হাসান মামুন
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ কখন কোথায় আঘাত হানে, তা নিয়ে দেশজুড়ে চলতে থাকা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে লিখতে বসে পড়েছি ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে। লোডশেডিং পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছিল তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি ছিল অনেক বেশি খারাপ। বিদ্যুৎঘাটতি হলে গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকদের বঞ্চিত করে শহরাঞ্চলে তথা ‘গ্রোথ সেন্টারগুলোয়’ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার একটা চেষ্টা বরাবরই নিয়ে থাকে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এর পক্ষে যুক্তিও আছে। উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য যেখানে কেন্দ্রীভূত, সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা গেলে অর্থনীতিতে এর রিটার্ন পাওয়া যায় বেশি। কৃষি ও গ্রামাঞ্চলের অকৃষি খাত সচল রাখাটাও খাদ্যনিরাপত্তাসহ আয়বৈষম্য কমিয়ে রাখার জন্য জরুরি। সেচের বেলায় বিদ্যুতের বিকল্প হলো ডিজেল। এর দাম তো অনেক বাড়ানো হয়েছে। সব রকম সারের দামও বাড়ানো হয়েছে দুই দফায়। তাতে কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে।
যা-ই হোক, এই মুহূর্তে দেশজুড়ে চলছে এসএসসি পরীক্ষা। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং যেভাবে বাড়ছিল, তাতে এই পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিশ্চয়ই ব্যাহত হয়েছে। মানুষ বিদ্যুতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে মুশকিল। চট করে কোনো বিকল্প ব্যবস্থায় চলে যাওয়া তার পক্ষে তখন কঠিন হয়ে পড়ে। মাঝে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতির বড় উন্নতি হয়েছিল। শহরাঞ্চলের মানুষ লোডশেডিংয়ের কথা ভুলেই গিয়েছিল প্রায়। সেদিনগুলো কিছুটা হলেও ফিরে আসতে শুরু করেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ ও সরবরাহ পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ায়।
এই মুহূর্তে যে লোডশেডিংয়ে বসে নিবন্ধটি তৈরি করছি, তার কারণ অবশ্য ভিন্ন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাড়তি এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে যে দুটি এলএনজি টার্মিনাল আমদানি করা এই গ্যাস প্রক্রিয়াকরণের কাজটি করত, সেগুলোকে গ্যাসলাইন থেকে বিযুক্ত করে নিরাপদ সমুদ্র অঞ্চলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে প্রক্রিয়াকরণের জন্য এলএনজি হাতে থাকলেও তা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে বাসাবাড়িসহ জরুরি ক্ষেত্রে কমে গেছে গ্যাসের সরবরাহ ও চাপ।
বেশ কয়েকটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ বা সীমিত করতে হয়েছে। এখন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, তার বড় একটা অংশ আমরা পাই গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে। দেশ থেকে আহরিত গ্যাসই এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় বেশি। তবে এতে বড় ঘাটতি আছে বলে এলএনজি তথা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে ব্যবহার করা হচ্ছিল। তাতেও ঘাটতি রয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এলএনজি টার্মিনালগুলো ব্যবহৃত হতে না পারায় স্বভাবতই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহেও পড়েছে এর প্রভাব। শীত শেষে লোডশেডিং পরিস্থিতির যে ক্রমাবনতি হচ্ছিল, তাতে শহরাঞ্চলের মানুষের গায়ে আঁচ না লাগলেও এ কয়েক দিনে তা লাগতে শুরু করেছে। এখন তাঁরাও অনুভব করতে পারছেন, মাঝে এ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও একটা ভিন্ন প্রকৃতির সংকট এখানে ক্রমে ঘনীভূত হয়েছে।
কক্সবাজার অঞ্চলে আঘাত হানুক বা না হানুক, ঘূর্ণিঝড় ও এর প্রভাব তো দু-এক দিনের মধ্যে কেটে যাবে। এলএনজি টার্মিনাল দুটি আবার এনে জায়গামতো যুক্ত করা গেলে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতিরও কিছুটা উন্নতি ঘটানো যাবে। সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিক বাজারে, বিশেষ করে ‘স্পট মার্কেটে’ এলএনজির দাম কিন্তু অনেক কমে এসেছে এবং এটা এখন নিম্নমুখী বলা যায়। তাতে আমাদের মতো যেসব দেশ এই জ্বালানিপণ্যের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল, তাদের বিশেষ সুবিধা হওয়ার কথা। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে আসার প্রবণতাও রয়েছে। তাতে যেকোনো পণ্য আমদানিতে জাহাজভাড়াও কম পড়ার কথা। কিন্তু বিদেশি মুদ্রা তথা ডলারসংকট কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না বলে আমরা স্পট মার্কেট থেকে কম দামে এলএনজি এনে ব্যবহার করতেও হিমশিম খাচ্ছি। চীন, জাপানের মতো বড় অর্থনীতির দেশ এই বাজারের প্রধান ক্রেতা।
তারা অনেক এলএনজি কিনে মজুত করেও রাখতে পারে। আর আমরা এর সরবরাহও স্বাভাবিক রাখতে পারছি না প্রধানত ডলারসংকটে। গ্যাসের ক্ষেত্রে এলএনজিনির্ভরতা নিয়ে শুরু থেকেই অবশ্য বিতর্ক ছিল। নিজ দেশে সম্ভাবনাময় গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও তা থেকে প্রয়োজনীয় গ্যাস উত্তোলনে মনোযোগী না হয়ে এলএনজি আমদানিতে চলে যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিহিত করা হচ্ছিল। মাঝে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে অন্যান্য জরুরি পণ্যের সঙ্গে এলএনজির বাজারও অস্থির হয়ে ওঠায় এই সমালোচনা আরও বাড়ে। সরকারকে একপর্যায়ে এলএনজি আমদানি হ্রাস, এমনকি বন্ধও করে দিতে হয়। তাতে বিদ্যুৎ খাত, শিল্পকারখানা ও বাসাবাড়িতে ভারসাম্য রেখে গ্যাস সরবরাহের কাজটি হয় বিঘ্নিত। সরকারকে স্বভাবতই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে পথ চলতে হয়।
এর মধ্যে পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে চলে আসায় পরিস্থিতির অবনতি অবশ্য রোধ করা গিয়েছিল। নানান প্রশ্নের মুখেও চীন ও ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সরকার এ দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যায় শুধু মোট উৎপাদন বাড়াতে নয়; বরং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প খাত বিকাশে সহায়তার জন্য। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ওই অঞ্চলে শিল্প ও ব্যবসা বিকাশের সুযোগ সত্যিই বেড়েছে। কিন্তু মুশকিল হলো, অধিক উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় শুরু থেকেই দেখা দিয়েছে সমস্যা। এর জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি বা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না, সেটাও ডলারসংকটে।
একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আপাতত বন্ধই রাখতে হচ্ছে; অন্যটিও ভুগছে কয়লাসংকটে। আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দামও কিন্তু কমে এসেছে অনেক। অবস্থাটি এলএনজির সঙ্গেই তুল্য এবং এ ক্ষেত্রেও আমরা প্রয়োজনীয় কয়লা সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছি আমদানির ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় বা এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি উপস্থিত হওয়ায়। এলএনজিসংকটে বিশেষজ্ঞরা আশা করেছিলেন, নতুন দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবহার নিয়ে পরিবেশবাদীদের আপত্তি থাকলেও এগুলো সচল রাখা গেলে গ্রীষ্মে যখন চাহিদা তুঙ্গে থাকে, তখন বিদ্যুৎ সরবরাহ জুগিয়ে পরিস্থিতি সামলানো যাবে। সেই আশার গুড়েও বালি পড়েছে আমদানি ক্ষমতা কমে যাওয়ায়। আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একাধিক জরুরি উপকরণের দাম কমে এলেও তার সুফল নিতে আমরা পারছি না, এটা দুর্ভাগ্যজনক।
বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোয় বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিল। এটা ছিল তাদের অন্যতম রাজনৈতিক অঙ্গীকারও। ২০৪১ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনাও ঘোষণা করা হয়। তারই আওতায় বাড়ানো হয়েছিল উৎপাদন ক্ষমতা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতা বাড়ানো গেলেও তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বিপুল উৎপাদন ক্ষমতা নাকি অব্যবহৃত! কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণ আহরণ ও আমদানিতে সংকট বেড়ে যাওয়া। দেশের ভেতর থেকে গ্যাসের সরবরাহ কম এবং সেটা ক্রমে আরও কমে যাওয়া। এলএনজি আমদানিতেও দেখা দিল সংকট। প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানিতেও আমরা আর সক্ষম নই দেখা যাচ্ছে। সবকিছুর জন্য ইউক্রেন যুদ্ধ ও তার প্রভাবকে দায়ী করার একটা প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এর অভিঘাত কমে এলেও আমরা তার সুফল নিতে অক্ষম। কারণ বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি ভালো নয়। আমরা রিজার্ভ যেভাবে হিসাব করতাম, সেটাও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। রিজার্ভ বাড়িয়ে দেখিয়ে তো লাভ নেই, যদি জরুরি মুহূর্তে তা ব্যবহার করা না যায় জাতীয় স্বার্থে। আমাদের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ দুটোই দুর্বল এবং গেল ঈদের সময়েও রেমিট্যান্স আশানুরূপ হয়নি।
এ অবস্থায় আবার অব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার জন্য বহুল আলোচিত ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ পরিশোধ করতে হচ্ছে ডলার রেটে। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকলেও এ ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট। উঠেপড়ে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর এমন কার্যক্রমও তাই পড়ে গেছে তীব্র সমালোচনার মুখে। সরকার বর্ধিত এ ক্ষমতা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারলে কিন্তু এতটা সমালোচনা হতো না।
কিছু বিদ্যুৎ তো আমদানিও করা হচ্ছে। সে-সংক্রান্ত চুক্তি নিয়েও রয়েছে সমালোচনা। সমালোচনা আছে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় এবং তা মেটাতে গিয়ে এর দাম অব্যাহতভাবে বাড়ানো নিয়ে। এর অভিঘাত পড়ছে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত তথা জনজীবনেও। শেষ পর্যন্ত এতে আরও বেড়ে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতি। এটা কমিয়ে
আনা মোটেও সহজ হচ্ছে না যেসব কারণে, তার মধ্যে ভূমিকা রাখছে অব্যাহতভাবে আলোচনায় থাকা বিদ্যুৎ খাত। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্ট পরিস্থিতি সেটা শহরাঞ্চলের মানুষকেও গভীরভাবে মনে করিয়ে দিল বলে মনে হচ্ছে।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ কখন কোথায় আঘাত হানে, তা নিয়ে দেশজুড়ে চলতে থাকা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে লিখতে বসে পড়েছি ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে। লোডশেডিং পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছিল তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি ছিল অনেক বেশি খারাপ। বিদ্যুৎঘাটতি হলে গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকদের বঞ্চিত করে শহরাঞ্চলে তথা ‘গ্রোথ সেন্টারগুলোয়’ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার একটা চেষ্টা বরাবরই নিয়ে থাকে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এর পক্ষে যুক্তিও আছে। উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য যেখানে কেন্দ্রীভূত, সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা গেলে অর্থনীতিতে এর রিটার্ন পাওয়া যায় বেশি। কৃষি ও গ্রামাঞ্চলের অকৃষি খাত সচল রাখাটাও খাদ্যনিরাপত্তাসহ আয়বৈষম্য কমিয়ে রাখার জন্য জরুরি। সেচের বেলায় বিদ্যুতের বিকল্প হলো ডিজেল। এর দাম তো অনেক বাড়ানো হয়েছে। সব রকম সারের দামও বাড়ানো হয়েছে দুই দফায়। তাতে কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে।
যা-ই হোক, এই মুহূর্তে দেশজুড়ে চলছে এসএসসি পরীক্ষা। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং যেভাবে বাড়ছিল, তাতে এই পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিশ্চয়ই ব্যাহত হয়েছে। মানুষ বিদ্যুতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে মুশকিল। চট করে কোনো বিকল্প ব্যবস্থায় চলে যাওয়া তার পক্ষে তখন কঠিন হয়ে পড়ে। মাঝে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতির বড় উন্নতি হয়েছিল। শহরাঞ্চলের মানুষ লোডশেডিংয়ের কথা ভুলেই গিয়েছিল প্রায়। সেদিনগুলো কিছুটা হলেও ফিরে আসতে শুরু করেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ ও সরবরাহ পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ায়।
এই মুহূর্তে যে লোডশেডিংয়ে বসে নিবন্ধটি তৈরি করছি, তার কারণ অবশ্য ভিন্ন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাড়তি এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে যে দুটি এলএনজি টার্মিনাল আমদানি করা এই গ্যাস প্রক্রিয়াকরণের কাজটি করত, সেগুলোকে গ্যাসলাইন থেকে বিযুক্ত করে নিরাপদ সমুদ্র অঞ্চলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে প্রক্রিয়াকরণের জন্য এলএনজি হাতে থাকলেও তা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে বাসাবাড়িসহ জরুরি ক্ষেত্রে কমে গেছে গ্যাসের সরবরাহ ও চাপ।
বেশ কয়েকটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ বা সীমিত করতে হয়েছে। এখন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, তার বড় একটা অংশ আমরা পাই গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে। দেশ থেকে আহরিত গ্যাসই এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় বেশি। তবে এতে বড় ঘাটতি আছে বলে এলএনজি তথা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে ব্যবহার করা হচ্ছিল। তাতেও ঘাটতি রয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এলএনজি টার্মিনালগুলো ব্যবহৃত হতে না পারায় স্বভাবতই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহেও পড়েছে এর প্রভাব। শীত শেষে লোডশেডিং পরিস্থিতির যে ক্রমাবনতি হচ্ছিল, তাতে শহরাঞ্চলের মানুষের গায়ে আঁচ না লাগলেও এ কয়েক দিনে তা লাগতে শুরু করেছে। এখন তাঁরাও অনুভব করতে পারছেন, মাঝে এ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও একটা ভিন্ন প্রকৃতির সংকট এখানে ক্রমে ঘনীভূত হয়েছে।
কক্সবাজার অঞ্চলে আঘাত হানুক বা না হানুক, ঘূর্ণিঝড় ও এর প্রভাব তো দু-এক দিনের মধ্যে কেটে যাবে। এলএনজি টার্মিনাল দুটি আবার এনে জায়গামতো যুক্ত করা গেলে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতিরও কিছুটা উন্নতি ঘটানো যাবে। সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিক বাজারে, বিশেষ করে ‘স্পট মার্কেটে’ এলএনজির দাম কিন্তু অনেক কমে এসেছে এবং এটা এখন নিম্নমুখী বলা যায়। তাতে আমাদের মতো যেসব দেশ এই জ্বালানিপণ্যের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল, তাদের বিশেষ সুবিধা হওয়ার কথা। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে আসার প্রবণতাও রয়েছে। তাতে যেকোনো পণ্য আমদানিতে জাহাজভাড়াও কম পড়ার কথা। কিন্তু বিদেশি মুদ্রা তথা ডলারসংকট কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না বলে আমরা স্পট মার্কেট থেকে কম দামে এলএনজি এনে ব্যবহার করতেও হিমশিম খাচ্ছি। চীন, জাপানের মতো বড় অর্থনীতির দেশ এই বাজারের প্রধান ক্রেতা।
তারা অনেক এলএনজি কিনে মজুত করেও রাখতে পারে। আর আমরা এর সরবরাহও স্বাভাবিক রাখতে পারছি না প্রধানত ডলারসংকটে। গ্যাসের ক্ষেত্রে এলএনজিনির্ভরতা নিয়ে শুরু থেকেই অবশ্য বিতর্ক ছিল। নিজ দেশে সম্ভাবনাময় গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও তা থেকে প্রয়োজনীয় গ্যাস উত্তোলনে মনোযোগী না হয়ে এলএনজি আমদানিতে চলে যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিহিত করা হচ্ছিল। মাঝে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে অন্যান্য জরুরি পণ্যের সঙ্গে এলএনজির বাজারও অস্থির হয়ে ওঠায় এই সমালোচনা আরও বাড়ে। সরকারকে একপর্যায়ে এলএনজি আমদানি হ্রাস, এমনকি বন্ধও করে দিতে হয়। তাতে বিদ্যুৎ খাত, শিল্পকারখানা ও বাসাবাড়িতে ভারসাম্য রেখে গ্যাস সরবরাহের কাজটি হয় বিঘ্নিত। সরকারকে স্বভাবতই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে পথ চলতে হয়।
এর মধ্যে পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে চলে আসায় পরিস্থিতির অবনতি অবশ্য রোধ করা গিয়েছিল। নানান প্রশ্নের মুখেও চীন ও ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সরকার এ দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যায় শুধু মোট উৎপাদন বাড়াতে নয়; বরং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প খাত বিকাশে সহায়তার জন্য। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ওই অঞ্চলে শিল্প ও ব্যবসা বিকাশের সুযোগ সত্যিই বেড়েছে। কিন্তু মুশকিল হলো, অধিক উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় শুরু থেকেই দেখা দিয়েছে সমস্যা। এর জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি বা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না, সেটাও ডলারসংকটে।
একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আপাতত বন্ধই রাখতে হচ্ছে; অন্যটিও ভুগছে কয়লাসংকটে। আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দামও কিন্তু কমে এসেছে অনেক। অবস্থাটি এলএনজির সঙ্গেই তুল্য এবং এ ক্ষেত্রেও আমরা প্রয়োজনীয় কয়লা সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছি আমদানির ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় বা এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি উপস্থিত হওয়ায়। এলএনজিসংকটে বিশেষজ্ঞরা আশা করেছিলেন, নতুন দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবহার নিয়ে পরিবেশবাদীদের আপত্তি থাকলেও এগুলো সচল রাখা গেলে গ্রীষ্মে যখন চাহিদা তুঙ্গে থাকে, তখন বিদ্যুৎ সরবরাহ জুগিয়ে পরিস্থিতি সামলানো যাবে। সেই আশার গুড়েও বালি পড়েছে আমদানি ক্ষমতা কমে যাওয়ায়। আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একাধিক জরুরি উপকরণের দাম কমে এলেও তার সুফল নিতে আমরা পারছি না, এটা দুর্ভাগ্যজনক।
বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোয় বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিল। এটা ছিল তাদের অন্যতম রাজনৈতিক অঙ্গীকারও। ২০৪১ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনাও ঘোষণা করা হয়। তারই আওতায় বাড়ানো হয়েছিল উৎপাদন ক্ষমতা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতা বাড়ানো গেলেও তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বিপুল উৎপাদন ক্ষমতা নাকি অব্যবহৃত! কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণ আহরণ ও আমদানিতে সংকট বেড়ে যাওয়া। দেশের ভেতর থেকে গ্যাসের সরবরাহ কম এবং সেটা ক্রমে আরও কমে যাওয়া। এলএনজি আমদানিতেও দেখা দিল সংকট। প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানিতেও আমরা আর সক্ষম নই দেখা যাচ্ছে। সবকিছুর জন্য ইউক্রেন যুদ্ধ ও তার প্রভাবকে দায়ী করার একটা প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এর অভিঘাত কমে এলেও আমরা তার সুফল নিতে অক্ষম। কারণ বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি ভালো নয়। আমরা রিজার্ভ যেভাবে হিসাব করতাম, সেটাও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। রিজার্ভ বাড়িয়ে দেখিয়ে তো লাভ নেই, যদি জরুরি মুহূর্তে তা ব্যবহার করা না যায় জাতীয় স্বার্থে। আমাদের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ দুটোই দুর্বল এবং গেল ঈদের সময়েও রেমিট্যান্স আশানুরূপ হয়নি।
এ অবস্থায় আবার অব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার জন্য বহুল আলোচিত ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ পরিশোধ করতে হচ্ছে ডলার রেটে। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকলেও এ ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট। উঠেপড়ে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর এমন কার্যক্রমও তাই পড়ে গেছে তীব্র সমালোচনার মুখে। সরকার বর্ধিত এ ক্ষমতা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারলে কিন্তু এতটা সমালোচনা হতো না।
কিছু বিদ্যুৎ তো আমদানিও করা হচ্ছে। সে-সংক্রান্ত চুক্তি নিয়েও রয়েছে সমালোচনা। সমালোচনা আছে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় এবং তা মেটাতে গিয়ে এর দাম অব্যাহতভাবে বাড়ানো নিয়ে। এর অভিঘাত পড়ছে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত তথা জনজীবনেও। শেষ পর্যন্ত এতে আরও বেড়ে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতি। এটা কমিয়ে
আনা মোটেও সহজ হচ্ছে না যেসব কারণে, তার মধ্যে ভূমিকা রাখছে অব্যাহতভাবে আলোচনায় থাকা বিদ্যুৎ খাত। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্ট পরিস্থিতি সেটা শহরাঞ্চলের মানুষকেও গভীরভাবে মনে করিয়ে দিল বলে মনে হচ্ছে।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে