আব্দুর রাজ্জাক
জীবনে চলার পথে যার সঙ্গে মনের মিল থাকে, সুখে-দুঃখে, আপদে-বিপদে সবকিছু শেয়ার করা যায়, সে-ই বন্ধু। বন্ধুত্ব হলো এমন এক বন্ধন, যেখানে দুজন ব্যক্তি একে অপরকে বোঝে। আপদে-বিপদে, সুখে-দুঃখে সব সময় কাছে থাকে। এক বন্ধু যদি কোনো বিপদে পড়ে, কোনো কিছু বলার আগেই যদি অপর বন্ধু এগিয়ে আসে তাহলে বুঝতে হবে সে প্রকৃত বন্ধু। একজন প্রকৃত বন্ধু সামান্য ঠুনকো অজুহাতে কোনো কথার ছলে বা সামান্য স্বার্থের জন্য বন্ধন নষ্ট করে না; বরং নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়েও বন্ধুর স্বার্থ রক্ষা করে।
একটি কথা প্রচলিত আছে—যে ব্যক্তির জীবনে কম করে হলেও দুজন প্রকৃত বন্ধু আছে, তিনি আসলেই সুখী মানুষ। বন্ধুত্ব স্থাপিত হয় বিশ্বাসের মাধ্যমে। যদি একে অপরের প্রতি বিশ্বাস বা আস্থা থাকে, তাহলে এই বন্ধুত্ব স্থায়ী হয়। চিরদিনের এ রকম বন্ধুত্ব যেমন ব্যক্তিজীবনে আছে, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এ রকম সুসম্পর্কের বন্ধুত্ব দেখা যায়।
২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ-রাশিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫২তম বছর। বাংলাদেশ ও বর্তমান রাশিয়ার (তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন) মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মার খেয়ে যাচ্ছে, পরাজয়ের দ্বার প্রান্তে, তখন আমেরিকার সরকার ঘোষণা করল পাকিস্তানি বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য সপ্তম নৌবহর পাঠাবে। আমাদের দেশের মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও সাহস ভেঙে দেওয়ার জন্য এই ঘোষণা যথেষ্ট ছিল। সেই অন্তিম সময়ে রাশিয়া, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে অষ্টম নৌবহর পাঠানোর ঘোষণা দেয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের মিত্ররা থমকে গিয়েছিল। অবশেষে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম লাভ করে। সেই সময় বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত ছিল—সাম্রাজ্যবাদের পক্ষের শক্তি ও মুক্তিকামী শোষিত-বঞ্চিত মানুষের পক্ষের শক্তি, অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত বলয়ের দেশগুলো।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল দেশ স্বাধীন করার জন্য, শোষণের হাত থেকে মানুষের মুক্তির জন্য। বঙ্গবন্ধু সেই সময় সোভিয়েত বলয়ের দিকে হাত প্রসারিত করেছিলেন। এই বলয়ের শক্তি বঙ্গবন্ধুকে নিরাশ করেনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় একমাত্র সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম অচল ছিল। পুরো সমুদ্রবন্দরের আশপাশে মাইন পোঁতা ছিল, ডুবন্ত ছিল কয়েক ডজন জাহাজ। কোনো বিদেশি জাহাজ ওই বন্দরে ভিড়তে পারত না। সদ্য স্বাধীন দেশ আমাদের, একমাত্র সমুদ্রবন্দর অচল থাকার কারণে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। বহির্বিশ্বের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য চলার উপক্রম ছিল না। আমাদের কোষাগার ছিল বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল অতিসামান্য। তদানীন্তন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বহু দেশের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য। সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে কোনো রকম পারিশ্রমিক ছাড়া আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরকে সচল করে দিয়েছিল। ১৯৭২ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৭৩ সালের মে মাস পর্যন্ত ১৩ মাস পরিশ্রমের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর সম্পূর্ণ ব্যবহার উপযোগী হয়েছিল।
তখন এই বন্দরকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য যে কমান্ডার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁর নাম পাভেল যুয়েনকো। এই অ্যাডমিরাল বহু বছর সোভিয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে অনেকবার বলেছেন, জীবনের তরে একবার হলেও চট্টগ্রাম বন্দর দেখে যেতে চান। আমি স্বচক্ষে দেখেছিলাম অন্তত দুজন মান্যবর রাষ্ট্রদূতের কাছে অ্যাডমিরাল সাহেব তাঁর মনের এই আশা ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রদূত অ্যাডমিরাল সাহেবের মনের আশা পূরণ করেননি। পাভেল যুয়েনকো বলতেন, ‘আমরা তোমাদের দেশ দখল করতে যাইনি, আমরা তোমাদের দেশের পতেঙ্গার দুই মিটার জায়গা দখল করেছিলাম, আমাদের এক ২২ বছরের তরুণ সদস্য সেখানে শায়িত আছেন, তাঁর কবরের জায়গার জন্য।’ এ কথা বলে বারবার আপ্লুত হয়েছেন।
সেই বাহাত্তর সালে যাঁরা চট্টগ্রাম বন্দর সচল করার কাজ করেছিলেন, তাঁদের মধ্য থেকে দুজন অফিসার আলেক্সান্দার গোবিনকো ও ভ্লাদিমির ঝিলনঝিস্কিকে গত ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবসে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এই দুজন রাশিয়ার নৌবাহিনীর অফিসার। আমাদের দেশ ভ্রমণ করে, চট্টগ্রাম বন্দরকে স্বচক্ষে দেখে তাঁরা যারপরনাই খুশি হয়েছেন। রাশিয়ার অ্যাম্বাসিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা, বাংলাদেশের জন্মলগ্নের কথা, বাংলাদেশ-রাশিয়ার বন্ধুত্বের কথা গর্বভরে ব্যাখ্যা করে গেছেন। আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে বুঝেছি কারা আমাদের বন্ধু চিরদিনের, যে বন্ধুত্ব কোনো দিন নষ্ট হবে না। রাশিয়ার একটি বড় প্রকল্প আমাদের দেশের পাবনার রূপপুরে—পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যেখান থেকে আমরা অল্প খরচে ২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাব। ৩৫টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে বাংলাদেশও একটি হবে, জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত এই পারমাণবিক শক্তির জন্য।
স্বাধীনতার পর থেকে, অর্থাৎ ১৯৭২ সাল থেকে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নে বাংলাদেশের বহু ছাত্রছাত্রীকে সম্পূর্ণ বিনা খরচে স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন, অর্থাৎ রাশিয়ার একটি বৈশিষ্ট্য ছিল—তারা এই শিক্ষার্থীদের বিশেষজ্ঞ হিসেবে তৈরি করেছে এবং সবাইকে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে। আমরা যেটাকে বলি মেধা পাচার, অর্থাৎ আমাদের দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রলোভনের মাধ্যমে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া, রাশিয়া এ কাজ কখনো করেনি। আমরা সে জন্য রাশিয়ার কাছে কৃতজ্ঞ। রাশিয়ায় যারা পড়াশোনা করতে গিয়েছিল, তাদের প্রথমে তারা দেশপ্রেমিক সুনাগরিক হিসেবে তৈরি করেছে। সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পড়াশোনার বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞ হিসেবে শিক্ষা দিয়ে স্বদেশে পাঠিয়েছে।
রাশিয়ার সরকার বারবার বলেছে, তারা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না। তারা কোনো দেশের আপদে-বিপদে, যথাযথভাবে সাধ্য অনুসারে প্রযুক্তি ও তথ্য দিয়ে সাহায্য করে। তাদের সামর্থ্যের মধ্যে অনেক সময় আর্থিক সাহায্য করে থাকে, তা সম্পূর্ণ অলাভজনকভাবে। এই সম্পর্ক যেন চিরদিন অটুট থাকে। রাশিয়া ও বাংলাদেশের সব জনগণই যেন মনে করে, আমরা একে অপরের ‘বন্ধু চিরদিনের’। বাংলাদেশ-রাশিয়ার বন্ধুত্ব অমর হোক। রাশিয়া-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় থাকুক চিরদিনের জন্য।
লেখক: আব্দুর রাজ্জাক, প্রকৌশলী
জীবনে চলার পথে যার সঙ্গে মনের মিল থাকে, সুখে-দুঃখে, আপদে-বিপদে সবকিছু শেয়ার করা যায়, সে-ই বন্ধু। বন্ধুত্ব হলো এমন এক বন্ধন, যেখানে দুজন ব্যক্তি একে অপরকে বোঝে। আপদে-বিপদে, সুখে-দুঃখে সব সময় কাছে থাকে। এক বন্ধু যদি কোনো বিপদে পড়ে, কোনো কিছু বলার আগেই যদি অপর বন্ধু এগিয়ে আসে তাহলে বুঝতে হবে সে প্রকৃত বন্ধু। একজন প্রকৃত বন্ধু সামান্য ঠুনকো অজুহাতে কোনো কথার ছলে বা সামান্য স্বার্থের জন্য বন্ধন নষ্ট করে না; বরং নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়েও বন্ধুর স্বার্থ রক্ষা করে।
একটি কথা প্রচলিত আছে—যে ব্যক্তির জীবনে কম করে হলেও দুজন প্রকৃত বন্ধু আছে, তিনি আসলেই সুখী মানুষ। বন্ধুত্ব স্থাপিত হয় বিশ্বাসের মাধ্যমে। যদি একে অপরের প্রতি বিশ্বাস বা আস্থা থাকে, তাহলে এই বন্ধুত্ব স্থায়ী হয়। চিরদিনের এ রকম বন্ধুত্ব যেমন ব্যক্তিজীবনে আছে, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এ রকম সুসম্পর্কের বন্ধুত্ব দেখা যায়।
২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ-রাশিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫২তম বছর। বাংলাদেশ ও বর্তমান রাশিয়ার (তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন) মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মার খেয়ে যাচ্ছে, পরাজয়ের দ্বার প্রান্তে, তখন আমেরিকার সরকার ঘোষণা করল পাকিস্তানি বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য সপ্তম নৌবহর পাঠাবে। আমাদের দেশের মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও সাহস ভেঙে দেওয়ার জন্য এই ঘোষণা যথেষ্ট ছিল। সেই অন্তিম সময়ে রাশিয়া, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে অষ্টম নৌবহর পাঠানোর ঘোষণা দেয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের মিত্ররা থমকে গিয়েছিল। অবশেষে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম লাভ করে। সেই সময় বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত ছিল—সাম্রাজ্যবাদের পক্ষের শক্তি ও মুক্তিকামী শোষিত-বঞ্চিত মানুষের পক্ষের শক্তি, অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত বলয়ের দেশগুলো।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল দেশ স্বাধীন করার জন্য, শোষণের হাত থেকে মানুষের মুক্তির জন্য। বঙ্গবন্ধু সেই সময় সোভিয়েত বলয়ের দিকে হাত প্রসারিত করেছিলেন। এই বলয়ের শক্তি বঙ্গবন্ধুকে নিরাশ করেনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় একমাত্র সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম অচল ছিল। পুরো সমুদ্রবন্দরের আশপাশে মাইন পোঁতা ছিল, ডুবন্ত ছিল কয়েক ডজন জাহাজ। কোনো বিদেশি জাহাজ ওই বন্দরে ভিড়তে পারত না। সদ্য স্বাধীন দেশ আমাদের, একমাত্র সমুদ্রবন্দর অচল থাকার কারণে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। বহির্বিশ্বের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য চলার উপক্রম ছিল না। আমাদের কোষাগার ছিল বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল অতিসামান্য। তদানীন্তন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বহু দেশের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য। সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে কোনো রকম পারিশ্রমিক ছাড়া আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরকে সচল করে দিয়েছিল। ১৯৭২ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৭৩ সালের মে মাস পর্যন্ত ১৩ মাস পরিশ্রমের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর সম্পূর্ণ ব্যবহার উপযোগী হয়েছিল।
তখন এই বন্দরকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য যে কমান্ডার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁর নাম পাভেল যুয়েনকো। এই অ্যাডমিরাল বহু বছর সোভিয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে অনেকবার বলেছেন, জীবনের তরে একবার হলেও চট্টগ্রাম বন্দর দেখে যেতে চান। আমি স্বচক্ষে দেখেছিলাম অন্তত দুজন মান্যবর রাষ্ট্রদূতের কাছে অ্যাডমিরাল সাহেব তাঁর মনের এই আশা ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রদূত অ্যাডমিরাল সাহেবের মনের আশা পূরণ করেননি। পাভেল যুয়েনকো বলতেন, ‘আমরা তোমাদের দেশ দখল করতে যাইনি, আমরা তোমাদের দেশের পতেঙ্গার দুই মিটার জায়গা দখল করেছিলাম, আমাদের এক ২২ বছরের তরুণ সদস্য সেখানে শায়িত আছেন, তাঁর কবরের জায়গার জন্য।’ এ কথা বলে বারবার আপ্লুত হয়েছেন।
সেই বাহাত্তর সালে যাঁরা চট্টগ্রাম বন্দর সচল করার কাজ করেছিলেন, তাঁদের মধ্য থেকে দুজন অফিসার আলেক্সান্দার গোবিনকো ও ভ্লাদিমির ঝিলনঝিস্কিকে গত ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবসে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এই দুজন রাশিয়ার নৌবাহিনীর অফিসার। আমাদের দেশ ভ্রমণ করে, চট্টগ্রাম বন্দরকে স্বচক্ষে দেখে তাঁরা যারপরনাই খুশি হয়েছেন। রাশিয়ার অ্যাম্বাসিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা, বাংলাদেশের জন্মলগ্নের কথা, বাংলাদেশ-রাশিয়ার বন্ধুত্বের কথা গর্বভরে ব্যাখ্যা করে গেছেন। আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে বুঝেছি কারা আমাদের বন্ধু চিরদিনের, যে বন্ধুত্ব কোনো দিন নষ্ট হবে না। রাশিয়ার একটি বড় প্রকল্প আমাদের দেশের পাবনার রূপপুরে—পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যেখান থেকে আমরা অল্প খরচে ২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাব। ৩৫টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে বাংলাদেশও একটি হবে, জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত এই পারমাণবিক শক্তির জন্য।
স্বাধীনতার পর থেকে, অর্থাৎ ১৯৭২ সাল থেকে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নে বাংলাদেশের বহু ছাত্রছাত্রীকে সম্পূর্ণ বিনা খরচে স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন, অর্থাৎ রাশিয়ার একটি বৈশিষ্ট্য ছিল—তারা এই শিক্ষার্থীদের বিশেষজ্ঞ হিসেবে তৈরি করেছে এবং সবাইকে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে। আমরা যেটাকে বলি মেধা পাচার, অর্থাৎ আমাদের দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রলোভনের মাধ্যমে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া, রাশিয়া এ কাজ কখনো করেনি। আমরা সে জন্য রাশিয়ার কাছে কৃতজ্ঞ। রাশিয়ায় যারা পড়াশোনা করতে গিয়েছিল, তাদের প্রথমে তারা দেশপ্রেমিক সুনাগরিক হিসেবে তৈরি করেছে। সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পড়াশোনার বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞ হিসেবে শিক্ষা দিয়ে স্বদেশে পাঠিয়েছে।
রাশিয়ার সরকার বারবার বলেছে, তারা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না। তারা কোনো দেশের আপদে-বিপদে, যথাযথভাবে সাধ্য অনুসারে প্রযুক্তি ও তথ্য দিয়ে সাহায্য করে। তাদের সামর্থ্যের মধ্যে অনেক সময় আর্থিক সাহায্য করে থাকে, তা সম্পূর্ণ অলাভজনকভাবে। এই সম্পর্ক যেন চিরদিন অটুট থাকে। রাশিয়া ও বাংলাদেশের সব জনগণই যেন মনে করে, আমরা একে অপরের ‘বন্ধু চিরদিনের’। বাংলাদেশ-রাশিয়ার বন্ধুত্ব অমর হোক। রাশিয়া-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় থাকুক চিরদিনের জন্য।
লেখক: আব্দুর রাজ্জাক, প্রকৌশলী
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে