সাইফুল মাসুম, ঢাকা
একটি গরুর দাম কোটি টাকা এবং একটি ছাগলের দাম ১৫ লাখ টাকা হাঁকিয়ে সম্প্রতি বেশ আলোচনায় এসেছেন সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন। শুধু দাম হাঁকিয়ে থামেননি, ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায় ব্রাহমা জাতের তিনটি গরু বিক্রিও করেছেন। পরে জানা যায়, ‘উচ্চবংশীয়’ তকমা দেওয়া ব্রাহমা জাতের এসব গরু দেশে আনা থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত পদে পদে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান হোসেন ব্রাহমা জাতের যে গরুগুলো এবার কোরবানির ঈদে বিক্রির বাজারে তোলেন, সেগুলো ছিল মূলত আমদানির পর জব্দ হওয়া গরু। কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসব গরু আমদানি করেছিলেন তিনি নিজেই। জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ায় সরকার গরুগুলো জব্দ করে। সাভারে প্রাণিসম্পদের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে জব্দ থাকা এসব ব্রাহমা জাতের গরু পরে নামমাত্র মূল্যে নিলামে কিনে নেন ইমরান। শর্ত ছিল, গরুগুলো জবাই করে রমজানে সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রি করবেন। মাংস তিনি ঠিকই বিক্রি করেছেন, তবে অন্য গরুর। কৌশলে ব্রাহমা জাতের গরুগুলো নিজের কাছে রেখে দেন চতুর এই খামারি। সেখান থেকে একটি গরু এপ্রিল মাসে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে অনুষ্ঠিত প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী মেলায় প্রদর্শনও করেন তিনি। তখন উচ্চবংশীয় তকমা দিয়ে ব্রাহমা জাতের ওই গরুর কোটি টাকা দাম হাঁকিয়ে বেশ আলোচিতও হন।
তখন ইমরান হোসেন বলেছিলেন, ‘গরুটার দাম এক কোটি চাওয়া হচ্ছে, এটার অনেক কারণ আছে। এই গরুটার ১১০ বছরের পেডিগ্রি (বংশপরম্পরা) আছে। আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে, এই গরুটার বাবা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন ব্লাড লাইন। ফলে গরুটা বংশমর্যাদাপূর্ণ হওয়ায় দাম বেশি।’
কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের তথ্য অনুসারে, ব্রাহমা জাতের এই গরু নিলামে প্রতি কেজি মাত্র ২৮০ টাকা দামে কিনেছিলেন ইমরান। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) নামে এসব গরু কেনেন বর্তমানে বিডিএফএর সভাপতির দায়িত্বে থাকা ইমরান। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নির্দেশনায় প্রতিযোগিতাহীন নিলামে গরুগুলো ইমরানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। প্রতি কেজি ২৮০ টাকা দাম ধরে হিসাব করলে কোটি টাকা দাম চাওয়া ১ হাজার ৩০০ কেজি ওজনের ব্রাহমা গরুটি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বিক্রি করেছে মাত্র ৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকায়।
জব্দ করা ব্রাহমা গরু নিয়ে আদালতের নির্দেশনা ছিল মাংস হিসেবে ব্যবহার করার। অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি প্রাণিসম্পদের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার থেকে ওই ব্রাহমা গরু কেনার পর তা মাংস হিসেবে বিক্রি না করে খামারিদের কাছে কয়েক লাখ টাকার সিমেন বিক্রি করেছেন ইমরান।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের (সাভার) পরিচালক ডা. মো. মনিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্রাহমা জাতের ১৫টি গরু রমজানের আগে নিলামে বিক্রি করা হয়েছিল। ওটা জবাই হয়েছে কি না, আমাদের জানা নেই। সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রির জন্য দেওয়া হয়েছিল। এটায় কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ছিল না।’
কোটি টাকা দাম হাঁকানো ব্রাহমা গরুটির গায়ে ‘৯৬২’ নম্বর দেওয়া রয়েছে। ইমরান হোসেন দাবি করেছেন, গরুটি মি. ভি-৮ নোভাল ৯৬২/৭ রেঞ্জের। কিন্তু ভি-৮ রেঞ্জের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একই নম্বরের গরুর দেখা মিললেও গরুর উচ্চতা, গায়ের রঙের কোনো মিল নেই। ওয়েবসাইটে থাকা গরুটির মায়ের ছবি পাওয়া গেলেও বাবার ছবি পাওয়া যায়নি। দাদার সম্পর্কেও কোনো তথ্য নেই। ফলে বংশমর্যাদার খোঁজটাও মেলে না।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেভাবে আসে নিষিদ্ধ ব্রাহমা
২০১৬ সালে আমেরিকান ব্রাহমা গরু আমদানি নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু ২০২১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে টার্কিশ এয়ারলাইনসে করে ১৮টি ব্রাহমা গরু দেশে আনে সাদিক অ্যাগ্রো। এগুলোর মধ্যে একটি গরু আকাশপথেই মারা যায়। গরু আমদানির বৈধ কাগজ উপস্থাপন করতে পারেননি সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন। সে সময় সাদিক অ্যাগ্রো তিনটি জাল নথি জমা দিয়েছিল। নথিগুলো হলো গবাদিপশু আমদানি-সংক্রান্ত একটি নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণী কোয়ারেন্টাইন বিভাগের কাছ থেকে একটি চিঠি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গবাদিপশু আমদানির অনুমতিপত্র, যার প্রতিটিকেই জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন তখনকার শুল্ক কর্মকর্তারা।
আমদানিকারকের জমা দেওয়া তিনটি কাগজেই স্বাক্ষরকারীর নামের জায়গায় লেখা ছিল ‘মোহাম্মদ ওমর ফারুক’ নামে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার নাম। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রাণিসম্পদ কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে পশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ ওমর ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাদিক অ্যাগ্রোর কোনো কাগজে আমি সই করিনি। তারা প্রতারণার মাধ্যমে ওই কাগজ তৈরি করেছিল।’
জাল নথি দিয়ে গরু আনার ওই ঘটনায় তখন মামলা হয়। আদালতের রায় আসে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষে। ফলে ওই ১৭টি ব্রাহমা গরু বাজেয়াপ্ত করে রাখা হয় কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে।
জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাদিক অ্যাগ্রো অবৈধ উপায়ে ব্রাহমা গরু এনেছিল। তখন মামলায় হেরে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যে গরুগুলো দিয়েছিলাম। সরল বিশ্বাস পুঁজি করে কেউ প্রতারণা করলে আমরা ব্যথিত। এ বিষয়ে খোঁজ নেব আর ভবিষ্যতে তার ব্যাপারে সতর্ক থাকব।’
ছাগল নিয়ে হইচই
কোরবানির ঈদের আগে ব্রিটল জাতের একটি খাসি ছাগল নিয়ে আরেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান। তিনি পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি উচ্চতার খাসিটির দাম হাঁকান ১৫ লাখ টাকা। এই দামে ছাগলটি কিনেও নেন কাস্টমস কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে সাদিক অ্যাগ্রো। তাতেই বাধে লঙ্কাকাণ্ড। ইফাতের বাবার অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে গণমাধ্যম একের পর এক সংবাদ প্রকাশ করতে থাকে। জল ঘোলা হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ছাগলটি ইমরানের খামারেই রয়ে যায়।
শুক্রবার মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ হাউজিংয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে দিয়ে দেখা যায়, ১৮২ কেজি ওজনের ছাগলটিকে একটি লোহার খাঁচায় রাখা হয়েছে। খামারের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ শরীফ জানান, ঈদের আগে যশোরের একটি হাট থেকে কিনেছেন তাঁরা। এটা পাঞ্জাবের একটি জাত। দামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এত বড় ছাগল হয় না। আমরা দাম দিয়ে কিনে এনেছি। তাই বেশি দামে বিক্রি করব।’
খাল দখলের অভিযোগ
সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাতমসজিদ হাউজিং এলাকায় রামচন্দ্রপুর খাল দখলের অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, খালের একাংশে মাটি ভরাট করে খামার গড়েছেন তিনি। আর খামারের সব ময়লা ফেলছেন খালের মধ্যে।
সাতমসজিদ হাউজিং অংশের রামচন্দ্রপুর খালের ওপর গড়ে ওঠা সাদিক অ্যাগ্রোসহ অন্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নিতে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছেন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ। আজ বৃহস্পতিবার এই খাল উদ্ধারে অভিযান চালানোর কথা রয়েছে ডিএনসিসির।
আরও যত প্রতারণা
গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীতে আড়াই কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি ইমরান হোসেনের। প্রদর্শনীতে স্টল বরাদ্দের মাধ্যমে অন্য খামারিদের কাছ থেকে এই টাকা উঠিয়েও নিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রদর্শনী আয়োজনে প্রতিশ্রুত কোনো টাকাই ইমরান দেননি।
ইমরানের এসব প্রতারণায় ক্ষুব্ধ খামারিরা। মোহাম্মদপুরের বুড়িগঙ্গা অ্যাগ্রোর মালিক ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সায়েম শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইমরানের প্রতারণার কারণে খামারিদের প্রতি মানুষের বিশ্বাসের জায়গা নষ্ট হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে সে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরু এনে বিমানবন্দরে ধরা পড়েন। সে সময় জালিয়াতির পরেও কোনো শাস্তি না হওয়ায় তাঁর সাহস বেড়ে গেছে।’
সার্বিক বিষয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনকে পাঁচ দিন ধরে অন্তত ২০ বার কল দেওয়া হয়েছে। একাধিকবার মেসেজ দেওয়া হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ সিন করলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। মোহাম্মদপুরে সাদিক অ্যাগ্রোর কার্যালয়ে গিয়েও তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি।
একটি গরুর দাম কোটি টাকা এবং একটি ছাগলের দাম ১৫ লাখ টাকা হাঁকিয়ে সম্প্রতি বেশ আলোচনায় এসেছেন সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন। শুধু দাম হাঁকিয়ে থামেননি, ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায় ব্রাহমা জাতের তিনটি গরু বিক্রিও করেছেন। পরে জানা যায়, ‘উচ্চবংশীয়’ তকমা দেওয়া ব্রাহমা জাতের এসব গরু দেশে আনা থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত পদে পদে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান হোসেন ব্রাহমা জাতের যে গরুগুলো এবার কোরবানির ঈদে বিক্রির বাজারে তোলেন, সেগুলো ছিল মূলত আমদানির পর জব্দ হওয়া গরু। কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসব গরু আমদানি করেছিলেন তিনি নিজেই। জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ায় সরকার গরুগুলো জব্দ করে। সাভারে প্রাণিসম্পদের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে জব্দ থাকা এসব ব্রাহমা জাতের গরু পরে নামমাত্র মূল্যে নিলামে কিনে নেন ইমরান। শর্ত ছিল, গরুগুলো জবাই করে রমজানে সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রি করবেন। মাংস তিনি ঠিকই বিক্রি করেছেন, তবে অন্য গরুর। কৌশলে ব্রাহমা জাতের গরুগুলো নিজের কাছে রেখে দেন চতুর এই খামারি। সেখান থেকে একটি গরু এপ্রিল মাসে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে অনুষ্ঠিত প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী মেলায় প্রদর্শনও করেন তিনি। তখন উচ্চবংশীয় তকমা দিয়ে ব্রাহমা জাতের ওই গরুর কোটি টাকা দাম হাঁকিয়ে বেশ আলোচিতও হন।
তখন ইমরান হোসেন বলেছিলেন, ‘গরুটার দাম এক কোটি চাওয়া হচ্ছে, এটার অনেক কারণ আছে। এই গরুটার ১১০ বছরের পেডিগ্রি (বংশপরম্পরা) আছে। আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে, এই গরুটার বাবা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন ব্লাড লাইন। ফলে গরুটা বংশমর্যাদাপূর্ণ হওয়ায় দাম বেশি।’
কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের তথ্য অনুসারে, ব্রাহমা জাতের এই গরু নিলামে প্রতি কেজি মাত্র ২৮০ টাকা দামে কিনেছিলেন ইমরান। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) নামে এসব গরু কেনেন বর্তমানে বিডিএফএর সভাপতির দায়িত্বে থাকা ইমরান। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নির্দেশনায় প্রতিযোগিতাহীন নিলামে গরুগুলো ইমরানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। প্রতি কেজি ২৮০ টাকা দাম ধরে হিসাব করলে কোটি টাকা দাম চাওয়া ১ হাজার ৩০০ কেজি ওজনের ব্রাহমা গরুটি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বিক্রি করেছে মাত্র ৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকায়।
জব্দ করা ব্রাহমা গরু নিয়ে আদালতের নির্দেশনা ছিল মাংস হিসেবে ব্যবহার করার। অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি প্রাণিসম্পদের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার থেকে ওই ব্রাহমা গরু কেনার পর তা মাংস হিসেবে বিক্রি না করে খামারিদের কাছে কয়েক লাখ টাকার সিমেন বিক্রি করেছেন ইমরান।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের (সাভার) পরিচালক ডা. মো. মনিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্রাহমা জাতের ১৫টি গরু রমজানের আগে নিলামে বিক্রি করা হয়েছিল। ওটা জবাই হয়েছে কি না, আমাদের জানা নেই। সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রির জন্য দেওয়া হয়েছিল। এটায় কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ছিল না।’
কোটি টাকা দাম হাঁকানো ব্রাহমা গরুটির গায়ে ‘৯৬২’ নম্বর দেওয়া রয়েছে। ইমরান হোসেন দাবি করেছেন, গরুটি মি. ভি-৮ নোভাল ৯৬২/৭ রেঞ্জের। কিন্তু ভি-৮ রেঞ্জের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একই নম্বরের গরুর দেখা মিললেও গরুর উচ্চতা, গায়ের রঙের কোনো মিল নেই। ওয়েবসাইটে থাকা গরুটির মায়ের ছবি পাওয়া গেলেও বাবার ছবি পাওয়া যায়নি। দাদার সম্পর্কেও কোনো তথ্য নেই। ফলে বংশমর্যাদার খোঁজটাও মেলে না।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেভাবে আসে নিষিদ্ধ ব্রাহমা
২০১৬ সালে আমেরিকান ব্রাহমা গরু আমদানি নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু ২০২১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে টার্কিশ এয়ারলাইনসে করে ১৮টি ব্রাহমা গরু দেশে আনে সাদিক অ্যাগ্রো। এগুলোর মধ্যে একটি গরু আকাশপথেই মারা যায়। গরু আমদানির বৈধ কাগজ উপস্থাপন করতে পারেননি সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন। সে সময় সাদিক অ্যাগ্রো তিনটি জাল নথি জমা দিয়েছিল। নথিগুলো হলো গবাদিপশু আমদানি-সংক্রান্ত একটি নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণী কোয়ারেন্টাইন বিভাগের কাছ থেকে একটি চিঠি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গবাদিপশু আমদানির অনুমতিপত্র, যার প্রতিটিকেই জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন তখনকার শুল্ক কর্মকর্তারা।
আমদানিকারকের জমা দেওয়া তিনটি কাগজেই স্বাক্ষরকারীর নামের জায়গায় লেখা ছিল ‘মোহাম্মদ ওমর ফারুক’ নামে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার নাম। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রাণিসম্পদ কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে পশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ ওমর ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাদিক অ্যাগ্রোর কোনো কাগজে আমি সই করিনি। তারা প্রতারণার মাধ্যমে ওই কাগজ তৈরি করেছিল।’
জাল নথি দিয়ে গরু আনার ওই ঘটনায় তখন মামলা হয়। আদালতের রায় আসে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষে। ফলে ওই ১৭টি ব্রাহমা গরু বাজেয়াপ্ত করে রাখা হয় কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে।
জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাদিক অ্যাগ্রো অবৈধ উপায়ে ব্রাহমা গরু এনেছিল। তখন মামলায় হেরে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যে গরুগুলো দিয়েছিলাম। সরল বিশ্বাস পুঁজি করে কেউ প্রতারণা করলে আমরা ব্যথিত। এ বিষয়ে খোঁজ নেব আর ভবিষ্যতে তার ব্যাপারে সতর্ক থাকব।’
ছাগল নিয়ে হইচই
কোরবানির ঈদের আগে ব্রিটল জাতের একটি খাসি ছাগল নিয়ে আরেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান। তিনি পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি উচ্চতার খাসিটির দাম হাঁকান ১৫ লাখ টাকা। এই দামে ছাগলটি কিনেও নেন কাস্টমস কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে সাদিক অ্যাগ্রো। তাতেই বাধে লঙ্কাকাণ্ড। ইফাতের বাবার অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে গণমাধ্যম একের পর এক সংবাদ প্রকাশ করতে থাকে। জল ঘোলা হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ছাগলটি ইমরানের খামারেই রয়ে যায়।
শুক্রবার মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ হাউজিংয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে দিয়ে দেখা যায়, ১৮২ কেজি ওজনের ছাগলটিকে একটি লোহার খাঁচায় রাখা হয়েছে। খামারের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ শরীফ জানান, ঈদের আগে যশোরের একটি হাট থেকে কিনেছেন তাঁরা। এটা পাঞ্জাবের একটি জাত। দামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এত বড় ছাগল হয় না। আমরা দাম দিয়ে কিনে এনেছি। তাই বেশি দামে বিক্রি করব।’
খাল দখলের অভিযোগ
সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাতমসজিদ হাউজিং এলাকায় রামচন্দ্রপুর খাল দখলের অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, খালের একাংশে মাটি ভরাট করে খামার গড়েছেন তিনি। আর খামারের সব ময়লা ফেলছেন খালের মধ্যে।
সাতমসজিদ হাউজিং অংশের রামচন্দ্রপুর খালের ওপর গড়ে ওঠা সাদিক অ্যাগ্রোসহ অন্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নিতে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছেন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ। আজ বৃহস্পতিবার এই খাল উদ্ধারে অভিযান চালানোর কথা রয়েছে ডিএনসিসির।
আরও যত প্রতারণা
গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীতে আড়াই কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি ইমরান হোসেনের। প্রদর্শনীতে স্টল বরাদ্দের মাধ্যমে অন্য খামারিদের কাছ থেকে এই টাকা উঠিয়েও নিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রদর্শনী আয়োজনে প্রতিশ্রুত কোনো টাকাই ইমরান দেননি।
ইমরানের এসব প্রতারণায় ক্ষুব্ধ খামারিরা। মোহাম্মদপুরের বুড়িগঙ্গা অ্যাগ্রোর মালিক ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সায়েম শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইমরানের প্রতারণার কারণে খামারিদের প্রতি মানুষের বিশ্বাসের জায়গা নষ্ট হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে সে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরু এনে বিমানবন্দরে ধরা পড়েন। সে সময় জালিয়াতির পরেও কোনো শাস্তি না হওয়ায় তাঁর সাহস বেড়ে গেছে।’
সার্বিক বিষয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনকে পাঁচ দিন ধরে অন্তত ২০ বার কল দেওয়া হয়েছে। একাধিকবার মেসেজ দেওয়া হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ সিন করলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। মোহাম্মদপুরে সাদিক অ্যাগ্রোর কার্যালয়ে গিয়েও তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে