বছর ধরেই চলছে। বৈদেশিক মুদ্রার উপার্জন বাড়ানোর লক্ষ্যে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য সরকার এত এত প্রণোদনা, নগদ সহায়তা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে, অথচ বিদেশে কর্মী পাঠানোর আগে তাঁকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলার ব্যাপারে বলতে গেলে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগই নেই। এ ব্যাপারে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় যত ব্যাখ্যাই দিক না কেন, মোদ্দাকথা হলো, কাজটি প্রয়োজন অনুযায়ী হচ্ছে না; অর্থাৎ যেসব কাজ করে এবং যে পর্যায়ের দক্ষতা ও যোগ্যতার কারণে একজন ফিলিপাইনি প্রবাসী কর্মী একজন বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীর চেয়ে ১৩ গুণ বেশি উপার্জন করছেন, সেই সব ক্ষেত্র বাছাই করে, সেই স্তরের দক্ষতা ও যোগ্যতাটুকু বাংলাদেশ তার কর্মীদের আজও এনে দিতে পারেনি।
এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হয়তো বলবে, আমাদের কর্মীরা কষ্ট করে এসব শিখতে চান না। এ ধরনের বক্তব্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। জীবিকা তথা পেটের তাগিদ এমনই নিরন্তর যে এ জন্য মানুষ যেকোনো ত্যাগ স্বীকারেও কুণ্ঠা বোধ করে না। ফলে কাজের জন্য বিদেশে যেতে চাওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট ট্রেডে ও মানে দক্ষতা অর্জনকে যদি বাধ্যতামূলক করা যায়, তাহলে জীবিকার প্রয়োজনে এখন তিনি যেমন ঘটিবাটি বিক্রি করে হলেও বাইরে যেতে চান, তখন একই প্রয়োজনে তিনি প্রশিক্ষণের জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতেও বিন্দুমাত্র অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন না।
কিন্তু আদম ব্যবসায়ীদের দেখানো শর্টকাট পথেই হাঁটছেন আমাদের নীতিনির্ধারকেরা। প্রায় কোনো লেখাপড়া না জানা কিংবা সামান্য জানা এবং কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতাবিহীন তরুণ-যুবাদের বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে কৃষিশ্রমিক, নির্মাণশ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, গৃহকর্মী ইত্যাদি হিসেবে।
অন্যদিকে ফিলিপাইন তার কর্মীদের পাঠাচ্ছে শিল্প-কারখানা ও জাহাজের প্রকৌশলী ও মেকানিক, হাসপাতাল ও চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যকর্মী ও নার্স, শিক্ষক, বিলাসবহুল হোটেলের কর্মী ও পাচক, বিদেশি ভাষা জানা পরিচর্যাকারী ইত্যাদি হিসেবে। এ ধরনের পেশায় বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদেরও ব্যাপক সংখ্যায় গড়ে তোলা সম্ভব।
কিন্তু দুর্ভাগ্য ও হতাশার বিষয় হলো, বৈশ্বিক কর্মবাজারের চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কারিগরি শিক্ষার পথে আমরা হাঁটছি না। আমরা এগোচ্ছি লাখ লাখ বেকার সৃষ্টির শত শত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দিকে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশেরই কোনো মান নেই। আর সেই সব মানহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে তাঁরা দেশে কোনো কাজ তো পাচ্ছেনই না, বিদেশে গিয়েও সনদসর্বস্ব শিক্ষা তাঁর কোনো উপকারে আসছে না।
ওই যে লাখ লাখ তরুণ ইদানীং শ্রাবণের স্রোতের মতো বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন, ওখানে গিয়ে তাঁরা কী করছেন বা কোন পেশায় যুক্ত হচ্ছেন, সে-সংক্রান্ত কোনো তথ্য কি কোনো রাষ্ট্রীয় বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে আছে? থাকলে বোঝা যেত, এসব সনদ বিদেশের বাজারে কোনো কাজে আসছে কি না। তবে সে তথ্য না থাকলেও কর্মীর তুলনায় রেমিট্যান্সের পরিমাণ দেখে বোঝা যায়, তাঁদের উপার্জন সনদের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়; অর্থাৎ ওই সব সনদ বিদেশের মাটিতেও কোনো কাজে আসছে না।
এমনি পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিপুল সংখ্যার বিপরীতে অন্য দেশের তুলনায় অতিনগণ্য পরিমাণ উপার্জনের বিষয়টি সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট সবার বিবেচনার জন্য কয়েকটি প্রস্তাব এখানে তুলে ধরা হলো। ১. বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিসহ যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমুদ্রপ্রকৌশল ও তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, তাদের সেই সব শিক্ষাক্রমকে বৈশ্বিক চাহিদা ও মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ঢেলে সাজাতে হবে এবং এসব শিক্ষাদান কার্যক্রমের তাত্ত্বিক অংশের সঙ্গে হাতেকলমের শিক্ষাকে আরও অধিক মাত্রায় যোগ করতে হবে।
সেই সঙ্গে বাড়াতে হবে অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী সক্ষমতাও। ২. বিদ্যমান নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোতে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাকে বর্ধিত গুরুত্ব দিতে হবে; বিশেষ করে এ পেশায় চাকরি পাওয়ার জন্য যাঁরা বিদেশে যেতে চান, তাঁদের জন্য ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
তদুপরি নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোতে ইংরেজি ভাষাভিত্তিক হাউস গভর্ন্যান্স বা কেয়ার গিভার (পরিচর্যাসেবা) বিষয়ক কোর্স চালু করতে হবে। ৩. তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের স্নাতকদের জন্য জাপানে উচ্চ বেতনে কাজ পাওয়ার যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তাকে কাজে লাগানোর জন্য মানসম্মত উপায়ে জাপানি ভাষা শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ করতে হবে। ৪. কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সনাতনী ট্রেডের পরিবর্তে বিশ্ববাজারের চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নতুন ট্রেড প্রবর্তন করতে হবে এবং সেগুলো মানসম্মতভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ৫. সর্বোপরি বিদেশে কর্মী পাঠানোর বিষয়টিকে আদম ব্যবসায়ীদের হীন আচরণ ও খপ্পর থেকে মুক্ত করতে হবে।
উল্লিখিত সুপারিশের বাইরে আরও বহুসংখ্যক সুপারিশ যুক্ত হতে পারে। কিন্তু তার চেয়েও অধিক জরুরি হচ্ছে, এই সব প্রয়োজন পূরণ করার কোনো সদিচ্ছা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া এবং সেই লক্ষ্যে উপরোল্লিখিত ৫ নম্বর সুপারিশ অনুযায়ী জনশক্তি রপ্তানি-সংক্রান্ত কার্যক্রমকে আদম ব্যবসায়ীদের হাত থেকে মুক্ত করা, যার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা খুবই জরুরি।
কিন্তু সেইরূপ সদিচ্ছা প্রদর্শনের মতো রাজনৈতিক বাস্তবতা কি দেশে আছে? বিত্তবান রপ্তানিকারকদের প্রণোদনা, নগদ ভর্তুকি, নিম্ন সুদের ঋণ, ঋণ ও সুদমুক্তি, করমুক্তি ইত্যাদি নানা সুযোগ-সুবিধা দিতে গিয়ে রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক কম অর্থ বিনিয়োগ করে লাখ লাখ তরুণকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে বিদেশে কর্মী হিসেবে পাঠানো সম্ভব। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আমাদের নীতিনির্ধারক ও সিদ্ধান্ত প্রণেতারা কি সেটি করতে সম্মত হবেন, যা করলে বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মীরাও ফিলিপাইনের সমপর্যায়ের না হোক, কাছাকাছি পর্যায়ের মজুরি লাভের মধ্য দিয়ে নিজ দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর কাজটিকে বহুলাংশে বাড়িয়ে তুলতে পারবেন?
আবু তাহের খান, সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
গত ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ কোটি ৫০ লাখ প্রবাসী কর্তৃক প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার দেশে পাঠানোর সুবাদে বাংলাদেশের পক্ষে এই অর্জন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। এটি তো এখন প্রায় সবারই জানা, প্রবাসী আয়ই হচ্ছে বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতের পর বাংলাদেশের বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী খাত।
আর তৈরি পোশাক খাতের বস্ত্র আমদানি ব্যয় বাদ দিয়ে নিট রপ্তানির পরিমাণ হিসাব করলে প্রকৃতপক্ষে প্রবাসী আয়ই হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের বৃহত্তম উৎস। সুতরাং এই খাতের বিস্তৃততর অবদান দেখে আনন্দিত হওয়ার যথেষ্টই কারণ রয়েছে। কিন্তু এ-সংক্রান্ত সামগ্রিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও তুলনামূলক তথ্য সামনে আনলে সেই আনন্দের অনেকটাই ফিকে হয়ে যায় বৈকি!
সে তথ্যই তাহলে এখানে সামনে আনা যাক। বছরে ৪ হাজার কোটি ডলার দেশে পাঠিয়ে প্রবাসী আয়ে ফিলিপাইনের অবস্থান চতুর্থ এবং এই পরিমাণ আয় দেশে পাঠাচ্ছেন মাত্র ২০ লাখ ফিলিপাইনি মিলে। এর পাশাপাশি ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার আয় করে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে সপ্তম, যা মোট ১ কোটি ৫০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির আয়ের ফসল। এখানে লক্ষণীয় হচ্ছে, দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি মিলে বছরে যে পরিমাণ আয় করছেন, মাত্র ২০ লাখ ফিলিপাইনি (বাংলাদেশের এক-অষ্টমাংশ) মিলে আয় করছেন তার প্রায় দ্বিগুণ।
প্রশ্ন হচ্ছে, একই সময়ে এবং মোটামুটি একই দেশগুলোতে কাজ করে একজন ফিলিপাইনি কর্মী যখন একজন বাংলাদেশি কর্মীর তুলনায় ১৩ গুণ বেশি আয় করেন, তখন এর বিপরীতে একজন প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীর বার্ষিক উপার্জনের পরিমাণটি কেমন জবুথবু দেখায় নাকি? কিন্তু কেন এই বিশাল তফাত? জবাবটি খুবই স্পষ্ট—যিনি যাঁর দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করছেন এবং বেতন-ভাতাদিও সে অনুযায়ীই পাচ্ছেন।
আর এরই নিট ফলাফল হচ্ছে এটি এবং এই অবস্থা প্রায় ৫০ বছর ধরেই চলছে। বৈদেশিক মুদ্রার উপার্জন বাড়ানোর লক্ষ্যে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য সরকার এত এত প্রণোদনা, নগদ সহায়তা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে, অথচ বিদেশে কর্মী পাঠানোর আগে তাঁকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলার ব্যাপারে বলতে গেলে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগই নেই। এ ব্যাপারে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় যত ব্যাখ্যাই দিক না কেন, মোদ্দাকথা হলো, কাজটি প্রয়োজন অনুযায়ী হচ্ছে না; অর্থাৎ যেসব কাজ করে এবং যে পর্যায়ের দক্ষতা ও যোগ্যতার কারণে একজন ফিলিপাইনি প্রবাসী কর্মী একজন বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীর চেয়ে ১৩ গুণ বেশি উপার্জন করছেন, সেই সব ক্ষেত্র বাছাই করে, সেই স্তরের দক্ষতা ও যোগ্যতাটুকু বাংলাদেশ তার কর্মীদের আজও এনে দিতে পারেনি।
এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হয়তো বলবে, আমাদের কর্মীরা কষ্ট করে এসব শিখতে চান না। এ ধরনের বক্তব্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। জীবিকা তথা পেটের তাগিদ এমনই নিরন্তর যে এ জন্য মানুষ যেকোনো ত্যাগ স্বীকারেও কুণ্ঠা বোধ করে না। ফলে কাজের জন্য বিদেশে যেতে চাওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট ট্রেডে ও মানে দক্ষতা অর্জনকে যদি বাধ্যতামূলক করা যায়, তাহলে জীবিকার প্রয়োজনে এখন তিনি যেমন ঘটিবাটি বিক্রি করে হলেও বাইরে যেতে চান, তখন একই প্রয়োজনে তিনি প্রশিক্ষণের জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতেও বিন্দুমাত্র অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন না।
কিন্তু আদম ব্যবসায়ীদের দেখানো শর্টকাট পথেই হাঁটছেন আমাদের নীতিনির্ধারকেরা। প্রায় কোনো লেখাপড়া না জানা কিংবা সামান্য জানা এবং কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতাবিহীন তরুণ-যুবাদের বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে কৃষিশ্রমিক, নির্মাণশ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, গৃহকর্মী ইত্যাদি হিসেবে।
অন্যদিকে ফিলিপাইন তার কর্মীদের পাঠাচ্ছে শিল্প-কারখানা ও জাহাজের প্রকৌশলী ও মেকানিক, হাসপাতাল ও চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যকর্মী ও নার্স, শিক্ষক, বিলাসবহুল হোটেলের কর্মী ও পাচক, বিদেশি ভাষা জানা পরিচর্যাকারী ইত্যাদি হিসেবে। এ ধরনের পেশায় বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদেরও ব্যাপক সংখ্যায় গড়ে তোলা সম্ভব।
কিন্তু দুর্ভাগ্য ও হতাশার বিষয় হলো, বৈশ্বিক কর্মবাজারের চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কারিগরি শিক্ষার পথে আমরা হাঁটছি না। আমরা এগোচ্ছি লাখ লাখ বেকার সৃষ্টির শত শত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দিকে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশেরই কোনো মান নেই। আর সেই সব মানহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে তাঁরা দেশে কোনো কাজ তো পাচ্ছেনই না, বিদেশে গিয়েও সনদসর্বস্ব শিক্ষা তাঁর কোনো উপকারে আসছে না।
ওই যে লাখ লাখ তরুণ ইদানীং শ্রাবণের স্রোতের মতো বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন, ওখানে গিয়ে তাঁরা কী করছেন বা কোন পেশায় যুক্ত হচ্ছেন, সে-সংক্রান্ত কোনো তথ্য কি কোনো রাষ্ট্রীয় বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে আছে? থাকলে বোঝা যেত, এসব সনদ বিদেশের বাজারে কোনো কাজে আসছে কি না। তবে সে তথ্য না থাকলেও কর্মীর তুলনায় রেমিট্যান্সের পরিমাণ দেখে বোঝা যায়, তাঁদের উপার্জন সনদের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়; অর্থাৎ ওই সব সনদ বিদেশের মাটিতেও কোনো কাজে আসছে না।
এমনি পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিপুল সংখ্যার বিপরীতে অন্য দেশের তুলনায় অতিনগণ্য পরিমাণ উপার্জনের বিষয়টি সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট সবার বিবেচনার জন্য কয়েকটি প্রস্তাব এখানে তুলে ধরা হলো। ১. বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিসহ যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমুদ্রপ্রকৌশল ও তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, তাদের সেই সব শিক্ষাক্রমকে বৈশ্বিক চাহিদা ও মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ঢেলে সাজাতে হবে এবং এসব শিক্ষাদান কার্যক্রমের তাত্ত্বিক অংশের সঙ্গে হাতেকলমের শিক্ষাকে আরও অধিক মাত্রায় যোগ করতে হবে।
সেই সঙ্গে বাড়াতে হবে অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী সক্ষমতাও। ২. বিদ্যমান নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোতে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাকে বর্ধিত গুরুত্ব দিতে হবে; বিশেষ করে এ পেশায় চাকরি পাওয়ার জন্য যাঁরা বিদেশে যেতে চান, তাঁদের জন্য ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
তদুপরি নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোতে ইংরেজি ভাষাভিত্তিক হাউস গভর্ন্যান্স বা কেয়ার গিভার (পরিচর্যাসেবা) বিষয়ক কোর্স চালু করতে হবে। ৩. তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের স্নাতকদের জন্য জাপানে উচ্চ বেতনে কাজ পাওয়ার যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তাকে কাজে লাগানোর জন্য মানসম্মত উপায়ে জাপানি ভাষা শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ করতে হবে। ৪. কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সনাতনী ট্রেডের পরিবর্তে বিশ্ববাজারের চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নতুন ট্রেড প্রবর্তন করতে হবে এবং সেগুলো মানসম্মতভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ৫. সর্বোপরি বিদেশে কর্মী পাঠানোর বিষয়টিকে আদম ব্যবসায়ীদের হীন আচরণ ও খপ্পর থেকে মুক্ত করতে হবে।
উল্লিখিত সুপারিশের বাইরে আরও বহুসংখ্যক সুপারিশ যুক্ত হতে পারে। কিন্তু তার চেয়েও অধিক জরুরি হচ্ছে, এই সব প্রয়োজন পূরণ করার কোনো সদিচ্ছা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া এবং সেই লক্ষ্যে উপরোল্লিখিত ৫ নম্বর সুপারিশ অনুযায়ী জনশক্তি রপ্তানি-সংক্রান্ত কার্যক্রমকে আদম ব্যবসায়ীদের হাত থেকে মুক্ত করা, যার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা খুবই জরুরি।
কিন্তু সেইরূপ সদিচ্ছা প্রদর্শনের মতো রাজনৈতিক বাস্তবতা কি দেশে আছে? বিত্তবান রপ্তানিকারকদের প্রণোদনা, নগদ ভর্তুকি, নিম্ন সুদের ঋণ, ঋণ ও সুদমুক্তি, করমুক্তি ইত্যাদি নানা সুযোগ-সুবিধা দিতে গিয়ে রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক কম অর্থ বিনিয়োগ করে লাখ লাখ তরুণকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে বিদেশে কর্মী হিসেবে পাঠানো সম্ভব। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আমাদের নীতিনির্ধারক ও সিদ্ধান্ত প্রণেতারা কি সেটি করতে সম্মত হবেন, যা করলে বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মীরাও ফিলিপাইনের সমপর্যায়ের না হোক, কাছাকাছি পর্যায়ের মজুরি লাভের মধ্য দিয়ে নিজ দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর কাজটিকে বহুলাংশে বাড়িয়ে তুলতে পারবেন?
আবু তাহের খান, সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে