কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে ভুট্টা চাষ। চলতি মৌসুমে অষ্টগ্রামের আট ইউনিয়নে ৭০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। ধানের তুলনায় কম খরচ ও নিরাপদে ফসল উত্তোলনের মাধ্যমে লাভের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন হাওরাঞ্চলের কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি পরিমাণে ভুট্টা চাষ হয়েছে। তবে একটানা ভুট্টা চাষে হাওরে জমির উর্বরতা ব্যাপকভাবে কমছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ভুট্টা শুধু মানুষের খাদ্য নয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের জনপ্রিয় খাবার ছাড়াও ভুট্টাগাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়। বোরো ধানের তুলনায় কম খরচ, কম পরিচর্যা ও ফসল উত্তোলনে প্রাকৃতিক ক্ষতি কম হওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহী এখানকার কৃষক। ফলে গত এক দশকে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বাড়ছে ভুট্টার চাষ। অন্যদিকে, একাধারে ভুট্টা চাষের ফলে জমির উর্বরতাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে, কমছে উৎপাদন। তবে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহা. আব্দুল মতিন বলেন, জমির সার ব্যবস্থাপনা ও অন্য ফসল আবাদ করে শস্য আবর্তনের মাধ্যমে বা একই জমিতে দীর্ঘদিন ভুট্টা চাষ না করে জমির উর্বরতা ও উৎপাদন ধরে রাখতে হবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, হাওরে ভুট্টা চাষ বাড়াতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের আগ্রহী করতে প্রণোদনা দেয়। বিনা মূল্যে সার, বীজ ও পরামর্শ দিয়ে দেওয়া হয়।

১৫ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর ভুট্টা আবাদের সময় হলেও এবার ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত, ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে উপজেলার আদমপুর, কলমা, কাস্তুল ও অষ্টগ্রাম সদর, পূর্ব অষ্টগ্রাম কাস্তুলসহ আট ইউনিয়নে ৭০০ হেক্টর (১ হাজার ৭২৯ একর) জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩৮০ হেক্টর বেশি। এবার সুপার সাইন, মহাবীর, উত্তরণ, প্যাসিফিকসহ বিভিন্ন জাতের ভুট্টা আবাদ করা হয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে প্রণোদনা হিসেবে কৃষকদের মাঝে ভুট্টা বীজ এখনো বিতরণ করা হয়নি।

উপজেলার কলমা ইউনিয়নের কাকুরিয়া হাওরে দেখা যায়, প্রথম দিকে রোপণ করা ভুট্টা জমিতে নিড়ানি দিচ্ছেন শ্রমিকেরা। কৃষকেরা জানান, পরিবেশ অনুকূলে থাকলে ভুট্টার ভালো ফলন হবে। গেল বছর ভুট্টার আশানুরূপ দাম পাওয়ায় বেশি লাভের আশায় এবার ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন তাঁরা।

কলমা ইউনিয়নের কাকুরিয়া গ্রামের কৃষক জয় কৃষ্ণ দাস বলেন, বোরো ধান চাষে খরচ ও ঝুঁকি বেশি কিন্তু লাভ কম। ভুট্টা চাষে সবদিকেই লাভ বেশি হওয়ায় এর চাষ করেছেন।

আদমপুর ইউনিয়নের ভাটুরা গ্রামের কৃষক সুবাস বৈষ্ণব বলেন, গত বছর এক একর জমিতে ভুট্টা চাষ করে ভালো ফলন ও দামে লাভবান হয়েছেন। এবার সরকারি সহযোগিতা পাননি, তবু ভুট্টা চাষ করেছেন। ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহা. আব্দুল মতিন বলেন, কয়েক বছর ধরে ভুট্টার ভালো ফলন ও ন্যায্যমূল্য পাওয়া এবং বিনা মূল্যে বীজ, সার সরবরাহের কারণে ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। এবার ভুট্টা বীজের সরবরাহ না থাকায় এখনো প্রণোদনা দেওয়া হয়নি।