পাহাড়জুড়ে বৈসাবির আনন্দ

রাঙামাটি ও থানচি  (বান্দরবান) প্রতিনিধি
Thumbnail image

পুরোনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সাজতে শুরু করেছে তিন পার্বত্য জেলা।আনন্দে মাতোয়ারা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ। এরই মধ্যে গতকাল সোমবার রাঙামাটিতে শুরু হয়েছে বৈসুক সাংগ্রাই বিজু, বিহু, বিষু বা বৈসাবি উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব। কয়েক দিনের মধ্যে বান্দরবানে শুরু হচ্ছে পয়লা বৈশাখ ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই ও জলকেলি উৎসব।

রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে গতকাল বেলুন উড়িয়ে বৈসাবি উৎসবের সূচনা করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা। গোটা সমাজ, সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠিত ও উজ্জীবিত করতে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান পাহাড়ের এ নেতা। তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন হলেই কেবল পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণতা পাবে।

পাহাড়ে বর্ষবরণের উৎসব ত্রিপুরাদের বৈসুক, মারমাদের সাংগ্রাই, চাকমাদের বিজু, অন্যদের বিষু, বিহু, বিসু, সাংক্রান ইত্যাদি নামে পরিচিত। সব জাতিগোষ্ঠীর উৎসবের আদি অক্ষর মিলিয়ে ‘বৈসাবি’ নামে পরিচিতি পায় এটি। তিন দিনব্যাপী এ পর্বের দ্বিতীয় দিন আজ মঙ্গলবার রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বলীখেলাসহ নানা প্রতিযোগিতা। কাল বুধবার উৎসবের তৃতীয় দিন সকালে কাপ্তাই হ্রদের ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে এ পর্ব শেষ হবে।

এরপর তৃতীয় পর্বে মারমাদের সাংগ্রাই জল উৎসব শুরু হবে ১৫ এপ্রিল। ১৬ এপ্রিল রাঙামাটির রাজস্থলীর বাঙাল হালিয়ায় মারমাদের জলকেলি উৎসবের মাধ্যমে পাহাড়ের বৈসাবি উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।

এদিকে বর্ষবরণ ঘিরে বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের পল্লিগুলোতে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নানা কর্মসূচি ও প্রস্তুতি। ঐতিহ্যবাহী বিনি ধানের চালের তৈরি পিঠা, ঘর সাজানো থেকে শুরু করে নতুন জামাকাপড় কিনতে স্থানীয় বাজার ও মার্কেটগুলোতে পড়েছে কেনাকাটার ধুম। ছোট থেকে সব বয়সের মানুষ নিজেদের আনন্দের রঙে রাঙাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সাংগ্রাই উৎসব ঘিরে তিন দিনব্যাপী পানি খেলা, পিঠা তৈরি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন করা হয়।

মৈত্রী পানি বর্ষণের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস—সব মিলিয়ে পুরো জেলার সব কটি সম্প্রদায়ের মানুষ এককাট্টা হবে এই নতুন বছরকে বরণ করে নিতে। গতকাল দেখা যায়, গ্রামগুলোতে শুরু হয়েছে বাঁশ-কাঠের আদলে তৈরি নৌকার নির্মাণকাজ। গ্রামে গ্রামে ঘরগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সাজানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তরুণীরা। বিভিন্ন রকমারি ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে আঙিনা। মার্কেট থেকে বিভিন্ন ফুল, থামি সেট, থ্রিপিস, সাংগ্রাই গেঞ্জি কিনে নিয়ে যাচ্ছে শিশুরা।

উৎসবের মধ্যে রয়েছে সমবেত প্রার্থনা, জলকেলি (পানি খেলা), পিঠা তৈরি, ঘিলা খেলা, বুদ্ধমূর্তি স্নান, হাজার প্রদীপ জ্বালানো, বয়স্ক পূজা ও নিজস্ব ঐতিহ্যবাসী নৃত্য-গান। পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে প্রতিবারের মতো এবারও সাংগ্রাই উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদ আয়োজন করেছে এসব অনুষ্ঠান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত