মো. গোলাম রহমান
একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত সিঁড়ি বেয়ে চলে আসা বাংলা ভাষা—বাঙালি জাতির অনন্য স্বীকৃতি। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য একটি জাতি রক্ত দিয়ে ইতিহাস গড়েছে, এই অনন্যসাধারণ উদাহরণ বিশ্ববাসীর কাছে উজ্জ্বল হয়ে আছে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পূর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের অধিবেশন নির্ধারিত ছিল।
সেদিন শেখ মুজিবের নির্দেশ অনুসারে সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করেন। তখন পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায় তাঁদের ওপর। কয়েকজন নিহত হন, আহত হন বেশ কয়েকজন এবং গ্রেপ্তার হন অনেকে। বিশ্বে মাতৃভাষাকে স্বীকৃতির আন্দোলন হিসেবে এই প্রথম কোনো জাতি রক্ত দিয়ে সেই ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করল। এই ইতিহাস ধারণ করেই ক্রমান্বয়ে গড়ে ওঠে আমাদের প্রাণের ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে। স্বীকৃতির আরেক ধাপ এগিয়ে যায় বাংলা ভাষা।
ভাষার ওপর আগ্রাসনের কারণে ভারতের আসামে বরাক উপত্যকায় প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। ১৯৬১ সালের ১৯ মে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর। ১১ জন আন্দোলনকারী সেদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। এই আন্দোলনের ফসল হিসেবে বরাক উপত্যকার তিনটি উপজেলায় দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিল বাংলা। ১৯৭৬ সালের ১৬ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়েটোতে প্রতিরোধ আন্দোলন হয়েছিল আফ্রিকান ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে। বর্ণবাদী সরকারের পুলিশ বাহিনী নির্মমভাবে গুলি চালালে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী মারা যান। ১৬ জুন দক্ষিণ আফ্রিকায় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয় এ দিনটি। এই তারিখে তারা ইয়ুথ ডে হিসেবে শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে স্মৃতি তর্পণ করে থাকে।
কানাডাপ্রবাসী দুজন বাংলাদেশি—রফিক ও ছালামসহ কয়েকজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য মিলে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদ্যাপনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব প্রেরণ করেন। এর ফলস্বরূপ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতির ফলে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর ওপর অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। অবশ্য প্রতিটি দেশের জনগোষ্ঠীর ওপরই তার প্রতিবেশী বা দূরের জনগোষ্ঠীর ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার দায়বদ্ধতা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার প্রভাব দেশ থেকে ছড়িয়ে পড়ে বিদেশেও। পশ্চিম আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সিয়েরা লিওনের অবস্থান। ২০০২ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী সিয়েরা লিওনে গৃহযুদ্ধ নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার ফলে সেই দেশের সরকারপ্রধান আহমদ তেজান কাব্বাহ বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের সাম্মানিক সরকারি ভাষার ঘোষণা দেন। যদিও ইংরেজি সে দেশের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত ভাষা।
বাংলাদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষের ভাষা বাংলা। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা এবং অন্যান্য কতিপয় স্থানে বাংলা ভাষা চালু আছে। পশ্চিমবঙ্গের দাপ্তরিক ভাষা বাংলা। বিশ্বে তিনটি দেশে বাংলা ভাষা সরকারিভাবে চালু আছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২৭ দশমিক ২ কোটি মানুষ বাংলা ভাষা ব্যবহার করে থাকে। বিশ্বের ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলা সপ্তম বৃহৎ ভাষা হিসেবে বিদ্যমান।
ভাষা নিয়ে মজার তথ্য জানা যায় বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। আমার দেখা এমন একটি দেশের কথা আলোচনা করছি, যা বৈচিত্র্যে ভরা এবং কৌতূহলোদ্দীপকও বটে। পাপুয়া নিউগিনি নামে এ দেশটি অস্ট্রেলিয়ার উত্তরে এবং ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপমালা থেকে দক্ষিণে। সে দেশের জনসংখ্যা মাত্র ৭৫ লাখ, দেশটির আয়তন বাংলাদেশের দ্বিগুণের বেশি। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভাষা বিদ্যমান এ দেশে, প্রায় ৮৩৯টি ভাষা রয়েছে এবং এর মধ্যে প্রায় ২০০ ভাষা জীবন্ত ব্যবহৃত হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। দেশের দাপ্তরিক কাজকর্মে ব্যবহার হয় মূলত ইংরেজি এবং টক পিসিন। টক পিসিন বহুল ব্যবহৃত এবং স্থানীয় লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হিসেবে প্রচলিত, রোমান হরফে লেখা হয়ে থাকে। ছোট ছোট শহরে টক পিসিন ব্যবহার হয় ইংরেজির মতো। নানা উপজাতিতে বিভক্ত দেশের জনসংখ্যা প্রায়ই বিবাদে মেতে থাকে ভাষার বৈচিত্র্যের কারণে।
সংস্কৃতিগতভাবে এই সব জনগোষ্ঠীর জীবনপ্রণালিতে বৈচিত্র্য থাকলেও দৈনন্দিন কার্যকলাপে খুব বেশি তারতম্য দেখা যায় না। অবস্থানগত দূরত্বের হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে জীবনপ্রণালিতে সংগতভাবেই সমিল ও অমিল দেখা যায়। অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ব্যবহার হয়। ২০১১ সালে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, শতকরা ৪৯ ভাগ লোক ইংরেজিতে শিক্ষিত। একই সময়ে আরেক সমীক্ষায় দেখা যায়, শতকরা ৫৭ দশমিক ৪ ভাগ লোক টক পিসিন লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কায় শিক্ষিত।
বিশ্বে প্রায় ছয় হাজার ভাষা রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিনিয়ত কোনো কোনো ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। মতান্তরে জানা যায়, প্রায় ২ হাজার ৭০০ ভাষা এবং প্রায় ৭ হাজার উপভাষা বা ‘ডায়ালেক্ট’ রয়েছে। হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষাই সবচেয়ে বেশি হুমকির সম্মুখীন। এদিকে আবার কোনো কোনো ভাষার প্রাধান্যের কারণে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষার অস্তিত্ব টিকে থাকছে না। অর্থনৈতিকভাবে সবল জাতিগোষ্ঠীর প্রভাবের ফলে স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি হয় এবং ভাষার অস্তিত্বের ওপর তার প্রভাব কার্যকর হয়ে পড়ে। জাতিগত কায়েমি স্বার্থের কারণে শুধু ভাষা নয়, সামাজিক অস্থিরতাও সৃষ্টি হয়। ভাষার ভূমিকা এ ক্ষেত্রে ব্যাপক এবং সুদূরপ্রসারী। বাংলাদেশে বাংলাসহ বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর প্রায় ৪১টি ভাষা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৪টির অবস্থা নাজুক, অপস্রিয়মাণ। যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই ১৪টি ভাষা প্রচলিত, তাদের বয়সের কারণে এবং তাদের মৃত্যুর ফলে এই ভাষাগুলো আর ব্যবহৃত হবে না, ফলে হারিয়ে যাবে চিরতরে।
বিশ্বে ভাষা নিয়ে বহুবিধ মজার বিষয় জানা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো দাপ্তরিক ভাষা স্বীকৃত নেই। যদিও প্রায় ৩০০ ভাষা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, কিন্তু ইংরেজি ভাষা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে এ ভাষাই একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে পরিগণিত হয়। জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ২১ ভাগ লোক ইংরেজি ছাড়াও তাদের নিজস্ব মাতৃভাষা ব্যবহার করে থাকে। তাদের মধ্যে শতকরা ৬২ জন স্প্যানিশ ভাষা বলে থাকে। এদিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশি ভাষা, মোট ১১টি।
বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ একাধিক ভাষায় কথা বলে। বিশ্বে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে একধরনের বোঝাপড়া আছে। বেশির ভাগ ভাষাই অন্য কোনো ভাষা থেকে বানান বা উচ্চারণ অথবা শব্দার্থ গ্রহণ করে থাকে, তাতে ভাষা সমৃদ্ধ হয়। কোনো কোনো ভাষায় আবার অর্থের তারতম্য বা পার্থক্যের কারণে বিরূপ ধারণার জন্ম হতে পারে, যে কারণে বলা হয়ে থাকে—কারও বুলি, কারও গালি।
আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে প্রায় ৮০ ভাগ ডিজিটাল ডকুমেন্টস বা দলিলপত্র ইংরেজিতে তৈরি ও সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। ইংরেজির প্রভাব সারা বিশ্বে ব্যাপক তা বলাই বাহুল্য। জানা যায়, প্রথম পুস্তক মুদ্রিত হয়েছিল জার্মান ভাষায়। এই জার্মান ভাষায় পুরুষ, নারী এবং নিরপেক্ষ (না পুরুষ, না নারী) তৃতীয় লিঙ্গের কথা বলা হয়ে থাকে। এমন উদাহরণ অন্যান্য ভাষায়ও রয়েছে। যা-ই হোক, সাধারণভাবে একজন ব্যক্তি প্রতিদিন খুব বেশি শব্দ ব্যবহার করে না, স্বাভাবিক দিন যাপন এবং কাজকর্মের জন্য মাত্র ১০০ শব্দ হলেই চলে যায়। তবে যাঁরা বিশেষায়িত কারণে বক্তৃতা দেন বা উচ্চতর শিক্ষা কার্যক্রম বা টেকনিক্যাল কাজে সম্পৃক্ত, তাঁরা অনেক বেশি শব্দ ব্যবহার করেন।
ভাষা যেমন মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে, আবার মানুষের মনের অনেকভাবই সঠিকভাবে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়। অনেক ভাষাতেই অনেক শব্দের ব্যবহার নেই, আবার অনেক ভাষাতে অনেক শব্দের প্রতিশব্দ বা সমার্থক শব্দও নেই। মজার বিষয় হচ্ছে, ভাষা সম্পর্কে আলোচনাও যথেষ্ট মজার!
লেখক: সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত সিঁড়ি বেয়ে চলে আসা বাংলা ভাষা—বাঙালি জাতির অনন্য স্বীকৃতি। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য একটি জাতি রক্ত দিয়ে ইতিহাস গড়েছে, এই অনন্যসাধারণ উদাহরণ বিশ্ববাসীর কাছে উজ্জ্বল হয়ে আছে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পূর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের অধিবেশন নির্ধারিত ছিল।
সেদিন শেখ মুজিবের নির্দেশ অনুসারে সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করেন। তখন পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায় তাঁদের ওপর। কয়েকজন নিহত হন, আহত হন বেশ কয়েকজন এবং গ্রেপ্তার হন অনেকে। বিশ্বে মাতৃভাষাকে স্বীকৃতির আন্দোলন হিসেবে এই প্রথম কোনো জাতি রক্ত দিয়ে সেই ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করল। এই ইতিহাস ধারণ করেই ক্রমান্বয়ে গড়ে ওঠে আমাদের প্রাণের ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে। স্বীকৃতির আরেক ধাপ এগিয়ে যায় বাংলা ভাষা।
ভাষার ওপর আগ্রাসনের কারণে ভারতের আসামে বরাক উপত্যকায় প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। ১৯৬১ সালের ১৯ মে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর। ১১ জন আন্দোলনকারী সেদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। এই আন্দোলনের ফসল হিসেবে বরাক উপত্যকার তিনটি উপজেলায় দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিল বাংলা। ১৯৭৬ সালের ১৬ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়েটোতে প্রতিরোধ আন্দোলন হয়েছিল আফ্রিকান ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে। বর্ণবাদী সরকারের পুলিশ বাহিনী নির্মমভাবে গুলি চালালে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী মারা যান। ১৬ জুন দক্ষিণ আফ্রিকায় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয় এ দিনটি। এই তারিখে তারা ইয়ুথ ডে হিসেবে শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে স্মৃতি তর্পণ করে থাকে।
কানাডাপ্রবাসী দুজন বাংলাদেশি—রফিক ও ছালামসহ কয়েকজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য মিলে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদ্যাপনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব প্রেরণ করেন। এর ফলস্বরূপ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতির ফলে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর ওপর অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। অবশ্য প্রতিটি দেশের জনগোষ্ঠীর ওপরই তার প্রতিবেশী বা দূরের জনগোষ্ঠীর ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার দায়বদ্ধতা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার প্রভাব দেশ থেকে ছড়িয়ে পড়ে বিদেশেও। পশ্চিম আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সিয়েরা লিওনের অবস্থান। ২০০২ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী সিয়েরা লিওনে গৃহযুদ্ধ নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার ফলে সেই দেশের সরকারপ্রধান আহমদ তেজান কাব্বাহ বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের সাম্মানিক সরকারি ভাষার ঘোষণা দেন। যদিও ইংরেজি সে দেশের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত ভাষা।
বাংলাদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষের ভাষা বাংলা। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা এবং অন্যান্য কতিপয় স্থানে বাংলা ভাষা চালু আছে। পশ্চিমবঙ্গের দাপ্তরিক ভাষা বাংলা। বিশ্বে তিনটি দেশে বাংলা ভাষা সরকারিভাবে চালু আছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২৭ দশমিক ২ কোটি মানুষ বাংলা ভাষা ব্যবহার করে থাকে। বিশ্বের ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলা সপ্তম বৃহৎ ভাষা হিসেবে বিদ্যমান।
ভাষা নিয়ে মজার তথ্য জানা যায় বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। আমার দেখা এমন একটি দেশের কথা আলোচনা করছি, যা বৈচিত্র্যে ভরা এবং কৌতূহলোদ্দীপকও বটে। পাপুয়া নিউগিনি নামে এ দেশটি অস্ট্রেলিয়ার উত্তরে এবং ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপমালা থেকে দক্ষিণে। সে দেশের জনসংখ্যা মাত্র ৭৫ লাখ, দেশটির আয়তন বাংলাদেশের দ্বিগুণের বেশি। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভাষা বিদ্যমান এ দেশে, প্রায় ৮৩৯টি ভাষা রয়েছে এবং এর মধ্যে প্রায় ২০০ ভাষা জীবন্ত ব্যবহৃত হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। দেশের দাপ্তরিক কাজকর্মে ব্যবহার হয় মূলত ইংরেজি এবং টক পিসিন। টক পিসিন বহুল ব্যবহৃত এবং স্থানীয় লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হিসেবে প্রচলিত, রোমান হরফে লেখা হয়ে থাকে। ছোট ছোট শহরে টক পিসিন ব্যবহার হয় ইংরেজির মতো। নানা উপজাতিতে বিভক্ত দেশের জনসংখ্যা প্রায়ই বিবাদে মেতে থাকে ভাষার বৈচিত্র্যের কারণে।
সংস্কৃতিগতভাবে এই সব জনগোষ্ঠীর জীবনপ্রণালিতে বৈচিত্র্য থাকলেও দৈনন্দিন কার্যকলাপে খুব বেশি তারতম্য দেখা যায় না। অবস্থানগত দূরত্বের হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে জীবনপ্রণালিতে সংগতভাবেই সমিল ও অমিল দেখা যায়। অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ব্যবহার হয়। ২০১১ সালে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, শতকরা ৪৯ ভাগ লোক ইংরেজিতে শিক্ষিত। একই সময়ে আরেক সমীক্ষায় দেখা যায়, শতকরা ৫৭ দশমিক ৪ ভাগ লোক টক পিসিন লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কায় শিক্ষিত।
বিশ্বে প্রায় ছয় হাজার ভাষা রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিনিয়ত কোনো কোনো ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। মতান্তরে জানা যায়, প্রায় ২ হাজার ৭০০ ভাষা এবং প্রায় ৭ হাজার উপভাষা বা ‘ডায়ালেক্ট’ রয়েছে। হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষাই সবচেয়ে বেশি হুমকির সম্মুখীন। এদিকে আবার কোনো কোনো ভাষার প্রাধান্যের কারণে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষার অস্তিত্ব টিকে থাকছে না। অর্থনৈতিকভাবে সবল জাতিগোষ্ঠীর প্রভাবের ফলে স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি হয় এবং ভাষার অস্তিত্বের ওপর তার প্রভাব কার্যকর হয়ে পড়ে। জাতিগত কায়েমি স্বার্থের কারণে শুধু ভাষা নয়, সামাজিক অস্থিরতাও সৃষ্টি হয়। ভাষার ভূমিকা এ ক্ষেত্রে ব্যাপক এবং সুদূরপ্রসারী। বাংলাদেশে বাংলাসহ বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর প্রায় ৪১টি ভাষা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৪টির অবস্থা নাজুক, অপস্রিয়মাণ। যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই ১৪টি ভাষা প্রচলিত, তাদের বয়সের কারণে এবং তাদের মৃত্যুর ফলে এই ভাষাগুলো আর ব্যবহৃত হবে না, ফলে হারিয়ে যাবে চিরতরে।
বিশ্বে ভাষা নিয়ে বহুবিধ মজার বিষয় জানা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো দাপ্তরিক ভাষা স্বীকৃত নেই। যদিও প্রায় ৩০০ ভাষা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, কিন্তু ইংরেজি ভাষা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে এ ভাষাই একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে পরিগণিত হয়। জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ২১ ভাগ লোক ইংরেজি ছাড়াও তাদের নিজস্ব মাতৃভাষা ব্যবহার করে থাকে। তাদের মধ্যে শতকরা ৬২ জন স্প্যানিশ ভাষা বলে থাকে। এদিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশি ভাষা, মোট ১১টি।
বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ একাধিক ভাষায় কথা বলে। বিশ্বে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে একধরনের বোঝাপড়া আছে। বেশির ভাগ ভাষাই অন্য কোনো ভাষা থেকে বানান বা উচ্চারণ অথবা শব্দার্থ গ্রহণ করে থাকে, তাতে ভাষা সমৃদ্ধ হয়। কোনো কোনো ভাষায় আবার অর্থের তারতম্য বা পার্থক্যের কারণে বিরূপ ধারণার জন্ম হতে পারে, যে কারণে বলা হয়ে থাকে—কারও বুলি, কারও গালি।
আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে প্রায় ৮০ ভাগ ডিজিটাল ডকুমেন্টস বা দলিলপত্র ইংরেজিতে তৈরি ও সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। ইংরেজির প্রভাব সারা বিশ্বে ব্যাপক তা বলাই বাহুল্য। জানা যায়, প্রথম পুস্তক মুদ্রিত হয়েছিল জার্মান ভাষায়। এই জার্মান ভাষায় পুরুষ, নারী এবং নিরপেক্ষ (না পুরুষ, না নারী) তৃতীয় লিঙ্গের কথা বলা হয়ে থাকে। এমন উদাহরণ অন্যান্য ভাষায়ও রয়েছে। যা-ই হোক, সাধারণভাবে একজন ব্যক্তি প্রতিদিন খুব বেশি শব্দ ব্যবহার করে না, স্বাভাবিক দিন যাপন এবং কাজকর্মের জন্য মাত্র ১০০ শব্দ হলেই চলে যায়। তবে যাঁরা বিশেষায়িত কারণে বক্তৃতা দেন বা উচ্চতর শিক্ষা কার্যক্রম বা টেকনিক্যাল কাজে সম্পৃক্ত, তাঁরা অনেক বেশি শব্দ ব্যবহার করেন।
ভাষা যেমন মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে, আবার মানুষের মনের অনেকভাবই সঠিকভাবে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়। অনেক ভাষাতেই অনেক শব্দের ব্যবহার নেই, আবার অনেক ভাষাতে অনেক শব্দের প্রতিশব্দ বা সমার্থক শব্দও নেই। মজার বিষয় হচ্ছে, ভাষা সম্পর্কে আলোচনাও যথেষ্ট মজার!
লেখক: সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে