স্বপ্না রেজা
এমন ছবি এই সময়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হবে, তা কল্পনায়ও ছিল না। দেখার পর থেকে কিছুতেই চোখ থেকে সরছে না ছবিটা। ভাবছি, এ-ও কি সম্ভব? প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের গণরুমে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে মানবেতর বসবাস বা অবস্থান! চারপাশে এত স্থাপনাগত উন্নয়ন, উদ্বোধন—অথচ কারোরই যেন দৃষ্টি নেই এদিকে। মন বলল, কী সাংঘাতিক উদাসীনতা ও অবহেলা শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবার আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের! মেনে নেওয়া কঠিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে কোনোভাবেই মানতে পারছি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সংকট নতুন নয়। দিনে দিনে যেন এই সংকট তীব্র হয়ে এমন এক মানবেতর অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। অতীতে এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার লিখেছি। আজ আবারও লিখতে হচ্ছে। তবে এবার কঠিন হতাশাগ্রস্ত হয়ে লিখছি। যখন এ দেশের জনগণ পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, ব্রিজ, বঙ্গবন্ধু টানেল, পর্যটনকেন্দ্র এবং নতুন নতুন মসজিদ-মাদ্রাসা ও মন্দির নির্মাণ হতে দেখে, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমে এমন অবস্থান দেখতে হবে, তা কে ভেবেছে? ১২ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে সেই নির্মম, অমানবিক এবং সত্য ছবিটা দেখতে হলো।
প্রথমে মনে হয়েছিল, ছবিটা মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত শ্রমিক ভাইদের; যাঁরা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করে দেশের রেমিট্যান্স বাড়ান, পরিবারকে সচ্ছলতা এনে দেওয়ার কঠিন পরিশ্রম করেন। অসুখ-বিসুখ, কখনো মৃত্যু তাঁদের কারও কারও জীবনে সঙ্গী হয়। মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত শ্রমজীবী ভাই-বোনদের এমন সচিত্র সংবাদ তো আমাদের প্রায়ই দেখতে হয় ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, পড়তে হয় পত্রিকার পাতায়। পরে ক্যাপশন পড়ে আমার দেখার ভুল ভাঙল। কিন্তু কষ্ট হলো বহুগুণ এবং মনে হলো, আমি যা চারপাশে দেখি বা এত দিন দেখেছি, তা যেন মস্ত ভুল। মানসিক দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম।
দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের স্বপ্ন প্রত্যেক মেধাবী শিক্ষার্থীর থাকে। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকে উচ্চ-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। পরিবারের আয়-ব্যয়ের হিসাব কষে সেই আকাঙ্ক্ষার সূচনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আকাঙ্ক্ষা তুলনামূলক বেশি থাকে। ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের এই আকাঙ্ক্ষাকে পুঁজি করে একশ্রেণির সিনিয়র ছাত্র ও শিক্ষকেরা কোচিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন। লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তাঁরা অভিভাবকদের কাছ থেকে। তারপর তুমুল প্রতিযোগিতা ও মেধার ভিত্তিতে সাধারণত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ ঘটে। এর বাইরে যে ব্যতিক্রম হয় না দু-একটি ক্ষেত্রে, তা কিন্তু নয়। মাঝেসাজে শোনা যায়, বিশেষ ক্ষমতাবলে ও রাজনৈতিক কারণে ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটে। সন্তানদের পাশাপাশি অভিভাবকেরাও স্বপ্ন দেখেন, তাঁর সন্তান এমন একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাবে।
মেধা ও যোগ্যতাবলে যখন কোনো শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পায়, তখন অভিভাবকদের যে আনন্দ, উচ্ছ্বাস এবং গর্ববোধ হয়, তা যেন নিমেষেই ধুলোয় মিশে যায় যখন তাঁরা দেখেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রিয় সন্তান হলের গণরুমে মানবেতর জীবনযাপন করছে। শোয়ার জন্য বিছানা নেই। মেঝেতে শুয়ে আছে। মাথার কাছে বা পাশে কাপড়ের ব্যাগ। আহা! কষ্ট পাচ্ছি এ ছবি দেখে প্রথমত, একজন মা হিসেবে, সচেতন নাগরিক হিসেবে এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সদা জাগ্রত একজন নাগরিক হিসেবে।
আজকের পত্রিকার সংবাদে প্রকাশ পেয়েছে যে, আসনসংকটের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২-২৩ সেশনে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া ২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ঠাঁই হয়েছে বিভিন্ন হলের গণরুমে। গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হচ্ছে তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের ১২৩টি কক্ষ গণরুম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব কক্ষে ২ হাজার ৩০০-এর বেশি শিক্ষার্থীর বসবাস। চারজনের কক্ষে ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে থাকছে। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা এসব কক্ষের শিক্ষার্থীদের আবার ছাত্রলীগের মিছিলে বাধ্যতামূলকভাবে যেতে হয়। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের দ্বারা সাধারণ ও নতুন শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের ঘটনা নতুন নয়। অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ পেয়েছে ইতিপূর্বে। কেউ কেউ পড়াশোনার সমাপ্তি টেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছে।
এ কথা বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনীতি আর যাই পারুক, শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ শিক্ষার উপযুক্ত করতে ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবিমুখ হতে সহায়ক হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে মস্ত বিভাজন টেনেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রসংগঠনকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে। ফলে কখনোই কোনো ছাত্রসংগঠন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কিংবা স্বার্থে কাজ করার কথা ভাবেনি। উপরন্তু তারাও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংগঠনের স্বার্থে ব্যবহার করেছে এবং আজও করছে।
কেউ কি নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকট দূর করার? শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কাজটা কী তবে? সাধারণ জনগণ কি ভেবে নেবে, শিক্ষাব্যবস্থাই বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত একটি সেক্টর, যেখানে শিক্ষা অনুরাগী বিবেকের চিহ্নমাত্র নেই? ইতিপূর্বে শিক্ষা খাতে দুর্নীতি নিয়ে বহু অনুসন্ধানীমূলক সংবাদ পত্রিকার পাতায় এসেছে। তার পরও বিচক্ষণতার, বোধের পরিচয় মেলে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জবাবদিহির সময় এখন। বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি অন্তত একবার ঘুরে আসুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম। দেখুন, আপনার প্রিয় আগামীর বাংলাদেশ কী নিদারুণ কষ্টে বসবাস করছে!
আমার বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন দৃশ্য সহ্য করতে পারবেন না। যেমন আমি পারছি না। এই দেশ ডিজিটাল থেকে এখন স্মার্ট হওয়ার পথে। অথচ কেমন অব্যবস্থাপনায়, অবহেলায় বসবাস করছে আমাদের সন্তানেরা!
একটি দেশে শিক্ষার চেয়ে বড় সম্পদ আর কিছুই হয় না। শিক্ষার বিকল্প নেই। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সেই জাতি তত বেশি উন্নত ও শক্তিশালী। দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা মেধায়, জ্ঞানে বহির্বিশ্বে অনেক সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে, দেশকে পরিচিত করেছে। ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থাকে উন্নত ও আধুনিক করা না হলে ক্ষতিটা কিন্তু এই জাতির, এই দেশের। এখানে সংশ্লিষ্টদের বড় অবহেলা, উদাসীনতা, এমনকি দুর্নীতি নির্মূল করা অপরিহার্য।
এ কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আপাতত সৌন্দর্য দৃশ্যমান হলেও ইট-সুরকির স্থাপনা দিয়ে দেশের মেরুদণ্ড মজবুত হয় না। দক্ষ ও সুসজ্জিত নিরাপত্তা বাহিনী দেশের নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখে যেমন, ঠিক তেমনি দেশের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা রক্ষা করে একটি শিক্ষিত জাতি। আর শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট না হলে দেশ স্মার্ট হয় কী করে? মনে হয় না, শিক্ষার্থীদের বসবাসের এমন মানবেতর চিত্র পৃথিবীর আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
এমন ছবি এই সময়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হবে, তা কল্পনায়ও ছিল না। দেখার পর থেকে কিছুতেই চোখ থেকে সরছে না ছবিটা। ভাবছি, এ-ও কি সম্ভব? প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের গণরুমে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে মানবেতর বসবাস বা অবস্থান! চারপাশে এত স্থাপনাগত উন্নয়ন, উদ্বোধন—অথচ কারোরই যেন দৃষ্টি নেই এদিকে। মন বলল, কী সাংঘাতিক উদাসীনতা ও অবহেলা শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবার আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের! মেনে নেওয়া কঠিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে কোনোভাবেই মানতে পারছি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সংকট নতুন নয়। দিনে দিনে যেন এই সংকট তীব্র হয়ে এমন এক মানবেতর অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। অতীতে এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার লিখেছি। আজ আবারও লিখতে হচ্ছে। তবে এবার কঠিন হতাশাগ্রস্ত হয়ে লিখছি। যখন এ দেশের জনগণ পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, ব্রিজ, বঙ্গবন্ধু টানেল, পর্যটনকেন্দ্র এবং নতুন নতুন মসজিদ-মাদ্রাসা ও মন্দির নির্মাণ হতে দেখে, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমে এমন অবস্থান দেখতে হবে, তা কে ভেবেছে? ১২ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে সেই নির্মম, অমানবিক এবং সত্য ছবিটা দেখতে হলো।
প্রথমে মনে হয়েছিল, ছবিটা মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত শ্রমিক ভাইদের; যাঁরা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করে দেশের রেমিট্যান্স বাড়ান, পরিবারকে সচ্ছলতা এনে দেওয়ার কঠিন পরিশ্রম করেন। অসুখ-বিসুখ, কখনো মৃত্যু তাঁদের কারও কারও জীবনে সঙ্গী হয়। মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত শ্রমজীবী ভাই-বোনদের এমন সচিত্র সংবাদ তো আমাদের প্রায়ই দেখতে হয় ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, পড়তে হয় পত্রিকার পাতায়। পরে ক্যাপশন পড়ে আমার দেখার ভুল ভাঙল। কিন্তু কষ্ট হলো বহুগুণ এবং মনে হলো, আমি যা চারপাশে দেখি বা এত দিন দেখেছি, তা যেন মস্ত ভুল। মানসিক দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম।
দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের স্বপ্ন প্রত্যেক মেধাবী শিক্ষার্থীর থাকে। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকে উচ্চ-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। পরিবারের আয়-ব্যয়ের হিসাব কষে সেই আকাঙ্ক্ষার সূচনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আকাঙ্ক্ষা তুলনামূলক বেশি থাকে। ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের এই আকাঙ্ক্ষাকে পুঁজি করে একশ্রেণির সিনিয়র ছাত্র ও শিক্ষকেরা কোচিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন। লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তাঁরা অভিভাবকদের কাছ থেকে। তারপর তুমুল প্রতিযোগিতা ও মেধার ভিত্তিতে সাধারণত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ ঘটে। এর বাইরে যে ব্যতিক্রম হয় না দু-একটি ক্ষেত্রে, তা কিন্তু নয়। মাঝেসাজে শোনা যায়, বিশেষ ক্ষমতাবলে ও রাজনৈতিক কারণে ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটে। সন্তানদের পাশাপাশি অভিভাবকেরাও স্বপ্ন দেখেন, তাঁর সন্তান এমন একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাবে।
মেধা ও যোগ্যতাবলে যখন কোনো শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পায়, তখন অভিভাবকদের যে আনন্দ, উচ্ছ্বাস এবং গর্ববোধ হয়, তা যেন নিমেষেই ধুলোয় মিশে যায় যখন তাঁরা দেখেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রিয় সন্তান হলের গণরুমে মানবেতর জীবনযাপন করছে। শোয়ার জন্য বিছানা নেই। মেঝেতে শুয়ে আছে। মাথার কাছে বা পাশে কাপড়ের ব্যাগ। আহা! কষ্ট পাচ্ছি এ ছবি দেখে প্রথমত, একজন মা হিসেবে, সচেতন নাগরিক হিসেবে এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সদা জাগ্রত একজন নাগরিক হিসেবে।
আজকের পত্রিকার সংবাদে প্রকাশ পেয়েছে যে, আসনসংকটের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২-২৩ সেশনে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া ২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ঠাঁই হয়েছে বিভিন্ন হলের গণরুমে। গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হচ্ছে তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের ১২৩টি কক্ষ গণরুম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব কক্ষে ২ হাজার ৩০০-এর বেশি শিক্ষার্থীর বসবাস। চারজনের কক্ষে ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে থাকছে। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা এসব কক্ষের শিক্ষার্থীদের আবার ছাত্রলীগের মিছিলে বাধ্যতামূলকভাবে যেতে হয়। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের দ্বারা সাধারণ ও নতুন শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের ঘটনা নতুন নয়। অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ পেয়েছে ইতিপূর্বে। কেউ কেউ পড়াশোনার সমাপ্তি টেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছে।
এ কথা বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনীতি আর যাই পারুক, শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ শিক্ষার উপযুক্ত করতে ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবিমুখ হতে সহায়ক হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে মস্ত বিভাজন টেনেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রসংগঠনকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে। ফলে কখনোই কোনো ছাত্রসংগঠন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কিংবা স্বার্থে কাজ করার কথা ভাবেনি। উপরন্তু তারাও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংগঠনের স্বার্থে ব্যবহার করেছে এবং আজও করছে।
কেউ কি নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকট দূর করার? শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কাজটা কী তবে? সাধারণ জনগণ কি ভেবে নেবে, শিক্ষাব্যবস্থাই বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত একটি সেক্টর, যেখানে শিক্ষা অনুরাগী বিবেকের চিহ্নমাত্র নেই? ইতিপূর্বে শিক্ষা খাতে দুর্নীতি নিয়ে বহু অনুসন্ধানীমূলক সংবাদ পত্রিকার পাতায় এসেছে। তার পরও বিচক্ষণতার, বোধের পরিচয় মেলে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জবাবদিহির সময় এখন। বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি অন্তত একবার ঘুরে আসুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম। দেখুন, আপনার প্রিয় আগামীর বাংলাদেশ কী নিদারুণ কষ্টে বসবাস করছে!
আমার বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন দৃশ্য সহ্য করতে পারবেন না। যেমন আমি পারছি না। এই দেশ ডিজিটাল থেকে এখন স্মার্ট হওয়ার পথে। অথচ কেমন অব্যবস্থাপনায়, অবহেলায় বসবাস করছে আমাদের সন্তানেরা!
একটি দেশে শিক্ষার চেয়ে বড় সম্পদ আর কিছুই হয় না। শিক্ষার বিকল্প নেই। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সেই জাতি তত বেশি উন্নত ও শক্তিশালী। দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা মেধায়, জ্ঞানে বহির্বিশ্বে অনেক সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে, দেশকে পরিচিত করেছে। ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থাকে উন্নত ও আধুনিক করা না হলে ক্ষতিটা কিন্তু এই জাতির, এই দেশের। এখানে সংশ্লিষ্টদের বড় অবহেলা, উদাসীনতা, এমনকি দুর্নীতি নির্মূল করা অপরিহার্য।
এ কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আপাতত সৌন্দর্য দৃশ্যমান হলেও ইট-সুরকির স্থাপনা দিয়ে দেশের মেরুদণ্ড মজবুত হয় না। দক্ষ ও সুসজ্জিত নিরাপত্তা বাহিনী দেশের নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখে যেমন, ঠিক তেমনি দেশের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা রক্ষা করে একটি শিক্ষিত জাতি। আর শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট না হলে দেশ স্মার্ট হয় কী করে? মনে হয় না, শিক্ষার্থীদের বসবাসের এমন মানবেতর চিত্র পৃথিবীর আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে