শাইখ সিরাজ
বিজয়ের ৫২ বছর পূর্ণ করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে। এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। সেবা ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদনে ধারাবাহিক অগ্রগতি এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস হওয়ার কারণে অর্থনীতিতে কৃষির অপরিহার্যতা অপরিবর্তিত রয়েছে। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩-১৪ শতাংশ হলেও সাম্প্রতিক শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, শ্রমশক্তির ৪৪ শতাংশ এখনো কৃষিতে নিয়োজিত, মানে কৃষি এখনো বিনিয়োগের বড় ক্ষেত্র।
এই সময়ে এসে আমরা আমাদের খাদ্যনিরাপত্তার কোন স্তরে রয়েছি, যে ক্ষুধাকে জয় করার জন্য আমরা জীবন বাজি রেখে স্বাধীন হয়েছি...এই ৫২ বছরে আমরা তার কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি? খাদ্যনিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশের আগামী পরিকল্পনাটাই বা কী? মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা কণ্ঠে তুলেছি স্বাধীনতা দুর্বার ইচ্ছার গান—
বাংলার প্রতি ঘর ভরে দিতে চাই মোরা অন্নে
আমাদের রক্তে টগবগ দুলছে মুক্তির রিক্ত তারুণ্যে
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্ষুধামুক্তির। একটি আত্মনির্ভরশীল জাতিতে পরিণত হওয়া। মূলত স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিল কৃষকের...শ্রমিকের...সাধারণ মানুষের। পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে যে স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে আনা হয়েছে...এই বিজয় অর্জিত হয়েছে তাদের রক্তের দামে। দুবেলা দুমুঠো ভাতের নিশ্চয়তা চেয়েই আমাদের সংগ্রাম আজও চলমান।
১৯৭১ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি (৭৫ মিলিয়ন, ইউএনএফপিএ, ২০২০)। সেই সময় খাদ্যঘাটতি ছিল ২৫-৩০ লাখ টন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কৃষির ওপর ব্যাপক গুরুত্বারোপ করা হয়। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই ছিল স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য। তাই স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে আমাদের স্লোগান হয়ে ওঠে, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কৃষিকে ঘিরেই ছিল সে সময়কার উন্নয়নচিন্তা। কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাও ছিল।
পরে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলে তৈরি পোশাক খাত চলে এলেও কৃষি সব সময়ই শক্তিশালী খুঁটি হিসেবে কাজ করেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এই মুহূর্তে বিশ্বের ৩৪ দশমিক ৫ কোটি মানুষ তীব্র খাদ্যসংকটে ভুগছে। বিশ্বের যখন এই পরিস্থিতি, তখন খাদ্যনিরাপত্তার দিকে জোর দিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। খাদ্যনিরাপত্তার সবচেয়ে বড় বাধা জলবায়ু পরিবর্তন। একে কীভাবে মোকাবিলা করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যায়, সেই পরিকল্পনা করতে হবে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বীজের গজানো, পরাগায়ন, ফুল ও ফল ধরা, পরিপক্ব হতে সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ও সূর্যের আলো দরকার। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘ সময় খরা থাকছে। অথবা অসময়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, হচ্ছে বন্যা। শীতকাল কম হচ্ছে বা বেশি হচ্ছে। এভাবে ফসল ফলানোর জন্য উপাদানগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু বীজ বপন ও চারা রোপণের সময় পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। ফলে শস্য উৎপাদনে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কৃষকেরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর কারণে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে। আর এ কারণে গম, ছোলা, মসুর, মুগ ডালসহ কিছু কিছু ফসলের উৎপাদন কমে গেছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ। এ পর্যন্ত লবণাক্ততা, খরা, প্লাবনসহিষ্ণু এবং জিঙ্কসমৃদ্ধ ১৩৪টি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। দুর্যোগ থেকে বাঁচাতে আমাদের রয়েছে লবণ, খরা, বন্যাসহিষ্ণু ধানের জাত। তবে সময় এসেছে এই জাতগুলোর সহনশীল ক্ষমতা আবার পরীক্ষা করার। প্রয়োজনে নতুন জাত উদ্ভাবন করতে হবে। আমাদের বিজ্ঞানী এবং নীতিনির্ধারকদের সময় জয় করে চলতে হবে। যেকোনো বিপদের আগাম দিকটাও মাথায় রেখে এসব প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে যেতে হবে।
যেমন কার্তিকে যে মঙ্গা হতো দেশের উত্তরাঞ্চলে, সেই মঙ্গাকে প্রতিহত করা গেছে একাধিক স্বল্পমেয়াদি (শর্ট ডিউরেশন ভ্যারাইটি) ধানের জাত দিয়ে। ব্রি ধান ৩৩, ৩৯ এবং বিনা ধান ৭, এগুলো আগাম জাতের স্বল্পমেয়াদি ধান; যা কার্তিক আসার আগেই কৃষক ঘরে তুলতে পারেন। নতুন জাতের এই ধান দিয়ে মঙ্গাকে জয় করেছে স্থানীয় কৃষক। এই সফলতা দেখিয়েছেন আমাদের ধান বিজ্ঞানীরা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হাওরাঞ্চলের জন্য স্বল্পমেয়াদি বোরো ধানের কোনো জাত আছে কি না? আমার জানামতে নেই। তবে ব্রির মহাপরিচালক ড. শাজাহান কবীর বলেছেন, খুব শিগগির তাঁরা হাওরাঞ্চলের জন্য স্বল্পমেয়াদি উচ্চফলনশীল ধান কৃষক পর্যায়ে দিতে পারবেন। ষাট-সত্তর-আশির দশকে কৃষক আইআর-৮ জাতের ধান চাষ করতেন হাওরাঞ্চলে; যার মেয়াদকাল লাগানোর পর থেকে কাটা পর্যন্ত ১৭০ দিন। পরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বিআর-২৮ ও ২৯ জাত বোরো মৌসুমের জন্য উফশী জাত হিসেবে চাষ করলেন কৃষক। বিআর-২৮ লাগানোর পর থেকে ১৪০ এবং ১৬০ দিনে বিআর-২৯ ফসল কাটা যায়। সাধারণত হাওরের কৃষক বিআর-২৮-এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়লেন বেশি। কারণ আগাম বন্যার পানি আসার আগেই তাঁরা ফসল তুলতে পারেন।
কৃষি-বাণিজ্য আগামীর অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে। এই উপলব্ধি থেকেই উন্নত বিশ্ব নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। আমাদের ডেলটা প্ল্যান তথা বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০তেও কৃষিকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য কৃষিকে টেকসই ও নিরাপদ করে খাদ্য এবং পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি খাতে নেওয়া হয়েছে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ‘প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার)’ নামের এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। এটি কৃষির উন্নয়নে এ পর্যন্ত নেওয়া সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলো সত্যিকার অর্থে যথাযথ বাস্তবায়ন করা গেলে বাণিজ্যিক কৃষির যেমন নতুন ধারা তৈরি হবে, তেমনি বাড়বে জিডিপিতে কৃষির অবদান।
তবে বাংলাদেশের কৃষক অসম্ভবকে সম্ভব করার মতোই কাজ করেছেন। করোনার মতো বড় অভিঘাত যা বিশ্ব অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়েছে। এরপর বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিগ্রহের মতো সময়েও আমাদের খাদ্য উৎপাদনের ধারাবাহিকতা সমুন্নত রেখেছেন বাংলাদেশের কৃষক। যদিও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আমাদের কিছুটা বিচলিত করেছে। কিন্তু বিশ্বমহলের খাদ্যঘাটতির ইঙ্গিতকে পাশ কাটিয়ে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখেছে আমাদের কৃষি উৎপাদন।
‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে আজ খাদ্য স্বয়ম্ভরতার দিকে বাংলাদেশ। এই সময়ে ধান-পাট চাষের দেশটি কৃষি বৈচিত্র্যে অনন্য হয়ে উঠেছে। শুধু ফসল কৃষিই নয়, পোলট্রি, গবাদি পশু, মৎস্য খাতের অনন্য সাফল্য খাদ্যনিরাপত্তার বলয় রচনা করেছে। বছর দশেক আগেও উত্তরাঞ্চলের ভয়াবহ মঙ্গা আজ গল্পের মতো শোনায়। এই সাফল্য কৃষকের, গবেষকের, সরকারের সময়োপযোগী পরিকল্পনার।
আজকের পর্বে শুধু আমাদের মূল ফসল ধানের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, সংকট ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছি। বিশ্বাস করি—একটি সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনার ভেতর দিয়ে রচিত হবে আগামীর খাদ্যনিরাপত্তা, কৃষিভিত্তিক টেকসই অর্থনীতি।
বিজয়ের ৫২ বছর পূর্ণ করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে। এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। সেবা ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদনে ধারাবাহিক অগ্রগতি এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস হওয়ার কারণে অর্থনীতিতে কৃষির অপরিহার্যতা অপরিবর্তিত রয়েছে। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩-১৪ শতাংশ হলেও সাম্প্রতিক শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, শ্রমশক্তির ৪৪ শতাংশ এখনো কৃষিতে নিয়োজিত, মানে কৃষি এখনো বিনিয়োগের বড় ক্ষেত্র।
এই সময়ে এসে আমরা আমাদের খাদ্যনিরাপত্তার কোন স্তরে রয়েছি, যে ক্ষুধাকে জয় করার জন্য আমরা জীবন বাজি রেখে স্বাধীন হয়েছি...এই ৫২ বছরে আমরা তার কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি? খাদ্যনিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশের আগামী পরিকল্পনাটাই বা কী? মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা কণ্ঠে তুলেছি স্বাধীনতা দুর্বার ইচ্ছার গান—
বাংলার প্রতি ঘর ভরে দিতে চাই মোরা অন্নে
আমাদের রক্তে টগবগ দুলছে মুক্তির রিক্ত তারুণ্যে
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্ষুধামুক্তির। একটি আত্মনির্ভরশীল জাতিতে পরিণত হওয়া। মূলত স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিল কৃষকের...শ্রমিকের...সাধারণ মানুষের। পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে যে স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে আনা হয়েছে...এই বিজয় অর্জিত হয়েছে তাদের রক্তের দামে। দুবেলা দুমুঠো ভাতের নিশ্চয়তা চেয়েই আমাদের সংগ্রাম আজও চলমান।
১৯৭১ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি (৭৫ মিলিয়ন, ইউএনএফপিএ, ২০২০)। সেই সময় খাদ্যঘাটতি ছিল ২৫-৩০ লাখ টন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কৃষির ওপর ব্যাপক গুরুত্বারোপ করা হয়। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই ছিল স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য। তাই স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে আমাদের স্লোগান হয়ে ওঠে, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কৃষিকে ঘিরেই ছিল সে সময়কার উন্নয়নচিন্তা। কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাও ছিল।
পরে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলে তৈরি পোশাক খাত চলে এলেও কৃষি সব সময়ই শক্তিশালী খুঁটি হিসেবে কাজ করেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এই মুহূর্তে বিশ্বের ৩৪ দশমিক ৫ কোটি মানুষ তীব্র খাদ্যসংকটে ভুগছে। বিশ্বের যখন এই পরিস্থিতি, তখন খাদ্যনিরাপত্তার দিকে জোর দিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। খাদ্যনিরাপত্তার সবচেয়ে বড় বাধা জলবায়ু পরিবর্তন। একে কীভাবে মোকাবিলা করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যায়, সেই পরিকল্পনা করতে হবে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বীজের গজানো, পরাগায়ন, ফুল ও ফল ধরা, পরিপক্ব হতে সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ও সূর্যের আলো দরকার। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘ সময় খরা থাকছে। অথবা অসময়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, হচ্ছে বন্যা। শীতকাল কম হচ্ছে বা বেশি হচ্ছে। এভাবে ফসল ফলানোর জন্য উপাদানগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু বীজ বপন ও চারা রোপণের সময় পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। ফলে শস্য উৎপাদনে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কৃষকেরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর কারণে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে। আর এ কারণে গম, ছোলা, মসুর, মুগ ডালসহ কিছু কিছু ফসলের উৎপাদন কমে গেছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ। এ পর্যন্ত লবণাক্ততা, খরা, প্লাবনসহিষ্ণু এবং জিঙ্কসমৃদ্ধ ১৩৪টি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। দুর্যোগ থেকে বাঁচাতে আমাদের রয়েছে লবণ, খরা, বন্যাসহিষ্ণু ধানের জাত। তবে সময় এসেছে এই জাতগুলোর সহনশীল ক্ষমতা আবার পরীক্ষা করার। প্রয়োজনে নতুন জাত উদ্ভাবন করতে হবে। আমাদের বিজ্ঞানী এবং নীতিনির্ধারকদের সময় জয় করে চলতে হবে। যেকোনো বিপদের আগাম দিকটাও মাথায় রেখে এসব প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে যেতে হবে।
যেমন কার্তিকে যে মঙ্গা হতো দেশের উত্তরাঞ্চলে, সেই মঙ্গাকে প্রতিহত করা গেছে একাধিক স্বল্পমেয়াদি (শর্ট ডিউরেশন ভ্যারাইটি) ধানের জাত দিয়ে। ব্রি ধান ৩৩, ৩৯ এবং বিনা ধান ৭, এগুলো আগাম জাতের স্বল্পমেয়াদি ধান; যা কার্তিক আসার আগেই কৃষক ঘরে তুলতে পারেন। নতুন জাতের এই ধান দিয়ে মঙ্গাকে জয় করেছে স্থানীয় কৃষক। এই সফলতা দেখিয়েছেন আমাদের ধান বিজ্ঞানীরা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হাওরাঞ্চলের জন্য স্বল্পমেয়াদি বোরো ধানের কোনো জাত আছে কি না? আমার জানামতে নেই। তবে ব্রির মহাপরিচালক ড. শাজাহান কবীর বলেছেন, খুব শিগগির তাঁরা হাওরাঞ্চলের জন্য স্বল্পমেয়াদি উচ্চফলনশীল ধান কৃষক পর্যায়ে দিতে পারবেন। ষাট-সত্তর-আশির দশকে কৃষক আইআর-৮ জাতের ধান চাষ করতেন হাওরাঞ্চলে; যার মেয়াদকাল লাগানোর পর থেকে কাটা পর্যন্ত ১৭০ দিন। পরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বিআর-২৮ ও ২৯ জাত বোরো মৌসুমের জন্য উফশী জাত হিসেবে চাষ করলেন কৃষক। বিআর-২৮ লাগানোর পর থেকে ১৪০ এবং ১৬০ দিনে বিআর-২৯ ফসল কাটা যায়। সাধারণত হাওরের কৃষক বিআর-২৮-এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়লেন বেশি। কারণ আগাম বন্যার পানি আসার আগেই তাঁরা ফসল তুলতে পারেন।
কৃষি-বাণিজ্য আগামীর অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে। এই উপলব্ধি থেকেই উন্নত বিশ্ব নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। আমাদের ডেলটা প্ল্যান তথা বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০তেও কৃষিকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য কৃষিকে টেকসই ও নিরাপদ করে খাদ্য এবং পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি খাতে নেওয়া হয়েছে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ‘প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার)’ নামের এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। এটি কৃষির উন্নয়নে এ পর্যন্ত নেওয়া সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলো সত্যিকার অর্থে যথাযথ বাস্তবায়ন করা গেলে বাণিজ্যিক কৃষির যেমন নতুন ধারা তৈরি হবে, তেমনি বাড়বে জিডিপিতে কৃষির অবদান।
তবে বাংলাদেশের কৃষক অসম্ভবকে সম্ভব করার মতোই কাজ করেছেন। করোনার মতো বড় অভিঘাত যা বিশ্ব অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়েছে। এরপর বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিগ্রহের মতো সময়েও আমাদের খাদ্য উৎপাদনের ধারাবাহিকতা সমুন্নত রেখেছেন বাংলাদেশের কৃষক। যদিও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আমাদের কিছুটা বিচলিত করেছে। কিন্তু বিশ্বমহলের খাদ্যঘাটতির ইঙ্গিতকে পাশ কাটিয়ে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখেছে আমাদের কৃষি উৎপাদন।
‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে আজ খাদ্য স্বয়ম্ভরতার দিকে বাংলাদেশ। এই সময়ে ধান-পাট চাষের দেশটি কৃষি বৈচিত্র্যে অনন্য হয়ে উঠেছে। শুধু ফসল কৃষিই নয়, পোলট্রি, গবাদি পশু, মৎস্য খাতের অনন্য সাফল্য খাদ্যনিরাপত্তার বলয় রচনা করেছে। বছর দশেক আগেও উত্তরাঞ্চলের ভয়াবহ মঙ্গা আজ গল্পের মতো শোনায়। এই সাফল্য কৃষকের, গবেষকের, সরকারের সময়োপযোগী পরিকল্পনার।
আজকের পর্বে শুধু আমাদের মূল ফসল ধানের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, সংকট ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছি। বিশ্বাস করি—একটি সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনার ভেতর দিয়ে রচিত হবে আগামীর খাদ্যনিরাপত্তা, কৃষিভিত্তিক টেকসই অর্থনীতি।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে