আলম শাইন
শব্দের স্থিতি ক্ষণস্থায়ী হলেও শব্দদূষণ মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পরিবেশের অন্য সব দূষণের মতো শব্দদূষণকে আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করে বোঝানো যায় না। ক্ষতিকর দিকটি দেখানোও যায় না। শুধু শ্রবণের মাধ্যমে এটিকে অনুধাবন করা যায়। বাংলাদেশে শব্দদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করায় পরিবেশবিদেরা একে ‘শব্দ-সন্ত্রাস’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বলা যায়, শব্দদূষণ মানুষের অসচেতনতার বহিঃপ্রকাশ। কারণ এখনো অনেকেই জানে না, শব্দদূষণের ফলে মানুষের কী ধরনের সমস্যা হতে পারে। অথবা যে মানুষটি তীব্র শব্দদূষণ করে যাচ্ছেন, তিনি নিজেও জানেন না যে এটি মারাত্মক অপরাধের আওতায় পড়ে।
এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকেই জানেন না এই অপরাধের কথা। ফলে শব্দদূষণের শিকার হয়েও আমরা আইনি প্রতিকার পাচ্ছি না যথাযথভাবে।
মানুষের শ্রবণযোগ্য শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল। এর পরও মানুষ অনায়াসে ৬০-৭০ ডেসিবেল শব্দের মাত্রা সহ্য করে যাচ্ছে। এই মাত্রার বেশি শব্দদূষণ হলে মানুষ ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলে। ৮০ ডেসিবেলের অতিরিক্ত মাত্রার শব্দ মানুষের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।
তথাপিও আমাদের তা শ্রবণ করতে হচ্ছে। খোদ রাজধানী ঢাকাসহ মফস্বল শহরে এই অনিয়ম বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। রাস্তার পাশে কিংবা অলি-গলিতে সাউন্ড বক্সের আওয়াজ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। নিয়ম লঙ্ঘন করে যত্রতত্র গাড়ির হর্ন বাজানো হচ্ছে। টাইলস বসানো, ইট ভাঙার মেশিন কিংবা বড় বড় দালান নির্মাণের ক্ষেত্রে পাইলিং মেশিনের উচ্চমাত্রার আওয়াজ মানুষকে নাজেহাল করে দিচ্ছে।
এ ছাড়া উড়োজাহাজের বিকট আওয়াজ মানুষের কানের পর্দার সম্মুখ কোষগুলোয় আঘাত হানার ফলে বড় ধরনের স্পন্দনের সৃষ্টির মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রে সঞ্চালিত হয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিচ্ছে। সদরঘাটের চিত্র আরও ভিন্ন। এখানে প্রতিনিয়ত লঞ্চ, স্টিমারের ভেঁপু বা সাইরেনের আওয়াজ শুনতে শুনতে মানুষ অর্ধবধির হয়ে গেছে। আসলে দেশের সর্বত্রই একই অবস্থা। রাস্তাঘাটে বেরোলেই যত্রতত্র শোনা যায় মাইকিং, ভটভটি বা নছিমন গাড়ির অস্বস্তিকর আওয়াজ, বিয়েশাদিতে উচ্চ স্বরে গান-বাজনা, স মিলের বিদঘুটে আওয়াজ।
এসব আওয়াজ অনবরত শ্রবণের ফলে মানুষ তার শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলছে ধীরে ধীরে। এ ধরনের বিরতিহীন শব্দদূষণের ফলে মানুষ উচ্চ রক্তচাপ, শিরঃপীড়া, মানসিক অসুস্থতা, স্নায়বিক বৈকল্য, আত্মহত্যার প্রবণতা, আক্রমণাত্মক মনোভাবের উদ্রেক, হৃদরোগসহ নানা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। অপরদিকে শিশু-কিশোরদের মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে শব্দদূষণের তাণ্ডবে। শুধু মানুষই নয়, জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রেও শব্দদূষণ মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অবাধে এই দূষণের শিকার হতে দেখে মনে হচ্ছে দেশে এ বিষয়টা দেখার কেউ নেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এভাবে রাজধানীতে শব্দদূষণ বাড়তে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নগরীর অর্ধেক মানুষ শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব মোতাবেক যেকোনো শহরের আবাসিক এলাকার শব্দের মাত্রা দিনে সর্বোচ্চ ৪৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৩৫ ডেসিবেল পর্যন্ত সহনীয়। অপরদিকে শয়নকক্ষের জন্য আলাদা পরিমাপ রয়েছে। সেটি ২৫ ডেসিবেলের ওপরে অনুমোদিত নয়। রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা থাকবে ৪৫ ডেসিবেল; দিনে ৫৫ ডেসিবেল। বাণিজ্যিক এলাকায় ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল শব্দের মাত্রা থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, হাসপাতাল এলাকার ১০০ মিটার পর্যন্ত ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে আইনে উল্লেখ করা আছে।
ওই এলাকায় রাতে ৪০ ডেসিবেল আর দিনে ৫০ ডেসিবেল পর্যন্ত মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ এসবের ধারেকাছেও নেই নগরগুলোর শব্দের মাত্রা; বরং বহুগুণ শব্দের তাণ্ডবে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। এই পরিমাপ শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, এটি সমগ্র বিশ্বের জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু সেই আইন বাংলাদেশের কেউই মানছে না। অথচ ২০০৬-এর বিধিমালার ধারা ১৭ অনুযায়ী, শব্দের মাত্রা অতিক্রম করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যেকোনো ভবন বা স্থানে প্রবেশ করে অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আটক করতে পারবেন এবং দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে প্রথম অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারবেন এবং পুনরায় একই অপরাধ করলে অনধিক ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন (ধারা ১৮)।
এ ছাড়া দণ্ডবিধি-১৮৬০ সালের ২৬৮ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি কাজের মাধ্যমে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, আগুন, তাপ, শব্দ দ্বারা অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতি করেন, তবে তা গণ উৎপাত বলে বিবেচিত হবে। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮-এর ১৩২ (ক) থেকে ১৪৩ ধারা অনুসারে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এই গণ উৎপাত অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ বা নিষেধাজ্ঞাও জারি করতে পারবেন।
শব্দদূষণের ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যথেষ্ট সোচ্চার। সংস্থাটি এ ব্যাপারে সতর্কবাণী পাঠিয়েছে বিশ্বের সব দেশে। শব্দদূষণের ক্ষতির দিক চিহ্নিত করতে ইউনিসেফ এবং বিশ্বব্যাংক একাধিকবার গবেষণায় জড়িত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০টি জটিল রোগের অন্যতম কারণ পরিবেশদূষণ। এর মধ্যে শব্দদূষণ অন্যতম। জরিপে দেখা গেছে, শব্দদূষণের শিকার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরাও। সেখানে এরই মধ্যে ১১ শতাংশ লোক তাদের শ্রবণশক্তি হারিয়েও ফেলেছে।
দুর্ভাগ্যজনক সত্যটি হচ্ছে, আমাদের দেশে এ ধরনের পরিসংখ্যান না থাকায় এর সঠিক হিসাব জানা যায়নি আজ অবধি। তবে নিঃসন্দেহে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনোক্রমেই আমাদের দেশে শব্দদূষণে আক্রান্তের সংখ্যা কম নয়। তাই পরিবেশবিদদের দাবি, শব্দদূষণে আক্রান্তের সংখ্যা নিরূপণ করে সঠিক পরিসংখ্যান পেশ করা। পাশাপাশি গোটা দেশে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শব্দদূষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া এবং শব্দদূষণ যে অপরাধ তা গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া; তাতে শব্দদূষণের মাত্রা অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে।
শব্দসন্ত্রাসের বিষয়টি মাথায় রেখে গবেষকেরা রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ইংল্যান্ডের সলফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রকৌশলী ট্রেভর কক্স কিছুটা সফলও হয়েছেন। বাইরের অবাঞ্ছিত উচ্চ শব্দের মাত্রা ঠেকিয়ে রাখতে ভবনের নতুন নকশা আবিষ্কার করেছেন এই শব্দবিষয়ক প্রকৌশলী। শব্দতরঙ্গের দৈর্ঘ্য তৈরি করে অতিরিক্ত শব্দকে ভবনের ভেতরে ঢুকতে বাধার সৃষ্টি করবে তাঁর এ প্রযুক্তিটি। এই প্রযুক্তি সফল হলে বিমানবন্দরের কাছেও মানুষ বসবাস করতে পারবে, আর শব্দদূষণ থেকে বিশ্ববাসীও রক্ষা পাবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট
শব্দের স্থিতি ক্ষণস্থায়ী হলেও শব্দদূষণ মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পরিবেশের অন্য সব দূষণের মতো শব্দদূষণকে আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করে বোঝানো যায় না। ক্ষতিকর দিকটি দেখানোও যায় না। শুধু শ্রবণের মাধ্যমে এটিকে অনুধাবন করা যায়। বাংলাদেশে শব্দদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করায় পরিবেশবিদেরা একে ‘শব্দ-সন্ত্রাস’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বলা যায়, শব্দদূষণ মানুষের অসচেতনতার বহিঃপ্রকাশ। কারণ এখনো অনেকেই জানে না, শব্দদূষণের ফলে মানুষের কী ধরনের সমস্যা হতে পারে। অথবা যে মানুষটি তীব্র শব্দদূষণ করে যাচ্ছেন, তিনি নিজেও জানেন না যে এটি মারাত্মক অপরাধের আওতায় পড়ে।
এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকেই জানেন না এই অপরাধের কথা। ফলে শব্দদূষণের শিকার হয়েও আমরা আইনি প্রতিকার পাচ্ছি না যথাযথভাবে।
মানুষের শ্রবণযোগ্য শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল। এর পরও মানুষ অনায়াসে ৬০-৭০ ডেসিবেল শব্দের মাত্রা সহ্য করে যাচ্ছে। এই মাত্রার বেশি শব্দদূষণ হলে মানুষ ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলে। ৮০ ডেসিবেলের অতিরিক্ত মাত্রার শব্দ মানুষের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।
তথাপিও আমাদের তা শ্রবণ করতে হচ্ছে। খোদ রাজধানী ঢাকাসহ মফস্বল শহরে এই অনিয়ম বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। রাস্তার পাশে কিংবা অলি-গলিতে সাউন্ড বক্সের আওয়াজ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। নিয়ম লঙ্ঘন করে যত্রতত্র গাড়ির হর্ন বাজানো হচ্ছে। টাইলস বসানো, ইট ভাঙার মেশিন কিংবা বড় বড় দালান নির্মাণের ক্ষেত্রে পাইলিং মেশিনের উচ্চমাত্রার আওয়াজ মানুষকে নাজেহাল করে দিচ্ছে।
এ ছাড়া উড়োজাহাজের বিকট আওয়াজ মানুষের কানের পর্দার সম্মুখ কোষগুলোয় আঘাত হানার ফলে বড় ধরনের স্পন্দনের সৃষ্টির মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রে সঞ্চালিত হয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিচ্ছে। সদরঘাটের চিত্র আরও ভিন্ন। এখানে প্রতিনিয়ত লঞ্চ, স্টিমারের ভেঁপু বা সাইরেনের আওয়াজ শুনতে শুনতে মানুষ অর্ধবধির হয়ে গেছে। আসলে দেশের সর্বত্রই একই অবস্থা। রাস্তাঘাটে বেরোলেই যত্রতত্র শোনা যায় মাইকিং, ভটভটি বা নছিমন গাড়ির অস্বস্তিকর আওয়াজ, বিয়েশাদিতে উচ্চ স্বরে গান-বাজনা, স মিলের বিদঘুটে আওয়াজ।
এসব আওয়াজ অনবরত শ্রবণের ফলে মানুষ তার শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলছে ধীরে ধীরে। এ ধরনের বিরতিহীন শব্দদূষণের ফলে মানুষ উচ্চ রক্তচাপ, শিরঃপীড়া, মানসিক অসুস্থতা, স্নায়বিক বৈকল্য, আত্মহত্যার প্রবণতা, আক্রমণাত্মক মনোভাবের উদ্রেক, হৃদরোগসহ নানা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। অপরদিকে শিশু-কিশোরদের মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে শব্দদূষণের তাণ্ডবে। শুধু মানুষই নয়, জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রেও শব্দদূষণ মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অবাধে এই দূষণের শিকার হতে দেখে মনে হচ্ছে দেশে এ বিষয়টা দেখার কেউ নেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এভাবে রাজধানীতে শব্দদূষণ বাড়তে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নগরীর অর্ধেক মানুষ শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব মোতাবেক যেকোনো শহরের আবাসিক এলাকার শব্দের মাত্রা দিনে সর্বোচ্চ ৪৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৩৫ ডেসিবেল পর্যন্ত সহনীয়। অপরদিকে শয়নকক্ষের জন্য আলাদা পরিমাপ রয়েছে। সেটি ২৫ ডেসিবেলের ওপরে অনুমোদিত নয়। রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা থাকবে ৪৫ ডেসিবেল; দিনে ৫৫ ডেসিবেল। বাণিজ্যিক এলাকায় ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল শব্দের মাত্রা থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, হাসপাতাল এলাকার ১০০ মিটার পর্যন্ত ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে আইনে উল্লেখ করা আছে।
ওই এলাকায় রাতে ৪০ ডেসিবেল আর দিনে ৫০ ডেসিবেল পর্যন্ত মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ এসবের ধারেকাছেও নেই নগরগুলোর শব্দের মাত্রা; বরং বহুগুণ শব্দের তাণ্ডবে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। এই পরিমাপ শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, এটি সমগ্র বিশ্বের জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু সেই আইন বাংলাদেশের কেউই মানছে না। অথচ ২০০৬-এর বিধিমালার ধারা ১৭ অনুযায়ী, শব্দের মাত্রা অতিক্রম করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যেকোনো ভবন বা স্থানে প্রবেশ করে অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আটক করতে পারবেন এবং দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে প্রথম অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারবেন এবং পুনরায় একই অপরাধ করলে অনধিক ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন (ধারা ১৮)।
এ ছাড়া দণ্ডবিধি-১৮৬০ সালের ২৬৮ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি কাজের মাধ্যমে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, আগুন, তাপ, শব্দ দ্বারা অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতি করেন, তবে তা গণ উৎপাত বলে বিবেচিত হবে। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮-এর ১৩২ (ক) থেকে ১৪৩ ধারা অনুসারে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এই গণ উৎপাত অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ বা নিষেধাজ্ঞাও জারি করতে পারবেন।
শব্দদূষণের ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যথেষ্ট সোচ্চার। সংস্থাটি এ ব্যাপারে সতর্কবাণী পাঠিয়েছে বিশ্বের সব দেশে। শব্দদূষণের ক্ষতির দিক চিহ্নিত করতে ইউনিসেফ এবং বিশ্বব্যাংক একাধিকবার গবেষণায় জড়িত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০টি জটিল রোগের অন্যতম কারণ পরিবেশদূষণ। এর মধ্যে শব্দদূষণ অন্যতম। জরিপে দেখা গেছে, শব্দদূষণের শিকার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরাও। সেখানে এরই মধ্যে ১১ শতাংশ লোক তাদের শ্রবণশক্তি হারিয়েও ফেলেছে।
দুর্ভাগ্যজনক সত্যটি হচ্ছে, আমাদের দেশে এ ধরনের পরিসংখ্যান না থাকায় এর সঠিক হিসাব জানা যায়নি আজ অবধি। তবে নিঃসন্দেহে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনোক্রমেই আমাদের দেশে শব্দদূষণে আক্রান্তের সংখ্যা কম নয়। তাই পরিবেশবিদদের দাবি, শব্দদূষণে আক্রান্তের সংখ্যা নিরূপণ করে সঠিক পরিসংখ্যান পেশ করা। পাশাপাশি গোটা দেশে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শব্দদূষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া এবং শব্দদূষণ যে অপরাধ তা গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া; তাতে শব্দদূষণের মাত্রা অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে।
শব্দসন্ত্রাসের বিষয়টি মাথায় রেখে গবেষকেরা রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ইংল্যান্ডের সলফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রকৌশলী ট্রেভর কক্স কিছুটা সফলও হয়েছেন। বাইরের অবাঞ্ছিত উচ্চ শব্দের মাত্রা ঠেকিয়ে রাখতে ভবনের নতুন নকশা আবিষ্কার করেছেন এই শব্দবিষয়ক প্রকৌশলী। শব্দতরঙ্গের দৈর্ঘ্য তৈরি করে অতিরিক্ত শব্দকে ভবনের ভেতরে ঢুকতে বাধার সৃষ্টি করবে তাঁর এ প্রযুক্তিটি। এই প্রযুক্তি সফল হলে বিমানবন্দরের কাছেও মানুষ বসবাস করতে পারবে, আর শব্দদূষণ থেকে বিশ্ববাসীও রক্ষা পাবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
৩ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪