আবু তাহের খান
বঙ্গবন্ধুকে স্তাবকতায় ডুবিয়েছিলেন মোশতাক ও তাঁর দলের সমচরিত্রের অন্যরা। জিয়া, এরশাদ, খালেদা—তাঁদের চারদিকেও স্তাবকের সংখ্যা নেহাত কম ছিল না। আর সদ্য বিদায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দলীয় অনুসারীদের মধ্যকার সম্পর্কের মূল বৈশিষ্ট্যই ছিল এরূপ যে, সেখানে অনুসারীগণ নিরন্তর তাদের নেত্রীকে স্তুতি ও স্তাবকতায় তন্ময় করে রাখতেন। এবং সেই স্তাবকতার ক্ষেত্রে যিনি যত দক্ষ ও নিপুণ ছিলেন, নেত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও ছিল তত বেশি ঘনিষ্ঠ এবং সেটাই ছিল তাঁর কাছ থেকে আনুকূল্যপ্রাপ্তির মূল শর্ত। দলের ভেতরে শুরু হওয়া সেই স্তাবকতা পরবর্তী সময়ে দলের বাইরে অন্যান্য শ্রেণি ও পেশাজীবী গোষ্ঠীর মধ্যেও সমানভাবে বা তার চেয়েও উচ্চতর গতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল।
ওপরে উল্লিখিত আচরণের ধারাবাহিকতায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের শিক্ষকগণ ক্লাসে পড়াতে গিয়ে বিষয়বস্তুসংশ্লিষ্ট অনেক কিছু ভুলে গেলেও টেলিভিশনের টক শোতে এসে সারাক্ষণই নেত্রীর স্তুতি ও বন্দনায় নিমগ্ন থাকতে এতটুকু ভুল করতেন না। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) উদ্যোগে গত ১৬ জুলাই আয়োজিত সম্মেলনে এর নেতৃবৃন্দ বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে তাঁরা আবারও ক্ষমতায় দেখতে চান। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই শেখ হাসিনার সরকার দরকার। এডিটরস গিল্ডের নেতৃত্বাধীন সাংবাদিকেরা গত ২৪ জুলাই শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন, তাঁরা শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত। গত ২৭ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবে একত্র হয়ে প্রায় একই কথা বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরামের সদস্যরাও।
তো যে ব্যবসায়ীরা আক্ষরিক অর্থেই নেচে-গেয়ে উল্লাস করে সুর তুলে মাত্র মাসখানেক আগে ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ শেখ হাসিনাকে বারবার ক্ষমতায় দেখতে চেয়েছিলেন, সেই ব্যবসায়ীরাই ৭ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন, ঘাড়ে যদি দুইটা করে মাথা থাকত, তাহলে হয়তো সেই চাপ (শেখ হাসিনার ক্ষমতার চাপ) তাঁরা উপেক্ষা করতে পারতেন। তার মানে হচ্ছে, তাঁদের ভাষায়—তাঁরা স্বেচ্ছায় নন, চাপে পড়ে শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চাওয়ার কথা বলেছিলেন। তাঁদের এই বক্তব্যকে যদি সত্য বলেও ধরে নিই, তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’ বলে ১৬ জুলাই আক্ষরিক অর্থেই তাঁরা যে নৃত্য-গীত ও উল্লাস করেছিলেন, তার ব্যাখ্যা কী? ওটা করতেও কি শেখ হাসিনা তাঁদের বাধ্য করেছিলেন? আবার ৯ আগস্ট যে এফবিসিসিআইসহ তাঁদের মধ্যকার কেউ কেউ একযোগে দেশের প্রায় সব দৈনিক পত্রিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঢাউস আকৃতির বেঢপ ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন ছেপে তাঁকে অভিনন্দন জানালেন, সেটার মাজেজাই বা কী? ড. ইউনূস কি এটি করতে তাঁদের বাধ্য করেছিলেন বা এটি কি তাঁরা ঘাড় থেকে মাথা হারানোর ভয়ে করেছেন? আসলে শেখ হাসিনার আমলে বা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই সদ্য যাত্রাক্ষণে উল্লিখিত ব্যবসায়ীরা যা যা করেছেন, তার সবই হচ্ছে অবিমৃশ্য চাটুকারিতা।
ড. ইউনূস ও তাঁর নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানানোটাই যদি ব্যবসায়ীদের আন্তরিক উদ্দেশ্য হতো, তাহলে সেটি তো তাঁদের করা উচিত ছিল নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের প্যাডে চিঠি লিখে। এভাবে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছেপে অর্ধশিক্ষিতের স্থূল ভঙ্গিমায় কেন? এখানে উল্লেখ্য, যেসব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পত্রিকায় এসব বিজ্ঞাপন ছেপেছে, তাদের অনেকেই বড় মাপের ঋণখেলাপি, করখেলাপি ও রাষ্ট্রীয় দেনা পরিশোধ লঙ্ঘনকারী। এ অবস্থায় যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তারা এসব বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তা না করে যদি তা দিয়ে সমপরিমাণ ঋণ পরিশোধ করে দিত, তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক কণা হলেও তো কমত, যার প্রতীকী মূল্য দৃশ্যমান টাকার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। তো জনগণ খুবই খুশি যে, এ ধরনের বিজ্ঞাপন ছাপার কাজটিকে সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের এ ধরনের চাটুকারিতা বস্তুত ব্যবসার আড়ালে রাষ্ট্রের সম্পদ নানা ন্যায্য-অন্যায্য পন্থায় হাতিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে একটি কৌশলমাত্র। যতটুকু জানা যায়, সাম্প্রতিক আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন, তার খাতওয়ারি হিসাবসংবলিত একটি দাবিনামা সরকারের কাছে পেশ করার লক্ষ্যে ৪ আগস্টের মধ্যে তাঁরা সেটি প্রায় গুছিয়েও এনেছিলেন। গত ১৬ জুলাইয়ের ব্যবসায়ী সম্মেলন ছিল বস্তুত সেই ক্ষতিপূরণ আদায়ের একটি পূর্ব মহড়ামাত্র। কিন্তু এরই মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটায় সেই মহড়া আর কাজে আসেনি। কিন্তু তাই বলে তাঁরা থেমে থাকবেন কেন? আর থামবেন না বলেই ৯ আগস্টের দৈনিক পত্রিকায় অভিনন্দনমূলক বিজ্ঞাপন প্রকাশ ছিল এই লক্ষ্যে তাদের দ্বিতীয় মহড়া। ধারণা করা যায়, ক্ষতিপূরণের ওই তালিকা শিগগিরই তারা অন্তর্বর্তী নতুন সরকারের কাছে পেশ করবেন। আর এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের এই চাটুকারিতামূলক কৌশলের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সবিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কারণ অর্থনীতির এই চরম নাজুক পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি কোনোভাবেই আমলে নেওয়া উচিত হবে বলে মনে না হয়। কেননা, ওই বড় ব্যবসায়ীদের যদি ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, তাহলে তা পাওয়ার নৈতিক অধিকার তো কৃষক, কৃষিশ্রমিক, জেলে, রিকশাওয়ালা, ভ্যানের সবজি বিক্রেতা, ঠেলাগাড়িচালক, খুচরা দোকানদার—সবারই রয়েছে। কিন্তু তাঁরা কি তা পাবেন? যদি না পান, তাহলে ওই চাটুকার বড় ব্যবসয়ীরা সংগঠিত বলেই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার জোরে তা পেয়ে যাবেন, এটা কিছুতেই হতে পারে না।
চাটুকারিতার হিড়িক ইতিমধ্যে রাজনীতি, গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, শিক্ষাঙ্গন প্রভৃতি স্থানেও প্রবল হয়ে উঠেছে। কে কবে কোন অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসের সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন, সেসবই এখন হয়ে উঠেছে ফেসবুক পোস্টের মূল উপকরণ, যা আসলে ড. ইউনূসকে বিব্রত করা ছাড়া আর কিছুই নয়। চোখের কোণে বিষদৃশ ঠেকছে যে, যেসব টিভি চ্যানেল চরম নির্লজ্জভাবে জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল, ইতিমধ্যে তারা অনেকটাই ইউনূস সরকারের ‘মুখপত্র’ হয়ে উঠেছে। যে দৈনিক পত্রিকা জননী-ভগিনী আর তাদের পরিবারের স্তুতিতে প্রায় উন্মাদের মতো আচরণ করছিল, তারা এখন অনেকটা অন্তর্বর্তী সরকারের ‘সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। এডিটরস গিল্ড বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরাম ইতিমধ্যে তলে তলে কী করতে শুরু করছে তা কে জানে! তবে এরই মধ্যে চোখে পড়েছে যে, নতুন চাঁদাবাজেরাও আগের চাঁদাবাজদের মতোই নিজেদের বিশেষ ‘ভাই’-এর প্রতিনিধি দাবি করতে শুরু করেছে এবং চাঁদার বাক্সের আকৃতি আরেকটু বড় করে সেখানে নতুন সংস্করণের লাঠি ও অস্ত্র সাজিয়ে নিয়েছে।
তবে যেসব চাটুকারের কথা উল্লেখ করা হলো, এর বাইরে তাদের সবার চেয়ে বড় চাটুকার শ্রেণি হচ্ছেন আমলারা। বর্ণচোরা এই ধূর্ত চাটুকারেরা এতটাই বুদ্ধিমান যে, পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাডারের ক্ষমতা ব্যবহার করেও তাঁদের চিহ্নিত করা কঠিন। এঁরা প্রত্যেক শাসক বা শাসকশ্রেণিকে কমবেশি ডুবিয়েছেন এবং সব আমলেই শাসক ও রাজনীতিকদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেয়েছেন। কিন্তু তার পরও তাঁদের হাতে কাঁঠালের বিন্দুমাত্র কষটুকুও লাগেনি—দেখতে প্রত্যেককেই ধোয়া তুলসীপাতা মনে হয়। এ ব্যাপারে আমাদের রাজনীতিকদেরও দায় ও ব্যর্থতা রয়েছে। তাঁরা আমলাদের যথাযথ দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে পরিচালনা করতে পারেননি বলেই তাঁরা (আমলারা) সুযোগটি পেয়েছেন। তদুপরি শাসক ও রাজনীতিকেরা তাঁদের নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য আমলাদের ব্যবহার করার কারণেও এমনটি ঘটেছে। অতএব অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও অন্যদের একেবারে প্রথম থেকেই আমলাদের চাটুকারিতাসুলভ আচরণের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, যাতে তাঁরা ওই কাঁঠালের ভার কখনোই এবং কিছুতেই উপদেষ্টাদের ঘাড়ে চাপাতে না পারেন।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক
বঙ্গবন্ধুকে স্তাবকতায় ডুবিয়েছিলেন মোশতাক ও তাঁর দলের সমচরিত্রের অন্যরা। জিয়া, এরশাদ, খালেদা—তাঁদের চারদিকেও স্তাবকের সংখ্যা নেহাত কম ছিল না। আর সদ্য বিদায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দলীয় অনুসারীদের মধ্যকার সম্পর্কের মূল বৈশিষ্ট্যই ছিল এরূপ যে, সেখানে অনুসারীগণ নিরন্তর তাদের নেত্রীকে স্তুতি ও স্তাবকতায় তন্ময় করে রাখতেন। এবং সেই স্তাবকতার ক্ষেত্রে যিনি যত দক্ষ ও নিপুণ ছিলেন, নেত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও ছিল তত বেশি ঘনিষ্ঠ এবং সেটাই ছিল তাঁর কাছ থেকে আনুকূল্যপ্রাপ্তির মূল শর্ত। দলের ভেতরে শুরু হওয়া সেই স্তাবকতা পরবর্তী সময়ে দলের বাইরে অন্যান্য শ্রেণি ও পেশাজীবী গোষ্ঠীর মধ্যেও সমানভাবে বা তার চেয়েও উচ্চতর গতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল।
ওপরে উল্লিখিত আচরণের ধারাবাহিকতায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের শিক্ষকগণ ক্লাসে পড়াতে গিয়ে বিষয়বস্তুসংশ্লিষ্ট অনেক কিছু ভুলে গেলেও টেলিভিশনের টক শোতে এসে সারাক্ষণই নেত্রীর স্তুতি ও বন্দনায় নিমগ্ন থাকতে এতটুকু ভুল করতেন না। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) উদ্যোগে গত ১৬ জুলাই আয়োজিত সম্মেলনে এর নেতৃবৃন্দ বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে তাঁরা আবারও ক্ষমতায় দেখতে চান। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই শেখ হাসিনার সরকার দরকার। এডিটরস গিল্ডের নেতৃত্বাধীন সাংবাদিকেরা গত ২৪ জুলাই শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন, তাঁরা শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত। গত ২৭ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবে একত্র হয়ে প্রায় একই কথা বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরামের সদস্যরাও।
তো যে ব্যবসায়ীরা আক্ষরিক অর্থেই নেচে-গেয়ে উল্লাস করে সুর তুলে মাত্র মাসখানেক আগে ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ শেখ হাসিনাকে বারবার ক্ষমতায় দেখতে চেয়েছিলেন, সেই ব্যবসায়ীরাই ৭ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন, ঘাড়ে যদি দুইটা করে মাথা থাকত, তাহলে হয়তো সেই চাপ (শেখ হাসিনার ক্ষমতার চাপ) তাঁরা উপেক্ষা করতে পারতেন। তার মানে হচ্ছে, তাঁদের ভাষায়—তাঁরা স্বেচ্ছায় নন, চাপে পড়ে শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চাওয়ার কথা বলেছিলেন। তাঁদের এই বক্তব্যকে যদি সত্য বলেও ধরে নিই, তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’ বলে ১৬ জুলাই আক্ষরিক অর্থেই তাঁরা যে নৃত্য-গীত ও উল্লাস করেছিলেন, তার ব্যাখ্যা কী? ওটা করতেও কি শেখ হাসিনা তাঁদের বাধ্য করেছিলেন? আবার ৯ আগস্ট যে এফবিসিসিআইসহ তাঁদের মধ্যকার কেউ কেউ একযোগে দেশের প্রায় সব দৈনিক পত্রিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঢাউস আকৃতির বেঢপ ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন ছেপে তাঁকে অভিনন্দন জানালেন, সেটার মাজেজাই বা কী? ড. ইউনূস কি এটি করতে তাঁদের বাধ্য করেছিলেন বা এটি কি তাঁরা ঘাড় থেকে মাথা হারানোর ভয়ে করেছেন? আসলে শেখ হাসিনার আমলে বা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই সদ্য যাত্রাক্ষণে উল্লিখিত ব্যবসায়ীরা যা যা করেছেন, তার সবই হচ্ছে অবিমৃশ্য চাটুকারিতা।
ড. ইউনূস ও তাঁর নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানানোটাই যদি ব্যবসায়ীদের আন্তরিক উদ্দেশ্য হতো, তাহলে সেটি তো তাঁদের করা উচিত ছিল নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের প্যাডে চিঠি লিখে। এভাবে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছেপে অর্ধশিক্ষিতের স্থূল ভঙ্গিমায় কেন? এখানে উল্লেখ্য, যেসব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পত্রিকায় এসব বিজ্ঞাপন ছেপেছে, তাদের অনেকেই বড় মাপের ঋণখেলাপি, করখেলাপি ও রাষ্ট্রীয় দেনা পরিশোধ লঙ্ঘনকারী। এ অবস্থায় যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তারা এসব বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তা না করে যদি তা দিয়ে সমপরিমাণ ঋণ পরিশোধ করে দিত, তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক কণা হলেও তো কমত, যার প্রতীকী মূল্য দৃশ্যমান টাকার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। তো জনগণ খুবই খুশি যে, এ ধরনের বিজ্ঞাপন ছাপার কাজটিকে সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের এ ধরনের চাটুকারিতা বস্তুত ব্যবসার আড়ালে রাষ্ট্রের সম্পদ নানা ন্যায্য-অন্যায্য পন্থায় হাতিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে একটি কৌশলমাত্র। যতটুকু জানা যায়, সাম্প্রতিক আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন, তার খাতওয়ারি হিসাবসংবলিত একটি দাবিনামা সরকারের কাছে পেশ করার লক্ষ্যে ৪ আগস্টের মধ্যে তাঁরা সেটি প্রায় গুছিয়েও এনেছিলেন। গত ১৬ জুলাইয়ের ব্যবসায়ী সম্মেলন ছিল বস্তুত সেই ক্ষতিপূরণ আদায়ের একটি পূর্ব মহড়ামাত্র। কিন্তু এরই মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটায় সেই মহড়া আর কাজে আসেনি। কিন্তু তাই বলে তাঁরা থেমে থাকবেন কেন? আর থামবেন না বলেই ৯ আগস্টের দৈনিক পত্রিকায় অভিনন্দনমূলক বিজ্ঞাপন প্রকাশ ছিল এই লক্ষ্যে তাদের দ্বিতীয় মহড়া। ধারণা করা যায়, ক্ষতিপূরণের ওই তালিকা শিগগিরই তারা অন্তর্বর্তী নতুন সরকারের কাছে পেশ করবেন। আর এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের এই চাটুকারিতামূলক কৌশলের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সবিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কারণ অর্থনীতির এই চরম নাজুক পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি কোনোভাবেই আমলে নেওয়া উচিত হবে বলে মনে না হয়। কেননা, ওই বড় ব্যবসায়ীদের যদি ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, তাহলে তা পাওয়ার নৈতিক অধিকার তো কৃষক, কৃষিশ্রমিক, জেলে, রিকশাওয়ালা, ভ্যানের সবজি বিক্রেতা, ঠেলাগাড়িচালক, খুচরা দোকানদার—সবারই রয়েছে। কিন্তু তাঁরা কি তা পাবেন? যদি না পান, তাহলে ওই চাটুকার বড় ব্যবসয়ীরা সংগঠিত বলেই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার জোরে তা পেয়ে যাবেন, এটা কিছুতেই হতে পারে না।
চাটুকারিতার হিড়িক ইতিমধ্যে রাজনীতি, গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, শিক্ষাঙ্গন প্রভৃতি স্থানেও প্রবল হয়ে উঠেছে। কে কবে কোন অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসের সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন, সেসবই এখন হয়ে উঠেছে ফেসবুক পোস্টের মূল উপকরণ, যা আসলে ড. ইউনূসকে বিব্রত করা ছাড়া আর কিছুই নয়। চোখের কোণে বিষদৃশ ঠেকছে যে, যেসব টিভি চ্যানেল চরম নির্লজ্জভাবে জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল, ইতিমধ্যে তারা অনেকটাই ইউনূস সরকারের ‘মুখপত্র’ হয়ে উঠেছে। যে দৈনিক পত্রিকা জননী-ভগিনী আর তাদের পরিবারের স্তুতিতে প্রায় উন্মাদের মতো আচরণ করছিল, তারা এখন অনেকটা অন্তর্বর্তী সরকারের ‘সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। এডিটরস গিল্ড বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরাম ইতিমধ্যে তলে তলে কী করতে শুরু করছে তা কে জানে! তবে এরই মধ্যে চোখে পড়েছে যে, নতুন চাঁদাবাজেরাও আগের চাঁদাবাজদের মতোই নিজেদের বিশেষ ‘ভাই’-এর প্রতিনিধি দাবি করতে শুরু করেছে এবং চাঁদার বাক্সের আকৃতি আরেকটু বড় করে সেখানে নতুন সংস্করণের লাঠি ও অস্ত্র সাজিয়ে নিয়েছে।
তবে যেসব চাটুকারের কথা উল্লেখ করা হলো, এর বাইরে তাদের সবার চেয়ে বড় চাটুকার শ্রেণি হচ্ছেন আমলারা। বর্ণচোরা এই ধূর্ত চাটুকারেরা এতটাই বুদ্ধিমান যে, পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাডারের ক্ষমতা ব্যবহার করেও তাঁদের চিহ্নিত করা কঠিন। এঁরা প্রত্যেক শাসক বা শাসকশ্রেণিকে কমবেশি ডুবিয়েছেন এবং সব আমলেই শাসক ও রাজনীতিকদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেয়েছেন। কিন্তু তার পরও তাঁদের হাতে কাঁঠালের বিন্দুমাত্র কষটুকুও লাগেনি—দেখতে প্রত্যেককেই ধোয়া তুলসীপাতা মনে হয়। এ ব্যাপারে আমাদের রাজনীতিকদেরও দায় ও ব্যর্থতা রয়েছে। তাঁরা আমলাদের যথাযথ দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে পরিচালনা করতে পারেননি বলেই তাঁরা (আমলারা) সুযোগটি পেয়েছেন। তদুপরি শাসক ও রাজনীতিকেরা তাঁদের নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য আমলাদের ব্যবহার করার কারণেও এমনটি ঘটেছে। অতএব অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও অন্যদের একেবারে প্রথম থেকেই আমলাদের চাটুকারিতাসুলভ আচরণের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, যাতে তাঁরা ওই কাঁঠালের ভার কখনোই এবং কিছুতেই উপদেষ্টাদের ঘাড়ে চাপাতে না পারেন।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
২ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪