নূরে আলম সিদ্দিকী
পৃথিবীর প্রতিটি দেশের প্রতিটি সমাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জ্ঞানের আলোকবর্তিকা, জাতির বিবেক এবং বুদ্ধিমত্তা, সততা ও প্রজ্ঞার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্বভাবতই তাঁদের মনে করা হয় নৈতিক এবং মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রগামী হিসেবে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর একটা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষক তাঁদের কর্মজীবনে প্রবেশ করছেন অন্যায় আর অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে এবং অযোগ্যতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। সমাজে তাঁদের সম্মানের চোখে দেখা হয়। বিশ্বের যেকোনো দেশের ভিসা পেতে তাঁদের খুব একটা সমস্যা হয় না। মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী অনেক লোভনীয় ও আকর্ষণীয় স্কলারশিপ পেতে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হওয়া সহজ হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে তাঁরা অর্থ উপার্জন করতে পারেন। অধিকন্তু একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে এবং সমাজে তাঁদের অবস্থান বিবেচনা করে সরকারও অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কর্মপরিধি ব্যাপক। তাঁদের অবশ্যই প্রগাঢ় জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। সাধারণত তাঁরা যে ধরনের কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত রাখেন এর মধ্যে রয়েছে—নানা ধরনের উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে শিক্ষাকে যুগোপযোগী আর আনন্দদায়ক করে শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করা, বিভিন্ন ধরনের গবেষণা এবং প্রকাশনা, সভা-সেমিনার ও ক্লাসে লেকচার দেওয়া এবং বিশেষজ্ঞ মতামত উপস্থাপন করা, উচ্চতর গবেষণায় ছাত্রছাত্রীদের সহায়তা, সুপারভাইজ করা, বিভিন্ন ধরনের জার্নালে তাঁদের গবেষণাকর্ম প্রকাশ করা এবং কমিউনিটি সার্ভিস প্রদান করা, যার মধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে কাজ করা। গণমাধ্যমে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করা এবং পথপ্রদর্শক হিসেবে ছাত্রদের সঙ্গে কাজ করা।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দক্ষ জনবলের বিকল্প হিসেবে অন্য কিছুই চিন্তা করার সুযোগ থাকে না। এখানে গুণগতমান ও দক্ষতার ব্যাপারে আপস করার কোনো সুযোগ নেই। উদাহরণস্বরূপ, একজন অদক্ষ ও শিক্ষানবিশ পাইলটকে দূরপাল্লার কোনো বিমান চালনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া যায় না। তেমনি একজন বধির ব্যক্তিকে কোনো কল সেন্টারে কিংবা বিমানের কন্ট্রোল টাওয়ারে নিয়োগ দেওয়া যায় না। দলীয় বিবেচনায় এবং মেধা আর যোগ্যতাকে বিবেচনায় না এনে, কারও অযৌক্তিক, অযোগ্য আর অবৈধ খায়েশ পূরণ করার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মতো সম্মানজনক আর মেধাভিত্তিক পদে কাউকে আসীন করা দেশের উচ্চশিক্ষাকে মেরুদণ্ডহীন করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় দেশের উচ্চশিক্ষার দৈন্যদশার ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। এই গবেষণাপত্রে দেশের ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়ের মধ্যে ১৭টির ওপর গবেষণার ফলাফল দেখানো হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে যে শিক্ষক বাছাই ও নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের ঘুষ লেনদেন হয় এবং অতিরিক্ত প্রার্থীকেও নিয়োগ দেওয়া হয়, যার বিনিময়ে ৩ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়। অধিকন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয় মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনা। এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ অভিভাবকেরা জড়িত।
গবেষণার ফলাফলে আরও দেখা গেছে, কিছু শিক্ষক তাঁদের পছন্দের কোনো ছাত্রছাত্রীকে অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে পরীক্ষায় প্রথম হতে সহায়তা করেন, যাতে তিনি সহজেই লেকচারার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ফ্যাকাল্টি মেম্বাররা ওই ছাত্রের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেন এবং কোনো কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে। আবার কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের প্রথম শ্রেণি দেওয়ার বিনিময়ে তাঁদের অসামাজিক ও অনৈতিক কাজে নিয়োজিত করার অভিযোগও আছে। বিশ্ববিদ্যায়ের লেকচারার হওয়ার লোভনীয় স্বপ্ন বাস্তবায়নের আশায় নিজের নৈতিকতা এবং চরিত্রকে অনেক সময় তাঁরা বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠা বোধ করেন না। এসব কর্মকাণ্ডের অধিকাংশই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে পলিটিক্যালি মোটিভেটেড। সর্বোপরি সিন্ডিকেট নির্বাচনে জয়লাভের জন্য অনেক ধরনের অপ্রয়োজনীয় ডিপার্টমেন্ট সৃষ্টি করা হয় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত শিক্ষকের পদ তৈরি করে সেগুলোতে নিজেদের মতাদর্শের অনুসারী মেধাহীন, অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কিছু কিছু শিক্ষক ছাত্রদের কাছ থেকে সরাসরি টাকা না নিয়ে তাঁদের কোনো ঋণ পরিশোধ করার বিনিময়ে তাঁকে অধিক নম্বর পাইয়ে দেওয়া হয় অথবা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সম্প্রতি আমার এক নিকটাত্মীয়কে দেশের শীর্ষস্থানীয় এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষস্থানীয় এক ফ্যাকাল্টিতে যোগ্যতা এবং সিনিয়রিটিতে এগিয়ে থাকা, এমনকি শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও লেকচারার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কারণ তিনি ভিন্ন মতের একজন শিক্ষকের অধীনে থিসিস করেছিলেন এবং ডিন নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন।
পরিহাসের বিষয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এহেন কর্মকাণ্ডের ফল হিসেবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক ভালো শিক্ষক পেয়ে যাচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সারির মেধাবী ছাত্ররা যখন যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক হতে ব্যর্থ হন, তখন তাঁরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার পদে যোগ দেন। অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস করে না এবং তারা যোগ্যতা আর মেধাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
যেকোনো জাতির জন্য জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে, টেকসই উন্নয়ন সমুন্নত রাখতে তাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোকে সব ধরনের দুর্নীতি আর অন্যায় প্রভাববলয় থেকে মুক্ত রাখতে হবে। একই সঙ্গে সেখানে জ্ঞানের চর্চা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, নৈতিক মানদণ্ড, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিকে যেকোনো মূল্যে সমুন্নত রাখতেই হবে। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক যে অর্থ, খ্যাতি আর সম্পদের প্রতি অনৈতিক আকর্ষণ মানুষকে বিবেক শূন্য করে। এ ধরনের চরিত্রের মানুষ মাঝেমধ্যে অপ্রতিরোধ্য আর বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তবে তাদের শক্তিমত্তা যা-ই হোক না কেন, সমাজের বিবেকবান মানুষকে অবশ্যই একত্র হয়ে এই দুষ্টচক্রকে যেকোনো মূল্যে ভেঙে দিতে হবে এবং সেটা শুরু করতে হবে এখনই।
পৃথিবীর প্রতিটি দেশের প্রতিটি সমাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জ্ঞানের আলোকবর্তিকা, জাতির বিবেক এবং বুদ্ধিমত্তা, সততা ও প্রজ্ঞার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্বভাবতই তাঁদের মনে করা হয় নৈতিক এবং মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রগামী হিসেবে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর একটা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষক তাঁদের কর্মজীবনে প্রবেশ করছেন অন্যায় আর অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে এবং অযোগ্যতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। সমাজে তাঁদের সম্মানের চোখে দেখা হয়। বিশ্বের যেকোনো দেশের ভিসা পেতে তাঁদের খুব একটা সমস্যা হয় না। মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী অনেক লোভনীয় ও আকর্ষণীয় স্কলারশিপ পেতে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হওয়া সহজ হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে তাঁরা অর্থ উপার্জন করতে পারেন। অধিকন্তু একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে এবং সমাজে তাঁদের অবস্থান বিবেচনা করে সরকারও অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কর্মপরিধি ব্যাপক। তাঁদের অবশ্যই প্রগাঢ় জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। সাধারণত তাঁরা যে ধরনের কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত রাখেন এর মধ্যে রয়েছে—নানা ধরনের উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে শিক্ষাকে যুগোপযোগী আর আনন্দদায়ক করে শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করা, বিভিন্ন ধরনের গবেষণা এবং প্রকাশনা, সভা-সেমিনার ও ক্লাসে লেকচার দেওয়া এবং বিশেষজ্ঞ মতামত উপস্থাপন করা, উচ্চতর গবেষণায় ছাত্রছাত্রীদের সহায়তা, সুপারভাইজ করা, বিভিন্ন ধরনের জার্নালে তাঁদের গবেষণাকর্ম প্রকাশ করা এবং কমিউনিটি সার্ভিস প্রদান করা, যার মধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে কাজ করা। গণমাধ্যমে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করা এবং পথপ্রদর্শক হিসেবে ছাত্রদের সঙ্গে কাজ করা।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দক্ষ জনবলের বিকল্প হিসেবে অন্য কিছুই চিন্তা করার সুযোগ থাকে না। এখানে গুণগতমান ও দক্ষতার ব্যাপারে আপস করার কোনো সুযোগ নেই। উদাহরণস্বরূপ, একজন অদক্ষ ও শিক্ষানবিশ পাইলটকে দূরপাল্লার কোনো বিমান চালনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া যায় না। তেমনি একজন বধির ব্যক্তিকে কোনো কল সেন্টারে কিংবা বিমানের কন্ট্রোল টাওয়ারে নিয়োগ দেওয়া যায় না। দলীয় বিবেচনায় এবং মেধা আর যোগ্যতাকে বিবেচনায় না এনে, কারও অযৌক্তিক, অযোগ্য আর অবৈধ খায়েশ পূরণ করার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মতো সম্মানজনক আর মেধাভিত্তিক পদে কাউকে আসীন করা দেশের উচ্চশিক্ষাকে মেরুদণ্ডহীন করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় দেশের উচ্চশিক্ষার দৈন্যদশার ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। এই গবেষণাপত্রে দেশের ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়ের মধ্যে ১৭টির ওপর গবেষণার ফলাফল দেখানো হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে যে শিক্ষক বাছাই ও নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের ঘুষ লেনদেন হয় এবং অতিরিক্ত প্রার্থীকেও নিয়োগ দেওয়া হয়, যার বিনিময়ে ৩ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়। অধিকন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয় মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনা। এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ অভিভাবকেরা জড়িত।
গবেষণার ফলাফলে আরও দেখা গেছে, কিছু শিক্ষক তাঁদের পছন্দের কোনো ছাত্রছাত্রীকে অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে পরীক্ষায় প্রথম হতে সহায়তা করেন, যাতে তিনি সহজেই লেকচারার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ফ্যাকাল্টি মেম্বাররা ওই ছাত্রের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেন এবং কোনো কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে। আবার কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের প্রথম শ্রেণি দেওয়ার বিনিময়ে তাঁদের অসামাজিক ও অনৈতিক কাজে নিয়োজিত করার অভিযোগও আছে। বিশ্ববিদ্যায়ের লেকচারার হওয়ার লোভনীয় স্বপ্ন বাস্তবায়নের আশায় নিজের নৈতিকতা এবং চরিত্রকে অনেক সময় তাঁরা বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠা বোধ করেন না। এসব কর্মকাণ্ডের অধিকাংশই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে পলিটিক্যালি মোটিভেটেড। সর্বোপরি সিন্ডিকেট নির্বাচনে জয়লাভের জন্য অনেক ধরনের অপ্রয়োজনীয় ডিপার্টমেন্ট সৃষ্টি করা হয় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত শিক্ষকের পদ তৈরি করে সেগুলোতে নিজেদের মতাদর্শের অনুসারী মেধাহীন, অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কিছু কিছু শিক্ষক ছাত্রদের কাছ থেকে সরাসরি টাকা না নিয়ে তাঁদের কোনো ঋণ পরিশোধ করার বিনিময়ে তাঁকে অধিক নম্বর পাইয়ে দেওয়া হয় অথবা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সম্প্রতি আমার এক নিকটাত্মীয়কে দেশের শীর্ষস্থানীয় এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষস্থানীয় এক ফ্যাকাল্টিতে যোগ্যতা এবং সিনিয়রিটিতে এগিয়ে থাকা, এমনকি শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও লেকচারার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কারণ তিনি ভিন্ন মতের একজন শিক্ষকের অধীনে থিসিস করেছিলেন এবং ডিন নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন।
পরিহাসের বিষয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এহেন কর্মকাণ্ডের ফল হিসেবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক ভালো শিক্ষক পেয়ে যাচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সারির মেধাবী ছাত্ররা যখন যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক হতে ব্যর্থ হন, তখন তাঁরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার পদে যোগ দেন। অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস করে না এবং তারা যোগ্যতা আর মেধাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
যেকোনো জাতির জন্য জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে, টেকসই উন্নয়ন সমুন্নত রাখতে তাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোকে সব ধরনের দুর্নীতি আর অন্যায় প্রভাববলয় থেকে মুক্ত রাখতে হবে। একই সঙ্গে সেখানে জ্ঞানের চর্চা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, নৈতিক মানদণ্ড, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিকে যেকোনো মূল্যে সমুন্নত রাখতেই হবে। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক যে অর্থ, খ্যাতি আর সম্পদের প্রতি অনৈতিক আকর্ষণ মানুষকে বিবেক শূন্য করে। এ ধরনের চরিত্রের মানুষ মাঝেমধ্যে অপ্রতিরোধ্য আর বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তবে তাদের শক্তিমত্তা যা-ই হোক না কেন, সমাজের বিবেকবান মানুষকে অবশ্যই একত্র হয়ে এই দুষ্টচক্রকে যেকোনো মূল্যে ভেঙে দিতে হবে এবং সেটা শুরু করতে হবে এখনই।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে