মোনায়েম সরকার
৫ আগস্ট দেশে যে অভূতপূর্ব ছাত্র ও গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, তার অভিঘাতে রাজনীতির কী গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নানা ধরনের মতামত সামনে আসছে। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে কি বিএনপির লুটেরা শাসন কায়েম হবে? নাকি বেনামে জামায়াতে ইসলামী ও অন্য ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির আসন পোক্ত হবে? ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারই বা কত দিন ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ কতটা এগিয়ে নেবে?
হাসিনা সরকারের বিদায়ের এক মাস যেতে না যেতেই উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার ফোলা বেলুন যে কিছুটা হলেও চুপসে গেছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের জনমনস্তত্ত্ব অস্থিরতায় ঠাসা। আমরা বিজয় অর্জন করি, কিন্তু অর্জিত বিজয় ধরে রাখতে পারি না। ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাঘডাশে। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের বিজয়ের সুফল কার ঘরে উঠবে, তা নিয়ে রীতিমতো কামড়াকামড়ি শুরু হয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, সেই সরকারের এমন লজ্জাজনক পতনের বিষয়টি সম্ভবত আওয়ামী লীগের চরম বিরোধীরাও ভাবেনি, আওয়ামী লীগ দরদিরা তো নয়ই।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে না গেলে তাঁর কী পরিণতি হতো, তা নিয়ে অনুমাননির্ভর আলোচনা না করে তিনি দেশ ছাড়ায় তাঁর দল ও দলের লাখ লাখ কর্মী-সমর্থকের অবস্থা কী দাঁড়াল, সে বিষয়েই কিছু আলোচনা করা যেতে পারে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে সংকটে পড়েছে। দলের অনেক নেতা দল ত্যাগ করেছেন। দলে বিভক্তিও দেখা দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা, অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরও আওয়ামী লীগ বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছিল। তখন এমনও বলা হতো যে আওয়ামী লীগ আর কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না, ক্ষমতায় যাওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু এসব অনুমান কিংবা ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক হয়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ক্ষমতায় গিয়েছে এবং দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময়ের শাসক দল হওয়ার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের রায় নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল, দেশ শাসনের অধিকার পেয়েছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। ওই সময়ের পর থেকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের আগপর্যন্ত দলটি ক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর ৭ মাস। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সবগুলোই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বলা হয়, একধরনের তামাশার নির্বাচনে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করে আওয়ামী লীগের সর্বনাশ করেছেন হাসিনা। গণতান্ত্রিক রাজনীতির ঐতিহ্যবাহী দলটি স্বৈরাচারী শাসনের অপবাদ নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হলো। শেখ হাসিনা নিজে ফ্যাসিস্ট, খুনি শাসক হিসেবে নিন্দিত। দেশ ছেড়ে গিয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রাণে বাঁচলেও আওয়ামী লীগ নামক দলটিকে তিনি মৃত্যুশয্যায় তুলে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ আবার সুস্থ-সবল হয়ে উঠবে কি না, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
১৫ বছরের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার হয়ে উঠেছিল স্বৈরতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কোনো সীমা ছিল না। এই সময়কালে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দলীয়করণের মাধ্যমে আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়েছিল। দুদক, পিএসসি, মানবাধিকার কমিশন—যত কমিশন আছে সবগুলোকে একধরনের দুর্নীতিসহায়ক জায়গায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ পরিণত হয়েছে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ইচ্ছাপূরণের যন্ত্রে। অসৎ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি—এই তিন চক্রের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার স্বেচ্ছাচারী বাসনা শেষ পর্যন্ত ধূলিসাৎ হয়েছে।
যেহেতু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে মাত্র এক মাস আগে, তাই এখন শুধু ওই সরকারের খারাপ দিকগুলোই সামনে আসছে। এবার আন্দোলন যেহেতু শিক্ষার্থীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে এবং এই শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের আগে যে বিএনপি-জামায়াতের সরকার ছিল, সেই সরকারের শাসনকাল দেখেনি, তাই তাদের কাছে ‘আওয়ামী দুঃশাসন’ খুবই ভয়াবহ বলে মনে হচ্ছে।
এক মাস আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, চুরি, অর্থ আত্মসাতের পিলে চমকানো সব খবর যেভাবে সামনে আসছে, তাতে এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে আওয়ামী লীগ নামে দল পুনর্গঠন বুঝি আর সম্ভব হবে না। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটাও মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশ হলো ‘সব সম্ভবের দেশ’। খাদে পড়াও যেমন এখানে সহজ, তেমনি খাদ থেকে ওঠাও খুব কঠিন নয়।
শেখ হাসিনা ও তাঁর দুষ্কর্মের সহযোগীদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশে আওয়ামী শাসন ছাড়া অন্য শাসনামলও প্রশংসাযোগ্য ছিল না। আওয়ামী লীগের শাসনকে এখন যেমন দুঃশাসন বলে অভিহিত করা হচ্ছে, তেমনি ২০০১-০৬ সময়কালে বিএনপি-জামায়াতের শাসনকালেও সুশাসনের দৃষ্টান্ত ছিল না। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়া, বিদেশে অর্থ পাচারসহ যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, এর কোনটা বিএনপির বিরুদ্ধে ছিল না?
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিভিন্ন দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে বহির্বিশ্বে লজ্জাজনক এক পরিচিতি পেয়েছিল বাংলাদেশ। দেশে ব্যাপকভাবে দুর্নীতির কারণে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের করাপশন পারসেপশন ইনডেক্সে (সিপিআই) বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বের মধ্যে প্রথম হয়েছিল।
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি ডেবরা লাপ্রিভেট গ্রিফিথ কয়েক বছর দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করেছেন। বাংলাদেশে ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কীভাবে দুর্নীতি হয়েছিল, তা নিয়েই মূলত তিনি তদন্ত করেছেন। ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে তিনি যে জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং জিয়া পরিবার নিয়ে বাস্তবতার নিরিখে কিছু মন্তব্য করেন। সেই সময়ের সরকার এবং জিয়া পরিবারের ঔদ্ধত্যের কারণে কীভাবে তখন দেশে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি হয়েছিল, তা তিনি তুলে ধরেন।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে এক গোপন তারবার্তায় তারেক রহমান সম্পর্কে লেখেন, যা পরে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতে পাওয়া যায়। মরিয়ার্টি তারেক রহমান সম্পর্কে লেখেন: ‘তারেক রহমান বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির জন্য দায়ী, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে...সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও ভয়ংকর এবং একটি দুর্নীতিপরায়ণ সরকার ও বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতীক। তারেক রহমানের প্রকাশ্য দুর্নীতি মার্কিন সরকারের তিনটি লক্ষ্য যথা—গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করার মিশনকে প্রচণ্ডভাবে হুমকির সম্মুখীন করেছে...আইনের প্রতি তার প্রকাশ্য অশ্রদ্ধা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ভিত্তি শক্ত করতে সহায়তা করেছে।’
নিরীহ মানুষ হত্যার অভিযোগও কি শুধু শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধেই উঠছে? ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সূচনালগ্নেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় কত মানুষ নিহত হয়েছে, কত ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, তা তখনকার পত্রপত্রিকায় পাওয়া যাবে। গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর রক্তাক্ত নিথর দেহের ছবি কিংবা পূর্ণিমা শীলকে দল বেঁধে ধর্ষণ করার খবরও তামাদি হয়ে যায়নি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জনকে হত্যা এবং শেখ হাসিনাসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীর গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা কোন সরকারের আমলে ঘটেছিল? শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমামসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য জনপ্রিয় নেতাকে হত্যার কথা কি ভুলে যাওয়ার মতো? দেশজুড়ে বোমা হামলা, বাংলা ভাইয়ের উত্থানের মতো ঘটনা আড়াল করার উপায় আছে?
এগুলো কোনোটাই বানোয়াট কাহিনি নয়। গুগলে সার্চ দিয়ে যে কেউ দেখে নিতে পারেন।
এবার আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপির যে উত্থান, তা যদি স্বাভাবিক হয়, তাহলে সময় গেলে আওয়ামী লীগের উত্থান কেন অসম্ভব হবে? বিএনপিকে চাপমুক্ত হতে যেমন আওয়ামী লীগের বাড়াবাড়ি সহায়ক হয়েছে, তেমনি বিএনপির বাড়াবাড়িও যে আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে, তার আলামত কি এখনই চারদিকে লক্ষ করা যাচ্ছে না?
আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবি ছোট দুটি রাজনৈতিক দল কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের এলডিপি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের দল গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে তোলা হলেও সেটা মানা হবে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার একটি রিট উচ্চ আদালতে খারিজ হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানিতে বলেছেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ইচ্ছা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। সংবিধানে সংগঠন ও রাজনৈতিক দল পরিচালনার যে স্বাধীনতা রয়েছে, এই সরকার সেটিতে বিশ্বাস করে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধান অনুসারে সংগঠন করার স্বাধীনতা আছে, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তাদের অবদান ছিল। কিন্তু গেল ১৫ বছরে তারা যা করেছে, সেটা তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বর্বরতম ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগ। এই কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যক্তিগত দায় থাকতে পারে, নেতাদের সামষ্টিক দায় থাকতে পারে, কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।’
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। গণতন্ত্র, বৈষম্যহীনতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, মানবাধিকার সুরক্ষা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, দুর্নীতি প্রতিরোধ—এগুলো অধরা থাকলে শুধু দল পরিবর্তনে মানুষ খুশি হবে বলে মনে হয় না।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক, চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
৫ আগস্ট দেশে যে অভূতপূর্ব ছাত্র ও গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, তার অভিঘাতে রাজনীতির কী গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নানা ধরনের মতামত সামনে আসছে। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে কি বিএনপির লুটেরা শাসন কায়েম হবে? নাকি বেনামে জামায়াতে ইসলামী ও অন্য ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির আসন পোক্ত হবে? ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারই বা কত দিন ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ কতটা এগিয়ে নেবে?
হাসিনা সরকারের বিদায়ের এক মাস যেতে না যেতেই উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার ফোলা বেলুন যে কিছুটা হলেও চুপসে গেছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের জনমনস্তত্ত্ব অস্থিরতায় ঠাসা। আমরা বিজয় অর্জন করি, কিন্তু অর্জিত বিজয় ধরে রাখতে পারি না। ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাঘডাশে। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের বিজয়ের সুফল কার ঘরে উঠবে, তা নিয়ে রীতিমতো কামড়াকামড়ি শুরু হয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, সেই সরকারের এমন লজ্জাজনক পতনের বিষয়টি সম্ভবত আওয়ামী লীগের চরম বিরোধীরাও ভাবেনি, আওয়ামী লীগ দরদিরা তো নয়ই।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে না গেলে তাঁর কী পরিণতি হতো, তা নিয়ে অনুমাননির্ভর আলোচনা না করে তিনি দেশ ছাড়ায় তাঁর দল ও দলের লাখ লাখ কর্মী-সমর্থকের অবস্থা কী দাঁড়াল, সে বিষয়েই কিছু আলোচনা করা যেতে পারে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে সংকটে পড়েছে। দলের অনেক নেতা দল ত্যাগ করেছেন। দলে বিভক্তিও দেখা দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা, অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরও আওয়ামী লীগ বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছিল। তখন এমনও বলা হতো যে আওয়ামী লীগ আর কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না, ক্ষমতায় যাওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু এসব অনুমান কিংবা ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক হয়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ক্ষমতায় গিয়েছে এবং দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময়ের শাসক দল হওয়ার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের রায় নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল, দেশ শাসনের অধিকার পেয়েছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। ওই সময়ের পর থেকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের আগপর্যন্ত দলটি ক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর ৭ মাস। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সবগুলোই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বলা হয়, একধরনের তামাশার নির্বাচনে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করে আওয়ামী লীগের সর্বনাশ করেছেন হাসিনা। গণতান্ত্রিক রাজনীতির ঐতিহ্যবাহী দলটি স্বৈরাচারী শাসনের অপবাদ নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হলো। শেখ হাসিনা নিজে ফ্যাসিস্ট, খুনি শাসক হিসেবে নিন্দিত। দেশ ছেড়ে গিয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রাণে বাঁচলেও আওয়ামী লীগ নামক দলটিকে তিনি মৃত্যুশয্যায় তুলে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ আবার সুস্থ-সবল হয়ে উঠবে কি না, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
১৫ বছরের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার হয়ে উঠেছিল স্বৈরতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কোনো সীমা ছিল না। এই সময়কালে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দলীয়করণের মাধ্যমে আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়েছিল। দুদক, পিএসসি, মানবাধিকার কমিশন—যত কমিশন আছে সবগুলোকে একধরনের দুর্নীতিসহায়ক জায়গায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ পরিণত হয়েছে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ইচ্ছাপূরণের যন্ত্রে। অসৎ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি—এই তিন চক্রের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার স্বেচ্ছাচারী বাসনা শেষ পর্যন্ত ধূলিসাৎ হয়েছে।
যেহেতু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে মাত্র এক মাস আগে, তাই এখন শুধু ওই সরকারের খারাপ দিকগুলোই সামনে আসছে। এবার আন্দোলন যেহেতু শিক্ষার্থীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে এবং এই শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের আগে যে বিএনপি-জামায়াতের সরকার ছিল, সেই সরকারের শাসনকাল দেখেনি, তাই তাদের কাছে ‘আওয়ামী দুঃশাসন’ খুবই ভয়াবহ বলে মনে হচ্ছে।
এক মাস আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, চুরি, অর্থ আত্মসাতের পিলে চমকানো সব খবর যেভাবে সামনে আসছে, তাতে এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে আওয়ামী লীগ নামে দল পুনর্গঠন বুঝি আর সম্ভব হবে না। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটাও মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশ হলো ‘সব সম্ভবের দেশ’। খাদে পড়াও যেমন এখানে সহজ, তেমনি খাদ থেকে ওঠাও খুব কঠিন নয়।
শেখ হাসিনা ও তাঁর দুষ্কর্মের সহযোগীদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশে আওয়ামী শাসন ছাড়া অন্য শাসনামলও প্রশংসাযোগ্য ছিল না। আওয়ামী লীগের শাসনকে এখন যেমন দুঃশাসন বলে অভিহিত করা হচ্ছে, তেমনি ২০০১-০৬ সময়কালে বিএনপি-জামায়াতের শাসনকালেও সুশাসনের দৃষ্টান্ত ছিল না। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়া, বিদেশে অর্থ পাচারসহ যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, এর কোনটা বিএনপির বিরুদ্ধে ছিল না?
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিভিন্ন দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে বহির্বিশ্বে লজ্জাজনক এক পরিচিতি পেয়েছিল বাংলাদেশ। দেশে ব্যাপকভাবে দুর্নীতির কারণে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের করাপশন পারসেপশন ইনডেক্সে (সিপিআই) বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বের মধ্যে প্রথম হয়েছিল।
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি ডেবরা লাপ্রিভেট গ্রিফিথ কয়েক বছর দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করেছেন। বাংলাদেশে ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কীভাবে দুর্নীতি হয়েছিল, তা নিয়েই মূলত তিনি তদন্ত করেছেন। ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে তিনি যে জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং জিয়া পরিবার নিয়ে বাস্তবতার নিরিখে কিছু মন্তব্য করেন। সেই সময়ের সরকার এবং জিয়া পরিবারের ঔদ্ধত্যের কারণে কীভাবে তখন দেশে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি হয়েছিল, তা তিনি তুলে ধরেন।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে এক গোপন তারবার্তায় তারেক রহমান সম্পর্কে লেখেন, যা পরে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতে পাওয়া যায়। মরিয়ার্টি তারেক রহমান সম্পর্কে লেখেন: ‘তারেক রহমান বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির জন্য দায়ী, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে...সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও ভয়ংকর এবং একটি দুর্নীতিপরায়ণ সরকার ও বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতীক। তারেক রহমানের প্রকাশ্য দুর্নীতি মার্কিন সরকারের তিনটি লক্ষ্য যথা—গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করার মিশনকে প্রচণ্ডভাবে হুমকির সম্মুখীন করেছে...আইনের প্রতি তার প্রকাশ্য অশ্রদ্ধা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ভিত্তি শক্ত করতে সহায়তা করেছে।’
নিরীহ মানুষ হত্যার অভিযোগও কি শুধু শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধেই উঠছে? ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সূচনালগ্নেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় কত মানুষ নিহত হয়েছে, কত ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, তা তখনকার পত্রপত্রিকায় পাওয়া যাবে। গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর রক্তাক্ত নিথর দেহের ছবি কিংবা পূর্ণিমা শীলকে দল বেঁধে ধর্ষণ করার খবরও তামাদি হয়ে যায়নি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জনকে হত্যা এবং শেখ হাসিনাসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীর গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা কোন সরকারের আমলে ঘটেছিল? শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমামসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য জনপ্রিয় নেতাকে হত্যার কথা কি ভুলে যাওয়ার মতো? দেশজুড়ে বোমা হামলা, বাংলা ভাইয়ের উত্থানের মতো ঘটনা আড়াল করার উপায় আছে?
এগুলো কোনোটাই বানোয়াট কাহিনি নয়। গুগলে সার্চ দিয়ে যে কেউ দেখে নিতে পারেন।
এবার আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপির যে উত্থান, তা যদি স্বাভাবিক হয়, তাহলে সময় গেলে আওয়ামী লীগের উত্থান কেন অসম্ভব হবে? বিএনপিকে চাপমুক্ত হতে যেমন আওয়ামী লীগের বাড়াবাড়ি সহায়ক হয়েছে, তেমনি বিএনপির বাড়াবাড়িও যে আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে, তার আলামত কি এখনই চারদিকে লক্ষ করা যাচ্ছে না?
আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবি ছোট দুটি রাজনৈতিক দল কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের এলডিপি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের দল গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে তোলা হলেও সেটা মানা হবে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার একটি রিট উচ্চ আদালতে খারিজ হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানিতে বলেছেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ইচ্ছা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। সংবিধানে সংগঠন ও রাজনৈতিক দল পরিচালনার যে স্বাধীনতা রয়েছে, এই সরকার সেটিতে বিশ্বাস করে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধান অনুসারে সংগঠন করার স্বাধীনতা আছে, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তাদের অবদান ছিল। কিন্তু গেল ১৫ বছরে তারা যা করেছে, সেটা তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বর্বরতম ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগ। এই কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যক্তিগত দায় থাকতে পারে, নেতাদের সামষ্টিক দায় থাকতে পারে, কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।’
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। গণতন্ত্র, বৈষম্যহীনতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, মানবাধিকার সুরক্ষা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, দুর্নীতি প্রতিরোধ—এগুলো অধরা থাকলে শুধু দল পরিবর্তনে মানুষ খুশি হবে বলে মনে হয় না।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক, চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে