মিজানুর রহমান
এপ্রিল থেকে সব অঞ্চলের মানুষ প্রচণ্ড গরমের মধ্যে পড়েছিল। দিন শুরু না হতেই ছিল ঝাঁজালো রোদ্দুর। মানুষ বাইরে যেতে সাহস পাচ্ছিল না। বৈদ্যুতিক পাখা এই গরম সামাল দিতে পারেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছুদিন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। ‘হিট অ্যালাট’ জারি হয়েছিল। বেশি কষ্ট হয়েছে শ্রমজীবী মানুষের। শেষ খবর অনুযায়ী, সারা দেশে হিট স্ট্রোকে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছিল। ফোর কাস্টিং তথ্য মোতাবেক গত ৭৬ বছরে অমন গরম হাওয়া বইতে দেখা যায়নি। এপ্রিলের আবহাওয়া ফোর কাস্টিং থেকে জানা যায়, দেশের কয়েকটি এলাকায় রেকর্ড তাপমাত্রা বৃদ্ধির খবর—যশোরে ৪২ দশমিক ৮, চুয়াডাঙ্গায় ৪৩, রাজশাহীতে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কোনো কোনো দিন এই রেকর্ড সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তাপমাত্রাকেও হার মানিয়েছে।
দেশের তাপমাত্রা এভাবে বেড়ে যাওয়ার পেছনে আমরাও কম দায়ী নই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যেকোনো দেশের আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার। কিন্তু পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এ বছরের তথ্য মোতাবেক, দেশে বনভূমির পরিমাণ ১৫ দশমিক ৫৮ ভাগ। কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। যেভাবে উজাড় হচ্ছে, সেভাবে বৃক্ষরোপণ হচ্ছে কি? নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। একসময় এ দেশে ১ হাজার ৩০০ নদী ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মোতাবেক এখন আছে ৪০৫টি, সেগুলোও হজম করার পাঁয়তারা চলছে। খাল-বিল, জলাশয় ভরাট করে, ফসলি জমিতে ঘরবাড়ি করা হচ্ছে। বাধা দেওয়ার যেন কেউ নেই।
রাজধানী ঢাকায়ও অসহনীয় গরম পড়েছিল। ঢাকায় নিজেদের ভোগবিলাসের জন্য পরিবেশের ওপর আমরা অনেক আঘাত হেনেছি। তথ্য অনুযায়ী, গত বছর প্রকাশিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের করা এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ কমে মাত্র ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে জলাভূমি নেমে এসেছে ২ দশমিক ৯ শতাংশে। ঢাকায় মাত্র ২৯ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় গাছপালা ও খালি জায়গা রয়েছে, যা ১৯৯৫ সালে ছিল ৫২ দশমিক ৪৮ বর্গকিলোমিটার। অন্যদিকে জলাভূমি এলাকা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটার; যা ১৯৯৫ সালে ছিল ৩০ দশমিক ২৪ বর্গকিলোমিটার। একটি আদর্শ শহরে ১৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ শতাংশ জলাভূমি থাকার নিয়ম রয়েছে।
অন্যদিকে বারবার চুয়াডাঙ্গায় কেন তাপমাত্রা বেশি হচ্ছে, সেটাও সবাই অবগত হলে বুঝতে বাকি থাকবে না যে নদী ও বনভূমির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু।
গত মাসে চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। কেন ওই জেলায় এত তাপপ্রবাহ? ভৌগোলিক দিক বিশ্লেষণে জানা যাবে এর কারণ কী। ভৌগোলিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের যে অবস্থান সেই একই অবস্থানে আছে ভারতের রাজস্থান, সৌদি আরব এবং আফ্রিকার উত্তর অংশের মরুভূমিগুলো; অর্থাৎ এ দেশগুলো একই অক্ষাংশে। প্রশ্ন জাগে, উল্লিখিত অঞ্চলগুলো মরুভূমি হলে, বাংলাদেশে কেন অমনটি নয়? অন্যদিকে বাংলাদেশের মানচিত্রে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, মানচিত্রের মাঝামাঝি একটি রেখা অতিক্রম করেছে, যার নাম কর্কটক্রান্তি রেখা, যা ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। এই কর্কটক্রান্তি রেখাটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে প্রভাবিত করছে। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সরে যায়। এই সরে যাওয়ার কারণেই পৃথিবীর নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চল সরাসরি সূর্যের নিচে চলে আসে। যার কারণে উত্তর দিকের ২৩ দশমিক ৫ এবং দক্ষিণ দিকে ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রির জায়গাটুকু সূর্যের সরাসরি নিচে অবস্থান করে। এই ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি অক্ষাংশের রেখাটি বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে অতিক্রম করছে। পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে ২১ মার্চের পর ধীরে ধীরে উত্তর অংশ সূর্যের নিচে অবস্থান করে। আর যেহেতু চুয়াডাঙ্গার ওপর দিকে কর্কটক্রান্তি রেখাটি, স্বাভাবিকভাবে এই জেলার তাপমাত্রা অনুভূত হবেই।
এই কর্কটক্রান্তি রেখা কিন্তু কুমিল্লা ও ফরিদপুরের দিক দিয়েও বিদ্যমান। তাহলে সেখানে তাপমাত্রা তেমনটি নেই কেন? আমরা জানি, জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে সমুদ্রের অবস্থান, প্রবাহিত নদী ধারার অবস্থান এবং ভূপৃষ্ঠের পানির স্তর। তিনটি বিষয়ই চুয়াডাঙ্গার অনুকূলে নেই। সমুদ্র থেকে আসা বায়ুপ্রবাহ বায়ুমণ্ডল নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন অধিক শীতল আবার অধিক গরম হতে দিচ্ছে না। যার কারণে সমুদ্র তীরবর্তী জেলাগুলো, যেমন পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট এবং কক্সবাজারের আবহাওয়া খুবই সহনীয় পর্যায়ে থাকে।
ফরিদপুরের পাশে আছে বিশাল নদী, কুমিল্লার পাশে আছে ত্রিপুরার বিশাল বনভূমি, যা আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। চুয়াডাঙ্গায় নেই সমুদ্র, নেই নদীপথ, নেই বনাঞ্চল। সেখানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া, চুয়াডাঙ্গা জেলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১ দশমিক ৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। ফলে পানির স্তরও অনেক নিচে। পানির স্তর নিচে থাকলে দ্রুত মাটি উত্তপ্ত হয়।
বাংলাদেশের সঙ্গে একই অক্ষরেখায় অবস্থিত ভারতের রাজস্থান, সৌদি আরব এবং আফ্রিকার উত্তর অংশের মরুভূমি এলাকাগুলো মরুভূমি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের বেলায় তেমনটি হয় না। কারণও আছে। আমরা জানি, বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বাড়লে সমুদ্র থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প উপকূলের দিকে ধাবিত হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। এর জলীয় বাষ্প বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ধাবিত হলেই উত্তরাঞ্চলের হিমালয়ের পর্বতে ধাক্কা খেয়ে মেঘমালা তৈরি হয় এবং ধরণিতে বৃষ্টি নেমে আসে। এই সুবিধাটুকু ভারতের রাজস্থান, সৌদি আরব এবং আফ্রিকার উত্তর অংশের বেলায় নেই। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে চমৎকার একটি দেশ। এ কারণে বাংলাদেশ মরুভূমি হয়নি।
বৃষ্টি হয়েছে। আপাতত গরম কমেছে। কিন্তু আবারও এমন কিংবা এর চেয়ে বেশি উত্তাপ ফিরে আসবে বলেই দাবি আবহাওয়াবিদদের। এমন উত্তপ্ত পরিবেশ থেকে রক্ষা পেতে চুয়াডাঙ্গাবাসীসহ সবাইকে অধিক পরিমাণে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে, সবুজ শ্যামল পরিবেশ
সৃষ্টি করতে হবে। তখনই প্রচুর বৃষ্টি হবে, সবার মাঝে স্বস্তি ফিরে আসবে। সামগ্রিকভাবে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে হলে বনভূমি ধ্বংস না করি, ব্যক্তিস্বার্থে নদী ভরাট করা যাবে না। নদীর গতিপথ স্বাভাবিক রাখতে হবে। এ ছাড়া কলকারখানার নির্গত ধোঁয়া, যানবাহন থেকে নির্গত গ্যাস আমাদের বাতাসকে কলুষিত করছে, বাতাসের ভারসাম্য নষ্ট করছে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতেই হবে। প্রকৃতি যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ফিরে না আসে, কী হতে পারে তা তো দেখা হয়েই গেল! পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পেলে আমরাও বর্তমান অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাব।
এপ্রিল থেকে সব অঞ্চলের মানুষ প্রচণ্ড গরমের মধ্যে পড়েছিল। দিন শুরু না হতেই ছিল ঝাঁজালো রোদ্দুর। মানুষ বাইরে যেতে সাহস পাচ্ছিল না। বৈদ্যুতিক পাখা এই গরম সামাল দিতে পারেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছুদিন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। ‘হিট অ্যালাট’ জারি হয়েছিল। বেশি কষ্ট হয়েছে শ্রমজীবী মানুষের। শেষ খবর অনুযায়ী, সারা দেশে হিট স্ট্রোকে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছিল। ফোর কাস্টিং তথ্য মোতাবেক গত ৭৬ বছরে অমন গরম হাওয়া বইতে দেখা যায়নি। এপ্রিলের আবহাওয়া ফোর কাস্টিং থেকে জানা যায়, দেশের কয়েকটি এলাকায় রেকর্ড তাপমাত্রা বৃদ্ধির খবর—যশোরে ৪২ দশমিক ৮, চুয়াডাঙ্গায় ৪৩, রাজশাহীতে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কোনো কোনো দিন এই রেকর্ড সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তাপমাত্রাকেও হার মানিয়েছে।
দেশের তাপমাত্রা এভাবে বেড়ে যাওয়ার পেছনে আমরাও কম দায়ী নই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যেকোনো দেশের আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার। কিন্তু পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এ বছরের তথ্য মোতাবেক, দেশে বনভূমির পরিমাণ ১৫ দশমিক ৫৮ ভাগ। কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। যেভাবে উজাড় হচ্ছে, সেভাবে বৃক্ষরোপণ হচ্ছে কি? নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। একসময় এ দেশে ১ হাজার ৩০০ নদী ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মোতাবেক এখন আছে ৪০৫টি, সেগুলোও হজম করার পাঁয়তারা চলছে। খাল-বিল, জলাশয় ভরাট করে, ফসলি জমিতে ঘরবাড়ি করা হচ্ছে। বাধা দেওয়ার যেন কেউ নেই।
রাজধানী ঢাকায়ও অসহনীয় গরম পড়েছিল। ঢাকায় নিজেদের ভোগবিলাসের জন্য পরিবেশের ওপর আমরা অনেক আঘাত হেনেছি। তথ্য অনুযায়ী, গত বছর প্রকাশিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের করা এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ কমে মাত্র ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে জলাভূমি নেমে এসেছে ২ দশমিক ৯ শতাংশে। ঢাকায় মাত্র ২৯ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় গাছপালা ও খালি জায়গা রয়েছে, যা ১৯৯৫ সালে ছিল ৫২ দশমিক ৪৮ বর্গকিলোমিটার। অন্যদিকে জলাভূমি এলাকা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটার; যা ১৯৯৫ সালে ছিল ৩০ দশমিক ২৪ বর্গকিলোমিটার। একটি আদর্শ শহরে ১৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ শতাংশ জলাভূমি থাকার নিয়ম রয়েছে।
অন্যদিকে বারবার চুয়াডাঙ্গায় কেন তাপমাত্রা বেশি হচ্ছে, সেটাও সবাই অবগত হলে বুঝতে বাকি থাকবে না যে নদী ও বনভূমির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু।
গত মাসে চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। কেন ওই জেলায় এত তাপপ্রবাহ? ভৌগোলিক দিক বিশ্লেষণে জানা যাবে এর কারণ কী। ভৌগোলিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের যে অবস্থান সেই একই অবস্থানে আছে ভারতের রাজস্থান, সৌদি আরব এবং আফ্রিকার উত্তর অংশের মরুভূমিগুলো; অর্থাৎ এ দেশগুলো একই অক্ষাংশে। প্রশ্ন জাগে, উল্লিখিত অঞ্চলগুলো মরুভূমি হলে, বাংলাদেশে কেন অমনটি নয়? অন্যদিকে বাংলাদেশের মানচিত্রে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, মানচিত্রের মাঝামাঝি একটি রেখা অতিক্রম করেছে, যার নাম কর্কটক্রান্তি রেখা, যা ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। এই কর্কটক্রান্তি রেখাটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে প্রভাবিত করছে। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সরে যায়। এই সরে যাওয়ার কারণেই পৃথিবীর নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চল সরাসরি সূর্যের নিচে চলে আসে। যার কারণে উত্তর দিকের ২৩ দশমিক ৫ এবং দক্ষিণ দিকে ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রির জায়গাটুকু সূর্যের সরাসরি নিচে অবস্থান করে। এই ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি অক্ষাংশের রেখাটি বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে অতিক্রম করছে। পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে ২১ মার্চের পর ধীরে ধীরে উত্তর অংশ সূর্যের নিচে অবস্থান করে। আর যেহেতু চুয়াডাঙ্গার ওপর দিকে কর্কটক্রান্তি রেখাটি, স্বাভাবিকভাবে এই জেলার তাপমাত্রা অনুভূত হবেই।
এই কর্কটক্রান্তি রেখা কিন্তু কুমিল্লা ও ফরিদপুরের দিক দিয়েও বিদ্যমান। তাহলে সেখানে তাপমাত্রা তেমনটি নেই কেন? আমরা জানি, জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে সমুদ্রের অবস্থান, প্রবাহিত নদী ধারার অবস্থান এবং ভূপৃষ্ঠের পানির স্তর। তিনটি বিষয়ই চুয়াডাঙ্গার অনুকূলে নেই। সমুদ্র থেকে আসা বায়ুপ্রবাহ বায়ুমণ্ডল নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন অধিক শীতল আবার অধিক গরম হতে দিচ্ছে না। যার কারণে সমুদ্র তীরবর্তী জেলাগুলো, যেমন পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট এবং কক্সবাজারের আবহাওয়া খুবই সহনীয় পর্যায়ে থাকে।
ফরিদপুরের পাশে আছে বিশাল নদী, কুমিল্লার পাশে আছে ত্রিপুরার বিশাল বনভূমি, যা আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। চুয়াডাঙ্গায় নেই সমুদ্র, নেই নদীপথ, নেই বনাঞ্চল। সেখানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া, চুয়াডাঙ্গা জেলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১ দশমিক ৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। ফলে পানির স্তরও অনেক নিচে। পানির স্তর নিচে থাকলে দ্রুত মাটি উত্তপ্ত হয়।
বাংলাদেশের সঙ্গে একই অক্ষরেখায় অবস্থিত ভারতের রাজস্থান, সৌদি আরব এবং আফ্রিকার উত্তর অংশের মরুভূমি এলাকাগুলো মরুভূমি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের বেলায় তেমনটি হয় না। কারণও আছে। আমরা জানি, বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বাড়লে সমুদ্র থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প উপকূলের দিকে ধাবিত হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। এর জলীয় বাষ্প বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ধাবিত হলেই উত্তরাঞ্চলের হিমালয়ের পর্বতে ধাক্কা খেয়ে মেঘমালা তৈরি হয় এবং ধরণিতে বৃষ্টি নেমে আসে। এই সুবিধাটুকু ভারতের রাজস্থান, সৌদি আরব এবং আফ্রিকার উত্তর অংশের বেলায় নেই। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে চমৎকার একটি দেশ। এ কারণে বাংলাদেশ মরুভূমি হয়নি।
বৃষ্টি হয়েছে। আপাতত গরম কমেছে। কিন্তু আবারও এমন কিংবা এর চেয়ে বেশি উত্তাপ ফিরে আসবে বলেই দাবি আবহাওয়াবিদদের। এমন উত্তপ্ত পরিবেশ থেকে রক্ষা পেতে চুয়াডাঙ্গাবাসীসহ সবাইকে অধিক পরিমাণে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে, সবুজ শ্যামল পরিবেশ
সৃষ্টি করতে হবে। তখনই প্রচুর বৃষ্টি হবে, সবার মাঝে স্বস্তি ফিরে আসবে। সামগ্রিকভাবে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে হলে বনভূমি ধ্বংস না করি, ব্যক্তিস্বার্থে নদী ভরাট করা যাবে না। নদীর গতিপথ স্বাভাবিক রাখতে হবে। এ ছাড়া কলকারখানার নির্গত ধোঁয়া, যানবাহন থেকে নির্গত গ্যাস আমাদের বাতাসকে কলুষিত করছে, বাতাসের ভারসাম্য নষ্ট করছে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতেই হবে। প্রকৃতি যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ফিরে না আসে, কী হতে পারে তা তো দেখা হয়েই গেল! পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পেলে আমরাও বর্তমান অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাব।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১৬ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে